আলেমদের ঐক্য সময়ের অনিবার্য দাবি
০৭ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৪৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৫ পিএম
দেশে কওমী মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। দেশে দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এছাড়া স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। (প্রথম আলো, ৭ নভেম্বর, ২০১৯) সব মিলিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় প্রায় ২২ লাখ। তার মানে দাঁড়ায়, দেশে কম-বেশি, ছোটো-বড়ো মিলে আলিম সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। এসব আলিমের অধিকাংশই বিভিন্ন প্রকার খিদমতে ব্যস্ত সময় পার করেন। বিশেষত কওমী অঙ্গনের অধিকাংশ আলিম মসজিদ ও মাদরাসাকেন্দ্রিক খেদমতে নিয়োজিত আছেন। আমাদের দেশে বর্তমান বাস্তবতা হলো, আলিমগণ আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক পিছিয়ে। অবশ্য এটা নতুন নয়, বৃটিশ আমলে আমাদের আলিম সমাজকে আর্থ-সামাজিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা দু’ দু’বার দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু আলিমগণের সে অবস্থার তেমন কোনো গুণগত পরিবর্তন হয়নি। ফলে আলিম সমাজের বড় একটি অংশ নিজেদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। সামাজিক কার্যক্রমেও তাদের অন্তর্ভুক্তি খুবই কম।
কওমী মাদরাসায় যারা অধ্যয়ন করেন তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মসজিদের ইমাম ও কওমী মাদরাসার শিক্ষক হওয়া। এসব আলিমের জাগতিক ব্যাপারে উচ্চতর আকাক্সক্ষা খুবই কম। একারণে এ বিষয়ে তাদের মানসিকতাও অনেক দুর্বল। এ দুর্বল মানসিকতার কারণে তাদের মধ্যে দেশ ও জাতির জন্য বড় কিছুু করার সংকল্প সৃষ্টি হয় না। ফলে জাতীয়ভাবে দেশের সেবা কার্যক্রমে তাদের অংশীদারিত্ব নেই বললেই চলে। আর আলিয়া মাদরাসায় যারা অধ্যয়ন করেন তাদের উদ্দেশ্য বড় হলেও বর্তমান বাস্তবতা তাদের জন্য খুবই প্রতিকূল। তাদের গন্তব্য অনেক দূরের হলেও তারা বেশি দূর যেতে পারেন না। বৃটিশ আমলের ন্যায় তারা আজ সামাজিকভাবে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। যদিও নিকট অতীতে তাদের মধ্যে অনেকে জাতীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন অঙ্গনে দেশের সেবায় নিয়োজিত ছিল বা এখনও আছে। কিন্তু বর্তমানে তারা আলিয়া মাদরাসা ও কলেজের প্রভাষক, স্কুল কিংবা মাদরাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক ও বিবাহের কাযী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মধ্যেই তাদের গন্তব্য সীমাবদ্ধ। উভয় মাদরাসা ব্যবস্থা দু’ ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। এ দুটো সমস্যাই আলিমদের যথার্থ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের অন্তরায় ও সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। আলিম সমাজের আর একটি সমস্যা হলো, তাদেরই মধ্য হতে একটি ক্ষুদ্র অংশ ইসলাম বিরোধী শক্তির পক্ষে ক্রীড়নকের ভূমিকা পালন করা। এ ক্ষুদ্র শক্তিটি ক্ষুদ্র হলেও ইসলাম বিরোধীদের কাছে এটি অনেক বড় এক হাতিয়ার। তারা তাদের দলীয় প্রচার প্রচারণায় আলিমদের এ ক্ষুদ্র শক্তিটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। এ শ্রেণির আলিমগণ ইসলাম সম্পর্কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। তারা শরী‘আত ও মা‘রিফাত এর অপব্যাখ্যায় লিপ্ত রয়েছেন। শিরক ও বিদ‘আতসহ নানা ধরনের অনাচার ও অপতৎপরতায় লিপ্ত এ ক্ষুদ্র শক্তিটি।
আমাদের দেশের অধিকাংশ আলিম ও পীর-মাশায়েখ ইসলামের অনেক মৌলিক ও বড় বড় বিষয়কে বাদ দিয়ে ছোটোখাটো বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত সময় পার করেন। তারা মৌলিক ও বড় বিষয়গুলোর প্রতি উদাসীনতা ও অবহেলা প্রদর্শন করেন। অথচ, মৌলিক ও বড় বড় বিষয়গুলো এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, এগুলোর প্রতি উদাসীনতা উম্মাহর অস্তিত্ব ও সামগ্রিক সত্ত্বাকে বিপন্ন করে দেয়। এক শ্রেণির আলিম সুন্নী-ওহাবী বিবাদ, দেওবন্দী-ব্রেলভী ঝগড়া, মাযহাবী-লামাযহাবী বিরোধকে বাতাস দিয়ে আরো চাঙ্গা করে তুলছেন। নবীজি (সা.) আগুন না মাটির তৈরি, দাঁড়ি রাখা ও এর পরিমাপ, জামার মাপ, পাগড়ীর প্যাঁচ, ‘আমীন’ জোরে বা আস্তে বলা, তাশাহুদের সময় আঙ্গুল নাড়ানো, দাঁড়িয়ে ও বসে কিয়াম করা ইত্যাদি ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে অবিরাম বাড়াবাড়ি করেই চলেছেন। এমন এক সময়ে এসব বিষয় নিয়ে হৈচৈ করা হচ্ছে যখন মুসলিম উম্মাহ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজতন্ত্র, ইহুদীবাদ ও খ্রিস্টবাদের বৈরিতার নিচে পিষ্ঠ হচ্ছে। পৃথিবীর দিকেদিকে এসব মতবাদের অনুসারীরা মুসলিমদের নির্মমভাবে হত্যা করছে। দেশে দেশে মুসলিম নারী, শিশু ও যুবকদের কচুকাটা করছে। মুসলিম দা‘ঈগণ চরম ভীতি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দেশ ও মহাদেশ থেকে প্রকাশ্যে মুসলিম উচ্ছেদের ঘোষণা আসছে। মুসলিমদের উপর এ নির্যাতনের মূল কারণ হলো নিজেদের মাঝে অন্তর্দ্বন্দ্ব, আত্মকলহ আর ঝগড়া।
আলিমদের ঝগড়া বিবাদের কারণে অতীতে মুসলিম জাতির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগ নেমে আসার ইতিহাস আমাদের অজানা নয়। ইতিহাস পাঠে জানা যায়, উজবেকিস্তানের ঐতিহাসিক প্রধান ধর্মীয় শহর ছিল সমরকন্দ ও বুখারা। যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন ইমাম বুখারি (র.)সহ অনেক মুসলিম পন্ডিত। এখানে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে পাগড়ীর প্যাঁচ আর টুপির আকৃতি নিয়ে দীর্ঘ সংঘর্ষ হয়েছিল। পাগড়ীতে কতো প্যাঁচ হবে আর টুপির আকার কেমন হবে, এটা ছিল সংঘর্ষের মূল কারণ। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে এ ঝগড়ার শেষ পরিণতি হিসেবে তাশখন্দ, কাশগড়, তিরমিয, সমরকন্দ ও বোখারায় নেমে এসেছিল নাস্তিক্যবাদী শাসন। অথচ, এ অঞ্চলগুলো ছিল তৎকালীন ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। নাস্তিক্যবাদী শাসনের ফলাফল কী হয়েছিল বর্তমান যুগের আলিমগণ মনে হয় ভুলে গেছেন! আর মনে থাকলেও সম্ভবত তারা ব্যক্তি স্বার্থের কাছে ইসলামের শিক্ষার কবর রচনা করেছেন। নফসের দাসত্বের জিঞ্জিরে তাঁরা আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিতে চাই তাশখন্দ, কাশগড়, তিরমিয, সমরকন্দ ও বোখারার মুসলিমদের উপর নেমে আসা করুণ আর্তনাদের কথা। ধর্মহীন নাস্তিক্যবাদী এ শাসন আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছিল কুরআন, হাদীসসহ সকল ইসলামী পুস্তক ও লাইব্রেরি। তারা গুড়িয়ে দিয়েছিল ঐতিহাসিক সকল মাদরাসা ও মসজিদ। হত্যা করেছিল দুই পক্ষের লক্ষ লক্ষ আলিম। ধর্মহীন এ শাসন দীর্ঘ হয়েছিল প্রায় পৌনে এক শতাব্দীকাল। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছিল এ শাসন ইমাম বোখারির দেশে। ঐসব এলাকার বর্তমান বাস্তবতা হলো, সেখানে এখন আর নাস্তিক্যবাদী শাসন নেই। ধর্মহীন শাসনের অবসান হয়েছে, কিন্তু আজো সেখানে নামাজ, রোজা, হিজাব ও আরবী বর্ণমালা নিষিদ্ধ। ঘোষণা দিয়ে বিকৃত করা হচ্ছে পবিত্র আল কুরআন! প্রায় অর্ধকোটি মুসলিম ও নারীকে কসেনট্রেশন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে বন্দী। নারীদের উপর চলছে পৈশাচিক নির্যাতন, চলছে জোরপূর্বক গর্ভপাত। এসব দেখা ও জানার পরও বাংলাদেশের আলিম সমাজের ঝগড়া ও ফতোয়াবাজি এতটুকুও কমেনি! আজও আলিম সমাজের মধ্যে ফিরে আসেনি দূরদর্শিতা। জাগ্রত হয়নি ন্যূনতম সহনশীলতা, ধৈর্য্য, ভদ্রতা আর বিবেকবোধ।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান মুসলিম বিশ^ আজ এক দিশেহারা অথর্ব জাতিতে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিন হলো তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ফিলিস্তিন ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নবীদের পূণ্য জন্মভূমি। ইতিহাসখ্যাত যাযাবর ইহুদীরা মুসলিমদের এ পূণ্যভূমিটিকে জোর করে দখলে নিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করেছে। মাত্র ৮৬ লাখ ইহুদী ২৫টি আরব রাষ্ট্রের ৩৫ কোটি মুসলমানকে ভেড়ায় পরিণত করেছে। এর একমাত্র কারণ মুসলিমদের মাঝে অনৈক্য। নবীদের উত্তরসূরীখ্যাত আলিমগণ ঐক্যের জন্য গলা ফাটিয়ে ওয়াজ করেন, কুরআন-হাদীসের রেফারেন্সও প্রকাশ করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ঐক্যের ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। বর্তমান বিশ্বে ধর্মহীন সকল গোষ্ঠি মুসলিমদের দমিয়ে রাখতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে তারা টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি, নারী ও মেধা প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশসহ মুসলিম বিশ্বের আলিমদের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও এক অপরকে সম্মান দেওয়া।
দেশে প্রধানত তিন শ্রেণির আলিম ও দলকে নিরবিচ্ছিন্ন দা‘ওয়াহ কর্মকান্ড পরিচালনা করতে দেখা যায়। এ তিনটি গ্রুপ হলো: (ক) দেওবন্দী, (খ) আহলে হাদীস ও (গ) জামায়াতে ইসলামী। দেওবন্দী গ্রুপটি নি¤েœাক্ত ১৩টি উপদলে বিভক্ত। এ ১৩টি উপদল হলো: ১. তাবলীগ জামাত (দেওবন্দপন্থি), ২. তাবলীগ জামাত (সা‘দ কান্দলভী পন্থি), ৩. ইসলামী আন্দোলন (চরমোনাই), ৪. জমিয়তে ইসলাম (ওয়াক্কাস), ৫. জমিয়তে ইসলাম (নূর হোসেন), ৬. খেলাফত আন্দোলন, ৭. খেলাফত মজলিস, ৮. ইসলামী ঐক্যজোট (আজিজুল হক), ৯. ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী), ১০. ইসলামী ঐক্যজোট (মেসবাহুর রহমান), ১১. ইসলামী ঐক্যজোট (ইজহারুল ইসলাম), ১২. নেজামে ইসলাম ও ১৩. হেফাজতে ইসলাম। এ কয়টি উপদলের সবগুলোই কওমী ধারার প্লাটফর্ম। অধিকাংশ কওমী আলিম ও শিক্ষার্থী তাদের মুরুব্বীদের অন্ধভাবে অনুসরণ করেন। এ প্লাটফর্মের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ঠুনকো কোনো বিষয় নিয়ে আমীরকে অমান্য করেন। অনেকে এমন আছেন যে, নিজেকে আমীর ঘোষণা করে মূল দল থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন দল খাড়া করেছেন।
আহলে হাদীস উপমহাদেশে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৪৬ সালে। বর্তমানে এটি ১৫টি উপদলে বিভক্ত। ১. জমিয়তে আহলে হাদীস, ২. শুরাŸায়ে আহলে হাদীস, ৩. আহলে হাদীস আন্দোলন (গালীব), ৪. আহলে হাদীস আন্দোলন (আ. রাজ্জাক), ৫. আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলাম, ৬. জমিয়তে শুব্বানে আহলে হাদীস, ৭. আহলে হাদীস যুবসংঘ (মুযাফ্ফর), ৮. মাদখালে আহলে হাদীস (আকরামুজ্জামান), ৯. অল ইন্ডিয়া আহলে হাদীস, ১০. আঞ্জুমানে আহলে হাদীস, ১১. বঙ্গ ও আসাম জমিয়তে আহলে হাদীস, ১২. ট্রু সালাফী আহলে হাদীস, ১৩. কুতুবী সালাফী আহলে হাদীস, ১৪. সুরুলী সালাফী আহলে হাদীস ও ১৫. জামিয়াহ আহলে হাদীস।
তিন শ্রেণির মধ্যে তৃতীয় দলটি হলো জামায়াতে ইসলামী। দলটি ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা পেলেও এখন পর্যন্ত তাদের মাঝে কোনো উপদল সৃষ্টি হয়নি। দলটিতে আলিমের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সাধারণ শিক্ষিতদের সমন্বয় ঘটেছে।
এ তিন গ্রুপের বাইরে আরো দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি হলো ব্রেলভী গ্রুপ, অন্যটি জঙ্গি গ্রুপ। এর মধ্যে ব্রেলভী গ্রুপ ইসলাম নিয়ে বেশ কিছু কাজ করলেও উল্লেখিত তিন শ্রেণির আলিমগণ তাদের সঠিক ইসলামী দল বলে মনে করেন না। ব্রেলভী গ্রুপটি ১৬টি উপদলে বিভক্ত। ১. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত (চট্টগ্রাম), ২. ফুলতলী (সিলেট), ৩. দেওয়ানবাগী, ৪. রাজারবাগী, ৫. ফুলেশ^রী, ৬. সুরেশ^রী, ৭. চন্দ্রপুরী, ৮. এনায়েতপুরী, ৯. আটরশী, ১০. মাইজভান্ডারী, ১১. ইসলামিক ফ্রন্ট (মতিন) ১২. ইসলামিক ফ্রন্ট (যুবাইর). ১৩. দাওয়াতুল ইসলাম, ১৪. মুনিরিয়া তাবলীগ কমিটি, ১৫. তরিকত ফেডারেশন ও ১৫. গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ। এসব দলের কর্মীরা সামান্য কিছুতেই ভিন্ন মতের মানুষদের কাফির বলে ফতোয়া দিয়ে থাকেন।
সর্বশেষ গ্রুপটিকে জঙ্গি গ্রুপ বলা হয়ে থাকে। সর্বসম্মতিক্রমে এরা ইসলাম বিরোধী গ্রুপ। এরা বর্তমানে ৬টি উপদলে বিভক্ত। ১. জেএমবি, ২. আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, ৩. হেজবুত তাহরীক, ৪. হেজবুত তাওহীদ, ৫. হরকাতুল জিহাদ ও ৬. আইএস।
উপরের আলোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে ইসলামের নামে দেশে মোট ৪৯টি দল ও উপদল রয়েছে। তবে এ গণনার বাইরেও ইসলামের নামে কিছু দরবার ও দল আছে। ফুরফুরা ও ছারছীনা গুরুত্বপূর্ণ দুটি দরবার। এসব দলের আলিমগণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে নানা দল ও উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অথচ, ইসলামের শিক্ষা হলো মুসলিমরা দীনের মৌলিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং খুঁটিনাটি বিষয় এড়িয়ে চলবে। আর যখনই মুসলিমগণ মৌলিক লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে খুঁটিনাটি বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে। সেখানেই অনিবার্যভাবে তাদের মধ্যে দল-উপদল সৃষ্টি হবে। যা ইতিপূর্বে বিভিন্ন নবীর উম্মতের মধ্যে দেখা দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন: ‘তোমরা যেন তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরেও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে।’ (আলে ইমরান: ১০৫)।
এখানে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের এমন সব উম্মাতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, যারা সত্য দীনের সুস্পষ্ঠ শিক্ষালাভ করেছিল। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হবার পর দীনের মৌলিক বিষয়গুলো পরিত্যাগ করে অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি বিষয়াবলি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছিল। নিজেদের একটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল। এরপর অবান্তর বিষয় নিয়ে তারা কলহে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব তারা ভুলে গিয়েছিল। বিশ্বাস ও নৈতিকতার যেসব মূলনীতির উপর তাদের সাফল্য নিশ্চিত ছিল, তার প্রতি তাদের আর কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না। আল্লাহ বলেন: ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের মধ্যে বিবাদ করো না, তাহলে তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা দেখা দিবে এবং তোমাদের প্রতিপত্তির দিন শেষ হয়ে যাবে। ধৈর্য্যরে পথ অবলম্বন করো, অবশ্যই আল্লাহ সবরকারীদের সাথে আছেন।’ (আনফাল: ৪৬)।
বাংলাদেশের আলিমদের বর্তমানে বড় দুর্দিন যাচ্ছে। আলিমদের অনৈক্যের কারণে একটি বেসরকারি গণকমিশন ১১৬ জন আলিমকে কালো তালিকাভুক্ত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। তাদের অনৈক্যের কারণে অনেক নিরীহ আলিম জেলখানায় মানবেতর জীবন পার করছেন। দেশের শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষার বিলুপ্তি ঘটেছে। কলেজে ইসলামী শিক্ষা একটি ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আলিয়া মাদরাসা থেকে আরবি ও ইসলামী শিক্ষা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলামী শিক্ষা বিদায় নিয়েছে। এতকিছুর পরেও আলিমগণ তাদের ফতোয়াবজি অব্যাহত রেখেছেন!
এমতাবস্থায় আলিমদের কাছে দেশবাসীর দাবি হলো, আপনারা ফতোয়াবাজি বন্ধ করুন! কুরআনে উল্লেখিত নির্দেশনা সামনে রেখে একটি শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করুন! সকল দলের সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আলোচনায় বসুন। এ বিষয়ে আন্তরিকতা পোষণ করুন। সকল দলের সিনিয়র ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একটি ফতোয়া বোর্ড গঠন করুন! সকল দলের তারকাবক্তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করুন। অরাজনৈতিক বরেণ্য আলেমদেরও কমিটির অন্তর্ভুক্ত করুন। ফতোয়া দিতে শুধু গঠিত এ ফতোয়া বোর্ডকেই দায়িত্ব প্রদান করুন। বক্তৃতা ও ওয়াজের মঞ্চটাকে আপনারা পরিচ্ছন্ন রাখুন। জনমানুষের অন্তরে সৃষ্ট বিরক্তি আপনারা দূর করার ব্যবস্থা করুন। আলিম ও ইসলাম সম্পর্কে জনগণের মনে সৃষ্ট নেতিবাচক ধারণা আপনারা দূর করুন। নিজেদের একটি ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম গড়ে তুলুন।
লেখক: অধ্যাপক, দা’ওয়াহ এন্ড ইমলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা