মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ কী?
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৫ পিএম
আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক কৃষ্টি, সংস্কৃতি, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও অনুশাসনের অবক্ষয় দিন দিন তীব্র হয়ে উঠছে। মানুষের সভ্যতার উপকরণগুলো যেন খসে পড়ছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। তরুণ সমাজের একটি অংশ দুর্বিনীত হয়ে পড়েছে। উঠতি বয়সের অনেক তরুণ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের চালচলন, আচার-আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ। সমাজের অভিভাবক শ্রেণীকে তোয়াক্কা করে না। অভিভাবক শ্রেণীও তাদের এই ঔদ্ধত্য দেখে চুপ হয়ে থাকে। শাসন-বারণ কিংবা ডাক দেয়ার তাকিদ অনুভব করে না। ডাক দিয়ে আবার কি বিপদে পড়ে বা কার সন্তান, সে কি বলেÑএমন সংশয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। এর ফলে যা হচ্ছে, এদেরকে নিবৃত করার জন্য পুলিশকে ছুটে আসতে হচ্ছে। অথচ আগে এ কাজটি সমাজের অভিভাবকরাই করতেন। পুলিশের কোনো প্রয়োজন পড়ত না। আমাদের পরিবার ও সমাজের মূল্যবোধের অবনমন এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেসব সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে, এগুলোকে এখন আর বিচ্ছিন্ন বলে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। একের পর এক অকল্পনীয় ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, আমরা কি দিন দিন স্বার্থপর ও বর্বরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি? এর কারণ কি? এর প্রধান কারণ যদি ধরা হয় অর্থ এবং এ নিয়ে প্রতিযোগিতা ও এর প্রতি প্রবল আকর্ষণ, তবে এ কথাও বলা যায়, আমাদের দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরেই অর্থের টানাপড়েনের মধ্যে ছিল, সে সময়ও মানুষ তার নৈতিক চরিত্র হারায়নি। অভাবের মধ্যেও তার নীতি-নৈতিকতা দৃঢ় ছিল। এখন সমাজে মান-সম্মান ও ইজ্জতকে তোয়াক্কা করার প্রবণতা কমে গেছে। অনেকের মধ্যে এমন প্রবণতা বিরাজমান, ভাল মানুষ না হলেও অর্থ-বিত্তের মালিক হতে পারলে মান-সম্মান জুগিয়ে নেয়া যায়। এর নজিরও কম নয়। দেখা যায়, দুর্নীতিগ্রস্থ ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীর একটি অংশ সমাজের নিয়ন্তা হয়ে বসে আছে। তাদের অর্থ আছে, গায়ের জোরও আছে। তারা মনে করে, এই দুই শক্তি থাকলে মান-সম্মান এমনিতেই তাদের পায়ে লুটিয়ে পড়বে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা সম্মিলিতভাবেই এদের অবস্থানকে শক্ত করার সুযোগ করে দিচ্ছি। আমাদের মধ্যে যাদের এখনও সুকুমারবৃত্তি রয়েছে, তারা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপবাসী হয়ে বসবাস করছি। কে মরল আর কে মারল, এ নিয়ে টু শব্দ করি না। কিভাবে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করতে হয়, তা জেনেও উদ্যোগী হই না। আমাদের দুর্বলতার এ সুযোগটাই নিচ্ছে সমাজের মাথা হয়ে থাকা দুষ্টচক্র। শুধু সমাজের এই দুষ্টচক্র নয়, রাজনীতি থেকে রাষ্ট্র পরিচালকরাও এ সুযোগ নিচ্ছে। তারা আমাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। এ সময়ে খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ কথাটি। সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা ভয়ের পরিবেশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যেখানে উচিৎ কথা বললে অনেক সময় হেনস্থার শিকার হতে হয়। যারা এ কাজটি করে এজন্য যে, হুমকি-ধমকি দিয়ে ভীতি সৃষ্টি করতে না পারলে তাদের দুষ্কর্মের রাজত্ব কায়েম করা যাবে না।
দুই.
একটা সময় দেশে শিক্ষার হার খুব কম ছিল। তবে শিক্ষার হার কম থাকলেও মানুষের নীতি- নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বেশ টনটনে ছিল। মানুষের শিক্ষার ভিত্তি হয়েছিল ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, বিধি-নিষেধ এবং অনুশাসন। এসব গুণাবলী আঁকড়ে ধরে আমাদের দেশের মানুষ সভ্যতার অনন্য নজির স্থাপন করে। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এই সভ্যতার ধারণ করে। নিজেদের আলাদা কোনো সম্প্রদায় মনে করেনি। আমরা এই দেশের নাগরিক, এই একটি সম্প্রদায়েই বিশ্বাস করত। দুঃখের বিষয়, রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য একটি শ্রেণী অসাম্প্রদায়িকতার কথা বা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে নাগরিকদের মধ্যে ভেদাভেদ ও সম্প্রীতির বন্ধনে আঘাত করে। মন ও মননে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে সাম্প্রদায়িকতার কথাটি মনে করিয়ে দেয়। যে দেশের ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান, যারা কোনো দিনই সম্প্রদায়গত পার্থক্য করত না, সেই তাদের সামনেই বারবার অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এ প্রসঙ্গ কেন তোলা হবে? যেখানে আমাদের দেশের মানুষ এক বাটি দুধকে দুধই ভাবে, সেখানে এই দুধকে কেন অন্য কিছু বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? অসাম্প্রদায়িকতা মানে কি এই, পাঠ্যপুস্তক থেকে মুসলমান লেখকদের গদ্য-পদ্য বাদ দিয়ে অন্য ধর্মের লেখক ও অন্য ধর্ম সম্পর্কিত গদ্য-পদ্যের আধিক্য থাকতে হবে? এক ধর্মের শিক্ষামূলক বিষয় ঝেটিয়ে বিদায় করে, অন্য ধর্মের বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা কি অসাম্প্রদায়িকতা বা ধর্মনিরপেক্ষতা? আবহমান কাল ধরে যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মের নীতি-আদর্শের মধ্যে বেড়ে উঠেছে, সেখানে অন্য ধর্মের প্রাধান্য দেয়া কি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নীতি-আদর্শকে উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করা নয়? এটা কি করে সম্ভব যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে অন্য কোনো মতের আদর্শ চাপিয়ে দেয়া? বলা বাহুল্য, যেকোনো ধর্ম সম্পর্কে জানা দোষের কিছু নয়। যে কেউ যেকোনো ধর্ম সম্পর্কে জানতেই পারে। তার মানে এই নয়, অসাম্প্রদায়িকতার নামে পাঠ্যপুস্তক থেকে এক ধর্মের নীতি-আদর্শমূলক লেখা ফেলে দিয়ে অন্য ধর্মের লেখা যুক্ত করতে হবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং কিছু অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলা লোক কথায় কথায় বলে, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।’ এতে সমস্যার কিছু নেই। সমস্যা হচ্ছে, যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তারা এ কথা বলে না, আমাদের দেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ। এখানে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও পারস্পরিক সহবস্থান ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। তারা যেন ‘মুসলমান’ শব্দটি উচ্চারণ করতে লজ্জা পায়। বাস্তবতা হচ্ছে, একটি শ্রেণী যতই দেশকে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার কথা বলুক না কেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানকে উপেক্ষা করার সুযোগ তাদের নেই। অন্যদিকে, অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে আমাদের দেশের চিরায়ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়টিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে যে ব্যাপক প্রতিবাদ ও তোলপাড় হয়েছে এবং সেগুলো শেষ পর্যন্ত যে সংশোধন ও বাতিল করতে হয়েছে, তার কারণ ছিল অন্য ধর্মের প্রাধান্য এবং নাস্তিক্যবাদী উপাদান যুক্ত করা। এটাও এক ধরনের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচায়ক ছিল। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ইতিহাস গৌণ ও বিকৃত করে অন্য ধর্মের ইতিহাস মহান ও উচ্চ করে ধরার মধ্যেই সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে ছিল। আসলে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আমাদের দেশে যা হচ্ছে, তা মূল ¯্রােতের বিপরীতে সাতার কাটা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাস ও আকিদাকে অবজ্ঞা করার একটি ট্রেন্ড চালুর অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
তিন.
মাঝে মাঝে শিশুরাও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে ফেলে। তাদের সরল কথায় গভীর চিন্তার বিষয় থাকে। একটি উদাহরন দেয়া যাক। এক সন্তান নিয়ে দুই মায়ের দাবী এবং শিশুটির আসল মা কে, এ নিয়ে এক রাজা যখন গভীর চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে যখন কোনো কূলকিনারা করতে পারছিলেন না, তখন এর সমাধান দিয়েছিল এক শিশু। চিন্তিত রাজা যখন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন, তখন মাটিতে খেলারত এক শিশুকে বলতে শোনেন, ভাগ করে দিয়ে দিলেই তো হয়। এ কথা থেকেই রাজার বুদ্ধি খুলে যায়। তিনি রায় দেন, শিশুর মায়ের দাবীকারী দুই মাকেই শিশুটিকে কেটে সমান ভাগ করে দেয়া হোক। এ থেকে এক মা দাবী ছেড়ে দিয়ে বলেছিল, আমার সন্তান ভাগ করার প্রয়োজন নেই। আমি মায়ের দাবী ছেড়ে দিলাম। আমার সন্তান জীবিত থাকুক। রাজা আসল মাকে সনাক্ত করতে পারেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কথাবার্তা মানুষ খুব কমই গুরুত্ব দিত। তবে মাঝে মাঝে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে ফেলতেন। অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যখন একটি শ্রেণী জোরেসোরে আওয়াজ তোলা শুরু করে, তখন তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার মানেটা কি? এর মানে কি দেশে কোনো সম্প্রদায় থাকবে না? মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বলে কি কোনো সম্প্রদায় থাকবে না? এরা কি সম্প্রদায় নয়? সম্প্রদায় ছাড়া কি কোনো দেশ হয়? অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন, অসাম্প্রদায়িক কথাটির কোনো ভিত্তি নেই। সম্প্রদায়ের বাইরে কোনো জাতি বা গোষ্ঠী হতে পারে না। যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলছেন, তারা এ শব্দটির প্রকৃত অর্থ জানেন না। বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিবাদীরা এই শব্দটিকে ব্যবহার করেন শুধু মুসলমানদের হেয় ও বদনাম দেয়ার জন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের দিকে না তাকিয়ে অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এ কথা বলে। নিজেদের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা। দুঃখের বিষয়, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছে, তারাও এইসব সুবিধাবাদীর সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলছে। তাদের মধ্যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আমরা জানি, যুগে যুগে সুবিধাবাদীদের আয়-রোজগারের একটা বড় উৎস হয়ে রয়েছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যু। অথচ আমরা যদি খেয়াল করি তবে দেখব, বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা অতি নগণ্য। পার্শ্ববর্তী ভারতের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিলের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পান থেকে চুন খসলেই মুসলমানদের কচুকাটা করা হয়। মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কোরবানি নিষিদ্ধ করা হয়। কথায় কথায় দাঙ্গা বাঁধিয়ে দেয়া হয়। পিটিয়ে মুসলমান হত্যা করা হয়। মুসলমানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষকে জোর করে হিন্দু বানানো হয়। বাংলাদেশে কি এ ধরনের ঘটনা ঘটে? হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কি কোনো দাঙ্গা বাধে? জোর করে মুসলমান করা হয়? পূজা করতে বাধা দেয়া হয়? হয় না। অন্তত ভারতের মতো হয় না। মাঝে মাঝে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর ভাংচুরের যে ঘটনা ঘটে তার পেছনে অপরাজনীতির দুরভিসন্ধী থাকে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হয়। এ ধরনের হীন কাজ দেশের মানুষ কখনোই সমর্থন করেনি, গ্রহণও করেনি। তারপরও রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুটি সৃষ্টি করা হয়।
চার.
আমাদের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অধঃপতনের যে কথা এখন উঠছে, এর মূল কারণ হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো একটি হাইপথিটিক্যাল কথা বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধকে মূল্যায়ণ না করে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর অসাম্প্রদায়িকতার কথাকে প্রাধান্য দেয়া। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনোজগতে এক ধরনের পরিবর্তন এবং অস্থিরতা ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। তা নাহলে মা কর্তৃক সন্তান, সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতা হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হবে কেন? যদি এসব ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের ধর্মীয় মূল্যবোধ বিন্দুমাত্র অবশিষ্ট থাকত, তাহলে এ ধরনের অকল্পনীয় ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধি পেত না। এখন রাষ্ট্র পরিচালকদের পক্ষ থেকেই বলা হয়, বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এ দুটো শব্দের অর্থ সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যারা বুঝতে সক্ষম, তাদের মধ্যে এ প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, ধর্ম নিরপেক্ষ মানে কি এই যে, কেউ ধর্মপালন করবে না? আবার এই প্রশ্নও আসতে পারে, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে যদি প্রত্যেক ধর্মের মানুষ পারস্পরিক সহবস্থানে থেকে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা বোঝায়, তাহলে বাংলাদেশে কি এই পরিস্থিতি নেই? রাষ্ট্র পরিচালনায় যারাই থাকুক না কেন, তাদের ধর্মের প্রতিফলন কি তাদের কর্মের উপর প্রভাব ফেলে না? যদি তা না হয়, তাহলে তো তাদের কর্মে সব ধর্মেরই প্রতিফলন থাকতে হবে। এটা কি সম্ভব? অথচ স্বাভাবিক নিয়মই হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পক্ষেই রাষ্ট্র পরিচালকদের থাকতে হয়। সারাবিশ্ব এ নিয়মেই চলছে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা ভারতেও তার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের ভোটেই তারা নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে তাই হচ্ছে। আমাদের দেশেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ভোটেই সরকার নির্বাচিত হয়। কাজেই এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের কথা না বলে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত? এটা কি বাস্তবতাকে অস্বীকার করা নয়? সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধ ও বিশ্বাস যখন রাষ্ট্র পরিচালকদের পক্ষ থেকে উপেক্ষিত হয়, তখন এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পুরো সমাজে পড়তে বাধ্য। সমাজে একের পর এক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। বরং চাপিয়ে দেয়ার মতো কোনো ধরনের উদ্ভট মতবাদ নিয়ে কথা না বলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য ও মূল্যবোধকে উজ্জীবীত করতে পারলেই সমাজ থেকে অস্বাভাবিক ঘটনা কমে যাবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান