শুভ নববর্ষ
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২১ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৮ পিএম
আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন। সব চাওয়া- পাওয়া, আশা-নিরাশা পেছনে ফেলে ১৪২৯ সাল কালের স্রোতে লীন। ১৪৩০ সালের শুভাগমনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রভাতের সূচনা হলো। বাংলা নববর্ষকে আমরা স্বাগত জানাই। এটা আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অচ্ছেদ্য অংশ। বলাবাহুল্য, বাংলাসন ও নববর্ষ উদযাপন মূলত মুসলিম ঐতিহ্যজাত এবং মুসলিম শাসকরাই তা প্রবর্তন করেন। বাংলা সনের সঙ্গে বাংলার শাসনব্যবস্থার সংস্কারে মুসলমান শাসকদের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। দিল্লি সালতানাতের সময়ে হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করা হলেও কৃষিভিত্তিক সমাজবাস্তবতায় হিজরি বর্ষপঞ্জিতে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কিছু অসামঞ্জস্য দেখা দেয়ায় বাংলার কৃষিভিত্তিক ঋতুচক্রের অনুসরণে একটি নতুন বর্ষপঞ্জির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবর হিজরি সনের ভিত্তিতে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তনের নির্দেশ দেন। মুঘল রাজদরবারের দার্শনিক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেউল্লাহ সিরাজী হিজরি সন ও সৌরসনের সমন্বয় করে বাংলা সন প্রবর্তন করেন। মুঘল আমলে প্রবর্তিত বাংলা বর্ষপঞ্জিতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়ায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তাতে কিছু সংস্কার করেন। তার সংস্কার অনুসারে এখন প্রতিবছর ১৪ এপ্রিলে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের উৎসব হয়ে থাকে। আমাদের রয়েছে একটি নিজস্ব ক্যালেন্ডার, যা জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ও গর্বিত করেছে। এ কারণেই আমাদের জাতীয় জীবনে বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
বাংলা নববর্ষ পালন এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামীণ জনপদে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতা এবং কৃষকের ঘরে নতুন ফসল উঠার এ সময়ে নববর্ষ উদযাপনে বৈশাখী মেলা হয়ে উঠত সব বয়েসী মানুষের আনন্দ-উৎসব ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের নতুন উপলক্ষ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ আবাহনে যে সব অনুষঙ্গ যুক্ত হয়েছে তা নিয়ে সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মুখে উল্কি আঁকা, বিভিন্ন জীবজন্ত বিশেষ করে হুতুম পেঁচা, হাতি, কুমির, সাপ, বিচ্ছু ও ঘোড়ার মুখোশ পরা, প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষদের একসঙ্গে অশালীন পোশাক পরে শোভাযাত্রা করা, শোভাযাত্রায় বাদ্য-বাজনার সঙ্গে আপত্তিজনক ভঙ্গিমায় নৃত্য করা ইত্যাদি বিশেষ সম্প্রদায় বা গোষ্ঠির আচরিত সংস্কৃতি হতে পারে, তবে এদেশের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের জন্য এসব সংস্কৃতি নয়। এগুলো তাদের আচরিত সংস্কৃতির পরিপন্থী, ধর্মীয় মূল্যবোধের খেলাফ। সার্বজনীন সংস্কৃতির নামে এসব অনৈসলামিক আচারকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে । বুঝে হোক, না বুঝে হোক সরকারিভাবে এর পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। এখন রমজানের শেষ দশক চলছে। সাধারণত এ সময়ে দেশের বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ, মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে সিয়াম সাধনা এবং ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতিও চলছে। এ সময়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা বর্ষবরণের নামে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালনের নির্দেশ জারি করেছে শিক্ষা অধিদফতর(মাউশি)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে নববর্ষ উদযাপন ও মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন কীভাবে সম্ভব সেটাই প্রশ্ন। সার্বজনীন সংস্কৃতি বলে বিশ্বে কিছু নেই। একেক দেশের একেক জনগোষ্ঠির ও সমাজের সংস্কৃতি আলাদা। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমরা লক্ষ করি। সংস্কৃতি গঠন ও নির্মাণে ধর্মের ভূমিকা প্রধান। ধর্মের যেহেত ুবিভিন্নতা আছে, সুতরাং সাংস্কৃতিক বিভিন্নতাও থাকবে। আমাদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের স্বার্থেই বহিরাগত ও অপসংস্কৃতির স্থলে নিজস্ব সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশে অনেক উন্নয়নের কাজ হচ্ছে বটে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পাশাপাশি মানুষের নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ও চলছে। মাদক, যৌন হয়রানি, পারিবারিক কলহে খুন-জখম, হত্যা, ধর্ষণ, নৃশংসতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসবের মূলে রয়েছে, আমাদের নিজস্ব হাজার বছরের নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় আচার-আচরণ এবং সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা এবং এ সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়া, অপসংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া।
আমরা যত উন্নয়ন করিনা কেন, যদি নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় চলতে থাকে, তবে তা অর্থহীন হয়ে পড়তে বাধ্য। গত বছরের মতো এবারও বাংলা নববর্ষ পবিত্র রমজানে পড়েছে। আমরা আশাকরি, রমজানের ভাবগাম্ভীর্য ও পবিত্রতা রক্ষার্থে এমন কিছ ুকরা উচিৎ হবেনা, যাতে এর মর্যাদাহানি হয়। তবে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ ও সংযমের মাধ্যমে করা যেতে পারে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবগুলো বিশেষ জাতিগোষ্ঠি ও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও স্বতস্ফুর্ত ভাবাবেগের বিষয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ নয়। মাত্র তিন দশক আগে পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রার সূত্রপাত হয়েছে। এর মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের সার্বজনীন সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের উপাদান অনুপস্থিত। বর্ষবরণে চাপিয়ে দেয়া বিষয়গুলো ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছে না। দেশে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এতে দরিদ্র দিনমজুর, শ্রমিক ও স্বল্প আয়ের মানুষ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তাদের খাদ্য, অর্থ ও অন্যান্য সাহায্য প্রয়োজন। যাদের কমবেশি সামর্থ্য আছে তাদের এই সাহায্য দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। পরিশেষে বাংলা নববর্ষে আমাদের পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা ও দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান