চামড়ার বাজারে আর বিপর্যয় নয়
২৬ জুন ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। গরুর চামড়ার মূল্য ঢাকায় প্রতি বর্গফুটে ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকার বাইরে বাড়ানো হয়েছে ৪-৫ টাকা। খাসী ও বকরীর চামড়ার মূল্য বাড়ানো হয়নি। গত বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার মূল্য ছিল প্রতি বর্গফুট ৪৭-৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুটের মূল্য ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪৫-৪৮ টাকা। খাসী-বকরীর চামড়ার মূল্য অপরিবর্তিত আছে যথাক্রমে প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ ও ১২-১৪ টাকা। নানা দিকের বিবেচনায় এবার গত বছরের তুলনায় চামড়ার মূল্য যতটা সম্ভব বেশি করে নির্ধারণ করা হবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। সত্যি বলতে কি, যা হয়েছে, সেটা নামকাওয়াস্তে। আর খাসী-বকরীর চামড়ার মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনাতেই আনা হয়নি। এতে পর্যবেক্ষকরা গত বছরের মতো চামড়ার বাজারে বিপর্যয়ের আশংকা করছেন। গত বছর চামড়া ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেক কোরবানিদাতা ও মওসুমী ব্যবসায়ী চামড়া নদীতে বা ড্রেনে ফেলে দিয়েছিল। অনেকে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিল। এবারও যদি তেমন পরিস্থিতি হয়, তবে সেটা হবে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক ক্ষতিকর। উল্লেখ করা যেতে পারে, সারাবছর যে চামড়া সংগৃহীত হয়, তার অর্ধেকই হয় কোরবানির সময়। যেমন, এবার চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ পিস, যা চামড়ার মোট চাহিদার অর্ধেকের কাছাকাছি। কোরবানির সময় চামড়ার বাণিজ্যিক কারবার কত ব্যাপক ও বিস্তৃত হয়, সেটা এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায়। এই সময়টাতেই চামড়ারবাজারে নানারকমের কারসাজি ও মূল্যপতনের ষড়যন্ত্র লক্ষ করা যায়। কোরবানিদাতা তথা চামড়ার হকদার ও মওসুমী চামড়াব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করাই এই কারসাজি-ষড়যন্ত্রের কারণ। বছর দশেক আগেও গরুর চামড়া আকার ভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রী হতো। এখন সেই চামড়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায়ও বিকায় না। ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ট্যানারি মালিকদের কারসাজিতেই চামড়ার এই মূল্যবিপর্যয় ঘটে থাকে। গত কয়েক বছর যাবৎ লাগাতার এটা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা কোরবানির দিন বা পরের দিন পর্যন্ত চামড়া কেনে না। চামড়ার দাম তলানিতে নেমে এলে তবে কেনা শুরু করে। এতে যাদের বঞ্চিত হওয়ার, তারা তো হচ্ছেই, চামড়ারও মানের ক্ষতি বা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কোরবানিদাতা কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে না। এর প্রাপক গরিব-মিসকিন ও অসহায় মানুষ। যারা জাকাতের হকদার, তারাও এর হকদার। আমাদের দেশে এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে কোরবানির চামড়ার মূল্য দেয়া হয়। এতে করে দেশের এতিমখানাগুলোর এতিমদের এবং মাদরাসাগুলোর গরীব শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় খরচের অনেকটাই নির্বাহ হয়। কোরবানির চামড়ার অর্থ, দান, সদকা ইত্যাদি এতিম ও মাদরাসার গরিব শিক্ষার্থীদের জীবনধারণ ও শিক্ষার উপায় হিসাবে ভূমিকা পালন করে। অতএব, একথা বলাই বাহুল্য, চামড়ার বাজারের কারসাজি ও মূল্যপতন কার্যত এতিম, অসহায় মানুষ এবং গরিব মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই যায়। এটা গুরুতর অন্যায় ও ঘৃণ্য কাজ হিসাবে বিবেচিত হতে বাধ্য। চামড়ার বাজার নিয়ে যে কোনো কাররসাজি বা অপকর্ম চামড়া শিল্প ও চামড়া রফতানির ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। কারো অজানা নেই, চামড়া আমাদের অর্থনীতিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি করে প্রতি বছর দেশ একটা মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। নির্ভরযোগ্য তথ্যে জানা যায়, এখন প্রতিবছর অন্তত ৩০ মিলিয়ন ডলার আসছে চামড়া ও চামড়াপণ্য রফতানি করে। ২০৩০ সালের মধ্যে এখাত থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে চেষ্টা-তৎপরতাও চলছে। যতদূর জানা যায়, দেশে ছোট-বড় ট্যানারির সংখ্যা কমের পক্ষে ২৩০টি। এই শিল্পে কাজ করে অন্তত ২৫ হাজার শ্রমিক। দেশের বিভিন্নস্থানে চামড়া সংগ্রহ ও কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত আছে কয়েক হাজার মানুষ। কোরবানির সময় এদের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। চামড়া শিল্প, চামড়া বেচাকেনা ইত্যাদি তাদের জীবিকার উৎস হিসাবে কাজ করছে।
সকলের স্বার্থে, বিশেষ করে দেশের স্বার্থে চামড়া শিল্পের উন্নয়ন, বিকাশ ও স্থিতি অত্যাবশ্যক। আর সেটা করতে হলে চামড়া সংগ্রহ বা এর বেচাকেনার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। চামড়ার বাজারের কারসাজি ও সিন্ডিকেটবাজি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, কারসাজি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়া মূল্য ফেলে দেয়া হলে ওয়েট বøু চমড়া রফতানির ঘোষণা দেয়া হবে। এতে কার লাভ বা কার লোকসান হবে, সে প্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায়, এটা কোনো সমাধান নয়। ট্যানারি-মালিকদের ঘোঁট কি এতই শক্ত যে, বাণিজ্যমন্ত্রী তা ভাঙতে অপারগ? কারসাজি হলে, সিন্ডিকেটবাজি হলে তা সজোরে আঘাত করে ভেঙ্গে দিতে হবে। এই শক্তি মন্ত্রণালয়ের থাকতে হবে। দেখাতে হবে। প্রতিবছর কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্যমূল্য দেয়া হবে না, এর প্রাপক ও উপকারভোগীদের বঞ্চিত করা হবে, এটা চলতে পারে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে চামড়ার নির্ধারিত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া বেচাকেনা স্বাভাবিক রাখতে হবে। চামড়া পচনশীল। দ্রæত ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নিলে এর নষ্ট হয়ে যাওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। গত বছরের মতো চামড়া নিয়ে যাতে কারো বিপাকে পড়তে না হয়, চামড়া ফেলে দিতে বা পুঁতে ফেলতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো মূল্যে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাঁচ ম্যাচ পর ভুলতে বসা জয়ের স্বাদ পেল ম্যানচেস্টার সিটি
চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত অনুসন্ধানে দুদক
আসামি ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ, আটক ৫
রাজধানীর সাইনবোর্ডে এলাকায় ট্রাক চাপায় পথচারীর মৃত্যু
৭ মাসেও মালয়েশিয়াগামী কর্মীরা টাকা-পাসপোর্ট ফেরত পায়নি
জুলাই আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচার দাবিতে জাবি শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন
উচ্চ স্বরে হইচই করায় সারদা পুলিশ একাডেমির ৮ এসআইকে তলব
ডেঙ্গুতে আরো দুইজনের মৃত্যু
তারেক রহমানের ৩১ দফায় শিক্ষকদের সুখবর আছে -ডা. মাজহার
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশিকায় ট্রান্সজেন্ডার গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত
জাবিতে শিক্ষক ফোরামের সভাপতি প্রফেসর মাফরুহী সম্পাদক প্রফেসর বোরহান
নগরবাসীকে পানিতে কষ্ট দিতে সরকারবিরোধী চক্র সক্রিয়
মতলবে নুরুল হুদা স্মৃতি টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনে ওমর সানি
ফুলবাড়িয়ায় ২ দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও ঠিকাদারে লাইসেন্স বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
গুরুদাসপুরে অবৈধ ৯টি ইট ভাটায় ২৮ লাখ টাকা জরিমানা
না ফেরার দেশে জুলিয়েট, স্তব্ধ হলিউড
বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়ের স্ত্রী মারা গেছেন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন
কেরানীগঞ্জে আটিবাজারে জায়গা দখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল
সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান চিকিৎসকদের, অবরোধ অব্যাহত