সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৩ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩, ১২:০৫ এএম

সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষের অমূল্য জীবন ঝরে যাচ্ছে। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়ে কর্মহীন ও পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চিকিৎসা করতে পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩৫ জন। শুধু একটি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে শিশুসহ ১৭ জন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, ঝালকাঠি সদরে। একটি বাস বেপরোয়া গতিতে চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছে, শুরু থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। সড়কের চেয়ে তার মনোযোগ বেশি ছিল যাত্রী ওঠানামায়। এজন্য সহকারী ও কন্ডাক্টরের সাথে সারাক্ষণ কথা বলছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে এত যাত্রী ওঠানো হয় যে, বাসের ভেতরে আসন না পেয়ে অনেকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকে বাসের ছাদে পর্যন্ত ওঠে। যাত্রীরা চালককে নিষেধ করলেও সে তা শোনেনি। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পুকুরে উল্টে পড়ে যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়েছে। পত্র-পত্রিকায় দুর্ঘটনার যেসব খবর প্রকাশিত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলো খবরে আসে না। দুর্ঘটনার কারণগুলো বহু আগেই চিহ্নিত হয়েছে। প্রথম কারণ হচ্ছে, চালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব। তাদের অধিকাংশের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। অনেকে হেলপার-কন্ডাক্টর থেকে চালক হয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করে চালকের আসনে বসে যায়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ত্রুটিপূর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এছাড়া সড়কের ত্রুটি, যথাযথ সড়ক ব্যবস্থাপনার অভাব, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতি, সড়কের ওপর বাজার বসা ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং ট্রাক-বাস স্ট্যান্ড করা। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, অদক্ষ চালকের হাতে যানবাহনের স্টিয়ারিং তুলে দেয়া। খা যায়, এ ধরনের চালকরা স্টিয়ারিং হাতে পেয়েই নিজেকে সড়কের রাজা ভাবা শুরু করে। সড়কের নিয়ম-কানুন, গতি থেকে শুরু করে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা তারা তোয়াক্কা করে না। যেমন খুশি তেমন চালায়। এটা করতে গিয়েই ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়। এটা ভাবে না, গাড়িতে যেসব যাত্রী রয়েছে, তার পলকের ভুলে দুর্ঘটনায় তাদের প্রাণ চলে যেতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনায় কত মানুষ নিহত ও আহত হয়, তার সঠিক তথ্য সবসময় পাওয়া যায় না। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বছর শেষে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এটা গড়পড়তা একটি হিসাব। এসব হিসাব করা হয়, পত্র-পত্রিকা ও থানায় দুর্ঘটনার রিপোর্ট থেকে। প্রকৃত সংখ্যাটি তার চেয়েও বেশি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক দুর্ঘটনায় যে পরিবারের অভিভাবক কিংবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হয়, সে পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায়। পথে বসে যায়। যে আহত হয়, তার পরিবার অচল হয়ে পড়ে। এসব পরিবারের খবর কেউ নেয় না কিংবা সরকার বা সংশ্লিষ্ট পরিবহন সংস্থা থেকে কোনো ক্ষতিপূরণও দেয়া হয় না। শুধু পরিবারের কর্তাব্যক্তিই নয়, সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের সম্পদ হিসেবে পরিচিত এবং যারা অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ, গবেষক থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও মৃত্যুবরণ করে। আগামীর ভবিষ্যৎ মেধাবী শিক্ষার্থীরাও গাড়ির চাকার নিচে পিষ্ট হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে বিশ্ব ব্যাংকের এক হিসেবে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপি’র ১ শতাংশ ক্ষতি হয়। এ ক্ষতির পরিমান এখন আরও বেড়েছে। মানুষের অমূল্য জীবন ও দেশের অর্থনৈতিক এ ক্ষতি হচ্ছে, শুধুমাত্র চালকদের বেপরোয়া আচরণ, যথযাথ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা না থাকার কারণে।

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রচলিত কারণের জন্য মূলত দায়ী বিআরটিএ। সংস্থাটির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা করাসহ সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখা তার অন্যতম দায়িত্ব। সংস্থাটি যদি তার দায়িত্ব যথাযথ ও কার্যকরভাবে পালন করত, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যেত। ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকের হাতে যাত্রীরা জিম্মি হতো না। কি শহর, কি মহাসড়ক কোথাও তাদের তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয় না। বিআরটিএ’র পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশেরও চরম গাফিলতি রয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ ভাল করেই জানে, কোন গাড়ির ফিটনেস আছে, কোন গাড়ির চালকের প্রকৃত ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কারণ, তাদের সামনে দিয়েই দিন-রাত যানবাহনগুলো চলাচল করে। এসব জেনেশুনেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। হাইওয়েসহ প্রত্যেক সড়কে কোন লেনে কত গতিতে গাড়ি চলবে, এই সাধারণ শিক্ষাটাও অনেক চালকের মধ্যে নেই। সড়কের পাশে গতিবেগ লেখা থাকলেও তা মানে না। এটা প্রশিক্ষণের অভাব এবং ভুয়া লাইসেন্সধারী চালক তো বটেই প্রশিক্ষিত চালকরাও তা মানে না। যতই বলা হচ্ছে, ‘যত গতি, তত ক্ষতি’, তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সার্বিক সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলায় মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। ফলে অনেক চালক বেপরোয়া হয়ে উঠছে এবং দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে। আমরা মনে করি, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের অধিক তৎপর হওয়া সময়ের দাবি। ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের শনাক্ত করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি থেকে শুরু করে সড়কের সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। চালকের বেপরোয়া আচরণের কারণে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৭১'র পরাজিত শক্তি ২৪'র আন্দোলনকে ব্যবহার করে ৭১'র গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়: নাছির

৭১'র পরাজিত শক্তি ২৪'র আন্দোলনকে ব্যবহার করে ৭১'র গৌরবকে মুছে ফেলতে চায়: নাছির

সীমান্তে অস্থিতিশলীতাই প্রমান করে ভারত কোন দিনই আমাদের বন্ধু ছিলো না : পীর সাহেব চরমোনাই

সীমান্তে অস্থিতিশলীতাই প্রমান করে ভারত কোন দিনই আমাদের বন্ধু ছিলো না : পীর সাহেব চরমোনাই

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের আগেই চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী ঠাকুরপুর থেকে এক নারীকে আটক করেছে বিজিবি

অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের আগেই চুয়াডাঙ্গার সীমান্তবর্তী ঠাকুরপুর থেকে এক নারীকে আটক করেছে বিজিবি

একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে : দুলু

একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে : দুলু

একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে : দুলু

একটি দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে : দুলু

রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী ব্যাংক

রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেল সোনালী ব্যাংক

'আমাকে নিয়ম শেখাতে আসবেননা, আপনি সব কিছুতে নিয়ম দেখান'

'আমাকে নিয়ম শেখাতে আসবেননা, আপনি সব কিছুতে নিয়ম দেখান'

শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির

শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জাতীয় নাগরিক কমিটির

হাটহাজারীতে পুকুর ভরাট করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

হাটহাজারীতে পুকুর ভরাট করায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

সংখ্যালঘুদের ওপর বেশির ভাগ হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে : পুলিশ

সংখ্যালঘুদের ওপর বেশির ভাগ হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে : পুলিশ

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে

জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে

আ'লীগ কখনোই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না : গোলাম পরওয়ার

আ'লীগ কখনোই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না : গোলাম পরওয়ার

ব্রাহ্মণপাড়ায় যাত্রী ছাউনির অভাবে দুর্ভোগে যাত্রীরা

ব্রাহ্মণপাড়ায় যাত্রী ছাউনির অভাবে দুর্ভোগে যাত্রীরা

ছাগলনাইয়ায় কোরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলো গায়ে হলুদ

ছাগলনাইয়ায় কোরআন তিলাওয়াত ও ইসলামী আলোচনার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হলো গায়ে হলুদ

সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সচেতনতামূলক সভা

সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে সচেতনতামূলক সভা

শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে খেলাধুলার বিকল্প নেই: এডিসি লুৎফুন নাহার

শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে খেলাধুলার বিকল্প নেই: এডিসি লুৎফুন নাহার

হাইওয়ে পুলিশের সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

হাইওয়ে পুলিশের সার্বিক বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়

কোরআন তেলাওয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করে: কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

কোরআন তেলাওয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করে: কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পাননি আপিল বিভাগ

ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পাননি আপিল বিভাগ