সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দায় কে নেবে?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:২২ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম

দেশে যেভাবে ও যে হারে সড়ক দুর্ঘটনা বড়ছে, তাকে অস্বাভাবিক ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এ দুর্ঘটনাকে ‘হত্যাকা-’ হিসেবে সচেতন নাগরিকরা অনেক আগেই চি‎িহ্নত করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা একের পর এক কেড়ে নিচ্ছে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে অবদান রাখা কর্মজীবী মানুষ ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে। সম্প্রতি ঝালকাঠি সদরে একটি বাস বেপরোয়া গতিতে চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে যায়। এতে শিশুসহ ১৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। আহত হয় ৩৫ জন। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছে, শুরু থেকেই চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। সড়কের চেয়ে যাত্রী ওঠা-নামার দিকে তার মনোযোগ ছিল বেশি। এজন্য চালক সহকারী ও কন্ডাক্টরের সাথে সারাক্ষণ কথা বলছিল। বিভিন্ন স্থান থেকে এত যাত্রী ওঠানো হয় যে, বাসের ভেতরে আসন না পেয়ে অনেকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ছিল। অনেকে বাসের ছাদে পর্যন্ত উঠে। যাত্রীরা চালককে নিষেধ করলেও সে তা শোনেনি। এক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি পুকুরে উল্টে পড়ে যায়। এটি বেপরোয়া চালকদের দ্বারা সংগঠিত অসংখ্য দুর্ঘটনার একটি। এরকম দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। পরিতাপের বিষয়, যে যাত্রীদের জন্য গণপরিবহণের অস্তিত্ব, বেপরোয়া চালকদের কারণে সেই যাত্রীদেরই একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে। একে হত্যা ছাড়া কী বলা যেতে পারে! বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যেসব চালকের ভুলের জন্য দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই কিভাবে যেন দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যায়। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, চালকরা যেন গাড়ি চালানোর দক্ষতা অর্জনের চেয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে কিভাবে পালিয়ে যাওয়া যায়, এ প্রশিক্ষণই বেশি নিয়ে থাকে।

দুই.
সড়ক দুর্ঘটনায় কোন শ্রেণীভেদ থাকে না। ধনী-দরিদ্র, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তি এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পায় না। বলা যায়, বেপরোয়া ও দুর্বিনীত গাড়ি চালকরা এদের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যেসব দুর্ঘটনা ঘটে এবং যেসব মানুষ মৃত্যুবরণ করে তার শতকরা ৭০ ভাগই কর্মক্ষম এবং দেশের অর্থনীতিতে তাদের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি যখন দুর্ঘটনায় মারা যায়, তখন সে পরিবারটি ধ্বংস হয়ে যায়। যারা আহত হয়, তারা পরিবার ও সমাজের বোঝায় পরিণত হয়। চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। তাদের ভারণপোষণ ও মানুষ করার দায়িত্ব কাউকে নিতে দেখা যায় না। এমন শত শত পরিবার রয়েছে, যারা সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে এক অনিশ্চিত জীবনের পতিত হয়েছে। চালক বেঁচে গেলে হয়ত তার পরিবার অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু তার কারণে যার বা যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারগুলোর কি হয়েছে, তা কি কখনো ভেবে দেখে? তার হাতে যে রক্তের দাগ লেগে রইল, এ দাগ কি কখনো মুছতে পারবে? সে যে পরিবহণ প্রতিষ্ঠানের গাড়িটি চালিয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কি এ বিষয়টি কখনো ভেবেছে? সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ও কি কখনো তাদের খোঁজ-খবর নেয়? নেয় না। বরং আমরা দেখেছি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা পরিবহন মালিকরা দুর্ঘটনাকে ¯্রফে দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করতে। চালককে ‘ঘাতক’ বলা যাবে না বলে তীব্র আপত্তি করতে। এর অর্থ হচ্ছে, গণপরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট চালক এবং মালিকদের এক ধরনের দায়মুক্তি রয়েছে। তারা অদক্ষ ও অযোগ্য হলেও তাদের কারণে দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যু হলে, তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তারা যেভাবে খুশি সেভাবে গাড়ি চালাবে, এতে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের দায়ী করা যাবে না। দায়মুক্তির এই প্রবণতা থেকে যতদিন না বের হয়ে আসা যাবে, ততদিন মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক যে শব্দেই প্রকাশ করা হোক না কেন, দুর্ঘটনা যে ঘটবে তাতে সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে চালকের ভুল এবং বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। এটাই হওয়া স্বাভাবিক। যে দেশে অসংখ্য চালক ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে গাড়ি চালায়, সেখানে দুর্ঘটনার হার ও মানুষের হতাহতের ঘটনা এবং পরিবার-পরিজনের হাহাকার ও আর্তনাদ কমার কোন কারণ নেই। বিশ্বের কোন সভ্য দেশে মানুষ মারার এমন চলমান গণপরিবহণ ব্যবস্থা আছে কিনা, আমাদের জানা নেই। উন্নত বিশ্বে নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ির গতিসীমা সামান্য অতিক্রম এবং লেন পরিবর্তন করলেই সংশ্লিষ্ট গাড়ি চালকের অরিজিনাল লাইসেন্স স্থগিত, এমনকি বাতিল করে দেয়া হয়। সেই চালককে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স ফেরত পেতে হয়। আমাদের দেশে এসব নিয়ম-কানুন দূরে থাক, যে সংস্থা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয় তাদের বিরুদ্ধেই জাল লাইসেন্স প্রদানের অভিযোগ রয়েছে। তার উপর রয়েছে গাড়ি চালক, শ্রমিক সংগঠন এবং পরিবহন মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব। জাল লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরলে বা অভিযান চালালে তারা হয় পরিবহণ ধর্মঘট না হয় কৌশলে গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ উন্নত হচ্ছে, একের পর এক আধুনিক সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুঃখের বিষয়, গণপরিবহণে যেসব অনিয়ম চলছে এবং বেড়ে চলেছে, এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ খাতটিকে কেন নিরাপদ ও শৃঙ্খল করা হচ্ছে না? এ খাত এবং এর সাথে জড়িতদের যদি সংস্কার ও সুশৃঙ্খল করা না যায়, তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা যতই উন্নত করা হোক এবং যতই আধুনিক করা হোক না কেন, তাতে কোন লাভ হবে না। বেপরোয়া চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি মসৃন ও আধুনিক সড়কেও দুর্ঘটনা ঘটাবে।

তিন.
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বহু কথা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় এ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অনেক লেখালেখি করেছেন। এখনও করছেন। বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। এসবে যে কোন কাজ হচ্ছে না, তা সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির হার প্রমাণ করে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কোন বিচলন আছে বলেও মনে হচ্ছে না। বরং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের পক্ষাবলম্বন করতে দেখা গেছে। এটাই বাস্তবতা। যে চালক ও যে পরিবহন সংস্থার ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে, তারা যদি নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে প্রশ্রয় পায়, তবে তাদের বেপরোয়া মনোভাব রোখার সাধ্য কারও নেই। এর ফলে বেপরোয়া চালকরা নিজেদের ‘রাস্তার রাজা’ ভাববে, যাত্রীরা তাদের কাছে জিম্মি হবে, সড়ক-মহাসড়ক মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ধরনের প্রবণতা মানবঘাতি এবং জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচলে মানবাধিকার খর্ব করা ছাড়া কিছুই নয়। দিনের পর দিন সড়ক দুর্ঘটনায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, এ ক্ষতিকে ¯্রফে দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায় মানুষের কোন হাত নেই বলে এড়িয়ে যাওয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিশ্বব্যাংকের এক হিসেবে দেখানো হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপি’র ১ শতাংশের বেশি। রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে দেড় শতাংশের বেশি। সড়ক দুর্ঘটনায় যে প্রতি বছর এই অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের গাফিলতি দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝে মাঝে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কয়েক বছর আগে পথচারী যাতে ভিআইপি সড়ক দিয়ে যত্রতত্রভাবে পারাপার হতে না পারে, সেজন্য মোবাইল কোর্ট বসানো হয়েছিল। কয়েক শ’ পথচারীকে জরিমানাও করা হয়েছিল। কিছুদিন পর আবার যেই-সেই অবস্থা। প্রশ্ন হচ্ছে, স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না কেন? এভাবে আর কতদিন? দেশের কর্মক্ষম ও মেধাবী ব্যক্তিদের বাঁচাতে এর স্থায়ী সমাধান কি সরকার অনুভব করছে না? তাদের জীবন কি গণপরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা ও কিছু বেপরোয়া গাড়ি চালকের হাতে জিম্মি হয়ে থাকবে? আমরা দেখেছি, যখনই কোন বিশিষ্টজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন, তখন সরকার সংশ্লিষ্টরা দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন। নিশ্চয়ই তারা শোক প্রকাশ করবেন, অশ্রুসজল হবেন। পাশাপাশি আমরা তো আশা করি, পরিবহন খাতে যে মারাত্মক ত্রুটি-বিচ্যুতি বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, সেগুলোর ব্যাপারেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেবেন। দুঃখের বিষয়, আমরা এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয় না। সরকারকে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর মনোভাব পোষণ এবং দমন করার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখা যায়। সড়ক ও পরিবহন খাতে যে অনিয়ম দানা বেঁধে রয়েছে, এ ক্ষেত্রে যদি এমন মনোভাব পোষণ করত, তবে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে যেত। জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সড়ক নিরাপত্তা দশক ঘোষণা করেছিল। সেখানে প্রতিটি সদস্য দেশকে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করার কথা বলা হয়েছিল। এ পরিকল্পনার আওতায় সদস্য দেশগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশ দেশ পর্যায়ক্রমে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুহার কমিয়ে আনলেও আমাদের দেশ তা থেকে অনেক পেছনে রয়েছে। দুর্ঘটনা ও মৃত্যুহার কমানোর পরিবর্তে তা বেড়েই চলেছে।

চার.
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বহু উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। এসব উদ্যোগ কি কেবল পরিকল্পনা বা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাস্তবায়িত হবে তা কেউ বলতে পারে না। কিছুদিন যেতে না যেতেই এসব উদ্যোগ ও পরিকল্পনা ঝিমিয়ে পড়ে। আরেকটি ট্র্যাজিক ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত যেন অপেক্ষায় থাকে। অথচ উদ্যোগ নেয়া হবে-হচ্ছের মাঝেই প্রায় প্রতিদিন একের পর এক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এ ধরনের শৈথিল্য ও গাফিলতি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে পরিবহন খাত এবং সড়ক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলায় আইনের শাসন খুবই নাজুক। পরিবহন খাতে যেসব সংগঠন ও প্রভাবশালী ব্যক্তি যুক্ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তাদের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। রাস্তায় গাড়ি চললে দুর্ঘটনা ঘটবে, তাদের মধ্যে এ মনোভাব বিরাজমান। নিজের গাড়িটির ফিটনেস আছে কিনা কিংবা চালক দক্ষ কিনা, তা এড়িয়ে যায়। ফলে তাদের কাছে যাত্রীরা বছরের পর বছর ধরে জিম্মি হয়ে আছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আজ পর্যন্ত এ খাতটিকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করতে পারেনি। একটি দেশে পরিবহন খাতে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থাপনাসহ যত ধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা রয়েছে, তা বছরের পর বছর চলছে, অথচ কোনো প্রতিকার নেই, এটা ভাবা যায় না। সড়ক-মহাসড়কে আর কত প্রাণ ঝরলে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের হুঁশ হবে, তা কেউ বলতে পারে না। আর কবে এ খাতটিকে আধুনিক ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে? সড়ক ও সেতু মন্ত্রীকে প্রায়ই দেখা যেত, ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে রাস্তায় নেমে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অনিয়ম পরীক্ষা করতে। তার এই কার্যক্রমকে সাধারণ মানুষের কাছে লোক দেখানো ছাড়া কিছু মনে হয়নি। কারণ, এতে কোনো প্রতিকার হয়নি। মূল জায়গায় হাত না দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে দুয়েকটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে গাড়ি ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ঠিক আছে কিনা, এ পরীক্ষা করে যে কোনো লাভ হয়ে না, তা প্রতিদিনের দুর্ঘটনা বৃদ্ধি থেকেই বোঝা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও মালিকদের আগে সংযত ও সংশোধন করা প্রয়োজন। গাড়ি চালকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই করা জরুরী। এ কাজ না করে কেবল রাস্তায় দুয়েকটি গাড়ি থামিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে এ সমস্যার সমাধান কোনো দিনই হবে না। পরিবহন সংক্রান্ত যেসব আইন রয়েছে, সেগুলো কেবল খাতা-কলমে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখানো অপরিহার্য। দক্ষ চালক গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদার, কাউন্সিলিং, মোটিভেশন এবং গণপরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের চালকদের অরিজিনাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে যে প্রতিষ্ঠানের গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটাবে, সে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। গণপরিবহণখাতে যাত্রীবীমার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা এবং এ অনুযায়ী উদ্যোগী হতে হবে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে-  উপদেষ্টা শারমীন

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে- উপদেষ্টা শারমীন

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক :  শামীম তালুকদার

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী  গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার