গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি : বায়ারদেরও ভূমিকা নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ জুলাই ২০২৩, ০৮:২২ পিএম | আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০২ এএম

একের পর এক ইউরোপীয় ও মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করছেন। চলতি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক প্রতিনিধিবৃন্দ বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পর বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর বাংলাদেশে রয়েছেন। গত কয়েকদিনে তিনি সরকার ও সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সাথে বৈঠক করে নিজেদের মূল্যায়ণ ও অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি স্পষ্টতই বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি , মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের তৈরী পোশাক খাতের প্রতিনিধি এবং ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞদের সাথেও বৈঠক করেছেন গিলমোর। শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের অধিকার এবং মজুরি সম্পর্কে অসন্তোষ ও দাবির কথা ইইউ মানবাধিকার প্রতিনিধির কাছে তুলে ধরেছেন। বিশেষত তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের নি¤œতম মজুরি ২৩ হাজার টাকায় উন্নীত করার দাবির পাশাপাশি তারা ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতেও দাবি জানিয়েছেন।

গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব নিয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে গঠিত একটি কমিটি বর্তমান নি¤œতম মজুরি ৮হাজার টাকা থেকে যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার পর্যালোচনা করছে বলে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দরিদ্র সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। পরিবহন ভাড়াসহ সব ধরণের নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়লেও সাধারণ মানুষের আয় বা মজুরি বাড়েনি। এহেন বাস্তবতায় দেশের তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবির যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায়না। তবে গার্মেন্ট পণ্যের রফতানি আয়ের সাথে সঙ্গতি রেখেই শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে হবে। কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে রফতানি ও মূল্যবৃদ্ধি পেলে তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরাও তার সুফল পেতে পারে। বাংলাদেশের এক নম্বর রফতানি পণ্য তৈরী পোশাক নিয়ে ষড়যন্ত্র কম হয়নি। কর্মপরিবেশ নিয়ে পশ্চিমাদের অসন্তোষ, নাশকামূলক অগ্নিকান্ড ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে দেশের গার্মেন্ট রফতানি তার স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হলেও এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও জীবনমানের ক্ষেত্রে তেমন কোনো আশাব্যঞ্জক উন্নয়ন ঘটেনি। প্রতিকূল বাস্তবতার মুখে শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। শিল্প টিকে থাকলে সেখানে শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকবে। এ কারণেই নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরিকে যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করতে মালিক শ্রমিকদের সদ্ভাব এবং পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কল্পে ক্রেতাদেরও যুক্তিনিষ্ঠ ও মানবিক অবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার নীতির কার্যকারিতা ও দৃশ্যমান ফলাফল প্রত্যাশা করছেন। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অবস্থান থেকে প্রায় অভিন্ন মনোভাব প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের তৈরী পোশাকের সিংহভাগের ক্রেতা। চীন এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেও ইউরোপ-আমেরিকার সাথে বাণিজ্য সব সময়ই বাংলাদেশের অনুকুলে। এমনকি বাংলাদেশি শ্রমিক ও প্রবাসিদের রেমিটেন্স আয়ের ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় গণতন্ত্র, মানবাধিকার, কর্মপরিবেশ ও মজুরিসহ শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলোতে তাদের সুপারিশগুলোকে অগ্রাহ্য করার সুযোগ খুব সংকীর্ণ। তবে বাংলাদেশের সামগ্রিক বাস্তবতাকে মাথায় রেখেই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণতান্ত্রিকভাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশের রাজনৈতিক পক্ষগুলোকে একটি সংলাপ-সমঝোতায় পৌছতে যেমন পশ্চিমা দেশগুলো তাদের প্রভাবকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট রয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্টসহ রফতানি পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে বৃদ্ধি করতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের সাথে রফতানীকারকদের সমঝোতা ও সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও ইমন গিলমোরসহ ইউরোপীয় মানবাধিকার কর্মীদের কার্যকর ভূমিকাই প্রত্যাশিত। গার্মেন্ট মালিকরা যেমন শ্রমিকদের স্বার্থের প্রশ্নে মানবিক দৃষ্টি দেবেন, একইভাবে ইউরোপীয় ক্রেতাদেরও আমদানি করা পণ্যের উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে-  উপদেষ্টা শারমীন

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে- উপদেষ্টা শারমীন

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক :  শামীম তালুকদার

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী  গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার