ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থা: এ মুহূর্তে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কী?
২১ আগস্ট ২০২৩, ০৭:৫৩ পিএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম
দেশের অর্থনীতির চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হওয়ার পরও সরকারের সিদ্ধান্তক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ গঠনের জন্য যে আবেদন আহ্বান করেছিল, তাতে ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এতে অনেকটাই বিস্মিত হয়েছেন। মোট ৫২টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক, ননব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠন, ওষুধ কোম্পানি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রযুক্তিখাতে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, এমন প্রতিষ্ঠানও ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদন করেছে। বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক, এমন কি সরকারি ব্যাংকও ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায়। ইনকিলাবের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক যৌথভাবে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। চারটি সরকারি ব্যাংকও ডিজিটাল করতে চায়। ‘ব্যাংক ব্যবসা’ যে খুবই লাভজনক, ডিজিটাল ব্যাংক করার অতি উৎসাহ তার প্রমাণ বহন করে। বিভিন্ন ব্যাংকের তরফে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স চাওয়ার আবেদন সঙ্গত কারণেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ইতোমধ্যে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রায় সব সেবাই প্রদান করছে। সেক্ষেত্রে তারা ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স চাইছে কেন? আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ডিজিটাল ব্যাংক যেসব সেবা দেবে সেসব সেবা বিদ্যমান ব্যাংকিং সেবার উন্নয়ন ঘটিয়েই দেয়া সম্ভব। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাংকগুলোর প্রযুক্তি সক্ষমতা বেড়েছে। ব্যাংকে না গিয়েও এখন গ্রাহক হিসাব খুলতে পারছে। অর্থ জমা, উত্তোলন ও স্থানান্তর করতে পারছে। ঋণগ্রহণ প্রক্রিয়াও এখন ডিজিটাল। বেশিরভাগ ব্যাংক ডিজিটাল সেবা সহজ করতে অ্যাপস চালু করেছে। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো মুর্হূতে লেনদেন করা যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রয়োজন কী? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল ব্যাংক আর্থিক খাতের উন্নতির বদলে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দেশের বর্তমানে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ৪৩টি বেসরকারি খাতের। সরকারি খাতের বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সংখ্যা নয়টি। এই সঙ্গে আরো নয়টি বিদেশি ব্যাংকও সেবা দিচ্ছে। দেশের আর্থিকখাতের যে পরিধি তাতে এতগুলো ব্যাংকের আদৌ প্রয়োজন নেই। অথচ, সরকারের তরফে একের পর এক ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত এক দশকে এক ডজনেরও বেশি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স ইস্যু করার বিপক্ষে থাকলেও সরকারি চাপের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। এতে ব্যাংক খাত দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা এখন এমন যে, বিদ্যমান ব্যাংকগুলোর সুষ্ঠুভাবে তদারক করতে পারছে না। প্রায়ই কোনো না কোনো ব্যাংক সম্পর্কে নেতিবাচক খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। এতে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের অবস্থা ও নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর বাড়তি চাপ ও ভার বাড়াবে। এখন ব্যাংক খাতের সার্বিক অবস্থা নাজুক। এর সব সূচকই নেতিবাচক। সাম্প্রতিককালে ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বিপরীতে প্রবিশন সংরক্ষণের হার কমেছে। এতে সার্বিকভাবে মূলধন সংরক্ষণের হারও কমেছে। চাহিদামত মূলধন না আসায় বা না থাকায় ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকে আমানত প্রবাহ কমেছে। ফলে তারল্য প্রবাহও কমেছে। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়েছে। ওদিকে ডলার সংকটে বেশির ভাগ বাংকের ঝুঁকি বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুদ হারের ঝুঁকি।
ব্যাংক খাতের এই বেহাল ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেটাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দাবি করে। ব্যাংক খাত বা ব্যাংক ব্যবস্থার সুস্বাস্থ্যের ওপর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বিশেষভাবে নির্ভর করে। অথচ, আমাদের ব্যাংক খাত নানা দুর্বলতা, অসুস্থতা, বিশৃংখলা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ধুঁকছে। এই খাত থেকে নানা অসিলায় ও প্রক্রিয়ায় বিদেশে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। খেলাপী ঋণ অতিবৃদ্ধির পেছনেও ব্যাংক খাতের অব্যবস্থাপনাই মূলত দায়ী। এরূপ অবস্থায় ব্যাংক খাতের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি, শৃংখলাহীনতা ও অব্যবস্থাপনা দূর করার বিকল্প নেই। তা না করে ডিজিটাল ব্যাংকের দুয়ার খোলা কতটা সমীচীন, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল ব্যাংকের প্রসার ঘটছে। আমাদের দেশেও এর প্রয়োজন আছে বৈকি! তবে এমূহূর্তে বা এখনই নয়। এটাই বিশেষজ্ঞদের মত। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ডিজিটাল ব্যাংক অর্থনীতিতে ডিজিটাল স্ক্যাম তৈরি করতে পারে। তার ভাষায়, যদু-মদু-কদু সবাই ডিজিটাল ব্যাংক করার আবেদন করেছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেকে লাইসেন্স পেয়ে যাবে। তাদের কারণে যোগ্যরা বঞ্চিত হবে। কাজেই আমরা বলবো, দ্রুত বা হুলুস্থুল করার প্রয়োজন নেই। সবদিক বিবেচনা করে সময় নিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হোক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ট্রাম্প
ভোটের অধিকার রক্ষায় জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে : সিইসি
অস্ত্র মামলায় মামুন খালাস
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
ইনু-মেনন-সালমান-আনিসদের রিমান্ড, নতুন করে গ্রেপ্তার মন্ত্রী-এমপিসহ ১৬ জন
দলীয় নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান এবি পার্টির
হত্যা মামলায় মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ৫ দিনের রিমান্ডে
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
আমদানি মূল্য পরিশোধের সময় বাড়াল কেন্দ্রীয় ব্যাংক
বকেয়া পরিশোধে জুন পর্যন্ত সময় বাড়লো আদানি
অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রত্যাহার ব্রিটিশ এমপিদের
দিল্লি ফ্যাসিবাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে : রিজভী
বেক্সিমকোর ১৬টি কারখানার ছাটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরি ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত ২৭ জানুয়ারি
যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট আগেও ইসরায়েলের হামলা গাজায় বিলম্বিত সময়ের মধ্যে নিহত ১৯
আমেরিকার স্বর্ণযুগ শুরু হচ্ছে
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের মাঝে ছাত্রদল নেতার শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ
এবার মেডিকেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণদের ফল স্থগিত
চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এলডিপি মহাসচিবের বৈঠক
সরিষাবাড়ী ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ