মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের জাল সনদ রুখতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

সম্প্রতি কারিগরি বোর্ডের সনদ জালিয়াতির ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ বোর্ডের অধীনে থাকা হেলথ টেকনোলজিস্টদেরও জাল সনদ দেয়ার ঘটনা উঠে এসেছে। সনদ জালিয়াতের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানা গেছে। তারা কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্টদের জাল সনদ বিক্রি করেছে। এ নিয়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে হাতাশা দেখা দিয়েছে। এটি একটি ভয়াবহ ঘটনা। কারণ, বিভিন্ন রোগ নির্ণয় বা মেডিক্যাল টেস্ট হেলথ টেকনোলজিস্টরাই করে থাকে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ সবধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তারাই করে থাকে। তাদের দেয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসা করেন। ভুল রিপোর্টের কারণে চিকিৎসা করলে রোগীর জীবনমরণ সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ধরনের ঘটনা ইতোমধ্যে ঘটেছে। ভুল রিপোর্ট ও চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে প্রকাশিত ঘটনার বাইরেও আরও অসংখ্য ভুল রিপোর্ট ও ভুল চিকিৎসার ঘটনা রয়েছে, যা অপ্রকাশিতই থেকে গেছে। রোগী বা রোগীর আত্মীয়সজনও হয়তো জানে না, তারা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছে।

চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে রোগ নির্ণয় করার ব্যবস্থা অনেক আগেই গড়ে উঠেছে। এখন চিকিৎসকের কাছে গেলে রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়। এই রোগ নির্ণয়কে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে অলিগলিতেও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অধিকাংশেরই রক্তসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা পরীক্ষার যথাযথ যন্ত্রপাতি নেই। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করার মতো দক্ষ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টও থাকে না। এতে সঠিক রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় ভুল রিপোর্টের ভিত্তিতে রোগীর চিকিৎসা করায় উপশমের পরিবর্তে আরও জটিলতা দেখা দেয়। এমনও দেখা গেছে, রোগীর যে রোগ হয় নাই, রিপোর্টে সে রোগ উল্লেখ করা হয়েছে। আবার রোগ হয়েছে, রিপোর্টে তা আসে নাই এবং একজনের রিপোর্ট অন্যজনকে দিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসকরাও এর ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন। এতে যেমন সুস্থ মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি অসুস্থ মানুষও সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, সঠিক পরীক্ষা করার মতো দক্ষ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট না থাকা। অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল এ কাজে নিয়োজিতদের সার্টিফিকেট জাল হলে সঠিক রিপোর্ট পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সনদপ্রাপ্ত টেকনোলজিস্ট ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এ পদে লোক নিয়োগ দিলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালগুলোর পক্ষে টেকনোলজিস্টদের সার্টিফিকেট আসল না নকল, তা পরীক্ষা করে কিনা, এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় কোর্স পরিচালনার দায়িত্ব স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নীতিমালার অধীনে। এ নীতিমালা উপেক্ষা করে ২০০৬ সালে কারিগরি বোর্ড ৩ থেকে ৬ মাস এবং এক বছর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট কোর্স চালু করে। অথচ এ বোর্ডে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় পরিচালনার মতো অবকাঠামো, মেডিক্যাল বিষয়ে যোগ্য ও অভিজ্ঞ জনবল এবং প্র্যাক্টিক্যাল করার হাসপাতাল নেই। মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অসৎ উদ্দেশ্যেই স্বস্থ্যনীতিমালা উপেক্ষা করে এই কোর্স চালু করা হয়। এখন নকল সনদ ধরা পড়ার পর তা জানা গেছে। যারা জাল সনদ নিয়ে বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে কর্মরত, তারা রোগের যে রিপোর্ট দিয়েছে এবং দিচ্ছে, তা এখন রোগীদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের মধ্যেও অনাস্থা ও হতাশা সৃষ্টি হওয়া হয়েছে। দেশে রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি এখন সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেছে। বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়ার সময় অনেকে দেশে করা টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে গেলে সেখানের চিকিৎসকরা তাতে আস্থা না রেখে নতুন করে পরীক্ষা করেন। অনেক সময় দেশের রিপোর্টের সাথে তাদের রিপোর্টের মিল থাকে না। এতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার বদনাম হয়। ভুয়া সনদধারী টেকনোলজিস্টদের কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা উপেক্ষা করে কারিগরি বোর্ড কী করে এই কোর্স চালু করেছে? এক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায় ও উদাসীনতা রয়েছে। অন্যদিকে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কোর্স চালু করলেও সেখানে যথাযথ প্রশিক্ষণের সব ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি করা উচিৎ ছিল।

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং সত্যিকারের সনদ রয়েছে কিনা, তা এখন খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়াই জাল সনদ নিয়ে কেউ কর্মরত কিনা, তাও খুঁজে বের করা দরকার। যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর রোগীর সঠিক চিকিৎসা এবং সুস্থ্যতা-অসুস্থ্যতা জড়িয়ে আছে, সেখানে কোনো অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে জাল সনদপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষকেও স্বউদ্যোগে নিয়োজিত টেকনোলজিস্টদের সনদ পরীক্ষা করতে হবে। মাদকাসক্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা মাদকমুক্ত কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে। টেকনোলজিস্টদের জাল সনদ ধরা পড়ার কারণে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর যে অনাস্থা সৃৃষ্টি হয়েছে, তা সংশ্লিষ্টদেরই দূর করতে হবে। যারা এসব জাল সনদ ও দুর্নীতির সাথে জড়িত, তাদেরকে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ। এ ব্যাপারে তিনি কোনো ছাড় দেবেন না বলে আমরা আশা করি।

 


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভুয়া মামলায় সাজা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের : আবদুস সালাম

ভুয়া মামলায় সাজা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের : আবদুস সালাম

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে ১৪৩ দেশের ভোট

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠনের পক্ষে ১৪৩ দেশের ভোট

প্রবাসে দেশের সম্মান বৃদ্ধিতে কাজ করুন

প্রবাসে দেশের সম্মান বৃদ্ধিতে কাজ করুন

পিটার হাসের জায়গায় ডেভিড মিল, স্বাগত জানাল বাংলাদেশ

পিটার হাসের জায়গায় ডেভিড মিল, স্বাগত জানাল বাংলাদেশ

ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই শোকজ চেয়ারম্যান প্রার্থী জাবেদকে

ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই শোকজ চেয়ারম্যান প্রার্থী জাবেদকে

পিডিবিএলের ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

পিডিবিএলের ১৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

ইউএস ট্রেড শো : দর্শনার্থীদের ভিড় প্রসাধনীর স্টলে

ইউএস ট্রেড শো : দর্শনার্থীদের ভিড় প্রসাধনীর স্টলে

সরকারি অনুষ্ঠানে ভোট প্রার্থণা প্রার্থীর

সরকারি অনুষ্ঠানে ভোট প্রার্থণা প্রার্থীর

শঙ্কার কালো স্রোত পেরিয়ে অবশেষে জয়ের হাসি

শঙ্কার কালো স্রোত পেরিয়ে অবশেষে জয়ের হাসি

সরাইলে ১১ দোকান পুড়ে ছাই

সরাইলে ১১ দোকান পুড়ে ছাই

দেশের মানুষ আর দুর্দিন দেখতে চায় না- গৃহায়ণ মন্ত্রী

দেশের মানুষ আর দুর্দিন দেখতে চায় না- গৃহায়ণ মন্ত্রী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল, ফেসবুকে সমালোচনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের বানান ভুল, ফেসবুকে সমালোচনা

মানবতার দুশমন ইসরাইলকে সমুচিত জবাব দিতে হবে -জাতীয় উলামা মুভমেন্ট

মানবতার দুশমন ইসরাইলকে সমুচিত জবাব দিতে হবে -জাতীয় উলামা মুভমেন্ট

গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জাতিসংঘকে উদ্যোগ নিতে হবে

গাজায় ইসরাইলি হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জাতিসংঘকে উদ্যোগ নিতে হবে

বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হলেও ‘নীরব’ নির্বাচন কমিশন

বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি হলেও ‘নীরব’ নির্বাচন কমিশন

লোহাগড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা

লোহাগড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যাচেষ্টা

বেগমগঞ্জে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় লম্পটের শাস্তির দাবি

বেগমগঞ্জে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় লম্পটের শাস্তির দাবি

গালির বিপরীতে সমপরিমাণ গালি ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে।

গালির বিপরীতে সমপরিমাণ গালি ফিরিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে।

ছোট পুঁজি নিয়েও লড়ছে বাংলাদেশ

ছোট পুঁজি নিয়েও লড়ছে বাংলাদেশ

গফরগাঁওয়ে উপজেলা নির্বাচনে ১৪ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল

গফরগাঁওয়ে উপজেলা নির্বাচনে ১৪ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল