পবিত্র ঈদুল আজহা

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ১২:০৪ এএম

ত্যাগের মহিমা, ঐশী অনুপ্রেরণা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আগামীকাল বাংলাদেশে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। আরবী ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, খুশি, উৎফুল্লতা ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদ নিছকই আনন্দ, খুশি বা উৎফুল্লতা নয়। এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক দিকও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও আত্মত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। পশু কোরবানির মাধ্যমে পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তার সন্তুষ্টি অর্জনই ঈদুল আজহার লক্ষ্য। কোরবানি ঈদুল আজহার প্রধান আমল বা কর্তব্য। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হলো নিজের মধ্যে থাকা পশুবৃত্তি ও স্বভাবকে কোরবানির মাধ্যমে বিনাশ করা। মহানবী (সা.) এই ঈদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছেন, এটি তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর সুন্নাত। বলাবাহুল্য, হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহপাকের প্রতি গভীর আনুগত্য ও তাঁর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের যে নজির স্থাপন করেন, ঈদুল আজহা তারই স্মারক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)- কে কোরবানি করার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তার নজির মানব ইতিহাসে বিরল। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি এবং রহমত ও নির্দেশে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর স্থলে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই থেকে আল্লাহতায়ালার নির্দেশে পশু কোরবানির বিধান চালু হয়।

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, কোরবানির পশুর গোশত বা রক্ত কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। ঈদুল আজহার মর্মবাণী হলো, এই তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ হলো, মুমিনের সেই সংকল্প যাতে প্রয়োজন বোধে সে তার সব কিছু এমনকি প্রাণও আল্লাহপাকের নামে কোরবানি করতে প্রস্তুত। আসলে যে কোরবানিতে তাকওয়া নেই, আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে তার কোনো মূল্য নেই। গোশত খাওয়া, সামাজিকতা রক্ষা করা কিংবা অর্থবিত্তের গরিমা প্রকাশ করা কোরবানি নয়। কোরবানির নিয়ত ও লক্ষ্য যদি ঠিক না হয়, তবে সে কোরবানির কোনো ফায়দা নেই। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে কোরবানির এই দিকটি অনেকেই খেয়াল রাখেন না। অনেকেই কোরবানির মর্মবাণী অনুধাবন না করে নানা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন। তাদের কোরবানি তাদের কোনো কাজে আসেনা। কোরবানিকে ওয়াজিব করা হয়েছে। যাদের জন্য তা ওয়াজিব, রাসুলেপাক (সা.) তাদেরকেই কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মর্মে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন লোক কোরবানি না করলে সে যেন ঈদগাহে না যায়। কোরবানির ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, মানবিক নানা কল্যাণকর দিকও রয়েছে। ধনী-দরিদ্র সবাই যেন ঈদের আনন্দ সমভাবে উপভোগ করতে পারে, সে জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরবানির গোশতের অংশ আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রের মধ্যে বিতরণ আবশ্যক, যাতে তারাও ঈদের আনন্দ সমভাবে ভোগ করতে পারে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠা কোটি কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অসংখ্য মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের জীবনে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই। সামর্থ্য অনুসারে, তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া কর্তব্য। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দসওগাত পৌঁছে দেয়া প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের নৈতিক-সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।

ঈদে ঘরমুখী মানুষের ¯্রােত স্বাভাবিক বিষয়। ঈদের চিরায়ত আনন্দ উপভোগ করতে লাখ লাখ মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের দিকে ছুটে চলেছে। গ্রামে বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে ঈদ করতে তারা উদগ্রীব। অথচ এই যাত্রাপথ তাদের জন্য বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট ও ধীরগতির কারণে পথে পথে তাদেরকে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বিষয়টি সড়ক ও সেতু পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অজানা থাকার কথা নয়। এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা অনুমিতই ছিল। তারপরও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যদি সড়ক-মহাসড়কে ঈদের ছুটির দিনগুলোতে যাতায়াত নির্বিঘœ ও মসৃণ করার জন্য আগে থেকে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়া হতো, তাহলে ঘরমুখী মানুষের এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। প্রচ- ঘরম এবং যানজট সৃষ্টি হওয়াতে তাদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অনেকে পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যানজটের মূল কারণ হচ্ছে, সড়কে অবৈধ দখল। সড়কের উপর হাটবাজার বসা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, অবৈধ পার্কিং, থ্রি হুইলার জাতীয় ছোট যানবাহন চলাচলের কারণে যানবাহন স্বাভাবিক অবস্থায় চলাচল করতে পারছে না। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের মানুষ একযোগে ঘরমুখো হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই সড়ক-মহাসড়কের উপর চাপ পড়ে। এখন সড়ক-মহাসড়কের যথেষ্ট উন্নতিসাধন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির মধ্যে এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ঈদের ছুটির দিনগুলোতে যদি সড়ক ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকত, তাহলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে যেত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এ ব্যাপারে এখনই তৎপর হওয়া বাঞ্চনীয়। যেসব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, সেসব এলাকায় তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যানবাহন যাতে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে এবং কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। সড়কে অবৈধ বাজার, অবৈধ দখল এবং থ্রি হুইলার জাতীয় ধীরগতির যানবাহন উচ্ছেদ করতে হবে। ঈদযাত্রা নির্বিঘœ, নিরাপদ ও মসৃণ করতে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সচেতন ও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, এ ব্যাপারে অধিক তৎপর ও সতর্ক থাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সেবা প্রস্তুত রাখতে হবে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ যাতে ঈদের অনাবিল আনন্দ উপভোগ করতে পারে, এজন্য সেখানে যাতায়াত, থাকার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সংকট চলছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। প্রচ- ঘরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এ প্রেক্ষিতে, অন্তত ঈদের দিনগুলোতে মানুষ যাতে বিদ্যুতের কষ্ট না পায়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টি দিতে হবে। অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে থাকা অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সামর্থ্যবান ও বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানাই। ঈদের আনন্দ, কোরবানির গোশত ভাগাভাগির মাধ্যমে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ত্যাগের মহিমায় আত্মনিবেদিত হওয়া সকলের কর্তব্য। কোরবানির পশুর বর্জ্য যাতে দ্রুত অপসারণ করা হয়, এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনসহ পৌরসভা ও জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা কোরবানি করবেন, তাদেরও সচেতন হতে হবে। পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেফাজত করুন। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ডি ব্রুইনা-টিয়েলম্যানসের গোলে আসরের প্রথম জয় বেলজিয়ামের

ডি ব্রুইনা-টিয়েলম্যানসের গোলে আসরের প্রথম জয় বেলজিয়ামের

ডি ব্রুইনা-টিয়েলম্যানসের গোলে আসরের প্রথম জয় বেলজিয়ামের

ডি ব্রুইনা-টিয়েলম্যানসের গোলে আসরের প্রথম জয় বেলজিয়ামের

বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পন

বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পন

প্রতিবছর বন্যায় বাংলাদেশের ক্ষতি এক বিলিয়ন ডলার

প্রতিবছর বন্যায় বাংলাদেশের ক্ষতি এক বিলিয়ন ডলার

আরকানসাসে সুপারশপে গুলিতে নিহত ৩, আহত ১০

আরকানসাসে সুপারশপে গুলিতে নিহত ৩, আহত ১০

ইউএনও-ডিসিতে এতো মধু!

ইউএনও-ডিসিতে এতো মধু!

অফিসে এক মিনিট দেরিতে এলেও ‘শাস্তি’

অফিসে এক মিনিট দেরিতে এলেও ‘শাস্তি’

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের

রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের

কালো টাকা সাদা করার সুযোগে বৈধ করদাতাদের অনীহা তৈরি হবে

কালো টাকা সাদা করার সুযোগে বৈধ করদাতাদের অনীহা তৈরি হবে

তুরষ্কের বিপক্ষে অনায়াস জয়ে শেষ ষোলোয় রোনালদোর পর্তুগাল

তুরষ্কের বিপক্ষে অনায়াস জয়ে শেষ ষোলোয় রোনালদোর পর্তুগাল

সূর্যোদয়ের পর ফজরের নামাজ পড়লে সুন্নাত পড়া প্রসঙ্গে।

সূর্যোদয়ের পর ফজরের নামাজ পড়লে সুন্নাত পড়া প্রসঙ্গে।

আর্জেন্টিনা-কানাডা ম্যাচ ঘিরে বর্ণবাদী আচরণ, তদন্তে কনকাকাফ

আর্জেন্টিনা-কানাডা ম্যাচ ঘিরে বর্ণবাদী আচরণ, তদন্তে কনকাকাফ

বাজেট হেল্পডেস্ক পরিদর্শন স্পিকারের

বাজেট হেল্পডেস্ক পরিদর্শন স্পিকারের

পেলের মা জানতেন না ছেলের মৃত্যুর খবর!

পেলের মা জানতেন না ছেলের মৃত্যুর খবর!

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে সংযোগ, সীমান্ত, নদী ও বিদ্যুৎখাতে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে সংযোগ, সীমান্ত, নদী ও বিদ্যুৎখাতে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভারতকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়া রোহিতকে ফেরালেন সাকিব

ভারতকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়া রোহিতকে ফেরালেন সাকিব

চেক রিপাবলিককে রুখে দিল জর্জিয়া

চেক রিপাবলিককে রুখে দিল জর্জিয়া

ঢাকায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ঢাকায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বাজারের ডাক নিয়ে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ আহত-৩০

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় বাজারের ডাক নিয়ে আওয়ামীলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ আহত-৩০

জোড়া ধাক্কায় বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন তানজিম

জোড়া ধাক্কায় বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন তানজিম