গার্মেন্ট শ্রমিকের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা ও তার প্রভু মোদির একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমূলক ঘটনার মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল এবং ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে। সেসব ষড়যন্ত্র অন্তর্বর্তী সরকার সফলভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গত মাসের শেষের দিকে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতন পরিশোধসহ নানা সুযোগ-সুবিধার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের নামে তারা সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুরসহ ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজিএমইএ এক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হয়। এতে অনেক কারখানা বেতন পরিশোধ করে পুর্নোদ্যমে উৎপাদন শুরু করে। তবে কিছু কারখানার শ্রমিকরা পুনরায় নানা দাবি নিয়ে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে। গত সোমবার বকেয়া বেতন ও বিভিন্ন দাবিতে দুটি কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আন্দোলন শুরু করে। সংশ্লিষ্ট গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির সিংহভাগ মেনে নেয়ার পরও তারা পুরো দাবি মানার অজুহাতে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে সকাল থেকেই মহাসড়ক ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীসহ কর্মজীবীরা অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। তারা যথাসময়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যেতে পারেনি। বিদেশগামীরা সময়মতো বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পারায় ফ্লাইট মিস করে। যানজটে অ্যাম্বুলেন্স আটকে পড়ায় রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে যায়।
বেতনভাতা ও বিভিন্ন দাবি দাওয়ার নামে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে একশ্রেণীর শ্রমিকের আন্দোলন যে ষড়যন্ত্রের অংশ, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রমিকদের বেতনভাতা ও বিভিন্ন দাবি আদায়ের নামে আন্দোলন ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ে উসকানি দিয়েছে। তারা বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ১৫ জনের বেশি উসকানিদাতা ও ষড়যন্ত্রাকারিকে আটক করেছে। আটককৃতদের নেপথ্যে যে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার প্রভু ভারতের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারা তাদের দাবার গুটি হিসেবে কাজ করেছে। শ্রমিকদের উত্তেজিত করে গার্মেন্ট খাতকে অচল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপাকে ফেলার ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত। বেশিরভাগ গার্মেন্ট কারখানা সচল থাকলেও কিছু কারখানার শ্রমিক বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা থেকেই বোঝা যায়, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। ন্যায্য দাবিদাওয়া নিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনে কোনো বাধা নেই। তারা মানববন্ধন কিংবা সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি উত্থাপন ও তা আদায় করতে পারে। তবে সন্ত্রাসী কায়দায় সড়ক অবরোধ, কারখানা ও যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের হেতু কি? দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে কেন? তারা কেন সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে? কেন ত্রাসের পথ বেছে নিতে হবে? পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় তাদের এই আন্দোলন কোথায় ছিল? তখন কেন তাদের এ দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করা হয়নি? বলা বাহুল্য, রুটি-রুজির জায়গাই যদি বন্ধ হয়ে যায়, না থাকে, তখন তারা কোথায় আন্দোলন করবে? শ্রমিকদের মনে রাখা উচিৎ, যারা আন্দোলনের নামে কারখানা ভাঙচুর ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে জনজীবন অচল করে, তারা কোনোভাবেই শ্রমিক নয়, তারা সন্ত্রাসী। তারা তাদের পক্ষে নয়, তারা তাদের কর্মক্ষেত্র ধ্বংসকারি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, রফতানি আয়ের প্রায় ৮৩ ভাগ গার্মেন্ট খাত থেকে আসে। গার্মেন্ট খাতে যে অস্থিরতা ও চক্রান্ত চলছে, তা ভারতেরই সৃষ্টি। এর সাথে যুক্ত হয়েছে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র। এটি এখন ওপেন সিক্রেট। গার্মেন্ট খাতের এই ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহ এবং তা প্রতিহত করার পদক্ষেপ নিতে পারছে না। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী সেখানে মোতায়েন থাকলেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারি উচ্ছৃঙ্খলদের নিবৃত্ত করার পরিবর্তে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখছে। অথচ সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা রয়েছে। সন্ত্রাসী কায়দায় সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে তথাকথিত শ্রমিক নামধারীদের আন্দোলন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
শ্রমিক আন্দোলনের নামে গার্মেন্ট খাতে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে নিরীহ শ্রমিক বলে কিছু নেই। নিরীহ শ্রমিক সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িত হতে পারে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও ভারতের দোসররা এসব সন্ত্রাসীকে লেলিয়ে দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। আন্দোলনের নামে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, জনজীবন বিপর্যস্ত ও অচল করে দেয়া এবং অর্থনীতির ক্ষতি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর পেছনে যারা রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিছু গার্মেন্ট মালিকও জড়িত। তারা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের মতো অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে চাইছে। তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শ্রমিকরা ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করুক, তাতে সমস্যা নেই। তবে সে আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ ও ত্রাস সৃষ্টি করে নয়। তাদের মনে রাখতে হবে, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময় বিএনপিকে সড়কে নামতে দেয়া হয়নি। তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কিংবা ঘরোয়া সমাবেশ করে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনের ক্ষেত্রে গার্মেন্ট শ্রমিকদের এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা