সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত কেন?
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম
উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সুষ্ঠু নীতিমালা না থাকায় ডেমরা লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে উৎপাদিত পাটের সোনালি ব্যাগ অবহেলায় পড়ে রয়েছে। এখন পর্যন্ত উৎপাদন এবং বিপণন খরচ চূড়ান্ত পর্যন্ত করা যায়নি। ব্যাগের উৎপাদন খরচ এবং তার বাজারজাত প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এক কেজি পাটের সোনালি ব্যাগ উৎপদনে যেখানে খরচ পড়ে হাজার টাকা সেখানে পলি ব্যাগ উৎপাদনে খরচ হচ্ছে মাত্র ১৫০ টাকা। উৎপাদনের বিশাল এ পার্থক্য কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তার প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে ভাবার এখন সময় এসেছে। এর জন্য আরো বিস্তার গবেষণার প্রয়োজন। নইলে এ খাতে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগকারী পাওয়া সম্ভব হবে না। আমাদের গবেষকরা সময়োপযোগী আবিষ্কার করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের তা এগিয়ে নেয়ার মূল প্রচেষ্টা থাকতে হবে। তাই রাষ্ট্রকে এ খাতের দিকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসার কথা ছিল কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। এ গবেষণা আমাদের দেশের বড় ধরনের সম্পদ। তাকে রাষ্ট্রীয় সাহায্যে-সহযোগিতা দিয়ে এগিয়ে নেয়া উচিৎ ছিল। রাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সারাবিশ্বে পলিব্যাগের প্রাদুর্ভাবে যেখানে পরিবেশ ও মানুষ দিশেহারা, সেখানে আমাদের পরিবেশবান্ধব ব্যাগ হতে পারতো আশির্বাদ স্বরূপ। কিন্তু আমরা তা ছড়িয়ে দিতে পারিনি এবং তার লাভ আমরা ঘরেও তুলতে পারিনি। পলিব্যাগের বিস্তার সব দেশের জন্যই হুমকি স্বরূপ। তাতে পরিবেশ ও প্রতিবেশগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিটি দেশ। পলিব্যাগের আগ্রাসী ভূমিকা রুখতে সবাই যেখানে উদগ্রীব, সেই চাহিদাটাই আমাদের এখন কাজে লাগাতে হবে।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে পড়ে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে ডেমরায় অবস্থিত লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের উৎপাদিত সোনালি ব্যাগের কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি, যা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সুষ্ঠু নীতিমালার অভাবে সরকারি এবং বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা এ খাতের জন্য এগিয়ে আসেনি। রাষ্ট্র তা প্রতিপালন করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই সোনালি ব্যাগের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলেছিলেন তখনকার পাট, বস্ত্র এবং পরিবেশ সচিব। সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাগ বাজারজাত করার জন্য রয়েছে দামের বড় ধরনের ভূমিকা। দামের বিশাল তারতম্যের কারণেও এগিয়ে নেয়া যায়নি। তাই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করা গেলে দামও কমে আসতো এবং তা সহজলভ্য করাও অমূলক ছিল না। যেখানে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা কোনো ব্যাপারই ছিল না।
এক সময় আমাদের দেশের পাটের কদর ছিল বিশ্ব্যাপী। পাটকে তাই বলা হতো সোনালি আঁশ। প্রধান অর্থকরী ফসল ছিল পাট। কৃত্রিম বিকল্প ও প্লাস্টিকের আধিক্যের কারণে পাট ও পাটের তৈরি সামগ্রীর ব্যাপকভাবে ধস নামে। কিন্তু প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব না হওয়ায় আস্তে আস্তে বিশ্ব এখন বিকল্পের কথা ভাবছে। বিশ্ব ভাবনার প্রতিফলনে এখন আমাদের পাটের বিস্তার ছড়িয়ে দিতে পারলেই রেকর্ড পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। আর বিশ্বও পেতো পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ ও অন্যান্য সামগ্রী।
সোনালি ব্যাগ হলো পাট থেকে উদ্ভাবিত এক ধরনের পলিথিন ব্যাগ। তবে প্লাস্টিকের পলিথিন অপচনশীল এবং পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আর পাটের পলিথিন হলো পরিবেশের জন্য আদর্শ এবং পচনশীল। আমাদের স্বনামধন্য বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান সেলুলোজ ভিত্তিক বায়োডিগ্রেডেবল বায়ো প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প হলো এ ব্যাগ তৈরি করেছেন।
আমাদের দেশে মূলত ১৯৮২ সালে পলিথিনের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। তখকার সময়ে পলিব্যাগের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা সোচ্চার হলে পলিব্যাগের নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু নিষিদ্ধ করা হলেও তা মহামারী আকারে দেশের আনাচে-কানাচে, অলি-গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। পলিব্যাগ ব্যবহারে পরিবেশে ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয় এবং শহর-নগরের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সম্পূর্ণরূপে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও ড্রেনেজ এবং খাল বিল- বিল, জলাশয় পরিষ্কার করা সম্ভ হচ্ছে না। এক ঢাকা শহর সামান্য বৃষ্টিপাতেই অচল হয়ে পড়ে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন শত শত কোটি টাকা খরচ করছে ড্রেনেজ সিস্টেম সচল রাখতে কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তাতে নগরবাসী এবং সড়কে চলাচলরত গাড়ি চালকদের নাজেহাল হওয়ার দৃশ্য দেখতে হচ্ছে নিয়মিত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কেজ পানি জমে, যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে পড়ায় যানজটের আকার হয় দীর্ঘ। তাই পলিব্যাগের মহামারী মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
তাই ২০০২ সালে পলিব্যাগের উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করা হয় এবং পরিবেশবান্ধব পলিব্যাগ তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা চালানো হয়। অবশেষে এক যুগের নিরলস গবেষণা ও প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান এবং তার আরো কয়েকজন সহকারী বিজ্ঞানী এনএফসি বা ন্যাচারাল ফাইবার কম্পোজিট প্রস্তুত করতে সক্ষম হন।
পরবর্তীতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন (বিজিএমসি) ভিত্তিক এনএফসি ব্যবহার করে একটি ব্যাগের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এর নাম দেয়া হয় সোনালি ব্যাগ। এ সোনালি ব্যাগ সহজেই পচনশীল, যা মাটিতে মিশে যেতে পারে। পরিবেশের জন্য এমন উদ্ভাবনীর বিকল্প আর কিছু হাতে পারে না। এ ব্যাগের রয়েছে বিশাল চাহিদা। ৫০০ টন যদি একদিনে উৎপাদন করা যায়, তা একদিনেই শেষ হয়ে যাবে। তাই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিত এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই প্রসার ঘটাতে পারে এ ব্যাগের।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ