ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাতিসংঘে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরছেন ড. ইউনূস

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১০ এএম

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম সম্মেলনের মূল সেশনে ভাষণ দেয়ার আগেই বিশ্বনেতাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিনত হয়েছেন। ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে বিরল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি লাইমলাইটে উঠে এসেছে। এরপর গত কয়েকদিনে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মোলোনী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা, চীন সরকারের প্রতিনিধিসহ আরো বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র, সরকার প্রধান, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে অত্যন্ত উষ্ণ ও সফল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, বিল গেটস’র মত ব্যক্তিরা ড.ইউনূসের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজ এবং আগামী দুইদিনে আরো অনেক রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে ড.ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শিডিউল রয়েছে। বিশ্বনেতাদের সম্মানে ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা সভায় বিশ্বনেতাদের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লবের গৌরবগাঁথা নিয়ে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ বা বিজয়ের শিল্পকর্ম রাষ্ট্রনেতাদের হাতে তুলে দেয়ার সাথে সাথে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস নিজেই যেন একজন বিশ্বজয়ী রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। একটি রক্তাক্ত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যে সব রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, জাতিসংঘে ড.ইউনূসের এই সফর সে সব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা উত্তরণে বিশ্বনেতাদেরকে নিজের সহযাত্রী ও সহযোদ্ধায় পরিনত করার মিশনে অনেক আশার আলো দেখাচ্ছেন। বিশেষত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার এবং বিশ্বনেতা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব ও অচিন্তনীয় সাড়া এক নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশের দরোজা খুলে যাওয়ার বার্তা দিচ্ছে।

ড.ইউনূস বাংলাদেশকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের ধারণাকে নতুনভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন। আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আসিয়ানের সদস্যপদ লাভের সদিচ্ছা পোষণের পাশাপাশি সার্কের মত আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়াস এবং রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা ও কূটনৈতিক দক্ষতাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। আজ তিনি বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। সেখানে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের গৌরব গাঁথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের সামনে বিদ্যমান অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমুহ মোকাবেলায় নিজের প্রত্যাশা ও অঙ্গীকারসমুহ তুলে ধরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায় দুইশ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত বিশ্বের অন্যতম জনবহুল, অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্মিলিত স্বার্থ, নিরাপত্তা ও সহযোগিতার প্লাটফর্ম হিসেবে সার্কের যে সম্ভাবনা ছিল, ভারতের অনীহা ও অসহযোগিতার কারণে গত চার দশকেও তা সফল হয়নি। বিগত সরকারের ভারত নির্ভর পররাষ্ট্রনীতির কারনে শুধু আঞ্চলিক সহযোগিতাই নয়, বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের, কানেক্টিভিটি, সহযোগিতা ও সম্পর্কের প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনার কোনো স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ছিল না। বিশেষত পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগি ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের সাথে তার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নগুলো জড়িত ছিল। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন ও প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়গুলোকে আমাদের অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। ড. ইউনূসের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের বিশেষ সম্পর্ক যেন বাংলাদেশকে কোনো বিশেষ দেশ বা বলয়ে আবদ্ধ না করে ফেলে সে দিকে বিশেষ নজর দেয়ার বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না।

আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মটো হচ্ছে, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। হাসিনা রিজিম বাহ্যিকভাবে পরস্পর বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সাথে একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি বজায় রাখার কথা বললেও আদতে তা ছিল নিজের গদি রক্ষার অপপ্রয়াস। পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হয়েছে ভারতের স্বার্থ রক্ষা ও ভারত তোষণের নীতির ভিত্তিতে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের আকাঙ্খা থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভারতীয় আধিপত্য ও আগ্রাসন থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নই ছাত্র-জনতার মূল লক্ষ্য। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সমর্থন এবং ধারাবাহিক প্রয়াসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ছাত্র-জনতার উপর পুলিশি নিপীড়নের বিরদ্ধে শক্ত ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ড.ইউনূসের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে হবে। ভারতের সাথে বৈরীতা নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। ড. ইউনূস বাংলাদেশের সামনে বিদ্যমান আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জসমুহ যথাযথভাবেই তুলে ধরেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে, কিংবা বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা হলে এর প্রভাব পুরো অঞ্চলে পড়বে বলে জানিয়েছেন। সার্কের মতো সম্ভাবনাময় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থাকে নতুনভাবে সক্রিয় করে তুলতে তিনি পাকিস্তানের সহযোগিতা কামনা করেছেন। বলা বাহুল্য, সার্ককে এগিয়ে নিতে পারলে তা এ অঞ্চলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে। বিশ্ব পরিম-লে ড. ইউনূসের উচ্চ অবস্থান, মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশকে একটি আঞ্চলিক নেতৃত্বের অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে বাণিজ্য, উন্নয়ন ও ভারসাম্যপূর্ণ সহযোগিতামূলক ভূমিকার পাশাপাশি পাকিস্তান-ভারতসহ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ অনেক সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে পারে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখেনা, ড.ইউনূসের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব আমাদের দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অর্šÍবর্তী সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি
মুনতাহার মর্মান্তিক মৃত্যু এবং কিছু কথা
ট্রাম্পের বিজয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কি কোনো লাভ হবে?
ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোচালকদের তাণ্ডব রুখতে হবে
স্মৃতির দর্পণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান