প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্র থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের অবিলম্বে বিদায় করে দিতে হবে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দেড় মাসের বেশি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের নিষ্ঠুর শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, শিক্ষক, অভিভাবক, আইনজীবী, মুটেমুজুর, হকার, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মকর্তাসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষ সক্রিয় অংশ নিয়েছে। এই গণবিপ্লব করতে গিয়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষ চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ হয়েছে। তাদের এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বিপুল ও প্রশ্নহীন সমর্থন নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ সরকারকে বলা হয় বিপ্লবী সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিকার অর্থে কি এ সরকার জনগণের কাছে বিপ্লবী সরকারের চরিত্র ধারন করতে পেরেছে? ছাত্র-জনতা যে বিপ্লবী চেতনা ও স্পিরিট নিয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে উৎখাত করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর তার যথাযথ প্রতিফলন কি দৃশ্যমান হয়েছে? অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, জনগণের কাছে এখন পর্যন্ত উপদেষ্টারা এমন প্রমান হাজির করতে পারেননি। ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাতের পর বিপ্লবী সরকারের যে স্পিরিট ও বিপ্লবী চেতনা অনিবার্য-অপরিহার্য ছিল, তা তাদের কর্মকা-ে খুব কমই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ যতই বাড়ছে, জনগণের মধ্যে ততই হতাশা ঘনিভূত হচ্ছে।
যেকোনো বিপ্লবী সরকারের দায়িত্বই হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট সরকারের গড়ে তোলা জনপ্রশাসন, বিচারালয়, সামরিক-বেসামরিক সকল ক্ষেত্র থেকে ফ্যাসিস্টের দোসরদের সঙ্গে সঙ্গে অপসারণ করা, যাতে বিপ্লবের চেতানাবিরোধী কিছু তারা করতে না পারে। আমরা লক্ষ্য করছি, অন্তর্বর্তী সরকার সে কাজটি এখনো করতে পারেনি। এটা তার সদিচ্ছার অভাব, শৈথিল্য নাকি সর্বত্র থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের থিতু হতে দেয়া, এ প্রশ্ন এখন জনমনে দেখা দিয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, রাষ্ট্রের সংস্কার। এ কাজের শুরুতেই রাষ্ট্রের মুল চালিকাশক্তি জনপ্রশাসন দ্রুত সংস্কার করা। দেখা যাচ্ছে, দেড় মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এ কাজটি করা হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও দিল্লীর মদতে গড়ে তোলা জনপ্রশাসন, বিচারালয়সহ সব জায়গায় তাদের দোসররা অক্ষত ও নিরাপদে রয়ে গেছে। উপদেষ্টারা এই প্রশাসন নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু লোকদেখানো কিছু পরিবর্তন কিংবা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বদলির মতো রুটিন কাজ করা হয়েছে। যেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছিল, সেটি এখন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হয়েছে। এর ভেতরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার লোকজন প্রায় অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে। শেখ হাসিনার দোসরদের নিয়ে কি প্রধান উপদেষ্টা গণবিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবেন? জনপ্রশাসন উপদেষ্টা হিসেবে যে আলী ইমাম মজুমদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তিনি এ পর্যন্ত কি কাজ করেছেন? তিনি কি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গড়ে তোলা জনপ্রশাসন সংস্কারে হাত দিয়েছেন? তার কোনো পদক্ষেপ কি দৃশ্যমান হয়েছে? হয়নি। বরং প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখনো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরার বহালতবিয়তে রয়ে গেছে। অভিযোগ উঠেছে, আলী ইমাম মজুমদারসহ আরো দুয়েকজন উপদেষ্টা স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের মিশন নিয়ে কাজ করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের আর্মি ব্যাকড কেয়ারটেকার সরকারের মুখ্যসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন আলী ইমাম মজুমদার। তাঁকে সচেতন মহল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার লোক বলে মনে করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, এখনো প্রশাসনসহ সর্বত্র শেখ হাসিনার দোসররা তার ও দিল্লীর নির্দেশে কাজ করছে। বিচারালয়েও শেখ হাসিনার লোকজন বহাল রয়ে গেছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কী করছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইতোমধ্যে বিএনপি প্রশাসনের সর্বত্র ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে। সর্বশেষ গত শনিবার ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত বিএনপির এক সমাবেশে প্রশাসনে স্বৈরাচারের দোসরদের বহাল থাকা নিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করেই বলেছেন, স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া দলদাস উচ্ছিষ্টভোগীদের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে অন্তর্বর্তী সরকার মাঝে মাঝে অসহায় বোধ করছে। তাদের এই ছোট ছোট ষড়যন্ত্র একসময় মহাবিপদ ডেকে আনবে। তাই তাদের অপসারণ করতে হবে। তাঁর এই কথা অমূলক নয়, বরং বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে। উপদেষ্টাদের কথা ও কাজে সমন্বয়হীনতা এখন যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একেক সময় একেক জন একেক কথা বলছেন। ভারতে ইলিশ রফতানি নিয়ে একেক উপদেষ্টা একেক কথা বলে গণবিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এর ফলে, বিপ্লবী সরকারের যে চরিত্র হওয়া উচিৎ ছিল, তার কোনো আলামতই পরিদৃষ্ট হচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের কারণে সংস্কার ও অর্থনীতি পুনর্গঠনে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছে, তা কি প্রশাসনে বহাল থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের দিয়ে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে? যাবে না। যদি ১০০ বিলিয়ন ডলারও সহযোগিতা আসে, তাতেও কোনো কাজ হবে না।
সংস্কার কাজ করতে সময় দিতে হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকার যে কথা বলেছে, তার সাথে সহমত পোষণ করে রাজনৈতিক দলসহ সচেতন মহলও একই কথা বলেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যত অতিবাহিত হচ্ছে, তার সার্বিক কর্মকা- যেন ধীর হয়ে পড়ছে। অথচ গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের কাজ গতিশীল হওয়ার কথা। তার প্রথম কর্তব্য, প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র বিরাজমান ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের দ্রুত অপসারণ করে তার মূল কাজে গতি আনা। এর বিপরীতই আমরা লক্ষ্য করছি। এটা দুঃখজনক। বলা বাহুল্য, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও স্বনামধন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় তিনি বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও তার সম্মান, শ্রদ্ধা ও প্রিয়তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে দেশের জন্য তিনি বিপুল অর্জন লাভে সমর্থ হয়েছেন। তবে তার সরকার এই অর্জন কতটা বাস্তবায়ন বা কার্যকর করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বহাল রয়েছে। তাই অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপ্লবী চেতনা ধারন করে জনপ্রশাসনসহ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসরদের অপসারণ করতে হবে। এদের অপসারণে সরকারকে ‘ড্রাস্টিক অ্যাকশন’ ও ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। জনগণের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তাদের স্বস্তি ও শান্তির জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান