যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মুসলিম নিধন
০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম
ইসরাইল লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়ে ইরানপন্থী হিজবুল্লাহর শীর্ষনেতা হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যা করেছে। এটা যে পরিকল্পিত ও টার্গেটেড কিলিং, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডে ইসরাইল একের পর এক পারদর্শিতা দেখিয়ে আসছে। এক সপ্তাহ আগে ওই বৈরুতেই হিজবুল্লাহর জেষ্ঠ্য কমান্ডার ইব্রাহিম আকিলকে হত্যা করে ইসরাইল। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৯২ সালে এক হেলিকপ্টার গানশিপ হামলায় ইসরাইল হাসান নাসরুল্লাহর পূর্বসূরী আব্বাস আল মুসাভীকেও হত্যা করে। হিজবুল্লাহকে নেতৃত্বশূন্য ও দুর্বল করার জন্যই ইসরাইল পূর্বাপর এ ধরনের হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষদের। ফিলিস্তিন ও মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি আগ্রাসন মোকাবিলায় হিজবুল্লাহ ও হামাস নামের সংগঠন দু’টি দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গত এক বছর যাবৎ ইসরাইল গাজায় হামলা ও গণহত্যা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। কত মানুষ যে আহত ও পঙ্গু হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। গাজাকে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। গাজাযুদ্ধে ইসরাইল ভয়ংকর বাংকার ব্লাস্টার বোমাসহ বিভিন্ন ধরনের বোমা ব্যবহার করছে। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের মতে, অন্তত ২৫ হাজার টনের মতো বোমা গাজায় ফেলা হয়েছে। হামাসের অধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমদ ইয়াসিনকে ২০০৪ সালে এক সুপরিকল্পিত হামলায় হত্যা করে ইসরাইল। তিনি ছিলেন অন্ধ এবং হুইল চেয়ার ছাড়া চলাফেরা করতে পারতেন না। কিছুদিন আগে ইরানে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকেও ইসরাইল হত্যা করে। প্রশ্ন উঠতে পারে, হিজবুল্লাহ ও হামাসের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যা এবং ফিলিস্তিন ও লেবাননে নির্বিচার গণহত্যা কি ইসরাইলকে শান্তিময় ও নিরাপদ করতে পারছে? উত্তর হচ্ছে, না। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে নিঃশেষ ও দুর্বল করতে পারছে? এরও উত্তর না।
পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। যখন ফিলিস্তিনে বা লেবাননে মুসলমানদের ওপর ইসরাইল হামলা চালিয়েছে তখনই হিজবুল্লাহ রুখে দাঁড়িয়েছে। আঘাতের প্রত্যাঘাত করেছে। ২০০৬ সালের সংঘাতে অচিন্তনীয় ধাক্কা খায় ইসরাইল। ইসরাইলকে পিছু হটতে বাধ্য করে হিজবুল্লাহ। কার্যত পরাজিত হয় হিজবুল্লাহর কাছে। একইভাবে গাজায় অবরোধ আগ্রাসন ও গণহত্যা চালিয়েও হামাসকে বিন্দুমাত্র দমন করতে পারেনি। গাজাকে রীতিমত তামা করে দেয়ার পরও হামাসকে কিছু করতে পারেনি ইসরাইল। একজন জিম্মি ইসরাইলিকেও মুক্ত করতে পারেনি। অনেকেরই জানা, সিরিয়ায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সৃষ্ট আইএসআই এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় অভূতর্পূব সাফল্যের পরিচয় দেয় হিজবুল্লাহ। তাদের মতলব ব্যর্থ করে দেয়। আসলে নেতা হত্যা, গণহত্যা কোনো কিছুই সভ্য ও ন্যায়ের সংগ্রামকে থামিয়ে দিতে পারে না। মানুষ হত্যা করা যায় কিন্তু আইডিয়া, আদর্শ, দর্শন ও লক্ষ্যকে ধ্বংস করা যায় না। ১৯৮২ সালে ইসরাইল লেবাননে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে দক্ষিণ লেবানন দখল করে নেয়। ব্যাপক ধ্বংস ও গণহত্যা চালায়, যেমনটা এখন করছে গাজায়। ৬ জুন থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল পিএলওকে ধ্বংস করা। তখন পিএলওর সদর দফতর ছিল লেবাননে। বলা বাহুল্য, পিএলওকে ধ্বংস করা যায়নি। বলা যায়, এরপর পিএলও আরো সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়। পিএলও এবং তার অবিসংবাদি নেতা ইয়াসির আরাফাতের অর্জন তার সাক্ষ্য। লেবাননের হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুতি কাউকেই সামরিকভাবে দমন করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা। ইসরাইল এখন একই সঙ্গে গাজা, লেবানন ও ইয়েমেনে হামলা করছে। এটা আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করছে।
ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা একটি গভীর ও বহুজাতিক ষড়যন্ত্রের ফল। সে ইতিহাসে না গিয়ে এটা বলাই এখানে প্রাসঙ্গিক যে, মুসলমানদের জমিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ইহুদিদের মুসলিমবিদ্বেষী হওয়া স্বাভাবিক। জিনগতভাবে তারা মুসলিম বিদ্বেষী। শত শত বছরের ইতিহাসে তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। ইহুদিরা জাতি হিসাবে অভিশপ্ত, স্বার্থপর, ভিরু, কাপুরুষ, গোলযোগ সৃষ্টিকারী ও সীমা লংঘনকারী। তাদের আচার-আচরণ অপকর্ম ও বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে অনেক কথা পবিত্র কোরআন-হাদিস ও প্রাচীন গ্রন্থাদিতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ইহুদিরা মুসলমানদের শত্রু মনে করে। এটা তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সুরা মায়েদা-৮২। এদের সঙ্গে মিলেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ মুসলিমবিদ্বেষী খ্রিস্টবাদী পশ্চিমা বিশ্ব। এরা সাম্রাজ্যবাদী ও লুটেরা বলেও অভিহিত হয়ে থাকে। মুসলিমবিদ্বেষ থেকেই তারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করেছে। আর প্রতিষ্ঠার পর থেকে হত্যা, দখল ও বিতাড়ন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত টুইন টাওয়ার হামলার পর ওয়ার অন টেররের নামে যে মুসলিম হত্যাযজ্ঞ শুরু তা এখনো চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই হত্যা ও ধ্বংসকাণ্ড অব্যাহত আছে। নানা অজুহাত ও কুযুক্তিতে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা হামলা চালিয়েছে, দখল করেছে, ধ্বংস করেছে এবং অবাধ গণহত্যা চালিয়েছে। এসব আগ্রাসন ও যুদ্ধে কত মুসলমান যে নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে, সর্বহারা হয়েছে, নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। এসব মুসলিম দেশ প্রায় ধ্বংস ও লুট হয়ে গেছে। মুসলিমবিদ্বেষ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিচক্র ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কারণ, মুসলিম হত্যায় শুরু থেকে আড়কাঠির ভূমিকা পালন করছে ইসরাইল। ইসরাইল যে মুসলিম গণহত্যা করেছে তা কাগজে-কলমে যুক্তরাষ্ট্রই করছে। তার মিত্ররা করছে। ইসরাইল চলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থে। তার গোলা বারুদ, সামরিক সরঞ্জামাদি যোগান দেয় যুক্তরাষ্ট্র। গাজাযুদ্ধে এ পর্যন্ত ইসরাইলকে ১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধে যে অস্ত্র ও বোমা ব্যবহৃত হচ্ছে, তাও সব যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের শাসকদের মাইনসেট সব সময় একই রকম। ইসরাইল যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস করছে, গণহত্যা করছে, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব লংঘন বা নস্যাৎ করছে, তার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের কোনো বিকার নেই, উদ্বেগ নেই। বরং দৃঢ় সমর্থন আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর হত্যা কাণ্ডের পর এক বিবৃতিতে ইসরাইলের এই সামরিক হামলাকে সমর্থন করেছেন। এমন কি, একে ‘ন্যায়বিচার’ বলে অভিহিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রাষ্ট্রাচার, মানবাধিকার, ন্যায়, মানুষের প্রতি মমতা ও সম্মানের কোনো মূল্য নেই। তার স্বার্থই সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের বেপরোয়া, একদেশদর্শী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে মুসলমানদের সতর্ক ও সাবধান হতে হবে। জাতীয় ঐক্য সংহত করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিডিয়ার ভূমিকাও অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তারাও ইসলামফোবিয়ায় আক্রান্ত ও মুসলিমবিদ্বেষী। মুসলমানদের মধ্যে বড় নেতা হোক, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব, তাদের মিডিয়া সেটা চায় না। সাদ্দাম হোসেন, গাদ্দাফী, এরদোগান, ইমরান খান প্রমুখের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে তাতেই তার প্রমাণ মেলে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান