ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য রহমত স্বরূপ
০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের অবসানের পর যেমন সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল, তেমনি ২০২৪ সালে গণবিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনরা পতনের পর সংস্কারের বিষয়টি জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। এরশাদের বিদায়ের পর সংস্কারের বিষয়টি ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকেন্দ্রিক। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তা সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সংস্কার বলতে এটুকুই হয়েছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেই উচ্চ আদলতের রায়ের খ-িত অংশ আমলে নিয়ে তা বাতিল করে দিয়েছিল। ফলে ’৯১ সাল থেকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে ধারাটি চলে আসছিল, তার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। শেখ হাসিনা এটা করেছিলেন, ভোটারবিহীন ও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য। এ কাজ করে নিজেই ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছেন। তার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলকে জাহেলিয়াতের যুগে পরিণত করেছিলেন। মানুষকে এক মধ্যযুগীয় বর্বরতার মধ্যে রেখেছিলেন। বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপির নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন, খুন-গুম, হামলা-মামলাসহ রাজনৈতিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এমন দানবীয় কা- বিশ্বে বিরল। শুধু বিএনপি বা অন্যান্য বিরোধীদলই নয়, সাধারণ মানুষকেও অত্যাচার-নির্যাতন করে দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিলেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এই বর্বর যুগের অবসান ঘটে ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। এ বিপ্লব এমনই ছিল যে, তাকে পালিয়ে জীবন বাঁচাতে হয়েছে। জনরোষ এতটাই তীব্র ছিল যে, তার বাসস্থান, জাতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তার পিতার স্মরণে প্রতিষ্ঠিত যাদুঘর বত্রিশ নম্বরের বাড়ি তছনছ হয়ে যায়। ছাত্র-জনতা ঘৃণা ও ক্ষোভে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। কন্যার অপরাধ ও অন্যায়ে সৃষ্ট জনরোষ পিতার ভাস্কর্যের উপর গিয়ে পড়ে। ছাত্র-জনতা তার শাসনামলকে ধুলোয় মিশিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে দেখেছে, দেশের মালিক জনগণ কীভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার লৌহ কপাট ভেঙে দেশকে তার রাক্ষসীয় শাসন থেকে মুক্ত করেছে।
দুই.
ইতিহাস সৃষ্টিকারী গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশ আবার নতুন করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এর খুঁটি হয়েছেন বিশ্ববরেণ্য নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়েই প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে নতুন করে বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। তাঁর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই যেন বাংলাদেশের জন্য স্বর্ণখচিত বিশ্বদুয়ার খুলে গিয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল, তা এই দুয়ার খুলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ নির্ভয়ে মুক্ত পরিবেশে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। অথচ শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে শুধু ভারতের উপর নির্ভর করেছে। ভারতের নীতিই ছিল তার নীতি। ভারতের তাঁবেদারি ও হুকুম পালন করাই ছিল, তার একমাত্র কাজ। দেশকে ভারতমুখী করে আর কোনো দেশ যাতে বাংলাদেশমুখী হতে না পারে, সেজন্য সেসব দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত গালিগালাজ এবং সম্পর্ক খারাপ করে রেখেছিল। এর মধ্য দিয়ে তিনি দেশকে ভারতের একটি করদরাজ্যে পরিণত করাসহ অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। ভারতের কাছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার বন্দোবস্ত করেছিলেন। মীর জাফর, সিকিমের লেন্দুপ দর্জির পর এমন বিশ্বাসঘাতক ও বেইমান উপমহাদেশের ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি। হাসিনা ভেবেছিলেন, তার প্রশাসন ও র্যাব-পুলিশ দিয়ে ইংরেজদের মতো জনগণকে দাবিয়ে যুগের পর যুগ দেশকে শাসন-শোষন করে যাবেন। অথচ তিনি ইতিহাসের জ্ঞানটুকু ধারন করতে পারেননি। দেশের মানুষ যে পরাক্রমশালী বৃটিশদের তাড়িয়েছে, পাকিস্তানী শাসকদের শোষণের নিগড় থেকে দেশকে মুক্ত করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তা থেকে তিনি শিক্ষা নেননি। নিজেকে অপরাজেয়, অজেয় মনে করেছিলেন। অহংকার ও অহমিকায় এতটাই আচ্ছন্ন ছিলেন যে, মানুষকে মানুষ বলেই গণ্য করেননি। তাদের দুঃখ-দুর্দশা আমলে না নিয়ে কোনঠাসা করে শাস্তি দেয়ার মধ্যেই যেন তার আনন্দ ছিল। অবশ্য ১৯৮১ সালে দেশে আসার আগেই তিনি বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, দেশে ফিরছেন দেশের মানুষের উপর পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিতে। কী ভয়ংকর প্রতিশোধপরায়ণ এবং সিরিয়াল কিলারের মানসিকতা! সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই সিরিয়াল কিলারের মানসিকতা নিয়েই একের পর এক হত্যা, গুম চালিয়ে জনগণের উপর প্রতিশোধ নিয়েছেন। তার মানসিক এই বিকৃতির কথা ’৯৬ সালে তার শাসনামলেই উচ্চ আদালত তাকে ‘রং হেডেড’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তার এক সময়ের সহকারি ও মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ুর রহমান রেন্টু রচিত ‘আমার ফাঁসি চাই’ গ্রন্থটি যারা পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই তার এই মানসিক বিকারগ্রস্ততা ও বিকৃতি সম্পর্কে জানেন (এই বইটি এখন অনলাইনে ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে)। কী ভয়ংকর এক সাইকোপ্যাথ! সাড়ে ১৫ বছর ধরে তার বিকৃত মানসিকতা কীভাবে জনগণকে দুঃসহ নির্যাতনের মধ্যে রেখেছিল, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশকে এই সাইকোপ্যাথের কাছ থেকে মুক্ত করতে গণবিপ্লবের মাধ্যমে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অকাতরে জীবন দিয়েছে। আহত হয়ে চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে গেছে। যারা পঙ্গু ও অন্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে কোনো আফসোস নেই। বরং দৃঢ়কণ্ঠে বলেছে, দেশের প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে নামবে, জীবন দেবে। কী অমিত তেজী ছাত্র-জনতা! ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে বলেছে, এক ফেরাউনের কবল থেকে আল্লাহ দেশকে রক্ষা করেছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের গুণী ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের কদর করতেন না। তাদেরই কদর করতেন, যারা তার দাস হয়ে থাকতেন এবং যারা জনগণের উপর তার মনোবৈকল্যের প্রতিশোধ নিতে পারতেন। প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সর্বত্রই ছিল এই দাসদের আধিপত্য। তার বিদায় হলেও এখনও তারা রয়ে গেছে। আমরা দেখেছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যেখানে সারাবিশ্ব অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে, সেখানে একমাত্র হাসিনা ও তার দাসরা তাঁকে নানাভাবে অসম্মান করেছে। মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে দিনের পর দিন তাঁকে কোর্টের বারান্দায়, কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। কোর্টে হাজিরা দিয়ে মিডিয়ার সামনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেগতাড়িত কথা এখনও কানে বাজে। বিশ্বজুড়ে এতো সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্বকে যখন তাঁর নিজ দেশে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়া দেখে এবং তাঁর বুকফাটা আর্তনাদ শুনে কোনঠাসা হয়ে থাকা নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের চোখ ভিজে যেত। হাসিনা তা দেখে উল্লাস করতেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার এই প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার কারণ কি ছিল? তিনি তার কি ক্ষতি করেছিলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, তাঁর প্রতি ফ্যাসিস্ট হাসিনার ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও হিংসা। কারণ, ফ্যাসিস্ট হাসিনা মনে করেছিলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নন, নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিৎ ছিল তার। আমরা দেখেছি, হাসিনামিডিয়ার দালাল সাংবাদিকরাও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চরিত্র হননের পাশাপাশি নোবেল পুরস্কার হাসিনারই পাওয়া উচিৎ ছিল বলে জোর গলায় বলতেন।
তিন.
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ একাধিক জায়গায় আমাদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘তোমাদের আগে আরও অনেক জাতি ছিল (আদ ও সামুদ জাতি), যারা দৈহিক গঠন, আভিজাত্য, ধনসম্পদের দিক থেকে তোমাদের চেয়েও অধিক শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ছিল। তাদের অবাধ্যতার কারণে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি।’ অর্থাৎ যুগে যুগে ফেরাউন, নমরুদের মতো অনেক শক্তিশালী অবাধ্য, উচ্ছৃঙ্খল ও অত্যাচারি শাসক দুনিয়াতে এসেছে। তাদের অবাধ্যতা, অবিচার, অত্যাচার, সীমালংঘনের কারণে আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। বাংলাদেশে সেই অত্যাচারি শাসকদেরই যেন উত্তরসূরী ছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। তাকে আল্লাহ অবকাশ দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে ফেরাউনের মতো পতন ঘটিয়েছেন। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘আল্লাহর মাইর, দুনিয়ার বাইর’। হাসিনার পতন আল্লাহর এই মাইরের মধ্য দিয়েই হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ এ কথাও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের পর সুখ রয়েছে।’ আমরা এখন আশা করতে পারি, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নিষ্ঠুর শাসনের যাঁতাকলে পড়ে জনগণ যে কষ্টের মধ্যে ছিল, আল্লাহ তার পতন ঘটিয়ে সুখের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের জনগণের জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন। এটা কল্পনাও করা যায়নি, বিশ্বব্যাপী নন্দিত ও শ্রদ্ধার মানুষটিকে যেখানে হাসিনা পদে পদে অপমান, অপদস্ত ও সাজা দিয়ে জেলে রাখতে চেয়েছিলেন, সেই তিনিই কিনা তার পতনের পর বাংলাদেশের এবং বিশ্বের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠবেন! বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন। এটা মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কী হতে পারে! এর নজির তো আল্লাহ প্রতি মুহূর্তে দেখিয়ে দিচ্ছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমাবিশ্বের সমৃদ্ধ দেশ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে শুরু করে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে, উত্তর থেকে দক্ষিণ মেরু থেকে যেভাবে অভিনন্দিত এবং সমর্থন ও সহযোগিতার আশ্বাস পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো বিশ্বে আল্লাহর রহমতের পথটি যেন বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হয়েছে। এই যে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে গেলেন, তাতে আমরা কী দেখেছি? আমরা দেখেছি, পুরো বিশ্ব যেন তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। তাকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেছে। ইতিহাসে যা ঘটেনি, তা ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার সাথে বৈঠক করেছেন। আবেগে-আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরেছেন। বলা যায়, বিশ্বে এ মুহূর্তে যদি সবচেয়ে দামি কোনো ছবি থেকে থাকে, তাহলে তা হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জো বাইডেনের জড়িয়ে ধরার ছবি। ভাবা যায়, মহান আল্লাহ বাংলাদেশের সম্মান কোন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন! শুধু তাই নয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিশ্বের পরাশক্তির দেশের সরকার প্রধানদের বৈঠক, সাইড লাইনে দেখা-সাক্ষাতের এমন ঘটনা সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। তাঁর সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, এমনকি একটি সেল্ফি তোলার জন্য বিশ্বের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে ব্যপক আগ্রহ-উৎসাহ দেখা গেছে। তিনি যেন সময় পাচ্ছিলেন না। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া অন্যকোনো সরকার প্রধানকে নিয়ে এমন আগ্রহ সাম্প্রতিকালে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের এতো আগ্রহ-উৎসাহের কারণ যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধুমাত্র তার জন্যই ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফোকলা করে রেখে যাওয়া অর্থনীতি পরিপূর্ণ করার জন্য সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছে। তারা স্বেচ্ছায় অর্থের ঢালি নিয়ে হাজির হয়েছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এইডিবি, ইউএসএইড, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ১৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ অর্থ আসতে শুরু করেছে। সামনে আরও আসছে। এই বিপুল ও স্বতঃস্ফূর্ত আর্থিক সহায়তা যে, নতুন বাংলাদেশকে দ্রুত গড়তে সহায়তা করবে, তাতে সন্দেহ নেই। কথায় আছে, ‘ওয়ান ম্যান ক্যান মেক আ হেল অফ ডিফারেন্স।’ একজন মানুষই ভালোমন্দের ব্যাপক ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্বে যে দুনার্ম এবং অচ্ছুৎ হিসেবে পরিচিত করেছিল, তার পতনের পরপরই তা থেকে রাতারাতি মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনিই ফ্যাসিস্ট হাসিনা সৃষ্ট বদনামের ব্যবধান হয়ে দেশকে সুনামের দিকে নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন।
চার.
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ সারাবিশ্ব থেকে বিপুল অভিনন্দন, সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার মধ্য দিয়ে ‘হানিমুন’ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তবে তাঁদের এ কথা মনে রাখতে হবে, এই হানিমুন পিরিয়ড নিষ্কন্টক নয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার প্রভু মোদি পদে পদে কাঁটা বিছিয়েছে এবং বিছিয়ে যাচ্ছে। ফেলে দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত গর্ত খুঁড়ছে। এই গর্ত খুঁড়ছে জনপ্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা তাদের দোসররা। বিস্ময়ের ব্যাপার প্রায় দুই মাস হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার তাদের টিকিটি পর্যন্ত স্পর্শ করতে পারছে না। তাঁরা হাসিনা-মোদির গড়ে তোলা প্রশাসন নিয়েই কাজ করছেন। অথচ তাঁরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, ছাত্র-জনতার রক্তভেজা পথ দিয়ে। জনগণ তাঁদের এ পথ তৈরি করে দিয়েছে এজন্য যে, তাঁরা রক্ত¯œাত গণবিপ্লবের চেতনা ধারন করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির যৌথ প্রযোজনার প্রশাসন থেকে তাদের দোসর ও বিশ্বাসঘাতকদের ঝেটিয়ে বিদায় করে দেবেন। দুঃখের বিষয়, এ কাজটি তাঁরা এখন পর্যন্ত করতে পারেননি। কিছু অব্যাহতি এবং বদলির মধ্য দিয়ে যেন রুটিন কাজ করেছেন। তাঁরা এ চিন্তা করছেন না, হাসিনার রেখে যাওয়া দোসররা একেকটি ডিনামাইট ও মাইন হয়ে রয়েছে। এই ডিনামাইট ও মাইনের উপর বসে কি বিপ্লবের সুফল বয়ে আনা যাবে? এগুলো যখন একে একে বিস্ফোরিত হতে শুরু করবে, তখন তাঁরা কি কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাবেন? তারাই কূল পাবেন, যারা হাসিনার প্রতি নরম হয়ে ছদ্মবেশে উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। বলা বাহুল্য, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসব উপদেষ্টা বিশেষ করে জনপ্রশাসনের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এসব ডিনামাইট ও মাইন অপসারনে কোনো ভূমিকা পালন করছেন না। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং ভারতের ভাবধারার লোক বলে এখন চিহ্নিত হচ্ছেন। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনার পরিপন্থী ও জনগণের সাতে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। এই উপদেষ্টাদের নিয়ে জনমনে যে নেতিবাচক পারসেপশন সৃষ্টি হয়েছে, তা ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে। তাদেরকে জনপ্রশাসনসহ সর্বত্র থাকা ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির দোসরদের দ্রুত অপসারণ করে এই ভুল ভাঙতে হবে। তাদেরকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আলোয় আলোকিত হতে হবে। যদি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গতির সাথে তাল মেলাতে না পারেন, তাদের উচিৎ হবে স্বেচ্ছায় চলে যাওয়া। মনে রাখতে হবে, অর্ন্তবর্তী সরকার একটি জরুরি সরকার। তার কাজ হচ্ছে, দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে করা। কচ্ছপ গতিতে চললে হবে না। করব, করছি নীতির কোনো সুযোগ নেই। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির চক্রান্তে পড়ে যদি এ সরকার তথা গণবিপ্লব ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের জনগণ তাদের কখনোই ক্ষমা করবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
"অবশেষে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে আসলো সায়রা বানুর বার্তা"
এস আলমের মালিকানাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তিন দিনের সংঘাতে নিহত ৮২ জন
‘গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সৎ ও দেশপ্রেমীদের দিয়ে নির্বাচন করানোর ব্যাপারে বিএনপি বদ্ধ পরিকর’
ভারতের রান পাহাড়ের সামনে আবারও ব্যাটিং ধ্বসে অস্ট্রেলিয়া
শপথগ্রহণ করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যা বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
৫ বিসিএসে নিয়োগ পাবেন ১৮ হাজার ১৪৯ জন
ইউএই-তে নিখোঁজ ইয়াহুদী রাব্বির লাশ উদ্ধার, ইসরায়েলের দাবি
ঝিকরগাছায় টিউবয়েলের গর্তের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
ওরা জুলাই বিপ্লবের সব স্মৃতি চিহ্ন মুছে দিতে চায়
ফ্রান্সে গণধর্ষণ মামলা ঘিরে দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ
নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবিরকে হয়রানি, অভিযুক্তকে প্রত্যাহার
শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ কমিশনার
বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কেএনএ’র ৩ সদস্য নিহত, অস্ত্র-গুলি উদ্ধার
ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান দুবাই রান ২০২৪-উৎসবে দৌড়বিদদের নেতৃত্ব দিলেন
বেনাপোল বন্দরের সাথে সকল রুটের পরিবহণ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন চলছে: পাসপোর্ট যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে
সাটুরিয়ায় জমি নিয়ে বিরোধে হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষকের মৃত্যু
"অভিনেত্রী মন্দিরার সিনেমার প্রিমিয়ার প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্রে"
পেঁয়াজের পরিচর্যায় ব্যস্ত কুষ্টিয়ার কৃষকরা
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার বিতর্কিত সিলেবাসের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মহীন করার চক্রান্ত করেছিল-পীর ছাহেব চরমোনাই