পতিত স্বৈরাচারের সময় দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে
০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একটানা সাড়ে পনের বছরের শাসন ছিল চরম দুঃশাসনে ভরা। এই সময়ে আর্থিক খাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ঋণের নামে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। শেয়ারবাজার ধ্বংস করে লুট করা হয়েছে লক্ষ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরি হয়েছে। দেশ থেকে পাচার হয়েছে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ করেছে এবং এই সময়ে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
দেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। ফলে আমাদের দেশ অনুন্নত রয়ে যাচ্ছে। এই সব অর্থ উন্নত দেশে জমা হচ্ছে। ফলে উন্নত দেশসমূহ আরো উন্নত হচ্ছে। অর্থ পাচারের এই ধারা নদীর স্রোতের মতই প্রবাহমান। উঁচু এলাকার পানি যেমন সবসময় নিচু এলাকার দিকে চলে যায়, ঠিক তেমনি আমাদের মতো অনুন্নত দেশের অর্থ পাচার হয়ে উন্নত দেশে চলে যায়। ফলে অনুন্নত দেশের ভাগ্য আর ফিরে না। যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে, তা যদি পাচার না হয়ে এদেশে থাকত এবং এদেশে বিনিয়োগ হতো, তাহলে বাংলাদেশ আজ অনেক বেশি উন্নত হতো। শিক্ষার হার বাড়ত, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা হতো, কর্মসংস্থান বাড়ত, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতো, আরো বেশি জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত, বেকারত্ব কমত, দারিদ্র্য কমত, আমদানি কমত এবং রপ্তানি বাড়ত। বড় বড় সেতু আর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিশ^ব্যাংক, এডিবি, আইডিবি এবং বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হতো না। দেশের মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত হতো। আমাদের আয় বাড়ত। ফলে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতাম। অথচ, এখনো আমরা নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ। এখন আমাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ২৭৪৯ ডলার। পাচারকৃত অর্থ এদেশে বিনিয়োগ হলে আমাদের গড় আয় আজ কমপক্ষে দ্বিগুণ হতো। আমরা লিস্ট ডেভেলাপমেন্ট কান্ট্রিজ (এলডিসি) এর দল থেকে বের হতে পারতাম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের শাসনামলের প্রতি বছর গড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি পাচার হয়েছে, যা দিয়ে প্রতি বছর গড়ে বড় আকারের কমপক্ষে ২০০টি শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করা যেত। প্রতিটি শিল্প কারখানায় গড়ে ২০০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হলে প্রতি বছর এসব কারখানায় ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। ফলে বেকারত্ব কমত। এসব শিল্প কারখানায় যদি ৫০ ধরনের পণ্যও উৎপাদন হতো তাহলে ঐ ৫০টি পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো না। ফলে ঐ ৫০টি পণ্য আমদানিতে কোনো অর্থ ব্যয় হতো না। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতো এবং আমাদের জিডিপি বাড়ত। এভাবেই দেশ উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেত। আমরা একটি শিল্পসমৃদ্ধ দেশেই পরিণত হতাম। আমরা আমদানি প্রধান দেশ না হয়ে তখন রপ্তানি প্রধান দেশে পরিণত হতাম। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তখন এদেশের কোটি জনতাকে জীবিকার সন্ধানে বিদেশ যেতে হতো না। বরং দেশেই কর্মসংস্থান হতো।
অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ), এনবিআর এবং দুদক কাজ করছে। কিন্তু অর্থপাচার বন্ধ হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং এনবিআরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীলদের উচিত মনিটরিং এবং নজরদারি বাড়ানো। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার ব্যাংকিং এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি বাড়ানোর বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে, যা অভিযোগ নয় বরং প্রমাণিত সত্য। উন্নয়নের নামে বড় প্রজেক্ট নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য বড় বাজেট করা হয়েছে আর সেই বাজেট থেকে বড় অংশ লুট করা হয়েছে। শেখ হাসিনা নিজে বলেছেন, তার বাসার পিয়ন চারশ’ কোটি টাকার মালিক এবং হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। ২০২৪ সালের সংসদের নির্বাচনের হলফনামায় এমপি প্রার্থীদের স¤পদ কয়েকশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধির চিত্র আমরা দেখেছি। এছাড়া রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই শত কোটি টাকার মালিক, যা বিভিন্ন সময়ে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, সমবায় ব্যাংক হতে বারো হাজার ভরি স্বর্ণ লুট হয়েছে। এভাবে সব জায়গায় দুর্নীতির মহোৎসব চলেছে এবং সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দেশের স¤পদ লুটপাট করেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অঢেল স¤পদের মালিক হয়েছেন। বেনজির, মতিউর, হারুন, মালেক এবং আবু তালেবরা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এসব স¤পদ কিন্তু জনগণের স¤পদ লুট করেই গড়া।
লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান