ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকারের কার্যক্রম গতিশীল করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারি সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দুইমাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে পরিবর্তন প্রত্যাশি ছাত্র-জনতা তথা দেশের সাধারণ মানুষ সরকারের কার্যক্রমের হিসাব মেলাতে শুরু করেছে। সকালবেলা দিনের শুরুতে বাকি দিনটা সম্পর্কে একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা পাওয়া যায়। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের অকুণ্ঠ সমর্থন, অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জসমুহ মোকাবেলায় সহায়তা নিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস ইত্যাদি বিষয়গুলো সরকারের জন্য অবশ্যই অনেক বড় ইতিবাচক দিক। আর এসব সম্ভব হয়েছে নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূসের বৈশ্বিক পরিচিতি, সুনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে। তবে একজন অ্যাকাডেমিসিয়ান, উদ্যোক্তা, নতুন চিন্তা ও ধ্যানÑধারণার উপস্থাপক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করা আর একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ও অস্থিতিশীল সমাজের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে মানুষের কাঙ্খিত পরিবর্তনের দায়িত্ব গ্রহণ করে সফল হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একই রকম বিষয় নয়। সরকার প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ও তার নিজের প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাঙ্খিত সাফল্য এখনো অনেকটাই অধরা। এ কথা সত্য যে, দেড়যুগের একটি প্রবল স্বৈরশাসনে সৃষ্ট সুবিধাভোগী, দুর্নীতিবাজ ও দলবাজ প্রশাসনকে রাতারাতি আমূল বদলে ফেলা সহজ কাজ নয়। তবে একটি রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারকে জনপ্রত্যাশার তাগিদে অগ্রাধিকার কাজগুলো শুরু করতে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষত স্বৈরাচারের দোসরদের বিদায় করে দিতে বিলম্ব মুক্তিকামী জনগণ মেনে নিতে পারেনা।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দেড়মাসের মধ্যে একটি চুড়ান্ত পরিনতি লাভ করলেও এটি আসলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গত দেড় যুগের ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের ফসল। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমুহ ধ্বংস করে শেখ হাসিনার ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘন, সীমাহীন দুর্নীতি-দু:শাসন, সর্বত্র দলীয়করণ, বৈষম্য, গুম-খুন ইত্যাদি জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল বলেই দেশের প্রয়োজনে ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে একটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই পরিবর্তনের প্রত্যাশা স্বৈরাচারের রেখে যাওয়া ঘাপটি মেরে থাকা দলবাজ প্রশাসন দিয়ে সম্ভব নয়। যে ফ্যাসিবাদী দলটি হাজার হাজার মানুষের জীবন ও রক্তের উপর দাঁড়িয়ে একটি চিরস্থায়ী ক্ষমতার প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছিল, অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রথম কাজই হচ্ছে, সে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করে তাদেরকে অপসারণ ও বিচারের সম্মুখীন করা। অন্যদিকে দেড়যুগ ধরে যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বৈরাচারি সরকারের প্রশাসনের দ্বারা মিথ্যা মামলা ও জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে যথাশীঘ্র তাদের অব্যাহতি, মুক্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে কতিপয় উপদেষ্টার বিতর্কিত ভূমিকা এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের সম্পর্কে নমনীয়তা ও আপসকামী ভূমিকাকে মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছে না। এই সরকার জনপ্রত্যাশা সম্পর্কে অবহিত এবং অবগত আছে। তারা প্রত্যাশা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে। তবে শুধু মিডিয়ায় কথা বললেই দায়িত্ব শেষ হয়না। জনপ্রত্যাশাকে বাস্তবে পরিনত করাই হচ্ছে অর্ন্তবর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য। যে কোনো সরকারকে দায়িত্ব গ্রহণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিক স্বল্প মেয়াদি, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প, পরিকল্পনা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়। প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল পদগুলোতে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী, ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ থেকে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বহাল রেখে ছাত্র-জনতার কাঙ্খিত পরিবর্তন অসম্ভব হবে।

দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে ভেতর থেকে ফোঁকলা ও ভঙ্গুর করে দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে রেখে যাওয়া অর্থনীতিকে রাতারাতি বদলে ফেলা হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু কথিত বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি লাগাম টেনে ধরা অসম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট। ডিম-মুরগীসহ কিছু পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেছে। নির্দেশনা বাস্তবায়নে মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় ডিমের দাম অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। কাঁচাবাজারে সিন্ডিকেটেড মূল্য কারসাজি এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। জ্বালানির মূল্য কমানো হলেও তার প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি। গ্যাস-বিদ্যুতের বিড়ম্বনা এখনো কমেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশি কার্যক্রম এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি। ঢাকার যানজট ও গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা এখনো নিয়ন্ত্রণহীন। ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ারসহ সেনাবাহিনী সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকায় থাকার পরও অবস্থার প্রত্যাশিত পরিবর্তন না হওয়া কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়। অর্ন্তবর্তী সরকারকে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কিছু জরুরি কাজ করতেই হবে। এটি অনেকটা বড় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি সার্ভিসের মত। প্রয়োজনীয় আইনগত সংস্কার শেষ করে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করাই এই সরকারের মূল লক্ষ্য হলেও সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে জনজীবনে স্বস্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হচ্ছে জরুরি দায়িত্ব। বিগত সময়ের আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাচ, জটিলতা, গাফিলতি ও সময়ক্ষেপণ থেকে জাতি মুক্তি চায়। অর্ন্তবর্তী সরকার জনগণের সে প্রত্যাশাকে ধারণ করেই দায়িত্ব পালনে তার গতিশীলতা নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বাস্তব প্রেক্ষাপটে সাহস ও বিচক্ষণতার সাথে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। দক্ষ শাসকের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যতটা কঠোর হওয়া প্রয়োজন ততটা কঠোর হতে পিছপা হলে চলবে না। যে সব উপদেষ্টা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পিরিট থেকে বিচ্যুত হবে, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের সাথে আপস করবে বা প্রশ্রয় দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রতি দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন রয়েছে। এ সরকারের শৈথিল্য বা ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ড.ইউনূসের মত বিশ্বব্যাপ্ত খ্যাতিমান একজন দক্ষ সংগঠকের উপর যে দায়িত্ব ছাত্র-জনতা অর্পণ করেছে, তিনি তা সঠিকভাবে পালন করে একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠার গৌরব অর্জন করবেন বলেই আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি
মুনতাহার মর্মান্তিক মৃত্যু এবং কিছু কথা
ট্রাম্পের বিজয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কি কোনো লাভ হবে?
ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোচালকদের তাণ্ডব রুখতে হবে
স্মৃতির দর্পণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
আরও

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া

মুসলিম চিকিৎসক

মুসলিম চিকিৎসক

শীর্ষে দিল্লি

শীর্ষে দিল্লি

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান

বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান