যেকোনো মূল্যে সংস্কারের কাজ করতে হবে
২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ এএম
বিগত কয়েক বছর ধরে যে দুটি শব্দ বেশি উচ্চারিত হয়েছে এবং হচ্ছে, তা হচ্ছে ‘মানবাধিকার’ ও ‘সংস্কার’। শব্দ দুটি বহুল আলোচিত হওয়ার কারণ হচ্ছে, গত সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শাসনে আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাওয়া। আমরা জানি, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা জনগণের অধিকার ও সুখে রাখার বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথা বলে প্রকারন্তরে নিজের অধিকারকেই নিরঙ্কুশ করেছে। জনগণের অর্থ লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে পাচার করে নিজেদের আখের গুছিয়েছে। এসবকে রাষ্ট্রের নীতি বানিয়ে ফেলেছিল। জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। জনগণের বেঁচে থাকার জন্য মুক্তভাবে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো কোনো পরিবেশ রাখেনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তারা অর্ধনিঃশ্বাস নিয়ে কোনো রকমে হাঁপাতে হাঁপাতে দিন গুজরান করেছে, আর অপেক্ষা করেছে, কবে বুকভরে নিঃশ্বাস নেবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা যাতে তার বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দ করতে না পারে, এজন্য তাদের টুটি চেপে ধরে রেখেছিল। কেউ কথা বললেই তার উপর নেমে আসত অকথ্য নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, জেল-জুলুম, রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ সব ধরনের অত্যাচার। ঠাঁই হতো আয়নাঘর নামক অসংখ্য অন্ধকার কুঠোরিতে। এ থেকে সাধারণ-অসাধারণ কেউ বাদ যায়নি। আমরা দেখেছি, সাড়ে ১৫ বছরে বৃহৎ বিরোধীদল বিএনপির নেতাকর্মীরা কীভাবে এসবের শিকার হয়েছে। হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে হিটলারের গোয়েবলসের মতো নিজের গণমাধ্যম সৃষ্টি করেছিল, যা কেবল তারই স্তুতি গাইত। দুঃখজনক হচ্ছে, একশ্রেণীর সাংবাদিকও ফ্যাসিস্টের স্তুতি ও ঘি-মাখন মেখে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে সহায়তা করেছে। হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট ও দানবে পরিণত করতে সহায়তা করেছে। বিশ্বে এমন ফ্যাসিস্টের নজির নেই বললেই চলে। জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনের নামে বিনাভোট, রাতের ভোট, ডামি ভোট করে ‘নিজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করে। গণতন্ত্রকে বলা হয়, ‘রুল অফ দ্য পিপল’। এটা আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, হতে দেয়া হয়নি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের নামে ‘রুল অফ দ্য এলিট’ কায়েম করেছিল, যার চারপাশে ছিল ‘এলিট’, ‘অলিগার্ক’ ও ‘মাফিয়া’ শ্রেণী। এদের নিয়েই সাড়ে ১৫ বছর সাধারণ মানুষকে শাসন ও শোষন করেছে।
দুই.
ফ্যাসিজম এবং এর ধারক-বাহক সরকার দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, তবে তা চিরকালের নয়। এর প্রমাণ দিয়েছে, জুলাই-আগস্টে আমাদের ‘জেনারেশন জি’ এবং সাধারণ মানুষ, যাকে ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লব’ বলা হয়। তারা জীবন দিয়ে চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তাদের বিপুল সমর্থনে নোবেল লরিয়েট বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। ফলে ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে ‘মানবাধিকার’ ও ‘সংস্কার’ শব্দ দুটি জোরেসোরে উচ্চারিত এবং তা বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন পদ্ধতি, দুর্নীতিদমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কারে কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশন ইতোমধ্যে কাজ করা শুরু করেছে। এগুলো করা হচ্ছে, মানুষের অধিকারকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কি জানে, তাদের অধিকার কি? এই অধিকারে কি কি অন্তর্ভুক্ত? তারা শুধু জানে, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের কথা। তবে এগুলো পরিমাপের নির্দিষ্ট মানদ- নেই। হ্যাঁ, এসব একজন মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক চাহিদা। অন্যদিকে, রাষ্ট্র পরিচালকরা বুলির মতো এগুলো কপচিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেন, তিন বেলা পেট ভরে খেতে পারলে আর কী লাগে! সাধারণ মানুষও খুশি হয়ে তাই বুঝে এবং অল্পতেই তুষ্ট হয়। আরও যে পাওয়ার অধিকার আছে এবং এসবকে একটি মানসম্মত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার কথা, সে ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। অধিকার সচেতনহীন সাধারণ মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করেই রাষ্ট্র পরিচালকরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তারা এই মৌলিক অধিকারগুলো নিয়ে কথা বলেন না, জনগণকে বোঝান না। কারণ, জনগণ বুঝে গেলে রাষ্ট্র পরিচালকদের কুশাসন, অনিয়ম-দুর্নীতি, শোষণ, জোর করে ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাকে জনগণের কথা মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হবে। তারা জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে, যেখানে জনতন্ত্র এবং জনঅধিকার শক্তিশালী, সেসব দেশের সরকার প্রধানদের মতো সামান্য ভুলের কারণে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে চান না। এমনকি, কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়ে ফেরি ডুবে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর মতো দায় নিয়ে কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে দেখা যায় না। যতক্ষণ না সংঘাত, সহিংসতা ও রক্তপাতের আন্দোলনের মাধ্যমে বাধ্য করা না হচ্ছে, ততক্ষণ তারা ক্ষমতা ছাড়েন না। রক্তাক্ত জুলাই বা ৩৬ জুলাই তো তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য কী না করেছে! দেড় হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে, বিশ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতাকে চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ করে দিয়েছে। সাড়ে ১৫ বছরে আরও কত খুন, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তা আমাদের সকলের জানা। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য ফ্যাসিস্ট হাসিনা য়ে নির্মম ও নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে, তা ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘যে একজন মানুষকে হত্যা করল, সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করল।’ এ হিসেবে, ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু ছাত্র-জনতার বিপ্লবে যে দেড় হাজারের বেশি মানুষ হত্যা করেছে, তা দেড় হাজার মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। এর বিচার নিশ্চয়ই দেশের জনগণ দেখতে চায় এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে তা করতে হবে, যাতে আর কেউ এমন গণহত্যা চালাতে না পারে, মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করতে না পারে। আর কেউ যাতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে খুনি চরিত্র ধারন করতে না পারে। আমাদের এখন বুঝতে হবে, জেনারেশন জি, যারা আমাদেরই সন্তান এবং মুটেমজুর, হকার, রিকশাওয়ালা, পেশাজীবীসহ সাধারণ মানুষ কেন ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেছে? এর ভেতরের এসেন্স কি? তারা শুধু ফ্যাসিস্ট সরকারের দুঃশাসন ও নির্মমতাকে হটায়নি, এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার, যা রাষ্ট্র পরিচালকরা জানায় না, বোঝায় না, সেসব অধিকার প্রতিষ্ঠার বার্তা দিয়েছে। এটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, আমাদের যে রাষ্ট্র কাঠামো এবং যা ফ্যাসিস্ট সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে, তা দিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। তারা জীবন দিয়ে আমাদের পথ রচনা করে দিয়েছে। সেই পথেই এখন আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। বিদ্যমান সংবিধান এবং রাষ্ট্র কাঠামো যে কেবল ফ্যাসিবাদেরই জন্ম দেবে, তা এখন নিশ্চিত। ফলে অনিবার্যভাবেই এর পরিবর্তন ও সংস্কার জরুরি। সংস্কারের পর এমন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে, যাতে তারা জনগণের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে বাধ্য হয়। জনগণ যাতে তাদের কল্যাণে নেয়া কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। যেমন, কোনো একটি এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প করার আগে সে এলাকার কমিউনিটির প্রতিনিধিত্ব থাকে। সেখানের একজন শিক্ষক, ছাত্র, ইমামসহ অন্য শ্রেণিপেশার মানুষকে প্রতিনিধি হসেবে উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত করতে হবে। কেন ও কি কারণে এবং এ প্রকল্প তাদের কি উপকারে আসবে, জনপ্রতিনিধিদের তা বোঝাতে হবে। এতে মানুষ তার অধিকার সম্পর্কে জানতে পারবে। দুঃখের বিষয়, এ কাজটি কখনোই করা হয় না। সরকার ও জনপ্রতিনিধিরা কীভাবে কাজ করে, তার দুয়েকটি উদাহরণ দেয়া যাক। জাপানের একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। তাদের পক্ষে সমতলে এসে বাজার-সদাই করা সম্ভব হয় না। সে এলাকার জনপ্রতিনিধি তাদের এই অসুবিধা দূর করার জন্য দ্রোন ব্যবহার করা শুরু করেন। দ্রোনের মাধ্যমে তাদের বাজার-সদাইয়ের তালিকা নিয়ে আসেন এবং বজার-সদাই করে দ্রোনের মাধ্যমে তাদেরকে পৌঁছে দেন। আরেকটি গ্রাম এলাকায় মানুষের যাতায়াতের জন্য ট্রেন ব্যবস্থা চালু ছিল। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির ফলে গ্রামের মানুষের এখন আর এই ট্রেনের প্রয়োজন হয় না। তবে একজন ছাত্রী তার স্কুলে যাওয়ার জন্য ট্রেনে যাতায়াত করতে চায়। তার চাওয়া অনুযায়ী, রাষ্ট্র সেই ট্রেন চালু রেখেছে। এই ট্রেনের যাত্রী শুধু ঐ স্কুল ছাত্রী। প্রতিদিন সে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকে, ট্রেনও নির্দিষ্ট সময়ে এসে তাকে নিয়ে যায় এবং দিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় একটি এলাকার মাঠে অস্থায়ীভাবে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। সে এলাকার বাসিন্দারা তাদের চলাচল এবং শব্দের কারণে সমস্যা হবে বলে কোনোভাবেই স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে দিতে রাজি হচ্ছিল না। সেখানের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন তাদের বুঝিয়ে বলেছে, এখানে খেলা হলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবো। এটা সাময়িক ব্যবস্থা। খেলা শেষ হলে স্টেডিয়াম গুটিয়ে ফেলা হবে। সে এলাকার মানুষ বুঝেছে এবং তা করতে দিয়েছে। খেলা শেষে ঠিকই স্টেডিয়াম গুটিয়ে নিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এই উদাহরণগুলো দেয়ার কারণ হচ্ছে, জনপ্রতিনিধিরা মানুষের অধিকার নিয়ে কতটা সচেতন এবং মানুষও কত সচেতন! অন্যদিকে, আমাদের রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ঘাস কাটা, পুকুর কাটা ইত্যাদি দেখা ও প্রশিক্ষণের নামে জনগণের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশ ভ্রমণে যান। তারা উল্লেখিত উদাহরণগুলো দেখতে যান না কিংবা দেখে এসে আমাদের দেশে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন না।
তিন.
এখন মুখে মুখে সংস্কারের কথা কিংবা সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্তনের কথা বললেই হবে না; যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় আছেন, আসবেন, তাদের মন ও মানসিকতারও ইতিবাচক পরিবর্তন করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, সরকার প্রধান, তার পরিষদবর্গ, সকল রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারি যারা আছেন এবং থাকবেন, তাদের মন ও মানসিকতা এবং কর্মপ্রক্রিয়ার প্রভাব দেশের জনগণের উপর পড়ে। এটি পিরামিডের মতো। শীর্ষ বিন্দু থেকে সমতল পর্যন্ত যার বিস্তৃতি। আমাদের দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র হয়ে গেছে উল্টো পিরামিডের মতো যেখানে রাষ্ট্রপরিচালকদের মতামতা ও সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই। কাজেই, যারা রাষ্ট্র পরিচালক হবেন, তাদেরকে পিরামিড আকৃতি ধারন করতে হবে। জনগণের কল্যাণে নেয়া তাদের পরিকল্পনা যাতে জনগণের কাছে পৌঁছে এবং তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, এমন মানসিকতা ধারন করতে হবে। নিজের মতামত জনগণের উপর চাপিয়ে না দিয়ে জনগণের মতামতা নিজের উপর চাপিয়ে নিতে হবে। জনগণের মানসিকতা বোঝার সক্ষমতা ও ধীশক্তি থাকতে হবে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেকে সংস্কার করার সক্ষমতা থাকতে হবে। এখন তারা নিজেরাই যদি সন্ত্রাসী বা ফ্যাসিস্ট মানসিকতাসম্পন্ন হন, তাহলে তার দ্বারা কি সুশাসন, ন্যায়বিচার, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে? হবে না। ফলে সবার আগে রাষ্ট্র পরিচালকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। জনগণের মতামতও অধিকার রক্ষার মনোভাব থাকতে হবে। এই মনোভাব থাকতে হবে, জীবন দিয়ে হলেও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করব। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের মানসিক গঠন ও পরিবর্তনের সূতিকাগার হচ্ছে পরিবার। একটি শিশুর বেড়ে উঠা এবং শিক্ষার প্রথম শিক্ষক, তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্য। তারা তাকে যে শিক্ষা দেবে, সেভাবেই গড়ে উঠবে। পাশাপাশি যে সামাজিক পরিবেশে সে বসবাস করে, তার বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে প্রভাব থাকে। ফলে সংস্কারের কাজটি পরিবার ও সমাজের মধ্যেও থাকতে হবে। ‘ঘুনে ধরা সমাজ’ কথাটি আমরা প্রায়ই বলি। সেখানে কুঠারাঘাতের কথা বলি। কিন্তু সমাজে যাতে ঘুন না ধরে, সেই কাজটি করি না। ঘুনে ধরেছে বলেই বসে থাকি। তাহলে ঘুন দূর হবে কী করে! কাঠে তখনই ঘুন ধরে যখন সেটি দুর্বল হয়ে পড়ে, একইভাবে সামাজিক বন্ধন পারস্পরিক সহযোগিতা-সহমর্মিতা, নীতি-নৈতিকতা, সহনশীলতা, মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটে, তখন সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; মাস্তান, সন্ত্রাসী, গডফাদারদের জন্ম হয়। সংস্কারের বিষয়টি একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যের বিষয় হলেও তা বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এখন থেকেই তা শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের বেসিক অধিকার হচ্ছে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিজ দেশকে ওন করা বা নিজের মনে করা। মানুষের মধ্যে এ বোধ এবং চেতনা সবার আগে থাকতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালকদের তা ধারন করে জনগণের মধ্যে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটা প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে কোনো অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হবে না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন, এই প্রজন্ম আমাদেরকে একটি সুযোগ করে দিয়েছে, এ সুযোগ আর পাওয়া যাবে না, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি দূরদর্শী চিন্তা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করেই এ কথা বলেছেন। আমাদের সকলকে তাঁর এ চিন্তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। যুগের পর যুগ চলে আসা বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা দিয়ে এখন আর দেশ চলবে না। ছাত্র-জনতা বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সংস্কারের যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে, তা যদি আমরা হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমাদের অধিকার ফ্যাসিজমের মধ্যেই বন্দি হয়ে থাকবে। আমরা শত বছর পেছনে পড়ে থাকব।
চার.
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সংস্কার করতেই হবে। এটি এমন না যে, একটি ভবনের পলতে উঠে গেছে কিংবা দেয়ালে ফাটল ধরেছে, তা সিমেন্ট দিয়ে সংস্কার করে ফেললেই হলো। যে কাজটি করতে হবে তা হচ্ছে, মূল কাঠামো ঠিক রেখে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে যেভাবে সংস্কার করলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ফ্যাসিজমের জন্ম হবে না, সেভাবে করতে হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বলা বাহুল্য, আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ও কাঠামো ব্যক্তি ও শ্রেণীগত সুবিধা নিশ্চিত করে গড়ে তোলা হয়েছিল। তাদের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এই গোষ্ঠী স্বার্থের কারণেই স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যেটুকু অবশিষ্ট ছিল, তাতে শেষ পেরেকটি মেরে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। সেই পেরেক ছাত্র-জনতা বিপ্লবের মাধ্যমে উপড়ে ফেলেছে। তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়ে আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে। এ সুযোগ হেলায় হারানো যাবে না। এখনই উপযুক্ত সময়, গোষ্ঠীতন্ত্রের রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তন করে সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এর মাধ্যমেই জনগণের যত ধরনের অধিকার রয়েছে, তা প্রতিষ্ঠিত হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য মনোনীত দুই সদস্যের বিরুদ্ধে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ
ট্রাম্প ব্যবসায়ী, আমরাও একজন ব্যবসায়ী পার্টনার চাই : টাইম ম্যাগাজিনকে ড. ইউনূস
আদানির দুর্নীতি : এবার ভারতেই বির্তকের মুখে মোদি সরকার
প্রেসিডেন্টর সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ
নিজ্জর হত্যায় মোদীর সংশ্লিষ্টতার দাবি কানাডার সংবাদমাধ্যমের ,‘হাস্যকর’ দাবি ভারতের
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নিহত ৪২
এক সপ্তাহে রিজার্ভ বাড়ল ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার
ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে : পুতিন
মুরগি-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি, আলু এখনো চড়া
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
পার্থে শুরুতেই চাপে ভারত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমীরের কুশল বিনিময়
সিঙ্গেল সিটের দাবিতে গভীর রাতেও হলের বাইরে ছাত্রীরা
ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করলো
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অ্যার্টনি জেনারেল পাম বন্ডি
‘আ.লীগকে রাজনীতিতে সুযোগ দেওয়া মানে শহীদদের সঙ্গে গাদ্দারি করা’
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার