বিতর্ক পরিহার করতে হবে
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে গঠিত অর্ন্তবর্তী সরকার তিন মাস পার করলেও এখনো প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে। তারা নানা ষড়যন্ত্র করে সরকারের কাজের গতি শ্লথ করে দিচ্ছে। সরকার এখনো সিন্ডিকেট ভেঙ্গে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। অন্যদিকে, ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক টেলিফোন বার্তা সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস হয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ গুম-খুনের হোতারা রাজপথে নামার দু:সাহস দেখাচ্ছে। ছাত্র-জনতা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে রাজপথে তাদের প্রতিহত করছে। রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা যখন প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থেকে গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়নে এখনো তৎপরতা চালাচ্ছে, তখন নতুন করে তিন জন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এদের দুই জনের বিরুদ্ধে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছে বৈষম্যবাদী ছাত্র-আন্দোলনসহ অন্যান্য সংগঠন ও রাজনৈতিক দল। নির্মাতা মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী এবং ব্যবসায় সেখ বশিরউদ্দিনের সাথে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টতা ও সমর্থনের কারণে তাদেরকে অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা নিযুক্ত হওয়ায় ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার অংশীদারিত্বহীন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ‘বিপ্লবের চেতনায় গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ’ দানকে শহীদদের রক্তের অবমাননা হিসেবে আখ্যায়িত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত সোমবার প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানব বন্ধন করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবাদ-বির্তকের ঝড় বইছে।
প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অর্ন্তবর্তী সরকার জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ কথা অনস্বীকার্য, স্বল্প সমে প্রায় ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার গড়ে তোলা জনপ্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, আদালতসহ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা তার দোসরদের অপসারণ করা সহজ কাজ নয়। তবে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, গণবিপ্লবের স্পিরিটকে ধারণ করে দ্রুত সংস্কার করা। এর মাঝে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে বিগত সময়ে স্বৈরাচার-ফ্যাসিবাদ সংশ্লিষ্টতার তকমাযুক্ত ব্যক্তিরা কিভাবে নিয়োগ পায়, সে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। অথচ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জনগণ একটি ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায়। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের চেতনাবিরোধী কিংবা ফ্যাসিবাদের সাথে আপসকামি কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে দেখতে চায় না। নতুন দুই উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ব্যত্যয় ঘটেছে বলেই ছাত্র-জনতা বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ছাত্রদের রক্তের উপর ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগ পুর্নবাসনের মারাত্মক অভিযোগ অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। তারা কিভাবে, কোন মানদ-ে নিয়োগ পেয়েছে সরকারকে তা পরিষ্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়-দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে হবে। তা নাহলে, ছাত্র-জনতা বিপ্লবের স্পিরিটবিরোধীদের অর্ন্তবর্তী সরকারে জায়গা করে দেয়ার কারণে ছাত্র-জনতা আবারো রাজপথে নেমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে সে কথা তারা স্পষ্ট করেই বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ধরণের চাপ এড়িয়ে ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া উচিৎ। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে যে বিতর্ক ও সমালোচনা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা তাকেই দিতে হবে। কারণ, ফেসবুকে তার পোস্ট এবং সর্বশেষ ৭ আগস্ট যে পোস্ট দিয়েছেন, এবং তার স্ত্রী অভিনেত্রী নুশরাত ইমরোজ তিশা যে মুজিব বায়োপিকে অভিনয় করেছেন, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক উঠেছে, সেটারও ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি তা এড়িয়ে যান। এর অর্থ হচ্ছে, তিনি এসব ডিজওন করেননি। ফলে ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার প্রতি তার সফট কর্ণার রয়েছে বলে মনে করছে। অন্যদিকে, বিগত প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসন কিংবা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সেখ বশির উদ্দিনের ভূমিকা কি ছিল, এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাঁর আপন ভাই আওয়ামী লীগের একাধিকবারের এমপি ছিলেন। তিনি আওয়ামী পরিবারের সদস্য। স্বাভাবিকভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারকে বিতর্ক ও সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দুজনকে নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে। বলা বাহুল্য, উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে এ ধরনের বিতর্ক কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। এতে সরকারের কাজের গতি কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ছাত্র-জনতার আস্থা ও সমর্থনে নেতিবাচক প্রভাব সরকারকে দুর্বল করে দিতে পারে।
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের পর অর্ন্তবর্তী সরকারের উপর সংস্কারের গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় অর্ন্তবর্তী সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তবে একটি অভ্যুত্থান পরবর্তী বিপ্লবী সরকারের মন্ত্রী বা উপদেষ্টা হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে, ছাত্র-জনতার রক্তদানের স্পিরিটকে মনেপ্রাণে ধারণ করা। সেই সাথে প্রত্যাশিত পরিবর্তনকে বাস্তবায়িত করতে যে ধরণের শিক্ষা, মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি থাকা দরকার তাও নিশ্চিত করা। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের এসব গুণ রয়েছে। তবে বিতর্কিতদের উপদেষ্টা করা নিয়ে জনঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেক যোগ্য ও দক্ষ মানুষ রয়েছে। তাদের মধ্য থেকেই উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া উচিৎ। এ কাজটি হয়নি বলেই সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব নিতে হবে। বির্তকিত ব্যক্তিদের উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও অসন্তোষ নিরসনে তাঁকেই উদ্যোগী হতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিসিকের সাবেক কাউন্সিলর ও আ'লীগ নেতা মতিউরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯
মালয়েশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী দাইম জয়নুদ্দিন আর নেই
সংস্কৃতি উপদেষ্টার আশ্বাসে প্রতিবাদ সমাবেশ বাতিল করলো গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন
শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আশ্বাস, হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-বাইডেন বৈঠক
ভারত-পাকিস্তান বিরোধ: আইসিসিকে যে পরামর্শ দিলেন রশিদ লতিফ
পুরস্কারের অর্থ এখনও বুঝে পাননি অনেক ক্রিকেটার
গাজায় যুদ্ধের অবসান হওয়া উচিৎ : অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন
আবারও ইমরানের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল পাকিস্তান
শীতে এই ৫টি জিনিস ব্যবহারে ত্বক দেখে মুগ্ধ হবে সবাই!
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চাকরি ছাড়লেন শহীদ আবু সাঈদের দুই ভাই
প্রতিরক্ষামূলক টানেল নেটওয়ার্ক নির্মাণ করবে ইরান
আইন উপদেষ্টাকে হেনস্তার ঘটনায় জেনেভা মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’
তারুণ্যের প্রভিভা অনুসন্ধানে আসছে রক রিয়েলিটি শো "দ্য কেইজ"
মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বশির-ফারুকীকে অপসারণসহ ৯ দাবি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের
পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১২
হত্যা মামলায় ভোলার সাবেক এমপি আলী আজম মুকুল ঢাকায় গ্রেপ্তার
ঘোড়াঘাটে শ্বাসরোধে যুবকের মৃত্যু, হত্যাকান্ডের অভিযোগে স্ত্রী আটক
ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় গাজায় নিহত ৪৭
করাচি থেকে প্রথম সরাসরি কার্গো পৌঁছেছে চট্টগ্রামে