ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক উস্কানির ফাঁদ পাতা হচ্ছে
২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
আমাদের দেশের মানুষ যেকোনো দেশের নাগরিকদের চেয়ে কম স্বাধীনতাকামী নয়। তারা স্বপ্ন বিলাসী এবং অনেক বেশি আবেগীও বটে। সাময়িক ভাবাবেগের তোড়ে অতীত ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ বিস্মৃত হয়ে বেপরোয়া আত্মঘাতী হয়ে উঠতে এ জাতি দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা বারবার বিনামূল্যে বিকিয়ে দিতে দেখেছি। সাতচল্লিশ এবং একাত্তরের স্বাধীনতা, পচাত্তরের বিপ্লব, নব্বইয়ের গণআন্দোলন এবং চব্বিশের গণবিপ্লবের আকাঙ্খা অভিপ্রায় অভিন্ন। একটির ব্যর্থতার হাত ধরে আরেকটি রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মুখোমুখী হয়েছি আমরা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দলের পতন ঘটলেও গণমানুষের প্রত্যাশিত পরিবর্তন তথা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কারের রূপরেখা যেন ক্রমেই অস্বচ্ছ ও অধরা হতে চলেছে। দুর্বল চরিত্রের নৈরাশ্যবাদীরা বলতে শুরু করেছেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব নাকি ব্যর্থ হতে চলেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নৈরাশ্যবাদী নই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটি প্রবল স্বেচ্ছাচারি আক্রোশে গত ১৬ বছরে দেশের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা তার সহযোগী কর্পোরেট অলিগার্ক, মাফিয়া সিন্ডিকেটের সহযোগীদের বলেছেন, যেভাবে পারো দুহাতে টাকা বানাও। এটি কোনো হাইপোথেটিক্যাল ন্যারেটিভ নয়, তাঁর দলের গুরুত্বর্পণ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সোহেল তাজ শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই উদ্ধৃতি দিয়েছেন। স্বাধীনতাত্তোর পাঁচ দশকের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার মূল অনুঘটক ও নিয়ন্ত্রক ছিল আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবার। কখনো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে, কখনো বিরোধীদল হিসেবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে চরম উগ্রবাদী ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার মধ্য দিয়ে ভূরাজনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় ও সবিধাজনক অবস্থানে থাকা বাংলাদেশকে নজিরবিহীন নৈরাজ্য ও দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়ার পেছনের কুশীলবরা মূলত পশ্চিমা ইসলামোফোবিক ও হিন্দুত্ববাদী হেজিমনিক এজেন্ট। নানা রকম মতভেদ, ভিন্নতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় দেশের সাথে দেশের, জাতির সাথে জাতির, একটি অঞ্চলের আরেকটি অঞ্চলের পারস্পরিক যোগাযোগ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে যে ধরণের কূটনৈতিক শিষ্টাচার ও বোঝাপড়া মেনে চলে, বাংলাদেশের সাথে ভারত তার কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেনি। বিশেষত গত ১৬ বছর ভারতীয়রা শেখ পরিবারকে ক্ষমতায় রেখে নিজেদের হার্ড পাওয়ার, সফ্ট পাওয়ার ব্যবহার করে বাংলাদেশকে বর্গীদের মত লুণ্ঠন করেছে। আর এই লুন্ঠনের কথা জনসম্মুখে শেখ হাসিনা এভাবে ব্যক্ত করেছিলেন, তিনি ভারতকে য’ দিয়েছেন, চিরদিন তারা তা মনে রাখবে। তৌহিদী জনতার বাংলাদেশে এমন একজন সেবাদাস ও বশংবদ শেখ হাসিনার এমন চরম লজ্জাজনক পতনকে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি, পারছে না। বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে শত্রু রাষ্ট্র মনে করে না। তারা শুধু সার্বভৌম শক্তি হিসেবে ভারতের কাছ থেকে আধিপত্যবাদী নীতির বদলে ভারসাম্য ও মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক প্রত্যাশা করে। চীন, আমেরিকার মত দেশগুলোও বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার। তারা কখনোই তাদের নীতি চাপিয়ে দিতে তাদের হার্ড পাওয়ার কিংবা সফ্ট পাওয়ারের মাত্রাহীন অপপ্রয়োগ করেনি। পশ্চিমা সভ্যতা ও রাজনীতির সাথে মুসলমানদের একটি চিরায়ত দ্বন্দ্ব থাকলেও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উদারতা ও সহনশীলতা দিয়ে তা যথেষ্ট কৌশলে মোকাবেলা করে বাণিজ্য, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর গত সাড়ে তিন মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুন, বিচার বর্হিভুত হত্যাকা-, গণগ্রেফতার কিংবা গায়েবি মামলার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাসিনার অন্যতম দোসর ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তারা ক্ষমতা হারালে এক রাতে কয়েক লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে। কোনো সোর্স থেকে তথ্য পেয়ে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছিলেন তা নয়। গত ১৬ বছরে তাদের গুম-খুন, দমন-পীড়ন, সারাদেশে দখলবাজি, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার এবং সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মধ্য দিয়ে যে গণবিক্ষোভের জন্ম হয়েছে, তা নিজেরা আঁচ করেই ক্ষমতা হারানোর পর তাদের কী অবস্থা হবে, তা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে গিয়ে প্রকাশ্যে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে জুলাই-আগস্ট মাসে অন্তত ২ হাজার মানুষকে হত্যা এবং অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে আহত করার পর হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ-যুবলীগের শত শত অস্ত্রধারি সন্ত্রাসী গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ও পঙ্গু হওয়া খুব আস্বাভাবিক ছিল না। সন্তুষ্টির বিষয় হচ্ছে, তেমনটি ঘটেনি। এমনকি দেশকে ধ্বংস করা এবং অর্থনীতিকে ফোঁকলা করে দেয়া রাঘব-বোয়ালদেরও সেনাবাহিনী আশ্রয় দিয়ে নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করেছে। একইভাবে তারা যদি শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে নিরাপত্তা দিয়ে, ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় দিয়ে দেশে সুষ্ঠু বিচারের মুখোমুখী করতো, তাহলে এখন ভারতে বসে ভারতীয় গোয়েন্দা ও মিডিয়ার মদদে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করতে পারতো না। তবে শেখ হাসিনাকে মজলুম, ডিসিডেন্ট ও প্রতিবিপ্লবী সাজিয়ে তার নির্দেশনায় কয়েক ধাপের ষড়যন্ত্র ইতিমধ্যে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয়েছে। তবে ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। শুরুতেই সনাতন ধর্মাবলম্বিদের শাহবাগ দখলের চেষ্টা, আনসার লীগের সচিবালয় দখলের চেষ্টা, রিক্সা শ্রমিক লীগের শাহবাগ দখলের চেষ্টা, সাভার-আশুলিয়ায় গার্মেন্ট শ্রমিকদের রাস্তায় নামানো, আর এখন লাখ লাখ মানুষকে লাখ টাকা ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় জড়ো করিয়ে সরকার পতনের নানাবিধ চক্রান্তের আলামত দেখা যাচ্ছে।
ইসলামোফোবিক হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডায় আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ঢাকায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর পর, তা চিরস্থায়ী করকে একটি ফ্যাসিবাদী স্লোগান ও কালচারাল ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা তাদের জন্য খুব জরুরি হয়ে পড়েছিল। দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক শক্তিকে দুর্বল ও নিশ্চিহ্ন করতে প্রথমেই তারা সেনাবাহিনীর পেশাদার মেধাবী অফিসারদের টার্গেট করে পিলখানায় বিদ্রোহের নাটক সাজিয়ে বিডিআর মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অত:পর কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো এ বিদ্রোহের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদী ভূমিকা পালনকারী সেনাসদস্য ও অফিসারদের বরখাস্ত করে বিডিআর ও সেনাবাহিনীকে আধিপত্যবাদী শক্তির জন্য নিষ্কন্টক করা হয়। এরপর শুরু হয় বিরাজনীতিকিকরণ প্রক্রিয়া। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের ট্রাইব্যুনালের নামে ক্যাঙ্গারু কোর্ট বসিয়ে যে প্রহসনের বিচার মঞ্চস্থ করা হয়েছিল, তা ছিল মূলত দেশের ইসলামিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূলের ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ। জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে জোর করে ও প্রলোভন দেখিয়েও সাক্ষ্য দেওয়াতে রাজি করাতে না পেরে ঢাকার আদালত পাড়া থেকে সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ করে ভারতে নিয়ে যাওয়া, কিংবা একটি ফরমায়েশি রায় দিতে আদালতের উপর সরকারের চাপ সৃষ্টির ঘটনা বিচারকের স্কাইপি কথপোকথন ফাঁসের মধ্য দিয়ে তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে। সেই সুখরঞ্জন বালী দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর জানাজার দিন লাখো জনতার সামনে নিজের সাক্ষ্য দিয়েছেন। জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দিয়ে আদালতের বিচারক বলেছিলেন, তারা কসাই কাদেরের শাস্তির আদেশ দিয়েছেন। সেই ক্যাঙ্গারু কোর্টের কার্যক্রমের প্রক্রিয়া ও স্বচ্ছতা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করার অবকাশ থাকলেও তখন তা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও দু:সাধ্য। প্রথম রায়ে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায় বদলে দিতে শাহবাগে নাস্তিক-ব্লগারদের ডাকে যে গণজাগরণ মঞ্চ বসানো হয়েছিল, তা নাকি ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের প্রযোজিত ও পরিচালিত। আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার ছিল মূলত তাদের হাতের পুতুল। সেই ইমরান এইচ সরকার এখন কোথায়? তা নাহলে, দেশে এত বড় আন্দোলন-বিপ্লব ঘটে গেল, বিদেশে থেকেও অনেককে বিপ্লবের, ফ্যাসিবাদের পক্ষে-বিপক্ষে ভূমিকা রাখতে দেখা গেলেও তাঁকে কোথাও দেখা গেল না! এ থেকেই বোঝা যায়, তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ এবং তার আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার ছিলেন বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসন ও ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভাড়া করা কুশীলব। জনগণের কাছে ধরা খাওয়ার পর কাজ শেষে তা ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া ছাড়া সে ভাড়াটে স্লোগানবাজদের আর কোনো উপযোগিতা এই সমাজে নেই। নাস্তিক-ব্লগারদের দিয়ে শাহবাগে সৃষ্ট কৃত্রিম গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিক্রিয়ায় হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ছিল আরো ব্যাপক ও স্বতঃস্ফূর্ত । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দেশের একমাত্র পোস্টগ্রাজুয়েট হাসপাতাল (পিজি), ইবরাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, জাতীয় যাদুঘরসহ ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে শাহবাগ। সেই শাহবাগ চত্ত্বর কয়েক সপ্তাহ ধরে গণজাগরণ মঞ্চের দখলে ছেড়ে দিয়ে, সরকার ও দেশের সব কর্পোরেট অলিগার্কদের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার মানুষকে প্রতিদিন দু’তিনবেলা বিরানির প্যাকেটসহ রকমারি ভোজন ও পানীয়র নহর বইয়ে দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, কিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ পথে অবরোধ কর্মসূচি শেষে সরকারি অনুমোদন নিয়ে শাপলা চত্ত্বরে জমায়েত হওয়ার পর হেফাজতে ইসলামকে শিক্ষা দিতে মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য গুলি করে মতিঝিলের পিচঢালা পথে রক্তের নদী বইয়ে দিয়েছিল। নিরস্ত্র-নিরীহ মাদরাসা শিক্ষক, ছাত্র ও ধর্মপ্রাণ মানুষকে একটি রাত রাজপথে কাটাতে গিয়ে বুলেটকিদ্ধ হতে হয়েছিল।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বাস্তবায়ন করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামি, আলি আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ বিরোধীদলের প্রায় এক ডজন শীর্ষ নেতাকে বিচারের নামে হত্যা করে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির উপর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর থেকে শাহবাগে আরেকটি জাগরণ মঞ্চ আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা দখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গত ১৬ বছরে দেশকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত করার মধ্য দিয়ে একেকজন আওয়ামী লীগ নেতা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ভারতে পালাতে গিয়ে অল্প কিছু সংখ্যক ধরা পড়লেও অধিকাংশ এখন দেশে-বিদেশে পলাতক। তারা এখন কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশকে অস্থিতিশীল করার মধ্য দিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলে, ব্যর্থ প্রমাণ করে দেশে একটি প্রতিবিপ্লবের গ্রাউন্ড তৈরী করতে চাচ্ছে। বাংলাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় এবং ভ্যালিড অপারেটিভ হচ্ছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী ন্যারেটিভকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্রিয় আছে বেশ কিছু দেশি গণমাধ্যম, সাংস্কৃতিক জোট, সুশীল সমাজ, থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং ভারতীয় মিডিয়া। গত ১৬ বছরের দখলদারিত্ব, লুন্ঠনবাজি, গুম-খুন ও আয়নাঘরের পৈশাচিকতা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানও সহযোগির ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মূল আইকন, প্রকাশ্য-নেপথ্যে থাকা সব কুশীলব ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। দেশের মানুষের কাছে তারা এখন যথাযথ রূপে চিহ্নিত। সুতরাং তাদের দিয়ে কোনো প্রতিবিপ্লব সংঘটিত করা অসম্ভব। ভারতের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও সফ্ট পাওয়ার এবার দেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে সরাসরি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার করার নানা রকম কসরৎ করে চলেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন সংগঠনের নামে ঢাকায় সরকারবিরোধী গণজমায়েত করা হয়েছে। দেশের পুলিশ বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার সুযোগে তারা শাহবাগ, সচিবালয় দখলে নিতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও তারা এখনো ইসকনের নামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রাজপথে নামিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ১৬ বছর ধরে ঐক্য বজায় রেখে একটি গণবিপ্লবের নেতৃত্বে থাকা প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং জামায়াত যেন হাসিনার পতনের পর মাত্র সাড়ে তিন মাসেই অধৈর্য হয়ে পড়েছে। ভোটের রাজনীতি ও ক্ষমতার মসনদের নীরব প্রতিযোগিতায় তাদের কথাবার্তা ও বক্তব্যে এক ধরনের ভিন্নতা ও সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব কথাবার্তা ও সমন্বয়হীনতা তৃতীয় পক্ষ পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের কিছুটা সুবিধা করে দিচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, রিকশা ও পরিবহন শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ ১৬ বছর ধরে নানারকম সুবিধাভোগীরা বসে নেই। প্রতিটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, কল-কারখানা ও শহর-বন্দরে তারা কাজ করে চলেছে। অর্ন্তবর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল ও ব্যর্থ করে দিতে তারা নানামুখী ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলেছে।
ঢাকার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছিল। এখন নতুন নতুন ইস্যু, উত্তেজনা ও সংঘাতের উস্কানি দিয়ে বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ইতিপূর্বে রাজনৈতিক আন্দোলনের সময়ও কখনো ঢাকার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের একটির সাথে আরেকটির এভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে দেখা যায়নি। হাসপাতালে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের সংঘাত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধ্বংসযজ্ঞ ও রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা অস্বাভাবিক। একটি পক্ষ লাখ লাখ মানুষকে লাখ টাকা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে শাহবাগে জমায়েত করার চেষ্টা করছে, ধর্মীয় মোড়কে ইসকন ভিন্ন ইস্যুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জড়ো করার চেষ্টা করছে, নেপথ্য শক্তি ভিন্ন আঙ্গিকে অটোচালক, হকার ও কলেজ শিক্ষার্থীদের উস্কানি তরুন প্রজন্মকে দিকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। বিতর্ক এড়িয়ে জরুরি সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়া, গুম-খুন-গণহত্যার বিচার ত্বরান্বিত করা, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা এবং অবাধু সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করাই অর্ন্তবর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য। দেশের ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের পাশে থাকবে। তবে সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্র-জনতার রায়কে গুরুত্ব দিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে তার কিছূ ব্যত্যয় অনেক অনাকাক্সিক্ষত প্রশ্ন ও পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে। এ থেকে শিক্ষা নিয়ে বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ সকলকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইনজীবী হত্যায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান
ঢাবিতে আইনজীবী সাইফুলের গায়েবানা জানাজা
মায়ামিতে মেসিদের নতুন কোচ মাশ্চেরানো
চিন্ময় সম্পর্কে দিল্লির বক্তব্যকে বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে ঢাকা
উত্তাল ইসলামাবাদে সেনা মোতায়েন
আদানির গ্রেপ্তারের দাবিতে বিহার বিধানসভার সামনে বিক্ষোভ
র্যাবের ‘কসাই’ সাবেক এসপি ফারুকীর বিচার না হলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে
হজযাত্রী নিবন্ধন ২ মাস বাড়ানোর দাবি
সংঘাত-অস্থিরতার দায় সরকার এড়াতে পারে না : এবি পার্টি
অহিংস গণঅভ্যুত্থানের সংগঠকসহ ১৮ জন কারাগারে
হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ ড. ইউনূসের
ঐক্যের শক্তি ধ্বংস করতে ছড়ানো হচ্ছে বিভেদের বিষ: মুশফিক আনসারী
পরিবেশ কর্ম-পরিকল্পনা ২০২৪-২০৩০ চালু করেছে এডিবি
লন্ডনে হাইকমিশনার সাইদা মুনার রাজত্বের অবসান হচ্ছে
জাতীয় অর্জনে কৃষক ও কৃষিবিদদের অবদান অনস্বীকার্য -স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা
বিজেপির হুমকির যথাযথ জবাব দিতে হবে
বগুড়ায় মারা গলেনে কারাবন্দী আওয়ামী লীগ নতো শাহাদত আলম ঝুনু
গাজীপুরে বন বিভাগের জমি উদ্ধারে বাধাঃ হামলায়i এসিল্যান্ড সহ আহত ১০ গাড়ি ভাঙচুর
বাংলাদেশে সয়াবিন চাষ : পুষ্টিকর খাবারের নতুন সম্ভাবনা