সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম

গত শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ নিয়ে দুই দিনের জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ভাষণে বলেছেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচনÑএই তিনটির কোনোটি ছাড়া সাফল্য আসবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। সংস্কারের জন্য গঠিত ১৫টি কমিশনের প্রতিবেদন আগামী জানুয়ারিতে জমা হবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেছেন, প্রতিটি সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্পকে জাতির জন্য সুপারিশ করা। যার যার ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কীভাবে রচিত হবে, তা বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে দেয়া। এতে নাগরিকদের পক্ষে মতামত স্থির করা অনেকটা সহজ হবে। কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই আমাকে আপনাকে তা মেনে নিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। রাষ্ট্রকাঠামো এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যে সংস্কারের কথা প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন তা যথার্থ, বাস্তবোচিত এবং এটাই হওয়া উচিৎ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এ বিষয়গুলোই প্রাধান লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও পালিয়ে যাওয়ার পর তার শাসনামলে রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তা মেরামতের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেয়েছে। সর্বক্ষেত্রে ভঙ্গুর অবস্থা নিয়ে দেশকে কোনোভাবেই এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি কাঠামো সংস্কারের মাধ্যমে সুদৃঢ় করতে না পারলে রাষ্ট্র ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত হয়ে যেতে পারে। আগে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশকে উদ্ধার করতে হবে। জনপ্রশাসন, সংবিধান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচনী ব্যবস্থা, আদালত, অর্থনীতির মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যদি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানো না যায়, তবে দেশকে কোনোভাবেই গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সভ্য দেশের পথে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এজন্য সময়ের প্রয়োজনে এবং সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিকৃষ্টতম শাসন দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। পেছনে পড়া দেশকে সংস্কারের মাধ্যমে বর্তমানে এনে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সংস্কারের বিকল্প নেই। এজন্য সময়ের প্রয়োজন। আমরাও শুরু থেকেই সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়ার কথা বলে আসছি। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও বলেছেন, সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় ও সহায়তা করা হবে। কারণ, সংস্কারের কাজটি তাড়াহুড়োর নয়। এটি অত্যন্ত গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণার বিষয়। এমন সংস্কার করা যাবে না, যাতে পরবর্তীতে মনে হতে পারে, এটা যথাযথ হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচন হচ্ছে, গণতন্ত্র উত্তরণের প্রথম সোপান। সেটিও যত দ্রুত হয়, তত মঙ্গল। এই সঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার, সংস্কার ও নির্বাচন যতই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হোক, এসব করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের স্বস্তি, শান্তি এবং সুখ-দুঃখের কথা ভুলে গেলে চলবে না। দেশের সাধারণ মানুষ কীভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারা ভাল থাকলে, দেশ ভাল থাকবে। সাধারণ মানুষ কিংবা একজন দিনমজুর সংস্কার-নির্বাচন তত বোঝে না। তারা বোঝে, দুবেলা দুমুঠো ভাত কীভাবে খাবে। শেখ হাসিনার সময় থেকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্ব গতিতে মানুষের যে নাভিশ্বাস উঠেছে, তা কমানো যায়নি। উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আশা করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে, তা আসেনি। এতে তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করা স্বাভাবিক। তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুনসহ নানা অপরাধ বেড়ে গেছে। তারা পড়েছে উভয় সংকটে। একদিকে খাবারের চিন্তা, অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য যথার্থই বলেছেন, সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন। এর জন্য ঐক্য দরকার, নির্বাচনেও যেতে হবে। তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কারের পাশাপাশি মানুষকে এই স্বস্তির জায়গাটা করে দিতে হবে। একটি করতে গিয়ে, আরেকটি থেকে মনোযোগ হারালে চলবে না। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সরকারের অনেক ক্ষেত্রে অপচয় হচ্ছে। হেলিকপ্টারবাজি হচ্ছে। নতুন দল গঠনের প্রয়াসও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব সরকারের দায়িত্বশীলদের না করাই ভালো।

রেকর্ড মূল্য স্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত ও দরিদ্রের ভেদাভেদ ভুলে প্রতিদিনই টিসিবির ট্রাকের সামনে মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ থেকে বোঝা যায়, দারিদ্র্যসীমাও নিচে নেমে যাচ্ছে। মানুষের আয় ও সক্ষমতা কমে যাওয়া, কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাইয়ের শিকার হওয়া, বেকারত্ব বৃদ্ধি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হচ্ছে। বড় বড় কর্পোরেট ও উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান অনেকটা নিরুপায় হয়ে ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করছে। অর্থনীতির সবক্ষেত্রে স্থবিরতা দৃশ্যমান। সরকারকে এদিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার। সাধারণ মানুষই যদি ভালো না থাকে, তাদের জীবন না চলে, প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়, তাহলে যতই সংস্কার করা হোক, তাতে কি লাভ? সংস্কার যেমন করতে হবে, তেমনি মানুষের জীবনযাপনের সুবিধা-অসুবিধাগুলোও তো দেখতে হবে। সরকারের এখন উচিৎ, সাধারণ মানুষের চাওয়াকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া। তাদের জীবন সহজ করে দেয়ার দ্রুত উদ্যোগ নেয়া। খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভয়-ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেই বিয়ে দিন
খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা : শিক্ষায় তার অবদান
আরও

আরও পড়ুন

সড়ক অবরোধ চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাদের, দুই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

সড়ক অবরোধ চাকরিচ্যুত সাবেক সেনাদের, দুই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

আশুলিয়ায় ভবন মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ

আশুলিয়ায় ভবন মালিকের স্বেচ্ছাচারিতায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ

হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ সভা

হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের প্রতিবাদ সভা

৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে একটি ইসলামী দল

৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংক দখল করেছে একটি ইসলামী দল

মেহেরপুরে তসলিমা হত্যা মামলায় ২ জন আটক

মেহেরপুরে তসলিমা হত্যা মামলায় ২ জন আটক

ঈশ্বরদীতে ৫ বছরের শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সৎ বাবা গ্রেফতার

ঈশ্বরদীতে ৫ বছরের শিশু কন্যাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সৎ বাবা গ্রেফতার

নাসার নতুন সাঁতারু রোবট , ইউরোপায় প্রাণের খোঁজে এক বিস্ময়কর  যাত্রা

নাসার নতুন সাঁতারু রোবট , ইউরোপায় প্রাণের খোঁজে এক বিস্ময়কর যাত্রা

৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে : সারজিস

৩১ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্র লিখিত দলিল হিসেবে থাকবে : সারজিস

ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না : রিজভী

ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করেন, ইসলাম মানে তো বারবার মোনাফেকি করা না : রিজভী

উখিয়ায় চুরির দায়ে পিটিয়ে এক যুবককে হত্যা, পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত খুন

উখিয়ায় চুরির দায়ে পিটিয়ে এক যুবককে হত্যা, পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত খুন

৩১ ডিসেম্বর মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ

৩১ ডিসেম্বর মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে : হাসনাত আবদুল্লাহ

বিধ্বস্তের আগে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বিমান যাত্রী

বিধ্বস্তের আগে যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বিমান যাত্রী

সিলেটে ‘পানি লাগবো পানি’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

সিলেটে ‘পানি লাগবো পানি’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

নতুন বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় তাপপ্রবাহ ও ঝুঁকির সতর্কবার্তা

নতুন বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় তাপপ্রবাহ ও ঝুঁকির সতর্কবার্তা

নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারে খুলেছে সচিবালয়, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে অন্যত্র

নিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকারে খুলেছে সচিবালয়, ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ চলছে অন্যত্র

কেশবপুরের পল্লীতে নারকেল গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু

কেশবপুরের পল্লীতে নারকেল গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু

জকিগঞ্জে বাসের চাপায় স্কুলছাত্র আবিরের মর্মান্তিক মৃত্যু : শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

জকিগঞ্জে বাসের চাপায় স্কুলছাত্র আবিরের মর্মান্তিক মৃত্যু : শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ

ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ট্রেইনি চিকিৎসকদের শাহবাগ অবরোধ

ইলন মাস্কের উগ্র-ডানপন্থী সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

ইলন মাস্কের উগ্র-ডানপন্থী সমর্থন নিয়ে বিতর্ক

বিজিবির সহায়তায় অবশেষে মুহুরী নদীতে সেচ পাম্প চালু

বিজিবির সহায়তায় অবশেষে মুহুরী নদীতে সেচ পাম্প চালু