রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের অবদানের মূল্যায়ন করতে হবে
২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৯ এএম
দেশের সরকারি চাকরিজীবীরা নানান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, নির্ধারিত বাসা-বাড়ি, গাড়ি, কাজের লোক, রেশন কার্ড, সন্তানদের জন্য শিক্ষায় কোটা, চিকিৎসায় ভর্তুকি এবং অবসরের পর পেনশন, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি পান। এসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরও অনেকেই দুর্নীতি, লুটপাট ও অনৈতিক কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস করছেন।
অন্যদিকে, প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধারা বছরের পর বছর প্রিয়জনদের থেকে দূরে থেকে বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশ চলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হয়, কিন্তু তারা নিজেরাই রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
আমার মতো যারা চার দশক ধরে দেশের বাইরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং অর্জিত সব কিছু দেশে বিনিয়োগ করেছেন, তারা একটি প্রশ্ন তোলেন, ‘যদি আমরা দেশে ফিরে স্থায়ী হতে চাই, রাষ্ট্র আমাদের জন্য কী ব্যবস্থা করেছে? আমাদের ভবিষ্যৎ কি সুরক্ষিত?’ এই প্রশ্ন শুধু আমার নয়, এটি কোটি প্রবাসীর মনের কথা। কিন্তু রাষ্ট্র কি তাদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে? প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির জন্য অব্যাহতভাবে কাজ করে চলেছেন। তাদের পাঠানো অর্থ দেশের জিডিপির ৭-৮ শতাংশের বেশি। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, দরিদ্র পরিবারের জীবনমান উন্নয়ন এবং ছোট ব্যবসার প্রসারে সরাসরি ভূমিকা রাখে। বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় ভরসা এই রেমিট্যান্স, যা দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। প্রবাসীরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা, শোষণমূলক কাজ এবং অনিরাপদ পরিবেশে বছরের পর বছর কাটান। অন্যদিকে দেশে যারা দুর্নীতি আর লুটপাটে মগ্ন, তারা আরামদায়ক জীবন-যাপন করছেন। যারা দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি তৈরি করছেন, তারা রাষ্ট্রের কাছে একপ্রকার উপেক্ষিত।
রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জীবন শুধুই পরিশ্রম ও ত্যাগের এক কষ্টের গল্প হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের জন্য অবিরাম কাজ করেও তারা অবহেলিত থেকে যান। তাদের জন্য কোনো সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই, অবসরকালীন কোনো নিশ্চয়তা নেই, এমনকি বিপদের সময় কোনো সাহায্যও নেই। রাষ্ট্রের উচিত এই অবহেলা দূর করে প্রবাসীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। কোটি প্রবাসী মানুষের হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা এই আর্তি অস্বীকার করে আর কত দিন দেশের দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতারা দেশের সম্পদ লুটপাট করবেন? সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায়, কিভাবে এবং কখন প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? তারা তো দেশের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করছেন, কিন্তু তাদের জন্য কোনো ন্যায্য ব্যবস্থা না করে রাষ্ট্র কেবল কথার ফুলঝুরি দিয়ে যাচ্ছে। এখনো রাষ্ট্র শেখ হাসিনার নীতির পথেই হাঁটছে। গরিবদের অবহেলা করে আমলাদের অগাধ সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কেন? প্রবাসীদের জন্য পেনশন, স্বাস্থ্যসেবা কিংবা কোনো ধরনের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে কেন এত দেরি হচ্ছে?
এখন সময় এসেছে তাদের প্রতি অবহেলার অবসান ঘটিয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুসংহত ব্যবস্থা গ্রহণের।
রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হতে পারে :
১. পেনশন তহবিল গঠন : প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স থেকে একটি ছোট অংশ রেখে কেন্দ্রীয় পেনশন তহবিল তৈরি করা উচিত। এটি তাদের অবসরকালীন জীবনের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
২. বিনিয়োগে সহায়তা : প্রবাসীদের সঞ্চিত অর্থ সহজে বিনিয়োগের জন্য একটি স্বচ্ছ ও নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। দেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড় এবং বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক ভূমিকা আরো জোরদার করা যেতে পারে।
৩. স্বাস্থ্য ও বীমা সেবা : প্রবাসীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবন বীমা প্যাকেজ চালু করা উচিত, যা দেশে ও বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই কার্যকর থাকবে। তাদের পরিবারের জন্যও স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা থাকা আবশ্যক।
৪. প্রতিনিধিত্বের সুযোগ : প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় একটি শক্তিশালী জাতীয় সংস্থা গঠন করা দরকার, যারা তাদের সমস্যা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করতে পারবে।
৫. শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা : প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য দেশে বিশেষ শিক্ষার সুযোগ এবং বৃত্তির ব্যবস্থা করা উচিত। তাদের পরিবারের জন্য সুরক্ষিত এবং সহজলভ্য সামাজিক সুবিধা চালু করা সময়ের দাবি।
প্রবাসীরা কোনো করুণার আবেদন করছেন না। তাদের শ্রম, ত্যাগ এবং মেধার বিনিময়ে যে অর্থনীতির চাকা সচল থাকে, তার যথাযোগ্য মর্যাদা ও সুরক্ষা দেয়া রাষ্ট্রের নৈতিক কর্তব্য।
রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের এই সুযোগ হারালে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে ভয়াবহ। এখনই সময় প্রবাসীদের ত্যাগ ও পরিশ্রমের যথাযোগ্য মূল্যায়ন করার।
গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক,
ফাইজার, সুইডেন
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডেনমার্ক সরকারের আইএফইউ কর্তৃক একেএস খান ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসেন ট্রাম্প!
বিমানবন্দরে রাতভর তল্লাশিতে মেলেনি কিছুই : শাহজালালে ফের বোমা হামলার হুমকি বার্তা
বিপুল কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো
ইএফডি মেশিনের আগে সব ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতায় আনুন
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোনো জায়গা নেই : আমান উল্লাহ আমান
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম-ই কার্যকর পন্থা শীর্ষক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশ্বনাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুইট গ্রেফতার
সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন
রূপগঞ্জে শীতার্তদের ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিলেন এসিল্যান্ড
চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ধামরাইয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঝুলছে তালা
মাদক চাঁই রুবেল দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার
দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক এমপি মিজানুর রহমান কারাগারে
সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয়কর নথি জব্দ
জুলাই বিপ্লবে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী
স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন : নবীন পুলিশদের আইজিপি