ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ এএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:২২ এএম

ধর্ষণের শিকার মাগুরার শিশু আছিয়াকে শত চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সিএমএইচ-এ শিশুটি ইন্তেকাল করে (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। আছিয়ার মৃত্যুতে গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শোক প্রকাশ করেছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল গত বৃহস্পতিরবার বলেছেন, ৭ দিনের মধ্যে এ ঘটনার বিচার কাজ শুরু হবে। ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের সাথে জড়িত অভিযুক্ত চারজনকে পুলিশ ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। সকলেই এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ঘটনায় মানুষ শুধু শোকাচ্ছন্ন হয়নি, ক্ষোভেও ফেটে পড়েছে। এমন বর্বরতায় সচেতন মানুষ হতবাক ও বিস্মিত। তবে এ ঘটনায় সরকার যেভাবে রেসপন্স করেছে, তা প্রশংসনীয় এবং সত্যিকারের সরকারের দায়িত্ববোধের পরিচায়ক।

দেশের ধর্ষণের ঘটনা নতুন নয়। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ধর্ষণ ছিল নিত্যদিনের বিষয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রতিমাসে ধর্ষণ, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান প্রকাশ করত। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হাসিনার শাসনামলের শেষ ছয় বছরে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৭ হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজারের বেশি নারী। এ এক ভয়াবহ চিত্র। এ চিত্র আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। হাসিনার শাসনামলে ধর্ষণের ঘটনার সাথে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর জড়িত থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ধর্ষণ কিংবা তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা অহরহ ঘটত। আমাদের মনে আছে ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা জসিম উদ্দিন মানিক শতাধিক ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছিল। ধর্ষণে তাকে ‘সেঞ্চুরি মানিক’ বলা হতো। এই ধর্ষকের বিচার সে সময় হাসিনা করেননি। উল্টো তাকে কানাডা পাঠিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন। গত সাড়ে ১৫ বছরে ধর্ষণকে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত করা হয়েছিল। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বলতে কিছু ছিল না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একেক নেত্রী এবং নেতাদের নানা রগরগে কাহিনী এখন প্রকাশিত হচ্ছে। দেশের শাসক দলের নেতানেত্রীদের নৈতিক মূল্যবোধ কতটা নি¤œগামী ছিল, তা এসব ঘটনা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকারিভাবেও তাদের প্রশ্রয় দেয়া হতো। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ইসলামকে সংকুচিত করে প্রগতির নামে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি ও বেলেল্লাপনাকে উসকে দিয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নানা দ্বিধা নিয়ে চলাফেরা করত। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামকে অবদমিত করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে ইসলামী মূল্যবোধ ও মুসলমানদের ঐতিহাসিক ঘটনা বাদ দিয়ে বিজাতীয় এমনকি সমকামিতার সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। বলা যায়, হাসিনা ধর্মের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। হাজার হাজার ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের বিচারের নজির নেই বললেই চলে। ৯৯ ভাগেরই বিচার হয়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধর্ষক খালাস পেয়ে বুকফুলিয়ে বের হয়ে পাল্টা ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। এমন এক অন্ধকার যুগের মধ্যে হাসিনা দেশকে নিক্ষেপ করেছিল।

আছিয়ার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা বিগত বছরগুলোতে নিয়মিত ঘটেছে। তবে আছিয়ার ঘটনায় মানুষকে যেভাবে নাড়া দিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। এ ঘটনায় সরকারের দায় নেই। সরকার দ্রুত ঘটনার সাথে যুক্তদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। আছিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সামাজে নৈতিক, ধর্মীয় অনুশাসন ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের বর্বর ঘটনা ঘটে থাকে। বিগত বছরগুলোতে আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের যে কাঠামো তা প্রায় ভেঙে দেয়া হয়েছে। নীতি-আদর্শের পরিবর্তে দুর্নীতি ও দুরাচারকে প্রশংসার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে আমাদের চিরায়ত পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। অপরাধী ও দুর্নীতিবাজরা সমাজের সম্মানিত পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। যে সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, সেখানে ধর্ষণ স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। আমরা দেখেছি, এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ায় তা অনেকাংশে কমে গেছে। একইভাবে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের যদি দ্রুত বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে। আমরা আশা করি, হাসিনার নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শাসনামল পেরিয়ে নতুন বাংলাদেশে আছিয়ার নির্মম পরিনতির মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে। প্রত্যেককে আমাদের চিরায়ত সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধকে সুসংহত করতে হবে। ধর্মীয় আচার-আচরণ, বিধিনিষেধ, নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধকে আকড়ে ধরতে হবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে যেমন এগুলোর অনুশীলনে তাকিদ দেয়া প্রয়োজন, তেমনি সমাজ ও পরিবারের অভিভাবক এবং মসজিদ-মন্দিরের ইমাম ও পুরোহিতদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে। যেকোনো মূল্যে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে ফিরিয়ে আনতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পারিবারিক বন্ধন জোরদার করুন
খাল কেটে কুমির আনার পরিণতি
নারীর উপযুক্ত মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে
অবৈধ পার্কিং নগরের ক্যান্সার
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি
আরও
X

আরও পড়ুন

কালো সোনায় রঙিন স্বপ্ন পঞ্চগড়ের কৃষক মানিকের

কালো সোনায় রঙিন স্বপ্ন পঞ্চগড়ের কৃষক মানিকের

নোয়াখালীতে আইন মন্ত্রণালয় কর্মচারীর কাছে যুবদলনেতার ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

নোয়াখালীতে আইন মন্ত্রণালয় কর্মচারীর কাছে যুবদলনেতার ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

‘শেখ পরিবারের কি এক্টাবস্থা!’

‘শেখ পরিবারের কি এক্টাবস্থা!’

নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও

নেইমার ছিটকে গেলেন আবারও

ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পরিবর্তে আসছে ‘কমিউনিটি নোটস’

ফ্যাক্ট চেকিংয়ের পরিবর্তে আসছে ‘কমিউনিটি নোটস’

ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে ভারতীয় অস্ত্রের চালান আটক ভারত থেকে বাংলাদেশ পাচারের চেষ্টা

ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে ভারতীয় অস্ত্রের চালান আটক ভারত থেকে বাংলাদেশ পাচারের চেষ্টা

হাসিনাকে ফেরাতে জাহাঙ্গীরের ষড়যন্ত্র, অডিও ভাইরাল

হাসিনাকে ফেরাতে জাহাঙ্গীরের ষড়যন্ত্র, অডিও ভাইরাল

মানবতাবিরোধী অপরাধে আইসিসি-তে দুতার্তের বিচার, ভিডিও কনফারেন্সে শুনানি

মানবতাবিরোধী অপরাধে আইসিসি-তে দুতার্তের বিচার, ভিডিও কনফারেন্সে শুনানি

ডাকাতের কবলে তরমুজের ট্রলার, আহত ৮

ডাকাতের কবলে তরমুজের ট্রলার, আহত ৮

বাউফলে উত্ত্যক্তের শিকার স্কুলছাত্রীর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

বাউফলে উত্ত্যক্তের শিকার স্কুলছাত্রীর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা

সিরাজদিখানে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় অটোরিকশা খাদে, প্রাণ গেল কৃষকের

সিরাজদিখানে অজ্ঞাত গাড়ির ধাক্কায় অটোরিকশা খাদে, প্রাণ গেল কৃষকের

খুলনায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

খুলনায় জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন

মামলা দেয়ার কথা বলে টাকা চাইবার কারবার করবেন না : ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

মামলা দেয়ার কথা বলে টাকা চাইবার কারবার করবেন না : ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভুটানসহ ৪৩টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে ট্রাম্প

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভুটানসহ ৪৩টি দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে ট্রাম্প

ঈদগাঁওতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত-১, আহত-৫

ঈদগাঁওতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত-১, আহত-৫

বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’

বিভিন্ন দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে ‘ইনকিলাব মঞ্চ’

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত সাংবাদিক আলা হাশিমের মৃত্যু

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আহত সাংবাদিক আলা হাশিমের মৃত্যু

ঝিকরগাছায় সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

ঝিকরগাছায় সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার ১

গুলশানে ইউএন হাউজ উদ্বোধন করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

গুলশানে ইউএন হাউজ উদ্বোধন করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

বাবা খ্রিস্টান, মা হিন্দু তবু কেন মুসলিম পদবী ব্যবহার করেন দিয়া!

বাবা খ্রিস্টান, মা হিন্দু তবু কেন মুসলিম পদবী ব্যবহার করেন দিয়া!