মনে পড়বে কি শিশু উমায়েরের কথা? হত্যার দায় আপনারও : জয়া আহসান
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ পিএম | আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২২ পিএম
পুরাতনকে ভুলে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা ফোটানো আর ফানুস ওড়ানো যেন রীতিমতো মহোৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশে। ঘড়িতে বারোটা বাজতে না বাজতেই ঢাকা শহরসহ সারা দেশের আকাশ যেন আলো ঝলমল করে ওঠে। মনে হয় যেন দেশের আকাশে মিসাইলের মতো আতঙ্ক তৈরি হয়। চারিদিকে বাজি-পটকার শব্দে পরিবেশ উৎসবমুখর মনে হলেও এর আড়ালে যে অমানিশায় ডুবছে প্রকৃতির অন্যান্য প্রাণীকুল তা কী মনে রাখে মানুষ? এবার সে কথাই যেন নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
বরাবরই প্রাণ-প্রকৃতির প্রতি সরব জয়া। আজ ৩০ ডিসেম্বর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রাণী রক্ষা অধিকার সংগঠন প্রাণীকুল-এর থার্টিফার্স্ট নাইট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে প্রচারণামূলক একটি ছবি প্রকাশ করে বিপন্ন পাখিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন অভিনেত্রী।
দীর্ঘ সেই পোস্টে জয়া লিখেছেন “মানুষদের মতো পাখিদের কোনো ক্যালেন্ডার নেই। তারা থার্টি ফার্স্ট চেনে না।” অন্য আর দশটা সন্ধ্যার মতোই পাখিরা নীড়ে ফিরে যায়। রাতে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে উঠে আবার কিচিরমিচির করবে বলে।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের উদযাপনকে ইঙ্গিত করে জয়া লিখেছেন, কিন্তু সেই রাতে কী যেন হয় মানুষের। তারা ঘুমায় না। তীব্র হট্টগোল শুরু হয়, যেন যুদ্ধ! বিকট শব্দে পাখিদের ঘুম ভেঙে যায়। তারা দেখে আকাশে শত শত ফানুস উড়ছে। হঠাৎ একটা ফানুস এসে পুড়িয়ে দেয় গাছে থাকা সমস্ত পাখির ঘর। কেউ কেউ পুড়ে মরে, কেউবা আতঙ্কিত হয়ে আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু আকাশটাই তো নিরাপদ না। কোনো কোনো পাখি মারা পড়ে তীব্র শব্দে, আবার কারও গায়ে লাগে আতশবাজি। এরপরও যেসব ভাগ্যবান পাখি তখনও বেঁচে থাকে, তাদের কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে বিল্ডিংয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায়।”
সম্প্রতি বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের এক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বর্ষবরণের রাতে শুধু ঢাকা শহরে চার প্রজাতির শতাধিকের বেশি পাখি মারা যায়। সে হিসেবে জেলা শহরগুলোতেও নানা প্রজাতির পাখি মারা যায়। বলতে গেলে, সারা দেশে প্রায় কয়েক হাজার পাখি মারা যায়- কেবল একটি রাতকে কেন্দ্র করে।
পোস্টটিতে জয়া লিখেছেন,“জানি এই শহরে প্রচুর মানুষও মারা যায়, কারও কারও কাছে পাখির মৃত্যু তাই আদিখ্যেতা মনে হয়। কিন্তু মানুষের মৃত্যু দেখার জন্য তো সংস্থা আছে, সংখ্যা হিসাব করার প্রতিষ্ঠান আছে। আছে আহত মানুষের চিকিৎসা দেওয়ার হাসপাতাল। কিন্তু পাখিদের এসব কিছুই নেই। তাই পাখিরা মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট হয় না, জানা যায় না মৃত্যুর কারণ। এমনকি মৃত পাখিদের সংখ্যাটাও জানি না আমরা কেউ। ফলে এই শহরের মতোই পাষণ্ড নাগরিকেরা ভাবে, পাখির মৃত্যু? ও আর এমন কী! কিন্তু মানুষ কেন ভাবে না যে প্রতিটি প্রাণের গুরুত্ব সমান!”
কেবল যে পাখিদের মৃত্যু হয় তাতো নয়, এই এক রাতে বায়ু দূষণ ও শব্দ দূষণও মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছুদিন আগে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা যায়, “৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়ে রাজধানীর আকাশ-বাতাস। গত সাত বছরে আতশবাজি পোড়ানো ও ফানুস ওড়ানোর কারণে রাজধানীতে বায়ুদূষণ বেড়েছে গড়ে ১৯ শতাংশ। নববর্ষ উদ্যাপনের রাতে ঢাকায় এই সাত বছরে সর্বোচ্চ ৬৬ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ৬ শতাংশ পর্যন্ত বায়ুদূষণ বেড়েছে। এই সাত বছরে ঢাকায় শব্দদূষণ বেড়েছে গড়ে ৭৪ শতাংশ। এ সময়ে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করেছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।”
শুধু পাখিই নয় জয়া আরও লেখেন, “শুধু পাখির কথা কেন, এই শহরের কুকুর-বিড়াল-মুরগি-কীটপতঙ্গসহ সবাই-ই অস্থির হয়ে যায় নগরবাসীর আতশবাজি আর ফানুস উৎসবে। এমনকি ডিমের ভেতর বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। আর মানুষ? তারা তো মানুষের কথাও ভাবে না। ২০২২-এর জানুয়ারির ১ তারিখ যখন নগরবাসী সারারাত আতশবাজি উৎসব করে ঘুমাচ্ছে তখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল ৪ মাস বয়সী উমায়ের। একসময় সে পরাজিত হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ছোট্ট উমায়েরের এই মৃত্যুর দায় কেন এই নগরবাসী নেবে না? আপনারা যারা আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন তারা কেউ কি এই দায় থেকে মুক্ত?”
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আতজবাজি ফুটানোর শব্দের মাত্রা ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবলের মধ্যে থাকে। যা মানুষের জন্যই অসহনীয়। সেখানে পাখিদের জন্য এই উচ্চ শব্দ আরও ভয়ঙ্কর। তা ছাড়া থার্টিফার্স্ট নাইটে রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে শোরগোলের (নয়েজ) পরিমাণ বেড়েছে ১১৩ শতাংশ! উৎসব উদযাপন প্রতিহত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। আতশবাজি ও পটকা বিক্রি বন্ধে এক মাস আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
বছরের পর বছর থার্টিফার্স্ট নাইটে আতশবাজি ও ফানুস ওড়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন দেশের প্রশাসন। তবু, মানুষ যেন হুশ হয়না মানুষের। সেই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলেন জয়া সর্বশেষ লেখেন, “এ বছরও হয়তো আপনারা আতশবাজি আর ফানুসের ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। উৎসবের নামে এই তাণ্ডবলীলা চালানোর সময় কি এই অসহায় কুকুর-বিড়াল-পাখিসহ অসহায় প্রাণীদের করুণ মুখগুলো আপনাদের মনে পড়বে? আপনাদের কি মনে পড়বে শিশু উমায়েরের নিষ্পাপ মুখটির কথা? যদি এদের কারও কথা আপনার মনে না পড়ে, অথবা মনে পড়ার পরও যদি আতশবাজি আর ফানুসের তাণ্ডব চালিয়ে যান, তাহলে জেনে রাখুন, এই প্রাণীহত্যার দায় আপনারও।”
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
উষ্ণতম বছর, উষ্ণতম দশক! আশঙ্কার বর্ষবরণ বিশ্বজুড়ে
মিডল্যান্ড ব্যাংক পিএলসি. এর সাথে শিপ ইন্টারন্যাশনাল হসপিটাল লি. এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে জারি করা ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার
ভারত গেল জাতীয় ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
তিউনিশিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে ২৭ অভিবাসীর মৃত্যু
মাদক পাচারে জড়িত ৭২ আফগান নাগরিককে ফাঁসিতে ঝোলাল ইরান
নতুন বছরে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শুভেচ্ছা বিনিময়
অস্ত্রোপচারে ভুল, মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরলেন রুশ মডেল
ফরিদপুরে ভলভো ব্যাটারির সিসা কারখানায় বিস্ফোরণে তিন শ্রমিক দগ্ধ
শনিবার থেকে মাসব্যাপী ‘চট্টগ্রাম ফুল উৎসব’ শুরু
কারাভোগ শেষে ফিরে গেছে ভারতীয় ৬৪ জেলে
সিবিএমএস সফটওয়্যার জটিলতা নিরসনে বন্ড কমিশনারেট অফিসার্সদের মানববন্ধন
প্রথম কূটনৈতিক সফরে সউদী আরবে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুজিবনগরের বহুল আলোচিত আলম হত্যা মামলায় বাদিসহ চার জন আটক