ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ ডে-২০২৩
২৩ মার্চ ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম
‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ প্রতি বছর ২০শে মার্চ তারিখে সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশন (এফ.ডি.আই) ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরের জন্য ‘ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে’ এর ক্যাম্পেইন থিম নির্ধারণ করেছে “বি প্রাউড অব ইউর মাউথ”। অর্থাৎ ২০২৩ সালের ক্যাম্পেইন থিম হলো, “মুখের স্বাস্থ্যে গর্বিত হোন।” এ বছরের মূল ফোকাস হলো আজীবন হাসির জন্য মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিতে সবাইকে আহ্বান জানাতে হবে। ভালো মুখের স্বাস্থ্যের একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে সাধারণ স্বাস্থ্য এবং সার্বিক জীবন-যাত্রার মানের উপর। আর এজন্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার যোগ্য কার্যক্রমে সবার ভূমিকা রাখতে হবে। মুখ শরীরের আয়না হিসাবে কাজ করে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপ করতে হবে, সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান ঠিক রাখার জন্য।
আপনার মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখলে মাড়ির রোগ থেকে সৃষ্টি হওয়া পেরিওডন্টাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস, ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। রোগ না থাকলে আর্থিক ব্যয় হয় না বলে জীবনের মানও সুন্দর হয়। মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মাড়ি এবং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা এ ধরণের ক্যান্সার এবং নানাবিধ আলসার থেকে রক্ষা পেতে পারি। মুখের রোগ পেরিওডন্টাইটিসের সাথে নন-এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায় অথবা এ সব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিতে হবে। গর্ভবতী থাকার সময় মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ঐ শিশু আকার এবং আকৃতিতে ছোট হবে। গর্ভঅবস্থায় মায়েদের খাবারে অরুচি থাকে। পেট ফাঁপা থাকতে পারে অথবা পেট ভরা ভরা লাগতে পারে। এ জন্য একবারে বেশি না খেয়ে বার বার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একজন মানুষ সাধারণত দিনে ৩ বার খাবার গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া উঠিত। কারণ বমি বমি ভাবের কারণে এবং খাবারে অরুচির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের কেউ কেউ সামান্য খাবার খান বা একদম খেতে চান না। এসময় দাঁত ও মুখের যতœ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসে অবশ্যই ফলিক এসিড দেওয়া প্রয়োজন। সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাঁটা শিশুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া ফলিক এসিডের অভাব হলে শিশুর গঠন এবং গর্ভবতী মায়ের মুখে আলসার দেখা দিতে পারে। খাবারের পাশাপাশি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় প্রোজস্টেরন হরমোন বেশি থাকার কারণে গর্ভবতী মায়েদের কনস্টিপেশন এবং মুখের রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মাড়িতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী থাকার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করে মাড়ির যথাযথ যতœ নিলে এধরণের সমস্যা দেখা দিবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভালো স্বাস্থ্য আমাদের সুখ এবং মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পেরিওডন্টাল রোগ আছে তারা এথেরোস্কেলেরোটিক হার্টের রোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এথেরোস্কেলেরোসিস এমন একটি অবস্থা যখন শরীরের ধমনী আক্রান্ত হয়ে ধমনীর অভ্যন্তরভাগ সরু হয়ে যায়। কারণ ধমনীর প্রাচীরে প্ল্যাক জমা হয়ে থাকে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত পরিবহন কমে যায়। যদি হৃদযন্ত্রগামী ধমনী বা রক্তনালীতে কোন প্রতিবন্ধকতা হয় তবে বুকে ব্যাথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা মাঝে মাঝে বাম হাতে, কাঁধে বা চোয়ালে অনুভূত হতে পারে। কখনও কখনও নিচের চোয়ালের মাড়ির দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এথোরোস্কেলেরোসিস মস্তিষ্কের ধমনীতে হতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি এবং মাথা ঘুরতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এথেরোস্কেলেরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
এছাড়া ধূমপান, মোটা হয়ে যাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ঝুঁকির কারণসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু পেরিওডন্টাল রোগের সাথে এথেরোস্কেলেরোসিস এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় তাই আপনার মাড়ির যতœ নিতে হবে। ভুলে যাওয়া রোগের সাথে মাড়ি রোগের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু দাঁতের যতœ নিলেই হবে না পাশাপাশি মাড়ি ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন পেরিওডন্টাল রোগ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পরিবারের একজনের পেরিওডন্টাল রোগ হলে পরিবারের বাকী সদস্যদের চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রেখে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য কখনই ভালো রাখা সম্ভব নয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে আপনি বিভিন্ন ধরণের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যার কারণে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
তাই দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য মুখের যতœ নিন। মুখ আপনার যতœ নিবে। আজীবন হাসির জন্য মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিন। আপনার মুখ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঐক্য-সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু আজ
ইহুদিদের ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইয়েমেনে ইসরাইলি হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি
হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা
টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড
শেষের গোলে জিতে চেলসির জয়রথ থামাল ফুলহ্যাম
পরলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং: ভারতে ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
কালীগঞ্জে রাঙ্গামাটিয়া ধর্মপল্লীর সংবাদ সম্মেলন
গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরিতে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত
মিসরে প্রেসিডেন্ট সিসির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ
কুর্দি যোদ্ধাদের ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি এরদোগানের
৩৫শ’ এজেন্টের অধিকাংশই গুজরাটের পাচারকারী