অটিজম শিশুর আচরণ বুঝা এবং নতুন দক্ষতা শিখা
২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০২ এএম
আপনি কি সত্যিই আপনার অটিজম স্পেকট্রাম ডির্সডারে আক্রান্ত শিশুটির অস্বাভাবিক আচরণের পিছনে সম্ভাব্য কারণগুলো বিবেচনা করছেন?
অটিজম স্পেকট্রাম ডির্সডারে আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুরাই তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। ক্ষোভ, হতাশা বা উদ্বেগ জনিত অনুভূতির ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপের পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া শিশুদের অস্বাভাবিক আচরণের উদাহরণ হল রাগ বিস্ফোরণ, অবাধ্য আচরণ করা বা উদ্ধত পরিস্থিতিতে থেকে পালানো। আচরণগত বিজ্ঞান অনুসারে সমস্ত আচরণই হয় চাওয়া কিছুর অর্জন (মনোযোগ, একটি বস্তু, একটি ঘটনা, একটি সংবেদনশীল অভিজ্ঞতা ইত্যাদি) বা অবাঞ্ছিত কিছু এড়ানোর কাজ থেকে।
অটিজম স্পেকট্রাম ডির্সডারে আক্রান্ত একটি শিশুর আচরণ বুঝতে শিখা, শিশুটির কার্যকলাপের সাথে মিল রেখে শিশুটির আচরণ সংশোধন এবং শিশুটিকে নতুন দক্ষতা শিখানোর জন্য সবচেয়ে ভালভাবে মিলে এমন কৌশলগুলোকে চিহ্নিত করতে সহায়তা করে। একটি শিশুর মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলো পরীক্ষা করার সময়, অবশ্যই শিশুটির ভাষার দক্ষতাসমূহ এবং তার ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীলতা সম্পর্কে বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা এই দ্বারা কি বুঝাতে চাই? এটি অস্বাভাবিক নয় যে, ভাষার দক্ষতা বিকাশে অস্বাভাবিকতা সম্পন্ন একজন শিশু বা ব্যক্তি তার ইচ্ছা এবং চাহিদাসমূহ প্রকাশের জন্য একটি স্বতন্ত্রভাবে অনন্য স্বতন্ত্র পদ্ধতির বিকাশ ও ব্যবহার করে থাকে। একইভাবে, ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর অতি তীব্র বা অতি ক্ষীণ সংবেদনশীল সম্পন্ন একজন শিশু বা ব্যক্তি তীব্র বা ক্ষীণ সংবেদনশীল প্রয়োজনের জন্য সংবেদনশীল অনুভূতিগুলো চাওয়া বা নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার আলোকে সেগুলো এড়িয়ে যাওয়া বা পাওয়ার জন্য অস্বাভাবিক আচরণের ্ আশ্রয় নিয়ে থাকে।
শিশুর অস্বাভাবিক আচরণগুলোকে উপলব্ধি করার জন্য কিছু কৌশল নি¤œরুপঃ
জীবনযাপন এবং শিখার পরিবেশ জুড়ে যতœশীল এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণগুলো নি¤œবর্ণিত প্রশ্নগুলোকে প্রতিফলিত করবে
আমি কি আচরণ দেখছি? সঠিক আচরণটি যতœ সহকারে বর্ণনা করুন।
দিনের কোন সময়ে এই আচরণটি ঘটছে?
কোন কোন স্থানগুলোতে এবং কতটুকু ব্যবধানের মধ্যে এই আচরনটি ঘটে?
এই আচরণটির সাথে কোন মানুষ (যেমন-প্রাপ্ত বয়স্ক বা সমবয়সী) যুক্ত আছে কি?
কি কারণে আচরণটির সূচনা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে?
আচরণটি থেকে শিশুটি কি কোন কিছু অর্জন করতে বা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে?
আচরণটির তাৎক্ষণিক ফলাফল বা পরিণতি কী?
কোন দক্ষতা বা দক্ষতাগুলো শিশুটির শক্তিশালী দক্ষতার মধ্যে আছে যা আরও উপযুক্ত মানসিক প্রতিক্রিয়া শিখানোর জন্য লক্ষ্য করা যেতে পারে?
শিশুটির মধ্যে এখনো কোন দক্ষতা বা দক্ষতাগুলো নেই যা আরও উপযুক্ত মানসিক প্রতিক্রিয়ার বিকাশের জন্য শিখানো যেতে পারে?
শিশুটির ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার ধরনে তার যোগাযোগ এবং সংবেদনশীল প্রয়োজনগুলো কী ভূমিকা পালন করছে?
ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া জনিত আচরণঃ
একবার আপনার শিশুর আচরণগুলো ভালোভাবে বুঝতে পারলে এবং তার যোগাযোগ করার কৌশল ও ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া জনিত চাহিদাগুলো সঠিকভাবে নিরুপন করা হয়ে গেলে তার জন্য সঠিক চিকিৎসার সুযোগ এবং উদ্দেশ্যেও দিকনির্দেশনা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যায়।
প্রথমত, এটি অবশ্যই নির্ধারণ করতে হবে যে শিশুটির আচরণগুলো তার ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীল প্রয়োজন দ্বারা অনুপ্রাণিত কিনা। যদি এটি হয়, শিশুটির যোগাযোগের পদ্ধতিগুলোর পর্যালোচনা করে একটি নির্দেশমূলক পরিলক্ষিত সংকেত দেওয়া উচিতঃ কোন দুর্বল দক্ষতাকে আরও জোরদার করা উচিত, বা কোন অনুপস্থিত দক্ষতা শিখানো উচিত, যা একটি শিশুকে তার যথাথ প্রয়োজন অর্জন করতে সক্ষম করে তুলবে।
অন্বেষণ করা কৌশলগুলো শিশুকে শিখানোর উপর কেন্দ্রীভূত হওয়া উচিত কিভাবে সর্বোত্তম যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে তার প্রয়োজন এবং চাহিদাগুলোকে সর্বোত্তমভাবে নির্দেশ করা যায়, যা কিনা পৃথক পৃথক শিশুর জন্য সর্বোত্তম কাজ করে। এতে যোগাযোগ তরান্বিত করার জন্য সহযোগিতার পদ্ধতি অন্তভূক্ত থাকতে পারে, যেমন- মূল শব্দ, ছবি বা প্রতীকযুক্ত কার্ড ব্যবহার করা, মডেলিং করে দেখানো বা মৌখিকভাবে বলে দেওয়া বা পছন্দ নির্ধারণ বোর্ডের মাধ্যমে পছন্দ করতে বলা ইত্যাদি।
আচরণের জন্য অন্যান্য সম্ভাব্য কারণঃ
যদি এটি নির্ধারণ করা হয যে আচরণটি ইন্দ্রিয় অনুভূতিগুলোর সংবেদনশীল প্রয়োজনের সাথে যুক্ত নয় বরং এটির সাথে ক) কোন কিছু পরিহার করা বা খ) কাঙ্খিত কিছু অর্জন করা সম্পর্কিত তবে শিশুটির বর্তমান যোগাযোগের দক্ষতা পদ্ধতিগুলোর পর্যালোচনা করলে আবারও অন্তদৃষ্টি পাওয়া উচিত যে শিশুটি তার চাহিদা মেটানোর জন্য কী কী দক্ষতা প্রয়োগ করছে এবং কোন দক্ষতাগুলো জোরদার করা বা সম্পূর্ণভাবে শিখানো দরকার।
সম্ভাবনা হল, একটি পরিবেশের মধ্যে একটি শিশুর চাওয়া এবং প্রয়োজনগুলো অনুমান করা একজন পিতামাতা, যতœদানকারী বা শিক্ষককে হতাশা, রাগ বা উদ্ধেগ প্রতিরোধ করে এমন কিছু কৌশলগুলোর মাধ্যমে শিশুটির প্রতিক্রিয়া এবং প্রাক-শিক্ষা পদ্ধতির জন্য অনুরোধ করার অনুমতি দেবে। যদি একজন শিশু একটি আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে শুরু করে, তাহলে একটি ধারাবাহিক পরিকল্পসা অনুসরণ করা উচিত। শিশুটির প্রতিক্রিয়ার উৎসটি বুঝুন, প্রত্যাশিত আচরণটি অর্জন বা এড়ানোর সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নির্ধারণ করুন, দ্রুত যোগাযোগ যা এই শিশুটির জন্য সর্বোত্তম কাজ করে এবং শান্ত ও সহায়ক থাকুন।
তাদের আশেপাশের লোকেদের দ্বারা ভুল বুঝায় হতাশা, ইচ্ছা এবং চাহিদা পূরণে সফলভাবে যোগাযোগ করতে অক্ষম অটিজম স্পেকট্রাম ডির্সডারে আক্রান্ত শিশুদেরকে অস্বাভাবিক আচরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই মূল সত্যটি গ্রহণ করার মাধ্যমে শিশুর জীবনের প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষার দক্ষতা কেন্দ্রীভূত করে দেয় যা উদ্বেগ, হতাশা এবং ক্রোধের সাধে যুক্ত আচরণগুলো প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
সাফল্যের চাবিকাঠি হল শিশুটিকে ভালোভাবে জানা এবং মননশীল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর প্রদর্শিত দক্ষতাগুলোর সাথে মেলে এমন কৌশলগুলোর ধারাবাহিক ব্যবহার, পরিবেশ জুড়ে যা প্রয়োজনীয় তা শিখানো।
মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাহাত খান
কনসালন্টেট,
শিশু প্রতিবন্ধিতাজনিত রোগ বিষয়ক অকুপেশনাল থেরাপি চিকিৎসা সেবা
মোবাইল নং ঃ +৮৮০১৭১১০৩৯৪৮৬
Email: [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য