ঢাকা   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শীতে শাক খান

Daily Inqilab মো. লোকমান হেকিম

১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

গাঁওগ্রামে এমনকি শহরেও মেহমানদের খাবার পরিবেশনায় শাক থাকে না। কারণ বিবিধ। তবে অন্যতম কারণ হলো শাক গরিবের খাদ্য। তাই মনে করা হয়। কিন্তু ধারণাটা যে ভুল তা অনেকে জানে না। অনেকে অস্বীকার করেন। শাক অতি সহজলভ্য। দামে সস্তা। আর আমাদের বিত্তবানদের কাছে সস্তা জিনিসের কদর নেই। অথচ শাক অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও উপকারী। আমরা এই পুষ্টিকর শাক ছেড়ে পোলাও, বিরিয়ানি ও তেহারি খেয়ে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও পেটের পীড়ায় ভুগি। তারা যখন এসব রোগের শিকার হয়ে ডাক্তারের কাছে যান, ডাক্তার ওইসব খাবার বর্জন করে শাকসবজি খেতে বলেন। তত দিনে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। অথচ বিভিন্ন শাক মুখরোচক আবার উপকারী। লাউশাক ছোট মাছ দিয়ে রান্না করলে দারুণ মজা হয়। থানকুনি ভর্তা করলে ভাতের সাথে খুবই মুখরোচক হয়। বিভিন্ন প্রকার শাক শরীরের রক্ত, রস, মাংস মেদ মজ্জা, অস্থি ও বীর্য পোষক। আয়ুর্বেদ ও হেকিমদের মতে, এক এক শাকে এক একগুণ। এই গুণাগুণ জানা থাকলে আমরা শাক খেয়ে অনেক রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। এসব শাক দামেও তুলনামূলক সস্তা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। শীতের মওসুমে আমরা হরেক রকম শাকের সমারোহ দেখি। আসুন এসব শাকের উপকারিতা জেনে নেই।

লালশাক- লালশাক অতি সহজলভ্য। প্র্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। নিজেরা ছাদে টবে বা সামান্য ৬ ইঞ্চি উঁচু মাটিতে লালশাকের বীজ ছাড়িয়ে পনের-বিশ দিনের মধ্যে লালশাক পেতে পারি। লালশাক আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে যারা এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে যারা তারা নিয়মিত লালশাক খেলে রক্তস্বল্পতা ও রক্তে হিমোগ্লোবিন পূরণ করে।

পালংশাক- পালংশাককে শাকের রাজা বলা হয়। এর পুষ্টিগুণের জন্যই রাজা বলা হয়। যাদের পিত্তথলি বা গল ব্লাডারের ও কিডনি সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত পালংশাক খাওয়া উচিত। এই শাকে জন্ডিস সারে। রক্ত পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস কমায়। পেটের অন্ত্র সচল রাখে। কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। পালংশাকে ভিটামিন এ, বি, সি ও ই রয়েছে। আরো রয়েছে অ্যামাইনো এসিড। পালংশাক পুঁটি মাছ দিয়ে রান্না করলে মুখরোচক হয়।

মুলাশাক- অনেকে বলেন, মুলার চেয়ে মুলাশাক বেশি উপকারী। বাজারে মুলাশাক এসে গেছে। দাম একটু বেশি। যারা অশর্^রোগে ভুগছেন তারা দৈনিক একবার মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। যাদের হাত-পা জ্বালাপোড়া করে তারাও মুলাশাক খেলে উপকার পাবেন। মুলাশাক কফ ও বাত নাশক। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন তারা মুলাশাক খাবেন। উপকার হবে।

লাউশাক- পুষ্টিবিদরা বলেন, লাউ অপেক্ষা লাউশাক বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আসলে লাউপাতা, ডগা ও লাউ সবই উপকারী। লাউশাক মায়ের বুকের দুধ বাড়ায়। অপুষ্টি দূর করে। মায়ের শরীরে শক্তি জোগায়। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরের ক্ষয় পূরণ করে।

কচুশাক- কচুশাককে সবাই হেলাফেলা করে। অথচ কচুশাক অত্যন্ত ভিটামিন যুক্ত। চক্ষু বিশেষজ্ঞরা চোখের জন্য কচুশাক খেতে বলেন। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে, তাদের কচুশাক খাওয়া উচিত। শহর-নগরে, গাঁওগ্রামে সর্বত্র কচুশাক পাওয়া যায়। গ্রামগঞ্জে কচুশাক কিনতে হয় না। যাদের প্র¯্রাবে জ্বালা-যন্ত্রণা হয় তারা কচুশাক খেতে পারেন। উপকার হবে। কচুশাক মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করে। এতে বেশি লৌহ আছে বিধায় মেয়েদের কচুশাক খাওয়া উচিত।

কলমি শাক- গাঁওগ্রামে খালবিলে পুকুরে সর্বত্র কলমি শাক হয়। কলমি শাকের ফুল মনোহরা। কলমি দুই প্রকার ডাঙা কলমি ও জলো কলমি। ডাঙা কলমিকে কোনো কোনো অঞ্চলে ঢোল কলমিও বলে। এই ডাঙা কলমি কেউ খায় না। জলো কলমি পুকুরে ও খালবিলে পানির ওপর লতিয়ে চলে। অনেকে স্বেচ্ছায় নিজ পুকুরে জলো কলমি লাগায়। এতে পুকুরের পানি নির্মল থাকে। মাছ এর শিকড় খায়। কলমি শাকের ক্রিয়া কিডনি ও মূত্র যন্ত্রের ওপর বেশি। যাদের ফোঁটায় ফোঁটায় সর্বক্ষণ প্র¯্রাব পড়ছে, তারা কলমি শাক ভাজা বা রান্না করে খেলে উপকার পাবেন। ডায়াবেটিস রোগেও কলমি শাক উপকারী। মেয়েদের হিস্টিরিয়া রোগেও কলমি শাক উপকারী। পেট ও পিত্ত ঠা-া রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মায়ের বুকে দুধ বাড়ায়।

পুইশাক- কথায় বলে, শাকের মধ্যে পুঁই, আর মাছের মধ্যে রুই। তবে পুঁইশাক সবাই হজম করতে পারে না, পেট গরম হয়। পুঁইশাকের পাতার চেয়ে ডগায় বেশি ভিটামিন। খেতেও ভালো। পুঁইশাক বল, বীর্যবর্ধক এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ। পিত্তনাশক। পুঁইশাক দৈনিক এক বেলার বেশি না খাওয়া ভালো।

হেলেঞ্চা শাক- হেলেঞ্চা শাক ও কলমি শাক একই জাতের তবে হেলেঞ্চা শাক কলমি শাকের চেয়ে বেশি ভালো। হেলেঞ্চা শাকও খালবিল ও পুকুরে হয়। হেলেঞ্চা শাকও পিত্তনাশক এবং পেট ঠা-া রাখে। হেলেঞ্চা রক্ত পরিষ্কার করে। হজমে সহায়ক। ডায়াবেটিস রোগেও উপকারী। কবিরাজ ও বৈদ্যরা হেলেঞ্চার রস খেতে বলেন, যারা প্রমেহ বা ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে ভুগছে।

গবেষক-কলামিস্ট, মোবাইল-০১৭১৬-২৭০১২০


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও
Veet

আরও পড়ুন

রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন

রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন

ম্যানেজ করেই’ একই সাথে ২ স্বামীর সংসার করছিলেন রাজবাড়ীর জান্নাতুল!

ম্যানেজ করেই’ একই সাথে ২ স্বামীর সংসার করছিলেন রাজবাড়ীর জান্নাতুল!

পশ্চিমা বিশ্বের অনুসরণে সংস্কার হলে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হবে

পশ্চিমা বিশ্বের অনুসরণে সংস্কার হলে জুলাই-আগস্টের শহীদদের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হবে

পার্থে প্রথম দিনেই ১৭ উইকেটের পতন, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়

পার্থে প্রথম দিনেই ১৭ উইকেটের পতন, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং বিপর্যয়

ইন্দুরকানীতে শতবর্ষী বৃদ্ধ ও মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা

ইন্দুরকানীতে শতবর্ষী বৃদ্ধ ও মাদ্রাসা ছাত্রীর আত্মহত্যা

সুন্দরগঞ্জে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই কারবারি গ্রেফতার

সুন্দরগঞ্জে ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুই কারবারি গ্রেফতার

পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ‘ভাঁওতাবাজি’ করছেন না পুতিন

পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ‘ভাঁওতাবাজি’ করছেন না পুতিন

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : হাবিবুল্লাহ মিয়াজী্‌

কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : হাবিবুল্লাহ মিয়াজী্‌

নিখোঁজের তিনদিন পর তালার কপোতাক্ষ নদ থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

নিখোঁজের তিনদিন পর তালার কপোতাক্ষ নদ থেকে বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার

‘আইএইএ’র নিন্দার পর উন্নত সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয় করার ঘোষণা দিলো ইরান

‘আইএইএ’র নিন্দার পর উন্নত সেন্ট্রিফিউজ সক্রিয় করার ঘোষণা দিলো ইরান

পিরোজপুরে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

পিরোজপুরে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

ডিভোর্সের দুদিন পরই নতুন সুখবর এ আর রহমানের

ডিভোর্সের দুদিন পরই নতুন সুখবর এ আর রহমানের

বেনাপোল বন্দরে কম শুল্কে আরও ২ লাখ ৩২ হাজার পিস ডিম খালাস

বেনাপোল বন্দরে কম শুল্কে আরও ২ লাখ ৩২ হাজার পিস ডিম খালাস

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ডিএনসিসির কমিটি

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিতে ডিএনসিসির কমিটি

কুড়িগ্রামের আকাশে হঠাৎ ধুলি ঘূর্ণিঝড়

কুড়িগ্রামের আকাশে হঠাৎ ধুলি ঘূর্ণিঝড়

সিঙ্গাপুরে মাদক পাচারকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

সিঙ্গাপুরে মাদক পাচারকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

পীরগঞ্জে ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

পীরগঞ্জে ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন

প্রকাশিত হয়েছে শহীদদের স্মরণে ' জুলাই অনির্বাণ', ভিডিও দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত হয়েছে শহীদদের স্মরণে ' জুলাই অনির্বাণ', ভিডিও দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাধারণ মানুষ

সায়ানাইড প্রয়োগে হত্যায় অভিযুক্ত নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে থাই আদালত

সায়ানাইড প্রয়োগে হত্যায় অভিযুক্ত নারীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে থাই আদালত

ঢাকায় আসলেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকায় আসলেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি