পেপটিক আলসারে ঘরোয়া পরামর্শ
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
অনিয়মিত খাবার গ্রহণ ও জীবন যাপনের কারণে অনেকেই পেটের আলসারের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এক্ষেত্রে প্রথমত সবাই ভেবে থাকেন বোধ হয় গ্যাসের সমস্যা বেড়েছে। গ্যাসের সমস্যাটিই পরবর্তীতে চিকিৎসা না করালে আলসারে পরিণত হয়।
আলসার হয় পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালের স্তরে। আরো হয় অন্ত্রনালীর এক অংশে ডিওডেনামে যাকে বলা হয় ‘স্মল ইনটেস্টাইন›। পাকস্থলীর আলসার হলো পেপটিক আলসারের সবচেয়ে প্রধান জায়গা। পাচক রস থেকে পাকস্থলীকে রক্ষায় পাতলা শ্লেষ্মার যে স্তর থাকে, তা হ্রাস পেলে বা পাচক রসে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয় আলসার। মিউকাস বা শ্লেষ্মার পরিমাণ কমে গেলে পাচক রস পাকস্থলীর দেয়াল ক্ষয় করে ফেলতে থাকে।
জানা যায়, বিশ্বের ২ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ আলসারের সমস্যায় ভুগছেন। পাকস্থলী এবং ডিওডেনাল আলসার। দুটোর আবির্ভাব ঘটে সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। এলোমেলো জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসে দেখা দেয় পাকস্থলীর আলসার।
আলসারের সঙ্গে বেশ কয়েকটি লক্ষণ স্পষ্টভাবে জড়িত। প্রধান লক্ষণটি হলো বুক ও নাভীমূলের মধ্যে ব্যথা হওয়া। আরেকটি বড় লক্ষণ হলো রক্ত বমি হওয়া। এই ব্যথা কিন্তু অ্যান্টাসিডের মতো ওষুধ খেলে আরো বেড়ে যেতে পারে।
অনেক কারণে আলসার দেখা দেয়। একধরনের ব্যাকটেরিয়া আছে হেলিকোবেকটার পাইলোরি বা এইচ. পাইলরি যাকে দেখা যায় পাকস্থলির শ্লেষ্মার স্তরে। এরা স্মল ইনটেস্টাইনেও থাকে। শরীর ব্যথার উপশমে নিয়মিত ওষুধ ব্যথার ওষুধ খেলে বাড়তি ঝুঁকি দেখা যায়। এ সময় ধূমপান, অ্যালোকোহল সেবন এবং মসলাদার খাবার খেলে আরো বেশি সমস্যা দানা বাঁধে। পাকস্থলীর ভেতরের দেয়ালে প্রদাহ দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে সার্জারি বা সার্জারি ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে আলসার থেকে মুক্তি মেলে।
এই রোগের বেশ কিছু লক্ষণ আছে। সেগুলি খুব সাধারণ। বুকজ্বালা, পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা, খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফেঁপে থাকা, মুখ দিয়ে চুকা পানি ওঠা, বমি বমি ভাব বা বমি হলে বুঝতে হবে যে পেপটিক আলসার হলেও হতে পারে। এ ছাড়াও আরও একটি বিষয় জেনে রাখুন, গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে, অর্থাৎ যদি পাকস্থলিতে আলসার হয় তা হলে খাওয়ার পরেই পেট জ্বালা করবে। এই সময়ে রোগী খেতে ভয় পাবেন, খাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি হবে। অন্য দিকে, ডিওডিনাল আলসার অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্তে আলসার হলে, পেট খালি থাকলে বা দীর্ঘক্ষণ না খেলে পেটে জ্বালা করবে। অনেক সময় রাতে অনেক ক্ষণ পেট খালি থাকলে, রোগী পেটের জ্বালায় বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে, কিছু খাবারের খোঁজ করেন। এগুলি খুব সাধারণ লক্ষণ। এথেকে এই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। তবে এই উপসর্গগুলি যদি টানা বেশ কিছু দিন থাকে বা সাধারণ গ্যাস, অম্বলের চিকিৎসা করিয়ে সমস্যা না মেটে, তা হলে বুঝতে হবে পরিপাকতন্ত্রে আলসার হয়েছে।
> আলসারকে অবহেলা করবেন না:
আপনি যদি চিকিৎসা না করান আলসার আপনার খাবারকে পরিপাক তন্ত্রে সহজে চলাচল করতে না দিয়ে বাধা দিবে। কখনো কখনো আপনি খাবার উগড়ে দিতে পারেন বা আপনার পেট ভরা ভরা লাগতে পারে। সময়ের সাথে সাথে আপনার পাকস্থলীর স্তরে আলসার গর্ত করে ফেলতে পারে, গভীর ক্ষত তৈরি করতে পারে।
> পাকস্থলীর আলসার থেকে দীর্ঘমেয়াদি মুক্তি পেতে ঘরোয়া পরামর্শ:-
মেথি: মেথি থেকে পাওয়া ঘন ও আঠাল উপাদানে রয়েছে ঘা সারিয়ে তোলার শক্তিশালী উপাদান। দুই কাপ পানিতে এক চা-চামচ মেথি বীজ সিদ্ধ করে নিতে হবে। স্বাদ বাড়াতে মধু যোগ করতে পারেন। এক সপ্তাহ প্রতিদিন দুবেলা করে পান করতে হবে।
কলা: পাকা ও কাঁচা দুই অবস্থাতেই কলাতে থাকে প্রচুর ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান আছে যা পেটের আলসারের জন্য দায়ী ‘এইচ.পাইলরি’ ব্যাকেটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে। পাশাপাশি অম্লীয় ও গ্যাস্ট্রিক রস অপসারণের মাধ্যমে হজম ভালো রাখে। ফলে জ্বালাপোড়া কমে এবং পাকস্থলীর আস্তরণ শক্তিশালী হয়। তাই পেটের আলসারে ভুগলে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন দিনে তিনটি করে কলা খেতে পারেন।
তাজা রস:তাজা রস আরও একটি ঘরোয়া প্রতিকার যা স্বাভাবিকভাবেই পেপটিক আলসার নিরাময় করে। কমলা লেবু ও আঙ্গুরের রস পান করুন।
প্রোবায়োটিক: ঘোল, দই ইত্যাদি প্রোবায়োটিকজাতীয় খাবারে থাকে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া যা হজম পদ্ধতি সঠিকভাবে সম্পাদনে সহায়ক। ‘এইচ. পাইলরি’ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে প্রোবায়োটিকের উপকারিতা গবেষণায় প্রমাণিত। তাই আলসার থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ প্রোবায়োটিকজাতীয় খাবার খেতে হবে।
নারিকেল: নারিকেলের দুধ ও পানিতে ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণ আছে, যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। প্রতিদিন এক কাপ কচি নারিকেলের দুধ বা পানি পান করতে পারেন। আরও বেশি উপকার পেতে কচি নারিকেলে শাঁসও খেতে পারেন।
ফুলকপি: এতে আছে সালফোরাফেন নামের একটি উপাদান যা হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের ওই ব্যাকটিরয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কেউ যদি প্রতিদিন দুবার করে ৭দিন ফুলকপি খান তাহলে তার পাকস্থলিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি ৭৮% কমে আসে।
বাঁধাকপি: পাকস্থলীর আস্তরণে রক্তপ্রবাহ সচল রাখতে উপকারী এই সবজি। ফলে পাকস্থলীর আস্তরণ শক্তিশালী হয় এবং আলসার সারাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি বাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিন সি, ‘এইচ.পাইলরি’ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে। রাতের খাবার খাওয়ার আগে সদ্য তৈরি বাঁধাকপির শরবত পান করতে পারেন। অথবা অর্ধেক বাঁধাকপি কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন।
মুলা: এতে আছে আঁশ যা হজমে সহায়ক। এছাড়া জিঙ্ক এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান শুষে নেয় মুলা। মুলা পাকস্থলির প্রদাহরোধ করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যাও দূর করে।
আপেল: প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে আলসার দূর হয়ে যাবে। এতে আছে এমন সব ফ্ল্যাভোনয়েড যা আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্ম প্রতিরোধ করে।
স্ট্রবেরি: সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাকস্থলির আলসারের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে স্ট্রবেরি। এতে আছে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে আলসার থেকে প্রতিরক্ষা দেয়। প্রতিদিন এক কাপ করে স্ট্রবেরি খেলে আলসারের ঘা সেরে যায়।
বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম: মিষ্টি ক্যাপসিকাম পেপটিক আলসার দূর করতে কার্যকর।
গাজর: পাকস্থলির আবরণ শক্তিশালী করতে বেশ কার্যকর গাজর। এতে আছে ভিটামিন এ যা আলসার, প্রদাহ বা বদহজম দূর করে।
মধু: মধু পাকস্থলীর প্রদাহ হ্রাস করার জন্য উত্তম উপাদান। সকালে আপনার ব্রেকফাস্ট খাবার সঙ্গে এক টেবিল চামচ কাঁচা মধু খেয়ে নিন।
রসুন: পাকস্থলীর আলসারে ভুগছেন, প্রতিদিনের আহারে রসুন যোগ করুন পেটের প্রদাহ থেকে আরাম পেতে।
মরিচ:কাঁচা মরিচ আলসার প্রতিরোধ করে এবং পরিত্রাণ পেতেও সাহায্য করে। মরিচ একটি কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার যা পাকস্থলীর ভিতরের ব্যাকটেরিয়াকে নিধন করে।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার হলো সেরা ঘরোয়া প্রতিকার পাকস্থলীর আলসারের চিকিৎসার জন্য। কাজুবাদাম এবং মাছের মত ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খেতে থাকুন।
পরিশেষে বলতে চাই, আলসারের সমস্যা প্রতিরোধে ঝাল, চর্বি ও ভাজা পোড়া জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। এর পাশাপাশি বাদ দিন ধূমপান ও মদ্যপান। জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে, অনেক্ষন না খেয়ে থাকা যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমান ঘুমাতে হবে। খাদ্যতালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর সব খাবার বাদ দিতে হবে। ঘরে তৈরী তাজা খাবার খেতে হবে।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিকৃবিতে মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ফুটবল সুপারলীগ
ঢাবির ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি পেলেন ১৫ শিক্ষার্থী
স্পেনে সমকামীতার অভিযোগে একজনকে হত্যা, অভিযুক্ত চার
১৮১ রানে পিছিয়েও বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা
বন্ধু থেকে যেভাবে শত্রুতে পরিণত হল ইরান ও মিশর
কমলনগর ছেড়ে ঢাকা যাওয়ার পথে ৭ টি মাইক্রোবাস ও ৫ টি যাত্রীবাহী বাস আটক
ওয়ালটনের সঙ্গে এমপ্লয়ি গ্রিন ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর সিটি ব্যাংকের
নাঙ্গলকোটে কলেজ ছাত্রী পিংকি হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার
বেপরোয়া থ্রি-হুইলার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মহাসড়ক। সাভার আশুলিয়ায় ব্যাপক যানজট
টেকনাফে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার।
১৫ বছর ছাত্রলীগ ছিল এখন শুনি ছাত্রশিবির বগুড়ায় যৌথ সভায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতৃবৃন্দ
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে কেউ মারা যায়নি : ডিএমপি
সিনিয়রদের কর্মে জুনিয়ারের শাস্তি!
গুচ্ছ থেকে বের হতে শাবিকে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম
ইমরান খানের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত পদযাত্রায় থাকুন : পিটিআই কর্মীদের উদ্দেশে বুশরা বিবি
তালায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু, আহত মা
লিভারপুলের বিপক্ষে ভিনিসিউসকে পাচ্ছে না রিয়াল
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের নানামুখী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানকে গণঅধিকার পরিষদের ৭ দফা প্রস্তাবনা
নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় ৩৪জন ডেঙ্গু আক্রান্ত