ঢাকা   সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৪

বুকের দুধ খাওয়ালে মা ও শিশুর উপকার

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৭ এএম

আগস্ট মাসের প্রথম সাত দিন নিরাপদ মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল সকল বাধা দূর করি, মাতৃদুগ্ধ পান নিশ্চিত করি। ১৯৯০ সালের ইতালির ফ্লোরেন্সে ইনোসেনটি গবেষণা কেন্দ্রের ঘোষণার সম্মানে ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহ সারা বিশ্বে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উৎসাহিত করতে একটি বৈশ্বিক প্রচারাভিযান। মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহর প্রথম দিন ১ আগস্টকে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে বিভিন্ন দেশের সরকার, ইউনিসেফ, ডব্লিউএইচওসহ অন্যান্য সংস্থা। ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই ঘোষণাপত্র সমর্থন করে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্টফিডিং অ্যাকশন (ডব্লিউএবিএ) নামের একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক।

শুধুই মাতৃদুগ্ধ পান করালে বছরে আট লাখের বেশি শিশুর জীবন রক্ষা পাবে। যে শিশুদের বেশির ভাগেরই বয়স ছয় মাসের কম। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর কোন বিকল্প নেই। শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ালে মা ও শিশু দুজনেরই উপকার হয়। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দিলে মায়ের গর্ভফুল তাড়াতাড়ি পড়ে, সহজে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়, ফলে মা রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পায়। জন্মবিরতিতে সাহায্য করে, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। শিশুর সর্বোচ্চ শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়া হওয়ার প্রবণতা এবং এর তীব্রতার ঝুঁকি কমায়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং কানের প্রদাহ কমায়, দাঁত ও মাড়ি গঠনে সহায়তা করাসহ অনেক উপকারিতা আছে।

মায়ের দুধ না খাওয়ালে- নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি পায়, ডায়রিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১১ গুণ বৃদ্ধি পায়, শিশুদের অপুষ্টি ও অন্যান্য, কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়, জন্ডিস, কানপাকা ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণসহ ডায়রিয়া হওয়ার আশংকা বৃদ্ধি পায়। শারীরিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। বয়সের তুলনায় ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়; দীর্ঘস্থায়ী রোগের (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থুলতা) ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ ২০২৪ উপলক্ষ্যে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি, বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যা মাসব্যাপী পালিত হবে। বিশ্বে প্রতি পাঁচটি শিশুর তিনজনই জন্মের প্রথম ঘণ্টায় মাতৃদুগ্ধ পায় না।

দুই বছর পর্যন্ত স্তন্যপান করাতে পারলে বছরে ৮ লাখ ২০ হাজার শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব। দুগ্ধদান করে মায়েরাও জীবনসংহারী অনেক রোগ ঠেকিয়ে দিতে পারেন; সেজন্য তাদের আরও উৎসাহিত করতে বলেন চিকিৎসকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধই খাবে শিশু, এমনকি পানিও খাওয়ানো যাবে না। এরপর পরিপূরক খাদ্যের সঙ্গে অন্তত দুই বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ পালিত হয়ে আসছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে।

কিন্তু এখনও জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় বিশ্বের মাত্র ৪১ শতাংশ শিশুকে। এই হারকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলি। আর আমাদের দেশে এখন হাজার হাজার মা নিজের বুকে দুধ পান করার পরিবর্তে বাজারে কৃত্রিম দুধ পান করান নিজের সৌন্দর্যকে ধরে রাখার জন্য। এতে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ভবিষ্যত জীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে শিশুর। মায়ের দুধ হচ্ছে শিশুর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট খাবার এবং পানীয়। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ মায়ের দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই। আর পৃথিবীতে সম্ভব সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়- মাতৃগর্ভ। এরচেয়ে নিরাপদ, জীবাণুমুক্ত ও আরামদায়ক স্থান সম্ভব নয়। সেখান থেকে একজন নতজাতক যখন ধুলোবালি মাখা জীবাণু সংকুল পৃথিবীতে আসে, তার নাজুক শরীর ও দুর্বল রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার কারনে জীবন হয় ঝুঁকিপূর্ণ। এই পরিবেশে একটি নিরাপত্তাবেষ্টনীর মতো তাকে সকল প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে মমতাময়ী মায়ের কোল ও শিশুর রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার অসাধারণ গুনাবলী সমৃদ্ধ মাতৃদুগ্ধ।

মায়ের দুধ শিশুর জন্য শুধুমাত্র শ্রেষ্ঠতম পুষ্টিকর ও সঠিক খাদ্য নয় বরং তা যে কোন রোগপ্রতিরোধক টিকার চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও কার্যকর। ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েন্জ্ঞা, কান পাকা, হারপিস ইনফেকশন, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, নেক্রোটাইজিং এন্টারোপ্যাথি ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়া ছাড়াও কৃত্রিম ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ফর্মূলা বা কৃত্রিম শিশু খাদ্যে লালিত শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি মার্তৃদুগ্ধে লালিত শিশুর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এসকল রোগ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যহত করে এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকগুন বৃদ্ধি করে। শিশুখাদ্য হিসেবে মাতৃদুগ্ধ পরিবারের খরচ ও সময় দুটোর সাশ্রয় করে থাকে।

১. ব্রেস্টফিডিং বা স্তন্যদানে সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মায়ের সুস্বাস্থ্য। গর্ভবতী মায়ের দেহে বিভিন্ন হরমোনের আধিক্য দেখা যায়, বলা যায় গর্ভবতীর শরীরে চলে হরমোনের উৎসব। যার ফলে তিনি শারিরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ প্রভাবিত হন। শিশুর জন্মের পর এই প্রভাব কিছুটা কমে এলেও তিনি শারিরিক ভাবে দুর্বল এবং অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন। শিশুর লালন পালনে আর সব কিছুর মতো মাতৃদুগ্ধ দানে মায়ের পাশাপাশি পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে স্তন্যদান করবেন মা আর সেই মায়ের যতœ, তাঁর পুষ্টি, বিশ্রাম নিশ্চিত করবেন পিতা।

২.এসময় মায়ের যথাযথ খাদ্যগ্রহন ও পুষ্টি জরুরী। মায়ের পুষ্টিহীনতা মতৃদুগ্ধ উৎপাদনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। এসময় সাধ্য অনুযায়ী দুধ, ডিম, সব্জিসহ পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করা জরুরী।

৩. স্তন্যাদানকারী মায়েদের হাইড্রেশন বা পর্যাপ্ত পানি পান অত্যন্ত জরুরী।
৪.মানসিক এবং শারীরিক সুস্থতার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম (প্রতিদিন নুন্যতম ৮ ঘন্টা) জরুরী।
> বিশেষ খাবার:-দুধ, কালোজিরা, লাউ, সাগুদানার পায়েস, পেঁপে, মেথী ইত্যাদি।
> পজিশন:-স্তন্যদানের যথাযথ পজিশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নঃ-
১. ক্র্যডেল:- সাধারন কোলে নেবার ভঙ্গীতে যে প্রচলিত পজিশনে স্তন্যদান করা হয়, তা সব চেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর।

২.বল হোল্ডিং:- সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দেবার পর প্রচলিত পদ্ধতি বা ক্র্যাডেল পজিশনে স্তন্যদান অনেক ক্ষেত্রে মায়ের জন্য কষ্টকর, মাঝে মাঝে প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে। এক্ষেত্রে “বল হোল্ডিং” অত্যন্ত কার্যকর। একটি বড় বলকে পাশে একহাতে ধরার মতো করে শিশুকে স্তন্যদান করায় মায়ের তলপেট বা সিজিরয়িান সেকশনের ক্ষতস্থানে শিশুর ভার পড়েনা, ফল স্তন্যদান মা ও শিশু উভয়ের জন্য সহজ হয়।
৩.ক্রস ক্র্যাডেল:- প্রিম্যাচিউর শিশুর ক্ষেত্রে অধিক সহায়ক।

৪.লাইং বা শায়িত:- মায়েদের জন্য কিছুটা রিল্যাক্সিং হলেও শিশুর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

> কর্মজীবি মায়েদের জন্য:আন্তরিক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফেরার পর অনেক মায়ের সন্তানকে কৃত্রিম খাবার বা বেবিফুড, গরুর দুধ বা পাউডার দুধের আশ্রয় নিতে হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্যা সমাধানে কর্মজীবি মায়েদের জন্য প্রায় বন্ধু সম একটি যন্ত্র “ব্রেস্ট পাম্প। কাজের সময় শিশুকে স্তন্য দান সম্ভব না হলে তাঁরা এই পাম্পের সাহায্যে মতৃদুগ্ধ সংগ্রহ করে তা যথাযথ উপায়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। যা তাঁদের অনুপস্থিতিতে পরিবারের অন্য কেউ বোতলের মাধ্যমে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। ব্রেস্ট পাম্প বিভিন্ন দামের আছে তবে ইলেক্ট্রিক পাম্প সবচেয়ে কার্যকর ও কিছুটা ব্যয়বহুল।

> পোশাক:-স্তন্যদানের উপযোগী আরামদায়ক ও স্বস্তিকর পোশাক মায়েদের জন্য জরুরী। এবিষয়েও ল্যাক্টেশন সেন্টার সহায়তা করে থাকে।

> প্রস্তুতি:-একজন পুরুষের কাছে স্তন্যদান যতোখানি অপরিচিত ব্যাপার, প্রথমবার সন্তানলাভ করা মায়ের কাছেও অনেকটা তেমনি। তাই, গর্ভবতী অবস্থা থেকে এব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি জরুরী। পরিবারের মুরুব্বী এবং স্বামী উৎসাহ দান করে এই প্রস্তুতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারেন।

> আধুনিকতা ও স্তন্যদান:
সময়ের সাথে সাথে মানুষ যতো আধুনিক ও শিক্ষিত হচ্ছে উন্নত বিশ্বের মায়েরা ফিরে যাচ্ছেন ব্রেস্ট ফিডিং বা স্তন্যদানে। শিক্ষা, মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা এবং শিশুর জন্য এর গুরুত্ব অনুধাবন তাঁদের এবিষয়ে উৎসাহিত করছে। হাজারও ব্যস্ততার মাঝে শিশু সন্তানকে মাতৃদুগ্ধেরথেকে বঞ্চিত করছেননা। স্তন্যদানে অন্যতম সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মা ও শিশুর মানসিক নৈকট্য বা বন্ধন দৃঢ় করায় এর কোন বিকল্প নেই।

> স্তন্যদুগ্ধের ঘাটতি হলে তার লক্ষণগুলি
বুকের দুধের সরবরাহ কম কিনা তা নির্ধারণ করার একটি উপায় হল আপনার বাচ্চা যথেষ্ট পরিমাণে দুধ পাচ্ছে কিনা তা লক্ষ্য করা।

স্তন্যদুগ্ধের সঠিক সরবরাহ আছে কিনা তা জানার শ্রেষ্ঠ উপায় আপনার শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা। আপনার শিশুর সঠিক উন্নতি ও স্বাস্থ্যবৃদ্ধি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে নিয়মিত তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া এবং শিশুর ওজন পরীক্ষা করে দেখা উচিত। তবে, শিশুর জন্মের পরে পরেই ওজন হ্রাস পাওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। প্রথম পাঁচ বা ছয় দিনের মধ্যেই এই পরিস্থিতি ঠিক হতে থাকবে এবং চৌদ্দ দিনের মধ্যে আপনার বাচ্চাটি তার জন্মের সময়কার ওজন ফিরে পাবে।

আপনি যদি আপনার শিশুর ওজনের বিষয়ে নিশ্চিত না হন, তবে আপনার যথেষ্ট স্তন্যদুগ্ধ তৈরি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখুন:
* বুকের দুধ খাওয়ানো আপনার জন্য সুখকর এবং যন্ত্রণাহীন।
* আপনার শিশু বারংবার খেতে পছন্দ করবে।
* স্তন্যদুগ্ধ দ্রুত হজম হয় এবং আপনার শিশু বার বার তা পান করতে চাইবে। এর অর্থ এই নয় যে আপনি পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করছেন না। * বেশিরভাগ শিশু ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা অন্তর বুকের দুধ খেয়ে থাকে।

* আপনার স্তন প্রতিবার দুধ পান করানোর পর নরম এবং খালি হয়ে যাবে।
* খাওয়ার সময় আপনি আপনার শিশুর গিলতে থাকা লক্ষ্য করতে পারেন।
* খাওয়া শেষ হওয়ার পর আপনার বাচ্চা নিজেই বুকের থেকে সরে আসতে চাইবে
আপনার শিশুর প্রতিদিন সাতবার মত প্রস্রাব হবে।
* মল হালকা হলুদ রঙের হবে যাতে কিছু দলা বা পিন্ডের মতো থাকবে।
* শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন বাচ্চারা দিনে বেশ কয়েকবার বা কখনো কেবল পাঁচ দিনে একবার মলত্যাগ করতে পারে। উভয় ধরনের পরিস্থিতিই স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় এবং আপনার এই সম্পর্কে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

নিম্নে বর্ণিত লক্ষণগুলির অর্থ স্তন্যদুগ্ধ কমে যাওয়া নয়, যদিও আপনার মনে হতে পারে যে সেগুলি কোনো গুরুতর সমস্যার নির্দেশক :
* সন্ধ্যায় তাড়াহুড়ো করে স্তন্যপান
* খাওয়ার সময়কাল হ্রাস পাওয়া
* বারংবার খাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া
আপনার স্তন থেকে দুধ না গড়ানো
চাপ দিয়ে বের করতে গেলে সামান্য পরিমাণ বা একেবারেই দুধ নেই এমন
কিভাবে স্তন্যদুগ্ধের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়?

* আপনার বাচ্চাকে সঠিক পদ্ধতিতে দুধ খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি বাচ্চা স্তনবৃন্তটি মুখে ধরে রাখতে না পারে বা সেটি ভুল অবস্থানে থাকে তবে তাকে খাওয়ানো কঠিন হবে। অন্য কিছু শারীরবৃত্তীয় সমস্যার কারণে সঠিকভাবে খাওয়ানো ব্যাহত হতে পারে, পর্যাপ্ত স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদিত হওয়ার জন্য স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যদি আপনার বাচ্চা সম্পূর্ণ খালি করতে না পারে, তাহলে আপনার দুধ বের করে দেওয়া উচিত।
* ঘন ঘন খাওয়াতে থাকলে স্তনের দুধ খালি করে ফেলা যাবে। ১.৫ বা ২ ঘণ্টা অন্তর আপনার বাচ্চা যতক্ষণ চায় তাকে খাওয়ানো উচিৎ।

* আপনার দৈনিক নিয়ম থেকে বিরতি গ্রহণ করলে তা আপনাকে শিশুকে খাওয়ানোর রুটিনটি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করবে। আপনার এবং আপনার শিশুর সুবিধা মতো দুই থেকে তিন দিন সময় দিয়ে একটি খাওয়ানোর নিয়ম তৈরি করুন।
* খাওয়ানোর সময় দুটি স্তনই ব্যবহার করুন। এক পাশেরটি খাওয়া হলে অন্যটি এগিয়ে দিন।
* যথাসম্ভব চুষি এবং দুধ খাওয়ানোর বোতল এড়িয়ে চলতে হবে।
* আপনার শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধই দিতে হবে এবং অন্য যে কোনো ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

* নিজের প্রতি যতœ নিন নিজের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে এবং আপনাকে শিশুর সাথে সাথে পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে।
* স্তন সম্পূর্ণ খালি হওয়া নিশ্চিত করতে আপনি একটি পাম্প ব্যবহার করতে পারেন। স্তন থেকে দুধ সম্পূর্ণ বের করে ফেলাই বুকের দুধ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায়।

পরিশেষে বলতে চাই, মায়ের দুধ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ নিয়ামত। কারণ, অনেক মায়ের সন্তান হওয়ায় পরও শিশুকে পান করানোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ দুধ হয় না। এ ক্ষেত্রে পূর্বে থেকে মায়েদের পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বিশ্বব্যাপী শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার এখনো অনেক কম। বাংলাদেশে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর হার ৬৯ শতাংশ। মাত্র ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শিশুকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করানো হয়। আমাদের সবার শিক্ষা ও সচেতনতার অভাব এই অবস্থার জন্য দায়ী। তাই স্তন্যপান করানোর উপকারিতার ব্যাপারে সবাইকে শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে হবে। আর আজকের শিশু আগামী দিনের উজ্জ্বল ভবিষ্যত। শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশের জন্য মায়ের বুকের দুধ খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এটা শিশুর জন্য মায়ের কাছে অধিকার বা প্রাপ্য রয়েছে। মায়ের দুধপান করা শিশুর মৃত্যুহারও একেবারে কম।বিশ্বের ১৭০ টি দেশের সাথে বাংলাদেশে ও এ সপ্তাহ পালন করা হবে।

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: ০১৮২২-৮৬৯৩৮৯


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মেয়েদের স্তন ক্যান্সার
নার্সিং বটল ক্যারিজ
মহিলাদের জন্য ১২টি হৃদবান্ধব পরামর্শ
আসুন এইডস প্রতিরোধ করি
পাইলস বা অর্শ
আরও

আরও পড়ুন

আমু-কামরুলকে হাজির করার নির্দেশ

আমু-কামরুলকে হাজির করার নির্দেশ

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মেনন, ইনু, দীপু মনি ও পলক,

নতুন মামলায় গ্রেপ্তার মেনন, ইনু, দীপু মনি ও পলক,

প্রতিশ্রুতি ভেঙে ছেলেকে ক্ষমা বাইডেনের

প্রতিশ্রুতি ভেঙে ছেলেকে ক্ষমা বাইডেনের

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৪৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

রূপগঞ্জে ফের হত্যা করতে সাংবাদিকের বসতঘরে সন্ত্রাসীদের গুলি

রূপগঞ্জে ফের হত্যা করতে সাংবাদিকের বসতঘরে সন্ত্রাসীদের গুলি

ভারত বাংলাদেশি কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

ভারত বাংলাদেশি কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী দূতাবাসে হামলার প্রতিবাদে ভোলায় বিক্ষোভ

'২০২৪ সালে শোবিজে শিরোনাম হয়েছেন টেইলর সুইফট, ওয়েসিস এবং শন ‘ডিডি’ কম্বস', এক নজরে দেখে নিন

'২০২৪ সালে শোবিজে শিরোনাম হয়েছেন টেইলর সুইফট, ওয়েসিস এবং শন ‘ডিডি’ কম্বস', এক নজরে দেখে নিন

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা: যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত

প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা

প্রাক বড়দিন পালন করলে গারো পাহাড় সীমান্তে খ্রীষ্টানরা

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান

বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়

গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়

৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির

৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির