ঢাকা   রোববার, ১০ নভেম্বর ২০২৪ | ২৬ কার্তিক ১৪৩১

সুস্থ ফুসফুসের জন্য দূষণমুক্ত বাতাস

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৭ এএম

বায়ু দূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, ফলে দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন জটিল রোগ। বায়ু দূষণ হল যে কোনো রাসায়নিক, শারীরিক বা জৈবিক এজেন্ট দ্বারা অভ্যন্তরীণ বা বাইরের পরিবেশকে দূষিত করা, যা বায়ুমন্ডলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে। গৃহস্থালির দহন যন্ত্র, মোটরযান, রাস্তা ও ইমারত নির্মাণ, কলকারখানার ধোঁয়া ইত্যাদি বায়ু দূষণের প্রধান কিছু উৎস।

বিশ্বব্যাপি, পরিবেষ্টিত বায়ু দূষণকে প্রায় ১৬% ফুসফুস ক্যান্সারের মৃত্যু, ২৫% ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এবং প্রায় ২৬% শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনুমান করা হয়। বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, ফুসফুসের রোগ, ত্বকের রোগ, চোখ-মুখ-গলার রোগ, পেটের রোগ, দাঁতের মাড়ির রোগ, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, ক্যান্সার, এম্ফাইসেমা, সিলিকোসিস নিউমোকোনিওসিস ইত্যাদি রোগ হতে পারে। বিজ্ঞানীদের একটি নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাইরের দূষিত বাতাস আমাদের আয়ু গড়ে প্রায় তিন বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিতে সক্ষম, যা আগের যেকোনো গবেষণা ফলাফলের চেয়ে বেশি এবং ধূমপানের ফলে যে পরিমাণ আয়ু কমে তার চেয়েও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা ২০১৫ সালে মানুষের গড় আয়ু ও মৃত্যুর হার গণনায় দেখতে পেয়েছেন, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে লোয়ার-রেসপাইরেটরি-ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণে পাঁচ বছরের কমবয়সী যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা ১৯ হাজারেরও বেশি। তাই এই গুরুতর সমস্যা সমাধানে কাজ করার এখনই সময়। সাধারণ কিছু জিনিস নিয়মিত করতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আসুন এ বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক-

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা: পানি পান বুকে জমা সর্দি বা কফ পাতলা করতেও সাহায্য করে। এ ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ থেকে দূষিত পদার্থ বাইরে বের করার ক্ষেত্রে পানির ভূমিকা রাখে।

ধূমপান বর্জন: ফুসফুস সংক্রান্ত সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় দূষণ ও ধূলিকণা ৬০ শতাংশ দায়ী হলে, বাকি ৪০ শতাংশ দায় ধূমপানের। ‘সিওপিডি’ বৃদ্ধির জন্যও দায়ী ধূমপান। তবে শুধু প্রত্যক্ষ ধূমপায়ীরা নন, আশপাশে অবস্থানরত পরোক্ষ ধূমপায়ীরাও এতে আক্রান্ত হন।
ঘরের ভিতরের বাতাসের বিশুদ্ধ করা: বাইরে দূষণ চোখে দেখা গেলেও ঘরের মধ্যে থাকা সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধূলিকণাও কিন্তু আমাদের ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার ও ভ্যাকিউম করার পাশাপাশি এসি বা বাতাস পরিশোধন করার যন্ত্রগুলো পরিষ্কারের দিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।

ঘরে গাছ রাখা: অন্দরসজ্জার জন্য অনেকেই বাড়িতে ছোট ছোট গাছ রাখেন। ঘরে গাছ রাখলে যেমন দেখতে ভাল লাগে, পাশপাশি ঘরে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছড়াতেও এটি সাহায্য করে।
এছাড়া, নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ফুসফুসকে সুস্থ রাখে। উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যায়াম হলো;
রিলাক্সিং ব্রিদিং: পিঠ সোজা রেখে আরাম করে বসুন। ‘হুস’ আওয়াজ করে মুখ দিয়ে ফুসফুসের সবটুকু বাতাস বের করে দিন। এবার চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে নাক দিয়ে ১ থেকে ৪ পর্যন্ত গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। সেটা ভেতরে আটকে রাখুন, মনে মনে ৭ পর্যন্ত গুনুন। এবার ঠোঁট গোল করে আবার হুস করে ৮ পর্যন্ত গুনতে গুনতে পুরোটা বাতাস বের করে দিন। কয়েক সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পর পর চারবার এভাবে শ্বাস নিন।
শ্বাস গোনার ব্যায়াম: মেরুদন্ড সোজা করে বসে চোখ বন্ধ করে পরপর কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। ধীরে ধীরে এর গতি কমে আসবে। প্রথমে প্রশ্বাস ছাড়ার সময় এক গুনবেন, তার পরের বার দুই, এভাবে পাঁচ পর্যন্ত। তারপর আবার নতুন করে এক দিয়ে শুরু করুন। এটি মস্তিষ্ককে সজাগ করে, মনঃসংযোগ বাড়ায় ও মানসিক চাপ কমায়।

সেলো ব্রিদিং: এটি মুখ বন্ধ করে চটপট নাক দিয়ে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যায়াম। প্রতি সেকেন্ডে তিনবার শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার চেষ্টা করুন। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সময়টি সমান থাকবে। এতে বুকের ও বক্ষচ্ছদার মাংসপেশির দ্রুত ব্যায়াম হবে। তারপর কিছুক্ষণ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিন। এতে ক্লান্তি ঝরে যায় এবং কর্মস্পৃহা ও উদ্যম বাড়ে।

তবে এসবের পাশাপাশি পরিবেশ ও বায়ু দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকেও কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। বিশেষ করে মোটর গাড়ির সংখ্যা কমানো গেলে গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যাবে। একইসাথে যেসব গাড়ি রাস্তায় চলছে/ চলবে সেগুলো নিয়মিতভাবে মেরামত করাও প্রয়োজন যাতে মেয়াদ উত্তির্ণ গাড়ি অধিক মাত্রায় বায়ু দুষন করতে না পারে। ট্র্যাফিক সিগনাল বা যানজটে থাকলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া, যেখানে-সেখানে আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। কল-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া হ্রাসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। আর এসবের পাশাপাশি যত সম্ভব বৃক্ষরোপণ ও এদের পরিচর্যা করতে হবে। তবেই ধীরে ধীরে পৃথিবী আবার সবুজ হয়ে উঠবে এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ পৃথিবীতে বসবাসের সুযোগ পাবে।

ডা. এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন
সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর, রেসপিরেটরি মেডিসিন
এভারকেয়ার হসপিটাল, বসুন্ধরা, ঢাকা।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাড় ব্যথার চিকিৎসা
ব্লাড ক্যান্সারে মুখের সমস্যা
অটিজমে অস্বাভাবিক আচরণ অনুভূতি
ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ চাই
কোভিডের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে ‘এমপক্স’ সিডিসির সতর্কতা
আরও

আরও পড়ুন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ হয়নি : দুদক

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ হয়নি : দুদক

কৃষিতে এক অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলছে কেজিএফ

কৃষিতে এক অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলছে কেজিএফ

সংবিধান-প্রশাসন সংস্কার ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়: জামায়াত সেক্রেটারি

সংবিধান-প্রশাসন সংস্কার ছাড়া এগোনো সম্ভব নয়: জামায়াত সেক্রেটারি

রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের ব্যাক্তিগত সহকারীসহ আটক ২৪

রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের ব্যাক্তিগত সহকারীসহ আটক ২৪

নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রুপ ২৪ ঘণ্টায় ১১৮জন আক্রান্ত

নারায়ণগঞ্জে ডেঙ্গুর ভয়াবহ রুপ ২৪ ঘণ্টায় ১১৮জন আক্রান্ত

উপদেষ্টা হচ্ছেন চলচ্চিত্রকার ফারুকী

উপদেষ্টা হচ্ছেন চলচ্চিত্রকার ফারুকী

কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনবন্ধুর মৃত্যু আহত-১

কালিয়াকৈরে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনবন্ধুর মৃত্যু আহত-১

নির্বাহী আদেশে সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারে দাবি হেফাজতে ইসলামের

নির্বাহী আদেশে সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের মামলা প্রত্যাহারে দাবি হেফাজতে ইসলামের

ডা. সায়েদুর, সেখ বশির, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও মাহফুজ আলম

ডা. সায়েদুর, সেখ বশির, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও মাহফুজ আলম

প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে আর্থিক অনুশাসন মেনে চলার পরামর্শ ইউজিসির

প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে আর্থিক অনুশাসন মেনে চলার পরামর্শ ইউজিসির

কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলায় কৃষক নিহত, আহত ১৩

কুষ্টিয়ায় আ.লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলায় কৃষক নিহত, আহত ১৩

ঈশ্বরদীর পাকশীতে ট্রেনে কেটে নিহত-১ আহত-১

ঈশ্বরদীর পাকশীতে ট্রেনে কেটে নিহত-১ আহত-১

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে : এ্যানি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে : এ্যানি

হাসিনার অডিও ক্লিপ ফাঁস, ট্রাম্পের ছবিসহ ঢাকায় অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তার

হাসিনার অডিও ক্লিপ ফাঁস, ট্রাম্পের ছবিসহ ঢাকায় অর্ধশতাধিক গ্রেপ্তার

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সিঙ্গাপুরের সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৪ সদস্যের দায়িত্ব গ্রহণ

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ১৪ সদস্যের দায়িত্ব গ্রহণ

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সন্দেহে ১ যুবক পুলিশ হেফাজতে

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সন্দেহে ১ যুবক পুলিশ হেফাজতে

খুলনায় ভোক্তা-অধিকারের অভিযান, ৪ প্রতিষ্ঠানে জরিমানা

খুলনায় ভোক্তা-অধিকারের অভিযান, ৪ প্রতিষ্ঠানে জরিমানা

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রপ্তানি বেড়েছে পোশাক খাতে

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রপ্তানি বেড়েছে পোশাক খাতে

বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ক্রিস গেইলকে মনে করালেন লি

বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ক্রিস গেইলকে মনে করালেন লি