ডেঙ্গুজ্বর বেড়েই চলেছে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম

শীত পড়তে শুরু করেছে কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ সেভাবে কমছে না। বরং তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই শত শত রুগী হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। সরকারি হিসাবে এবছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮৮ জন ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছে। অক্টোবরে সর্বোচ্চ ১৩৫ জন মারা যাওয়ার পর নভেম্বরে এস তা আরও বেড়ে ১৭৩ জন হয়েছে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি এডিস বাহিত চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসও এখন পাওয়া যাচ্ছে আমাদের দেশে।

আমরা জেনে গেছি এডিস নামক এক প্রকার মশার কামড়ে এ জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে মশার দেহে জীবাণু প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে অন্য সুস্থ লোককে কামড়ালে তার দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বর্ষায় ও গ্রীষ্মের সময় এ মশা বংশ বিস্তার করে ও এ রোগের দ্রুত বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গুজ্বর ম্যালেরিয়ার মতোই মশাবাহিত জ্বর। ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট-জনিত আর ডেঙ্গু ভাইরাস-জনিত। এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকার জঙ্গলের গাছের কোটরে বাস করত। আজ সুদূর আফ্রিকা থেকে ডেঙ্গুজ্বর আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে সমুদ্রপথে, আকাশপথে ও সড়কপথে।

ডেঙ্গুজ্বর কী? এটি মশাবাহিত ভাইরাস জ্বর। এডিস মশার কামড়ে এই জ্বর হয়ে থাকে। সাধারণত সংক্রমণের তিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়।

এই জ্বরের লক্ষণগুলো কী কী? বেশিমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা (চোখের পেছনে), বমি, মাংস ও হাড়-জয়েন্টে ব্যথা এবং শরীরে র‌্যাশ। তা ছাড়া শরীরে চুলকানি, মুখে, নাকে, মলের সাথে রক্তক্ষরণ, রক্তচাপ কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর কী? ডেঙ্গুজ্বরে শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হওয়া, রক্তের প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যাওয়া এবং প্লাজমা লিক করাকে হেমেরারেজিক ডেঙ্গু বলে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম কী? ডেঙ্গুজ্বরে বিপজ্জনকভাবে শরীরের রক্তচাপ কমে গেলে এই অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।

ডেঙ্গু জ্বরে কী কী পর্যায় আছে? তিনটি পর্যায় আছে। জ্বর পর্যায়- উচ্চমাত্রায় জ্বর, শরীরে, মাথায় ব্যথা, বমি, নাকমুখে অল্প রক্তক্ষরণ, র‌্যাশসহ এই পর্যায় ২-৭ দিন থাকে। ক্রিটিক্যাল পর্যায়- এই পর্যায় রক্তনালী থেকে প্লাজমা লিক হয়ে শরীরে, বুকে, পেটে জমে এবং ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে শক ও হেমোরেজ হতে পারে, এক থেকে ২ দিন এই পর্যায় থাকে। রিকভারি পর্যায়- লিক হওয়া প্লাজমা রক্তনালীতে ফিরে আসে ও সাথে চুলকানি, হার্টরেট কমে যাওয়া এবং মস্তিষ্কে তরল আধিক্যের কারণে জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া ও খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এরপর কয়েক সপ্তাহ প্রচ- শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় কী? ১. মশার বংশ বৃদ্ধি প্রতিরোধে- এই মশা স্বচ্ছ ও জমা পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে। এ জন্য বৃষ্টির জমা পানি, ফুলের টবে থাকা পানি ও এসির পানি, টায়ার, ডাবের খোসার পানি জমা প্রতিরোধ করা বংশ বৃদ্ধি বন্ধ করে। ২. মশার কামড় থেকে রক্ষা করা-মশারি ব্যবহার, শরীর ঢাকা কাপড়চোপড় পরিধান করে থাকা এবং মশা নিধনে ফগার মেশিনের সাহায্যে মশা নাশক ওষুধ ছিটিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা যায়। ৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রেডিও, পত্রিকা, টিভিতে প্রচার করা।

ডেঙ্গু নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কী কী? ডেঙ্গুজ্বর নির্ণয়ে ডেঙ্গু এনএস১ ও আইজি এম, আইজি জি রোগীর রক্তে পরীক্ষা করে এই জ্বর নিশ্চিত হওয়া যায়। রক্তে হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেট পরীক্ষা করে দেখা হয়। এ ছাড়া কালচার করে ভাইরাস নির্ণয় এবং পিসিআরের মাধ্যমে নিউক্লিক এসিড নির্ণয় নিশ্চিত হওয়া যায়- তবে এই দু’টি পরীক্ষা ব্যয়সাপেক্ষ বিধায় সচরাচর করা হয় না।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা কী? নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে চিকিৎসা লক্ষণ অনুযায়ী এবং শরীরের ফ্লুইড ব্যালেন্স করে দেয়া হয়ে থাকে। প্যারাসিটামল দেয়া যেতে পারে তবে অন্য জ্বরের ওষুধ যেমন ইবুপ্রুফেন বা অ্যাসপিরিন নিষেধ- কেননা রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে)। শিরায় স্যালাইন বা, মুখে খাবার স্যালাইন দিয়ে লক্ষ্য রাখা দরকার যে প্রতি ঘণ্টায় যেন ১ মিলিলিটার/কেজি (শরীরের ওজন) প্র¯্রাব তৈরি হয়, এবং রক্তচাপ ও হেমাট্রোক্রিট স্বাভাবিক থাকে। তবে নেসোগ্যাস্ট্রিক টিউব দেয়া, মাংসে ইনজেকশন দেয়া বা ধমনি ছিদ্র করা যাবে না- কেননা এগুলো রক্তক্ষরণ ত্বরান্বিত করে।

তাই রোগের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- নিজের যতœ না নিলে নিজে, অন্যের ওপর ভরসা মিছে।

মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট,
মোবাইল- ০১৭১৬-২৭০১২০।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

শিশুদের অপুষ্টি : সতর্কতা প্রয়োজন
শিশুদের রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করুন
গ্রীষ্মের গরমেও ভালো থাকুন
ধূমপান ত্যাগে ফুসফুস ক্যান্সার কমে
ডায়াবেটিস রোগীর হজ্জ পালন
আরও
X

আরও পড়ুন

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা

কর্ণফুলীতে ৫ টাকা বেড়েছে ঘাট ভাড়া; বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীরা

রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড ও ৫ শিক্ষককে জরিমানা

রাঙ্গাবালীতে দাখিল পরীক্ষায় অনিয়ম, ১৪ শিক্ষার্থী সাসপেন্ড ও ৫ শিক্ষককে জরিমানা

প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল!

প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল!

স্ত্রী ফিরে না আসায় অভিমানে স্বামীর আত্মহত্যা

স্ত্রী ফিরে না আসায় অভিমানে স্বামীর আত্মহত্যা

খুলনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলি, আতঙ্কিত নগরী

খুলনায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গুলি, আতঙ্কিত নগরী

তৃণমূল থেকে সবখানে দুর্নীতি করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা : অ্যাড. সৈয়দ শাহীন

তৃণমূল থেকে সবখানে দুর্নীতি করেছে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা : অ্যাড. সৈয়দ শাহীন

১ মে থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী সব খামার বন্ধ ঘোষণা

১ মে থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদনকারী সব খামার বন্ধ ঘোষণা

ভারতের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করতে লিগ্যাল নোটিশ

ভারতের ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করতে লিগ্যাল নোটিশ

আমাকে বাংলাদেশী বলবেন না, টিউলিপ সিদ্দিকের হুঁশিয়ারি! ভিডিও ভাইরাল

আমাকে বাংলাদেশী বলবেন না, টিউলিপ সিদ্দিকের হুঁশিয়ারি! ভিডিও ভাইরাল

শাহরুখ-গৌরীর রেস্তোরাঁয় ভেজাল খাবার!

শাহরুখ-গৌরীর রেস্তোরাঁয় ভেজাল খাবার!

কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার

কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার

উখিয়ায় বন্যহাতির আক্রমনে আহত কৃষকের মৃত্যু

উখিয়ায় বন্যহাতির আক্রমনে আহত কৃষকের মৃত্যু

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ: সমন্বয়ক পরিচয়ে পদত্যাগপত্রে জোরপূর্বক কর্মকর্তার সই

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ: সমন্বয়ক পরিচয়ে পদত্যাগপত্রে জোরপূর্বক কর্মকর্তার সই

ডেসটিনির এমএলএমদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল

ডেসটিনির এমএলএমদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল

গাজীপুরে আড়াই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

গাজীপুরে আড়াই ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক

নির্বাচনের আগে তিন শর্ত পূরণ হতে হবে : জামায়াত আমির

নির্বাচনের আগে তিন শর্ত পূরণ হতে হবে : জামায়াত আমির

বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে বৃষ্টি নামলেই হাঁটু পানি, জনজীবনে চরম ভোগান্তি

বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কে বৃষ্টি নামলেই হাঁটু পানি, জনজীবনে চরম ভোগান্তি

সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার সম্পর্ক : মেঘনা আলম

সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার সম্পর্ক : মেঘনা আলম

ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে : আলী রীয়াজ

ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে : আলী রীয়াজ

ঘুষ না দেয়ায় মারধর : গাবতলীতে মহাসড়ক অবরোধ

ঘুষ না দেয়ায় মারধর : গাবতলীতে মহাসড়ক অবরোধ