এই শীতে জীবন যাপন
০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম
আমরা সবাই জানি, শীত যেমন নানা পিঠাপুলি, তাজা রঙিন শাকসবজি ও মাছ নিয়ে আসে, তেমনি শীতের সাথে নিয়ে আসে নানা রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের বড় শত্রু এই শীত। কিন্তু ¯্রষ্টা এসব রোগব্যাধি প্রতিরোধের জন্য নানা প্রকার শাক-সবজি-ফল-মূল দেন। এসব খাবার খেলে আমরা শীতকালের রোগবালাই প্রতিরোধ করতে পারি। তবে রোগ শোক প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের শুয়ে-বসে থাকলে হবে না। উদ্যোগী হতে হবে। প্রবাদ আছে- শরীরের নাম মহাশয়, যা সহাও তাই সয়। অর্থাৎ শরীরকে নিয়মানুগ করে চালাতে হবে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল হাঁটার অভ্যাস থাকলে, শীতকালে লেপের ভেতর শুয়ে উষ্ণতা উপভোগ করলে চলবে না। সঠিক ও নির্দিষ্ট সময় উঠে হাঁটতে বেরিয়ে পড়তে হবে। কারণ, আপনাকে ক্যালোরি জ্বালাতে হবে। ওজন কমাতে হবে। এ জন্য আপনার সহনশীলতা, প্রতিরোধ ক্ষমতা, নমনীয়তা ও সুন্দর জীবনযাপনের গুণ অর্জন করতে হবে।
শীতে জিমে যাওয়া অন্য কথা। যারা জিমে যান না বা যাওয়ার সময় বা ক্ষমতা নেই, তারা ব্যায়াম করবেন। শারীরিক বা যোগব্যায়াম করতে পারেন ঘরে থেকেই। তবে যে ব্যায়ামই করুন, তার আগে শরীর একটু গরম বা উষ্ণ করে নিতে হবে। কারণ, সারা রাত শুয়ে থেকে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। তাই রক্তকে একটু পাতলা করে নেয়া দরকার। এ জন্য কম-বেশি জগিং করতে হবে। এটা বয়স অনুযায়ী হতে হবে। ক্ষমতার বেশি নয়। প্রতিদিন আধা ঘণ্টা থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিট ব্যায়ামই যথেষ্ট। সপ্তাহে পাঁচ দিন। এতেই ভালো ফল পাবেন। শরীরকে গরম করা ব্যায়াম হলো সর্বশ্রেষ্ঠ শীতের ব্যায়াম। হাত-পায়ের সম্প্রসারণ করা এবং হার্টের ব্যায়াম বেশ উপকারী। এতে মচকানো বা আঘাত পাওয়া সমস্যার উপকার হয়। মেরুদ-, নিতম্ব ও হাঁটুর ব্যথা উপশম হয়। রক্ত চলাচল উন্নত হয়। অস্থিসন্ধি স্বাভাবিক থাকে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং-স্কিপিং করতে পারেন। নিজ শয্যায় বসে হাত-পা সম্প্রসারণ ব্যায়াম করা যায়। হাঁটু ও কনুই সম্প্রসারণ করতে পারেন। ঘাড় ডান ও বামে, সামনে ও পেছনে ঘুরাতে পারেন। এ ছাড়া হাঁটাহাঁটি, দৌড়াদৌড়ি, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো এবং সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা শীতের ভালো ব্যায়াম। তবে সব বয়সের লোকের জন্য হাঁটাহাঁটি সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যায়াম। তবে হাঁটাহাঁটিতে গতি থাকতে হবে। স্বাভাবিক হাঁটাহাঁটিতে খুব ভালো ফল পাওয়া যায় না। শীতে নিতম্ব ও ঊরুর বাহির ও ভেতরের ব্যায়াম- এই ব্যায়ামের মধ্যে লেগ কিকস্, লুংগিস ও স্কোয়াটস্ উত্তম। এসব ব্যায়াম নিতম্বকে সবল ও সুস্থ রাখে এবং ঊরুর ভেতরে ও বাইরে মাংসপেশিকে সবল ও সুস্থ রাখে।
যদি মেরুদ- ও হাঁটুতে সমস্যা না থাকে তাহলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন। হাত ও পায়ের সম্প্রসারণ ও সঙ্কোচন ব্যায়াম এক জায়গায় দাঁড়িয়ে শরীরকে বাঁকাতে হবে। ডানে ও বামে বাঁকানোর চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচবার এবং পারলে দশবার করতে হবে। পেটের ব্যায়াম- অনেকের তলপেটে চর্বি জমে পেট মোটা হয়ে যায়। চলতি কথায় বলে মেদভুঁড়িওয়ালা। যাদের এমন অবস্থা, তারা সাইকেল চালাতে পারেন। বিছানায় শুয়ে দুই পা গুটিয়ে হাঁটু বুকের সাথে লাগান। যতক্ষণ পারেন ধরে রাখুন। এতে আপনার তলপেটের চর্বি গলবে। মেদভুঁড়ি কমে আসবে। পিঠের ব্যথার উপশম হবে। অন্যান্য ব্যায়ামের মধ্যে ভূজঙ্গ আসন, ধনুরাসন, নৌকাসন ইত্যাদি যোগাসন উত্তম। আর এসব আসন শেখার বিভিন্ন দেশী-বিদেশী সচিত্র বই পাওয়া যায় এবং নিজে নিজে শেখা যায়। এসব আসন করলে শরীরে চাঙা ভাব আসে। হজমশক্তি বাড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তবে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো এসব ব্যায়াম করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। মেয়েদের জন্য নিয়মিত এসব ব্যায়াম অত্যাবশ্যক। কারণ তাদের চলাফেরা কম অথচ তারা বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন।
শীতের খাওয়া-দাওয়া- সর্বপ্রকার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে আমাদের শারীরিক শক্তি, প্রাণশক্তি অত্যন্ত জরুরি। শীতকালে আমাদের কাছে আসে নানা উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠান। নববর্ষ, বিয়েশাদি ইত্যাদির মানে এই নয় যে, আমরা লাগামছাড়া খাওয়া-দাওয়ায় লিপ্ত হবো। শীতে দিন ছোট, রাত বড়। এ সময় কিছু মওসুমি অসুস্থতা আসতেই পারে। আর এসব অসুস্থতার জন্য দায়ী আমাদের যথেচ্ছ পোলাও, বিরিয়ানি, রেজালা, রোস্ট ও কোরমা খাওয়া। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত খাওয়া। অতিরিক্ত খাওয়া মানেই বদহজম, পেটে গ্যাস উৎপন্ন হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, পাকস্থলীর সমস্যা। এ জন্য নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে শীতে সুস্থ থাকা যেতে পারে।
* বেশি বেশি শীতের তাজা রঙিন শাকসবজি খান। শীতের ফলমূল- কুল, সফেদা, আঙুর, কমলা, মালটা, পাকা পেঁপে ইত্যাদি খান। কাঁচা শসা, ক্ষীরা ও গাজরের সালাদ খান। পোলাও-বিরিয়ানি কম খান।
* শীতে নানা প্রকার রঙ-বেরঙের ফল পাওয়া যায়- যেমন আপেল, আঙুর, কমলা, মালটা, কলা, সফেদা, কুল, আনারস, পেয়ারা ও বেদানা খান। এসব ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়বে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। হার্ট ভালো থাকবে শীতে। শীতকালে হার্টের রোগীদের সব ধরনের সতর্কতা গ্রহণ করা দরকার।
* নিজে গরম রাখতে গরম তরল খাবার খান। যেমন- সুপ, সবুজ চা এবং গাছগাছড়ার নির্যাসজাতীয় খাবার। গরম তরল খাবার খেলে শরীরের মিউকাস বেরিয়ে যাবে। এ ছাড়া আদা, দারুচিনি, গোলমরিচের গুঁড়া চায়ে মিশিয়ে পান করা শ্রেয় ও উপকারী। এর ফলে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। শীতে সবার হজমশক্তি কমে যায়।
* কোনো বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন। মোটা তন্দুর, পোস্ত, জাঙ্ক খাদ্য এড়িয়ে চলবেন। পোলাও-বিরিয়ানি কম খাওয়াই ভালো। মুরগির গোশত খান। খাসি বা গরুর গোশত এড়িয়ে চলুন। সালাদ ও বোরহানি খান। বাড়ি ফিরে এক বেলা কিছু খাবেন না। এতে পাকস্থলী হজমের প্রচুর সময় পাবে।
* সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে কোনো প্রকার কোলা পান করবেন না। বিপদ হতে পারে। দই খান। এ ছাড়া চা বা কফিও পান করবেন না। একটা সতর্কতা অবশ্যই গ্রহণ করবেন হার্টের ধমনীতে সমস্যা আছে এমন রোগীরা। মনে রাখবেন, রাতে ছয়-সাত ঘণ্টা শুয়ে থেকে আপনার শরীরের রক্তের ঘনত্ব বেড়ে গেছে। ওটা পাতলা হতে সময় লাগবে। তাই সকালে প্রাতঃভ্রমণে বের হবেন না। বিকেল ৫টায় হাঁটাহাঁটি করবেন। সকালে বাইরে হাঁটাহাঁটি করা হার্টের ধমনী সংকুচিত রোগীদের জন্য বিপজ্জনক।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট,
মোবা- ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় দুইদিনে নিহত ১৫০
কালো টাকায় ভাসছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ৩৬% থিংক ট্যাংক
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক হতাহত, ফের উত্তপ্ত মণিপুর
মাছের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার সীমায় বন্দি হচ্ছেন ভারতীয় জেলেরা