রোজায় পেপটিক আলসার রোগীর করণীয় ও বর্জনীয়
২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:২৫ এএম

চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান ২০২৫। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১৬০ কোটি মুসলিম রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করেন। এবছর বিশ্বের কোথাও ১১ ঘণ্টা থেকে কোথাও ১৭ ঘণ্টা পর্যন্ত রোজা পালন করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এবার এটা প্রায় ১৪ ঘন্টা। বছরে এক মাস রোজা রাখার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এদেশের মুসলমানরা ধর্মীয় বিধান মেনে আবহমান কাল থেকেই আনন্দের সাথে এটা পালন করছে।
ইসলাম মধ্যপন্থী শান্তির ধর্ম। জোর করে কারো ওপর কোনো বিধান ইসলাম চাপিয়ে দেয় নাই। তাই তো ইসলাম যেমন সুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা ফরজ করেছে, তেমনি অসুস্থ ব্যক্তির জন্য কিংবা মুসাফিরের জন্য রোজা ভাঙ্গার অনুমতিও প্রদান করেছে। তবে যারা পেপটিক আলসার রোগে ভুগছেন তারা কিভাবে রমজানের রোজা রাখবেন তা নিয়েই আজকের আলোচনা।
আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। তবে খেয়াল রাখুন, ইফতারে ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন। তবে ইফতারে বেশি ভাজাপোড়া খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়ার চেয়ে ইফতারে খাবারে আনতে পারেন ভিন্নতা। বিশেষ করে যারা অ্যাসিডিটির রোগী তাদের জন্য খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ইফতারে এই রোগীরা যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবেন না। কারণ নিয়ম মেনে না খেলে সমস্যা বেড়ে যাবে। যা ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। তাই যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের রোজার সময় একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ।
> যা করা যাবে না- তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বেশি মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। চা-কফি একদমই পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়াতে হবে। ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না কোনো ভাবেই। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে পুরোপুরি। সেহরিতে বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় কোনো ভারি খাবার খাওয়া যাবে না।
> যা করতে হবে - ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত। ইফতারে সেদ্ধ, ঝোল, সালাদ, স্যুপ, ভাত এ ধরনের খাবার খেতে হবে। একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়া যেতে পারে। খাবার মেন্যুতে সুষম খাবার রাখতে হবে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। ঘুমানোর দেড় ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেহরির মেন্যুতে কম মশলার ঝোলযুক্ত খাবার রাখুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের ধরন ও সময়সূচি ঠিক করে নিন। এই সমস্যাটা বাংলাদেশে অতিপরিচিত পেটব্যথা, বুকব্যথা যাই হোক আর যে কারনেই হোক আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মানুষ একটা গ্যাসের বড়ি খেয়ে নেন। অনেকে বছরের পর বছর ধরে এই বড়ি খেয়ে সুস্থ আছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী সমস্যা গুলো একবারও চিন্তা করেন না। আসলে পেপটিক আলসার কী তা আমারা সবাই জানি। এর ফলে পেট থেকে গ্যাস নির্গত হতে থাকে। কারো কারো গলার কাছে জ্বালা পোড়া বা প্রদাহ হয়। কারো কারো চুকা ঢেক উঠে। অনেকে বমি করে গলার কাছের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পান।
> গ্যাস্ট্রিক আলসার: সাধারণ মানুষের কাছে এটি গ্যাস্ট্রিক রোগ নামে পরিচিত। ৪০-৬০ বছর বয়সের মানুষ এই রোগের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি।
> গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণাবলী: বুক জ্বালা, বদহজম বা অজীর্নতা, পেটে বেদনা, রক্তবমি বা রক্তস্রাব, টক ঢেকুর, বমির রক্ত টকটকে লাল, হঠাৎ প্রচন্ড পেট ব্যথা দেখা দেয়। পেটের খাদ্য বমি হয়ে গেলে ব্যথার কিছু উপশম হয়। শরীরে পানি স্বল্পতা থাকে এবং জ্বর থাকে।
* ভাবী ফল: নতুন অবস্থায় রোগী সহজে আরোগ্য হয় কিন্তু পুরাতন অবস্থায় ক্যান্সারের পরিণত হতে পারে বা ছিদ্র হলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে।
* ডিওডেনাল আলসার: খাদ্য পাকস্থলী হতে নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত সরু যে নালিতে প্রবেশ করে সেই বাকা অংশটিকে ডিওডেনাম বলে। সেই ডিওডেনামের ভিতরের আবরনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়।
> কারণ: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ন্যায় ডিওডেনাল আলসারের লক্ষণগুলো: খাবার গ্রহণের ১-৩ ঘণ্টা পর পেটে ব্যথা শুরু হয়। রক্ত বমি খুব একটা হয় না, কখনও হলেও রক্তের বর্ণ কালো দেখায়। পায়খানার সাথে কালো বর্ণের রক্ত যায়। পেটে ক্ষিদে পেলেই ব্যথা বৃদ্ধি হয়। পেটে ব্যথার সময় মুখে পানি আসে বুক জ্বালা করে।
> আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।
১. যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে তারা ইফতারে পানি ও খেজুর খেতে পারেন। ট্যাং বা লেবুর শরবত খাওয়া যাবে না।
২. তেলেভাজা পেঁয়াজু-বেগুনি না খেয়ে চিড়া, দই ও কলা খেতে পারেন। ভাজাপোড়া খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। যদি চিড়া-দই ভালো না লাগে, তবে নরম ভাত বা জাউ ভাত খেতে পারেন।
৩. রাতে ভাত খাবেন। তবে শাক এবং ডাল রাতে না খাওয়াই ভালো। তেল, মসলা এবং ঝাল কম দিয়ে রান্না করা খাবার খান।
৪. বেকিং পাউডার ও বেকিং সোডা দেয়া খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
৫. রোজায় অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকেরর সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।
মনে রাখবেন কিছু খাবার যা আপনার পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসের সৃষ্টি করে। যার যে খাবারে সমস্যা হয় তাদের ওই সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
চিকিৎসক, কলাম লেখক ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
অলংকার শপিং কমপ্লেক্স চট্টগ্রাম।
মোবাইল: ০১৮২২৮৬৯৩৮৯
ইমেইল : drmazed96@gmail.com
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমীর স্নান করতে এসে পুণ্যার্থীর মৃত্যু

সরকারের দুই উপদেষ্টা আ’লীগ পুনর্বাসনে ব্যস্ত বলে রাশেদ খানের অভিযোগ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন মিয়ানমারের প্রধানমন্ত্রী

ভারতকে হটিয়ে তবে কি কাশ্মীর দখলে নিচ্ছে পাকিস্তান?

৪০ বছর ইমামতি শেষে ঘোড়ার গাড়িতে ইমামের রাজকীয় বিদায়

সড়ক দুর্ঘটনায় নিঃশেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

পাবনার সুজানগরে বেড়াতে গিয়ে নৌকা ডুবে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

আনোয়ারায় দুর্ধর্ষ ডাকাতি, আহত ৮

পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে রাজনৈতিক কর্মী জাহির বালোচ গ্রেপ্তার

মাথায়গুলি নিয়েই মারা গেলেন জুলাই যোদ্ধা হৃদয়

আটঘরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২জন এসএসসি পরীক্ষার্থী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র ও মধুটিলা ইকোপার্কে ঈদের পরে ৬ষ্ঠ দিনেও পর্যটকের ভিড়!

বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৮ দিন পর আমদানি-রপ্তানি শুরু

পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেই ছাড়ল নিউজিল্যান্ড

তুরস্কে কেনাকাটা বয়কটের আন্দোলনে গ্রেপ্তার ১১

চিকিৎসক সংকট কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে

গদিতে থাকার চেষ্টা করলে চুপ করে বসে থাকবে না বিএনপি

বিশ্বের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকা থেকে বাদ সামিটের আজিজ খান

ফলের কার্টনে পাওয়া লাশের টুকরো অংশগুলো সাভারের সবুজ মোল্লার