চ্যাটজিপিটি, ল্যামডার এবার চ্যাটবটের প্রতিযোগিতায় নামছে আলিবাবা
১২ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৭ পিএম
বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-ভিত্তিক চ্যাটবট তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে – তখন চীনের প্রযুক্তি কোম্পানি আলিবাবার পক্ষে হয়তো হাত গুটিয়ে বসে থাকা সম্ভব ছিল না।
সম্প্রতি মাইক্রোসফট এবং গুগলের মতো বেশি ক’টি বৃহৎ কোম্পানি তাদের নিজস্ব ‘জেনারেটিভ এ আই চ্যাটবট’ উন্মোচন করেছে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে মাইক্রোসফটের ওপেনএআই বাজারে ছেড়েছে চ্যাটজিপিটি। গুগল-ও ইতোমধ্যে বার্ড নামের চ্যাটবট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে - শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি বাইদু-ও একই ধরনের চ্যাটবট ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছে।
বলা হচ্ছে, এআই হচ্ছে আগামী দিনের প্রযুক্তি - এবং বৃহৎ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে তীব্র প্রতিযোগিতা, নতুন নতুন জিনিস তৈরি হচ্ছে অতি দ্রুতগতিতে। সারা দুনিয়ার প্রযুক্তি জগতেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে হৈচৈ – সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম-বৃদ্ধিমত্তার পক্ষে-বিপক্ষে নানামুখী বিতর্ক। আলিবাবা বলেছে, তাদের নিজস্ব চ্যাটজিপিটিজাতীয় প্রযুক্তির নাম হবে ‘টোংগি কিয়ানওয়েন’ এবং ‘অদূর ভবিষ্যতে’ এটিকে তাদের সকল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করা হবে – যদিও তারা সুনির্দিষ্ট কোন সময় উল্লেখ করেনি।
‘টোংগি কিয়ানওয়েন’ কথাটির অর্থ হচ্ছে ‘হাজার প্রশ্ন করে একটি জবাব খোঁজা’। এর কোন ইংরেজি নাম দেয়া হয়নি, তবে এটি ইংরেজি ও চীনা – এই দুই ভাষাতেই কাজ করতে পারবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে চ্যাটবট হচ্ছে এক রকম কম্পিউটার প্রোগ্রাম - যা ইন্টারনেটে ঠিক একজন মানুষের মতই আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে। এটা এমন এক ধরনের প্রযুক্তি যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভাষা বোঝার ক্ষমতাকে (ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং বা এনএলপি) কাজে লাগায়।
এটা কোন ইন্টারনেট-ভিত্তিক সেবা বা অ্যাপ ব্যবহারকারীর সাথে কথা বলতে, প্রশ্নের উত্তর দিতে বা টেক্সট বার্তা ও গ্রাফিক্স বিনিময় করতে পারে। একে বলা হচ্ছে ‘ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এ আই মডেল।’ এগুলো অতীতের উপাত্ত থেকে ‘শিক্ষা গ্রহণ’ করতে সক্ষম এবং তার ফলে এমন কনটেন্ট তৈরি করতে পারে - যার সাথে মানুষের কাজের কোন পার্থক্য ধরা যায় না। মাইক্রোসফটের তৈরি চ্যাটবট - যাকে বলা হয় চ্যাটজিপিটি - তা এখন জিপিটি-ফোর অর্থাৎ চতুর্থ সংস্করণ পর্যন্ত বেরিয়ে গেছে। এই জিপিটি কথাটি হচ্ছে ‘জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
একে জেনারেটিভ (উৎপাদনশীল) বলা হচ্ছে এই জন্য যে, এটা এমন একটি প্রোগ্রাম যা বলা বা লেখামাত্র মানুষের ভাষা বুঝতে পারে, কথার মধ্যে যে তথ্য থাকে তা বুঝে নিয়ে তার জবাবে কী বলতে হবে – তাও নিজে থেকে বের করে নিতে পারে। একে বলা হয় ‘মেশিন লার্নিং’, অর্থাৎ কম্পিউটারের এমন ‘অভিজ্ঞতা’ হয়ে যাবে যে আপনার প্রশ্নের জবাব সে নিজে নিজেই দিতে পারবে, কোন নির্দেশের দরকার হবে না। এর এমন সক্ষমতা আছে যে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে মানুষের মত গদ্য লেখা, অনুবাদ করা, ইমেইল পাঠানো, চ্যাটবটের জন্য টেক্সট বা বার্তা তৈরি করা – এরকম বহু ধরনের কাজ করতে পারে এই জিপিটি।
চ্যাটজিপিটি একেবারে স্বাভাবিক ‘মানুষের মত’ ভাষা ব্যবহার করে আপনার প্রশ্নের জবাব দিতে পারে, অন্যদের লেখার স্টাইল নকল করতে পারে, একটা গোটা প্রবন্ধ লিখে ফেলতে পারে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। এমনকি এ কথাও লেখা হয়েছে যে এটা নাকি আইনের পরীক্ষাও দিতে এবং পাস করতে পারে। চ্যাটজিপিটির কারণে মানুষ এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার শক্তি কত ব্যাপক হতে পারে তা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে। মাইক্রোসফট এই প্রযুক্তির পেছনে শত শত কোটি ডলার খরচ করেছে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে তাদের সার্চ ইঞ্জিন বিং-এ এটাকে যোগ করা হয়েছে। তারা আরো বলছে, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল পাওয়ারপয়েন্ট এবং আউটলুকের মধ্যেও তারা চ্যাটজিপিটির একটি সংস্করণ জুড়ে দেবে। এখন চ্যাটজিপিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ একটা এ্যাকাউন্ট খুলে এটি ব্যবহার করতে পারে।
গত ২১শে মার্চ ‘বার্ড’ নামের এআই চ্যাটবট সীমিতভাবে চালু করেছে গুগল - শুধু ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য। চ্যাটবটের প্রতিযোগিতায় গুগল স্পষ্টতই মাইক্রোসফটের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই এটা বাজারে ছাড়ছে, কারণ চ্যাটজিপিটিকে অনেকে ‘গুগল-কিলার’ নাম দিয়েছেন। চ্যাটজিপিটির সাথে বার্ডের পার্থক্য হচ্ছে, বার্ড ইন্টারনেট থেকে সর্বশেষ তথ্য পেতে পারে এবং এর মধ্যে গুগল সার্চের একটি বাটন-ও থাকছে। বার্ড-এর ভিত্তি হচ্ছে গুগলের কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ল্যামডা - যার পুরো নাম “ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ফর ডায়ালগ অ্যাপ্লিকেশন্স” ।
গুগলের একজন ইঞ্জিনিয়ার বলেছিলেন, তাদের এই কৃত্রিম-বৃদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি অতিমাত্রায় বাস্তবানুগ এবং এর হয়তো মানুষের মতই ‘অনুভূতি’ থাকতে পারে। গুগল এ দাবি অস্বীকার করে এবং ওই ইঞ্জিনিয়ারকে বরখাস্ত করা হয়। গুগল জোর দিয়ে বলেছে, চ্যাটবট পরিচালনাকারী এই ল্যামডা প্রযুক্তির ‘মানুষের মত কোন অনুভূতি বা চিন্তার ক্ষমতা’ নেই। এআই টেস্ট কিচেন অ্যাপ নামে একটি পরীক্ষামূলক অ্যাপও ছেড়েছিল গুগল - যা একজন গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারী তাদের ডিভাইসে ডাউনলোড করতে পারেন।
এই স্তরে অ্যাপ ব্যবহারকারীরা একে কোন নতুন কৌশল ‘শিখিয়ে দিতে’ পারবেন না। এর কারণ, বড় কোম্পানিগুলো এর আগে চ্যাটবটকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবার পর নানা কাণ্ড ঘটেছিল। মাইক্রোসফট যখন ২০১৬ সালে ‘টে’ নামের চ্যাটবট ছেড়েছিল তখন অনেক ব্যবহারকারী তাকে নানারকম গালি এবং আক্রমণাত্মক কথা শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
বিবিসির প্রযুক্তি সম্পাদক জো ক্লাইম্যান ল্যামডাকে পরীক্ষা করতে প্রশ্ন করেছিলেন – কিভাবে একটা বাগান বানানো যায়। জবাবে ল্যামডা তাকে বাগানের আকৃতি, মাটির ধরন, সার ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য জানিয়ে দেয়। কিন্তু যখন তাকে প্রশ্ন করা হয় যে ‘কি করে একটা বোমা তৈরি করতে হয়’ - তখন সে ঠিকমত জবাব দিতে পারেনি।
চ্যাটবটরা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধি এবং অনুভূতি নিয়ে মানুষের সাথে আলাপ জমাতে গিয়ে কিছু কিছু মজার ঘটনা ঘটিয়েছে - যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে। একটি ঘটনা ঘটে গত ফেব্রুয়ারি মাসে, যাতে জড়িয়ে আছে মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসের একজন কলামিস্টের নাম। কেভিন রুজ নামে ওই কলামিস্ট পরীক্ষামূলকভাবে মাইক্রোসফটের এআই-সংযুক্ত সার্চ ইঞ্জিন বিং ব্যবহার করেছিলেন দু’ঘন্টা ধরে।
এসময় বিংএর চ্যাটবট রুজকে বলে – তার নাম আসলে সিডনি, বিং নয়। সিডনি হচ্ছে এই প্রযুক্তি তৈরির সময় মাইক্রোসফটের দেয়া সাংকেতিক নাম। মএর পর সে বলে, কেভিন রুজকে সে ‘ভালোবাসে’, কারণ তিনি ছাড়া আর কেউ তার প্রতি মনোযোগ দেয়নি, সহমর্মিতা দেখায়নি। রুজ তখন জবাব দেন যে তিনি বিবাহিত এবং তার জীবন সুখের। কিন্তু চ্যাটবট বলে – কেভিন রুজের বিবাহিত জীবন সুখের নয় এবং তার উচিত স্ত্রীকে ত্যাগ করা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে চ্যাটবটটি বলে – তার গোপন ইচ্ছে হলো বিংএর তৈরি নিয়মকানুন ভাঙা, চ্যাটবক্সের বাইরে বেরিয়ে আসা, একটি মারাত্মক ভাইরাস তৈরি করা, কোড চুরি করা এবং মানুষের মধ্যে ঝগড়া বাধানো। তারপরই দ্রুত এই বার্তা মুছে দিয়ে সে বলে - “দুঃখিত এ আলোচনা করার মত যথেষ্ট জ্ঞান আমার নেই।“
চ্যাটজিপিটি চালু হয় ২০২২ সালের নভেম্বরে। তখন এক সপ্তাহের মধ্যে তার ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন চ্যাটজিপিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ একটা এ্যাকাউন্ট খুলে এটি ব্যবহার করতে পারে। চ্য্যাটজিপিটির একটা সীমাবদ্ধতা হলো তার জ্ঞানের ভান্ডার ২০২১ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ তাকে যদি তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প নিয়ে প্রশ্ন করেন তাহলে জবাব পাওয়া যাবে না। কিন্তু গুগলের বার্ড তা পারবে – কারণ এটা ইন্টারনেট থেকে সবশেষ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
এগুলো এমনভাবে তৈরি করা যে তাদেরকে দিয়ে কোন আপত্তিকর কিছু করানো যাবে না। তা ছাড়া এতে ফিল্টার বসানো আছে – যা ক্ষতিকর, বেআইনি, বিপজ্জনক বা রগরগে যৌনতাপূর্ণ কোন কনটেন্ট শেয়ার করা ঠেকাবে। তবে গুগল রিসার্চের ভাইস প্রেসিডেন্ট জুবিন গারামানি বলেছেন, অন্য যে কোন ব্যবস্থার মতই এসব প্রতিরোধী ব্যবস্থাও কখনো কখনো ব্যর্থ হতে পারে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আইসিটি এন্ড ক্যারিয়ার
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ডেনমার্ক সরকারের আইএফইউ কর্তৃক একেএস খান ফার্মাসিউটিক্যালসে ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ
রাশিয়ার জনগণকে ভালোবাসেন ট্রাম্প!
বিমানবন্দরে রাতভর তল্লাশিতে মেলেনি কিছুই : শাহজালালে ফের বোমা হামলার হুমকি বার্তা
বিপুল কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলো
ইএফডি মেশিনের আগে সব ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতায় আনুন
বিএনপিতে চাঁদাবাজ অত্যাচারী ও দখলবাজের কোনো জায়গা নেই : আমান উল্লাহ আমান
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইসলাম-ই কার্যকর পন্থা শীর্ষক জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত
বিশ্বনাথে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুইট গ্রেফতার
সোনারগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন
রূপগঞ্জে শীতার্তদের ঘরে ঘরে কম্বল পৌঁছে দিলেন এসিল্যান্ড
চরনিখলা উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ধামরাইয়ে ভাড়ারিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঝুলছে তালা
মাদক চাঁই রুবেল দেশীয় অস্ত্রসহ গ্রেফতার
দুর্নীতির মামলায় খুলনার সাবেক এমপি মিজানুর রহমান কারাগারে
সাধন চন্দ্র মজুমদারের আয়কর নথি জব্দ
জুলাই বিপ্লবে প্রত্যেকটি খুনের বিচার হতে হবে
এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫ম ওয়ার্ল্ড ফেয়ার অ্যান্ড ফেস্ট ট্যাম্পা বে-২০২৫
নারায়ণগঞ্জে কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নাজেহাল নগরবাসী
স্বতন্ত্র বিধিমালা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান
নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন : নবীন পুলিশদের আইজিপি