হ্যাকে আতঙ্কিত ব্যবহারকারী, হোয়াটসঅ্যাপও অনিরাপদ
১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০২ এএম

‘দেশের উদ্দেশ্যে এখন দুবাই এয়ারপোর্ট ট্রানজিটে আছি, এখান থেকে কল কানেক্টেড করতে পারছি না, আমার একটু হেল্প লাগবে’। সিঙ্গাপুর প্রবাসী প্রকৌশলী কিরন বালার মেসেঞ্জার থেকে এভাবে একটি ক্ষুদে বার্তা পান তার কললিস্টে থাকা স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ওই ক্ষুদে বার্তা পেয়ে দ্রুতই কী ধরনের হেল্প লাগবে ফিরতি বার্তায় জানতে চান তারা। ওই প্রকৌশলীর মেসেঞ্জার থেকে অনুরোধ করে লেখা হয়, ‘আমি বাংলাদেশের একটি ট্রাভেল এজেন্সির নম্বর দিচ্ছি, এজেন্সির কাছে আমার ডিটেইলস দেওয়া আছে, তাদের শুধু বলতে হবে আমার ঢাকা টু বরিশালের বিমান টিকিট যেন কনফার্ম করে রাখে’।
আর হ্যাঁ টিকিটের মূল্য আসতে পারে ১৯ হাজার ৮ শ’ টাকার মতো। তুমি ওই টাকাটা আমার দেওয়া ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধির ওই নম্বরে বিকাশ করে দাও। আমার ফ্লাইট ঢাকায় পৌঁছামাত্র তোমার টাকা পরিশোধ করবো’। প্রকৌশলী কিরন বালার ঘনিষ্ঠরা সবাই জানেন, তিনি একজন বিত্তশালী এবং পরোপকারী মানুষ। তাই কোনো কিছু না ভেবেই একই ধরনের ক্ষুদেবার্তা পাওয়া অনেকেই ওই নম্বরে বিকাশ করে টাকা পাঠান। এদের মধ্যে একজন তার শ্যালক গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার রামশীল গ্রামের পংকজ চৌধুরীও রয়েছেন। যিনি এ ব্যাপারে পরে কোটালীপাড়া থানায় জিডিও করেন। ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের। কয়েক ঘণ্টা পরে নিশ্চিত হওয়া যায়, প্রকৌশলী কিরন ওই সময় সিঙ্গাপুরেই ছিলেন এবং তিনি এ ধরনের কাউকে বার্তা পাঠাননি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।
শুধু মেসেঞ্জারই নয়, অহরহ হ্যাক হচ্ছে যে কারো হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট। যদিও হোয়াটসঅ্যাপ একটি জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম, যার শক্তিশালী নিরাপত্তাব্যবস্থা এবং এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা থাকার পরও হ্যাকাররা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করছে।
শুধু অ্যাকাউন্ট হ্যাক করাই নয়, বরং সেই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিচিতজনদের কাছে প্রতারণামূলক বার্তা পাঠিয়ে আর্থিক ও ব্যক্তিগত ক্ষতি সাধন করছে। সমাজের অনেক সচেতন, উচ্চ শিক্ষিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টও হ্যাক হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, প্রশাসনের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অ্যাকাউন্টও হ্যাক করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একাধিক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সরকারি নম্বরও ক্লোন করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার খবর মিলেছে। এ
তালিকায় ভুক্তভোগী বর্তমান সরকারের একজন এমপিও।
গতকাল বুধবার সকালে দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার মুহাম্মদ শামসুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে তার সহকর্মী ও আত্মীয়দের অনেকের হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদেবার্তা আসে। বার্তাটি ঠিক এমন ‘আসসালামু আলাইকুম আমার আর্জেন্টভাবে ১৫ হাজার টাকা লাগবে। আমি যদি একটি
বিকাশ নম্বর পাঠাই তাহলে কি দেওয়া যাবে’। যারাই ওই বার্তার রিপ্লাই দিয়েছেন তাদেরকে ০১৩৪০০৯১৮১৩ পার্সোনাল নম্বরটি দেওয়া হয়। অতি আপনজনদের কেউ কেউ দ্রুতই টাকাও পাঠান।
যদিও অল্প সময়ের মধ্যেই বিষয়টি তার নজরে আসে। আর তখনই তিনি এ ব্যাপারে ঢাকার ডেমরা থানায় একটি জিডি (নং-৪৩৪, তারিখ-৯ এপ্রিল-২৫) করেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জিডি করার পর থেকেই ওই পার্সোনাল বিকাশ নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন,
অপরাধী চক্রকে গ্রেফতার এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও মাঠে নেমেছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, হ্যাকাররা ওটিপি চুরি, সিম সোয়াপ, হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব হাইজ্যাক এবং মার্জ কলের এই প্রধান চার অপকৌশলের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার সুযোগ নেয়। ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) ফিশিং বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি হ্যাকিং কৌশল।
হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ছয় সংখ্যার ভেরিফিকেশন কোড সংগ্রহ করার চেষ্টা করে। সাধারণত তারা হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট সেন্টার বা পরিচিত কারও পরিচয়ে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে প্রতারণা করে।
ব্যবহারকারী যদি ওটিপি প্রদান করে, তবে হ্যাকার সহজেই তার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে। হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব এমন একটি সুবিধা, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোনের সংযোগ ছাড়াই কম্পিউটার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা যায়। হ্যাকাররা হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব হাইজ্যাক করে প্রতারণা করে। হ্যাকার কখনো ভুয়া পরিচয়ে কল করে। ফোনকলে জরুরি কারণ দেখিয়ে আরেকজনকে মার্জ (যুক্ত) করতে বলে। ফোনকলে যুক্ত করলেই সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওটিপি যাচাইকরণ কল হয়ে যায়।
হ্যাকার সহজেই ওটিপি পেয়ে যায় এবং হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো টু-ফ্যাক্টর ভেরিফিকেশন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি ফিচার। বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, ডিজিটালের সুবিধাগুলো নিতে হলে আমাদের আরও স্মার্ট হতে হবে। জানতে হবে এর প্রোটেকশন ও সিকিউরিটি কন্ট্রোলগুলোর ব্যবহার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত,
গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা, জাতীয় বাজেটে সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ দেওয়া সহ সর্বোপরি সাইবার সচেতনতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সবশেষে হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং প্রতিরোধের জন্য সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিভাগ : আইসিটি এন্ড ক্যারিয়ার
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

পাবনায় চররে জমি দখল নিয়ে সংর্ঘষে গুলবিদ্ধি ৫

আইএমএফের ঋণের কিস্তি নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ

মার্কিন উচ্চশিক্ষার চরম পতন

পরিশুদ্ধ-পরিবর্তিত বিএনপিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে হবে-সাহাদাত হোসেন সেলিম

গাজায় ইহুদী হামলায় ৬০ ফিলিস্তিনি শহীদ

জাতিসংঘের দুটি আঞ্চলিক সংস্থায় নির্বাচিত হলো বাংলাদেশ

রাজনৈতিক দল গঠন এখন ছেলেখেলা!

সাভারে অজ্ঞাত নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার

নর্থ সাউথে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

কোরআনবিরোধী নারী সংস্কার প্রস্তাবনা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ

পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ হুঁশিয়ারি পাকিস্তানের

নারী কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে

তারেক রহমান ‘নিয়তির সন্তান’

অতিদারিদ্র্য বৃদ্ধির শঙ্কা

২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ১০৭২ আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ নেতা গ্রেফতার

পারভেজ হত্যা মামলায় প্রধান আসামি মেহেরাজ রিমান্ডে

আ.লীগের ধর্ম বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সন্তোষ কুমার রিমান্ডে

চট্টগ্রামে পেট্রোল বোমায় দগ্ধ মহিলার মৃত্যু

রাজধানীর প্রধান সড়কে ব্যাটারি রিকশা বন্ধের দাবি মোটরসাইকেল চালকদের