ফেনীতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পারাপার
১৩ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২৬ পিএম | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ফেনী পৌর শহরের গোডাউন কোয়াটার সড়কে ব্যস্ততম বৈধ লেভেলক্রসিং যেন মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ এ লেভেলক্রসিংয়ে প্রতিদিন ট্রেন আসার পূর্বে ট্রাফিক গেটকিপার দু’পাশে প্রতিবন্ধক বেরিয়ার ফেলার পরেও পথচারীরা নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। অন্যদিকে সড়কের দু’পাশে বেরিয়ারের মাঝপথের ফাঁকা জায়গা দিয়ে ছোট-বড় যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে দেখা যায়। এভাবে প্রতিদিন পথচারী ও যানবাহনের ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল ঠেকানো সম্ভব হয় না দায়িত্বরত গেটকিপারদের। ফলে প্রায় সময় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে মানুষ, পিষে যায় যানবাহন। এ ক্ষেত্রে মানুষ এবং গাড়ি চালকদের মধ্যে বিন্দুমাত্র সচেতনতাবোধ নেই বললে চলে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষও এসব অনিয়ম বন্ধে কোনো কার্যকরী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
গত সপ্তাহে ফেনী স্টেশনে এক শ্রমিক রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন। জুলাই মাসে ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলরের বড় বোন আবুবক্কর সড়কের পাশে রেললাইন দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে হাটছিলেন, পরে ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে তার মৃত্যু হয়। এর আগে জুন মাসে স্টেশন সংলগ্ন সহদেবপুর লেভেলক্রসিংয়ের একটু উত্তরে এক শ্রমিক ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে, একই মাসে সদরের ধুমঘাট ব্রিজের ওপরে এক মহিলা ট্রেনে কাটা পড়েন। কিছুদিন আগেও ফেনী শহরের লেভেলক্রসিংয়ে প্রতিবন্ধক বেরিয়ার ফেলার পর সময় বাঁচানোর জন্য কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিকসা রেডজোন দিয়ে অবৈধভাবে পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় ধুমড়ে মুচড়ে যায়। যাত্রীরা তাড়াহুড়ো করে নেমে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। রেলপথে দুর্ঘটনায় আহতরা চিরদিনের জন্য কর্মহীন প্রতিবন্ধীদের মত জীবযাপন করতে হয়। তাদের আর কর্মকরার ক্ষমতা থাকেনা। এভাবে অসচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা জানান ফেনী শহরের ব্যস্ততম রেলগেট এলাকাটি খুবই ঝঁকিপূর্ণ। এখানে মানুষ এবং গাড়ির অবৈধ চলাচলের কারনে অনেক সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। এখানে কেউ কারো কথা শুনেন না। কেউ আইন মেনে চলে না। যে যার মতো চলাফেরা করে। তারা এখানে ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প পথ হিসেবে একটি ওভারপাস নির্মাণের দাবি জানান।
কয়েকজন গাড়ি চালকের সাথে কথা বললে তারা জানান, ট্রেন আসার পূর্বে বেরিয়ার ফেলার পর সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে। অনেক সময় যাত্রীদের তাড়া থাকে, গাড়িতে অসুস্থ রোগী থাকে তাই আমরা ইচ্ছে করে বেরিয়ারের মাঝপথের ফাঁকা জায়গা দিয়ে দ্রুত জীবন ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে যাই। জানি এটা বেআইনি তবে সময় বাঁচাতে আমাদেরকে এ পন্থা অবলম্বন করতে হয়।
এদিকে ফেনীর মানুষ এ লেভেলক্রসিংয়ে বিকল্প পথ হিসেবে একটি আন্ডারপাস নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছে অনেক আগ থেকে। কারণ এখানে প্রতিদিন ট্রেন আসার পূর্বে সড়কে প্রতিবন্ধক বেরিয়ার ফেলার কারণে জনসাধারণ, গাড়ি চালক, যাত্রী ও অসুস্থ রোগীদেরকে যানজটের কবলে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ভোগান্তি থেকে মুুক্তি পেতে ফেনী উন্নয়ন ফোরামসহ বিভিন্ন সংস্থা মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান করেও কোনো লাভ হয়নি।
সচেতন মহল বলছেন, রেলপথে লেভেলক্রসিংয়ে বাড়তি সতর্কতা থাকা প্রয়োজন। কারণ অসাবধনতা জনিত কারণে এসব ক্রসিংয়ে দ্্ুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে বেশি। সরাসরি রেলপথ ক্রসিং করে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে উভয়ের রেলআইন মেনে সতর্কতা অবলম্বন করে চলাচল করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এসব আইন কেউই মানছেনা। ফলে রেলপথে লেভেলক্রসিংয়ে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। তারা বলছেন দুর্ঘটনা এড়াতে রেলপথের অধিক গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংগুলোতে নিরাপদ চলাচলের সুবিধার্থে বিকল্প পথ হিসেবে আন্ডারপাস অথবা ওভারপাস করার প্রক্রিয়া সরকার বিবেচনায় নিতে পারেন।
ফেনীর সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল জানান, এ সড়কে একটি ওভারপাস নির্মাণের বিষয় প্রক্রিয়াধীন।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক রেলের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই সারাদেশে রেলপথে যত্রতত্র সড়ক নির্মাণ ও লেভেলক্রসিংয়ের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে যানবাহন চলাচলের হারও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বর্তমানে রেলপথে প্রায় ৮০ ভাগই দুর্ঘটনা ঘটছে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংগুলোতে। কারণ ৭০ ভাগ বৈধ লেভেলক্রসিংয়ে নেই কোন অভিজ্ঞ প্রহরী। সময় বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। রেলপথে দুর্ঘটনা এড়াতে ক্রটিপূর্ণ লেভেলক্রসিং দ্রুত সম্ভব সুরক্ষিত রাখা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ফেনী রেল স্টেশন মাস্টার মো. হারুন ইনকিলাবকে বলেন, শহরের ব্যস্ততম বৈধ লেভেলক্রসিংয়ে (রেলগেট) পথচারী ও গাড়ি চালকদের রেলআইন অমান্য করার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, লেভেলক্রসিংয়ে ট্রাফিক গেটকিপার পদে জনবল সংকট রয়েছে। তিন শিফটে লোকবল দরকার ৬ জন, বর্তমানে তিন শিফটে আছে তিন জন। এ তিনজনের পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। আমি এ ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ফেনী রেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আমজাদ আলী চৌধুরী বলেন, আমি আসার পর গত ৭ মাসে ফেনী এরিয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে ১০ জন। এদের মধ্যে স্থানীয় ছাড়াও অন্যজেলার বাসিন্দা রয়েছে। তাদের পরিবার সূত্রে জানা যায় কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন, কেউ পারিবারিক কলহের জেরে এবং অচেতনতার কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, ফেনী স্টেশন সংলগ্ন শহরের প্রধান লেভেল ক্রসিংটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এ রেলগেটের প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করা উচিত রেল বিভাগের।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত