ক্ষতিপূরণই কি সমাধান : মুখথুবড়ে পড়েছে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প

গারো পাহাড়ে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব

Daily Inqilab এস. কে. সাত্তার, শেরপুর থেকে

২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম

শেরপুরে গারো পাহাড়ি অঞ্চলের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় বন্যহাতি-মানুষের দ্বন্দ¦ চলে আসছে প্রায় ৩ যুগ ধরে। হাতির আক্রমণে বিঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। হাতিও মারা পড়ছে! এই সমস্যা সীমান্তাঞ্চলবাসীর জন্য এক মহাসমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। কিন্তু হাতি-মানুষ দ্বন্দের আজো হচ্ছে না স্থায়ী কোন সমাধান। বন্যহাতির আক্রমণে কেউ মারা গেলে, অঙ্গহানি ঘটলে বা ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণেই দায় সারছেন সরকার। এতে সীমান্তাঞ্চলবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন দেখে দিছেয়ে যে, হাতির আক্রমণে মৃতের পরিবারে ক্ষতিপূরণ পর্যন্তই কি এর সমাধান? তারপর আবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেতেও হতে হয় হয়রানি। সরকারের কাঁটাযুক্ত গাছ রোপণ প্রকল্প বা বায়োফেন্সিং এবং সৌরবিদ্যুতের বেড়া বা সোলার ফেন্সিং প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও মিলছে না সুফল। স্থায়ী সমাধানে এসব কোন প্রকল্পই কাজে আসেনি। গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে এসব সরকারি উদ্যোগ। বন্যহাতির তা-ব থেকে জানমাল রক্ষায় কার্যকরী ও স্থায়ী পদক্ষেপ চায় সীমান্তাঞ্চলের জনগণ। সরকারের বনবিভাগ উল্টো জানমাল রক্ষায় নিজেরা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বন্যহাতি মারা গেলে গ্রেফতার হতে হচ্ছে কৃষকদেরই। কিন্তু সীমান্তাঞ্চলবাসী এ সমস্য নিরসনে স্থায়ী ও কার্যকরী সমাধান চান ভুক্তভোগী গারো পাহাড়বাসী।

এ প্রসঙ্গে শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ইনকিলাবকে বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বন্যহাতি হত্যা করা অপরাধ। এ জন্য বন্যহাতি দ্বারা মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও ফসলহানি হলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। আমরা সবসময় বন্যহাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। জনসচেতনতা বাড়াতে নানা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়া রয়েছে ইআরটি টিম। উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে হাতি সংরক্ষণ কমিটি। কিন্তু হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে কোনোটিই সফল হয়নি। বন্যহাতির প্রাণহানি হলে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও নেয়া হচ্ছে না স্থায়ী সমাধানের কোন ব্যবস্থা। বন্যহাতির অবাধ বিচরণের জন্য ভারত বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তিতে বনাঞ্চলে করা হয়নি হাতির অভয়ারণ্য সৃষ্টি। বাড়ানো হয়নি প্রাকৃতিক বন। রক্ষা করা হচ্ছেনা প্রাকৃতিক জলাধার। হাতি লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে করা হচ্ছেনা নিরাপত্তা বেষ্টনী। ফলে বোরো ও আমন মৌসুম ছাড়াও কাঁঠাল পাকার সময়ে ভারতের গহিন জঙ্গল থেকে হাতির পাল এসে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে তান্ডব চালায়। হাতি আতঙ্ক নিয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ হিশেহারা। বন্যহাতি বিভিন্ন ফসল গাছপালা বিনষ্ট ও ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। হাতির আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে এ পর্যন্ত প্রাণ হারান ৪০-৫০ জন। পঙ্গুত্ব বরণ করেন শত শত মানুষ। আক্রমণ ঠেকাতে দ্বন্দে ২৬-২৭টি বন্যহাতিও মারা পরে। হাতির তা-বে অনেকেই ভিটেমাটি ফেলে ঘনবসতি এলাকায় বসতি স্থাপন করেন। কিন্তু তারপরও থামছে না বন্যহাতির তান্ডব। বরং বংশ বৃদ্ধিতে বাড়ছে হাতির সংখ্যা। পাহাড়ি গভীর জঙ্গল থেকে হাতির পাল হানা দেয় লোকালয়ে। রাতের এমনকি দিনেরও চালায় তা-ব। প্রথম দিকে মশাল জ্বালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে হাঁকডাক ও ঢাকঢোল পিটিয়ে তাড়ানো গেলেও এখন হাতি ভয় পায় না। ফলে মানুষ সার্চলাইট, পটকা ও বিদ্যুতের আলো জালিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করে। মানুষ ও হাতির মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অনেকেই বাড়ি-ক্ষেতের চারপাশে জিআই তারের বেড়া দিয়েও রেহাই পাচ্ছেনা হাতির তান্ডব থেকে। তার হাতির নজরে এলে মারা যাওয়ার ভয়ে অবশ্য এগোয় না। কিন্তু অনেক সময় ক্ষুধার তাড়নায় তার ছিড়তে গিয়ে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে হাতির প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালে বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ আইনে বন্যহাতি হত্যায় কঠোর ব্যবস্থার ও হাতির আক্রমণে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে সরকার। হাতির আক্রমণে নিহতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা। অঙ্গহানির ক্ষেত্রে ১ লাখ এবং ফসলহানির ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণ পেতেও চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। কাগজপত্রের অভাবে অনেকিই ক্ষতিপূরণই পান না।

এ প্রসঙ্গে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে বাড়িছাড়া পটিয়ার এক পরিবার
দৌলতপুরে অসদুপায় অবলম্বনে এসএসসি পরীক্ষার্থী বহিষ্কার
ধামরাইয়ে অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে ভূমি সেবালয়
ঘুষ-দুর্নীতির সাম্রাজ্য খুলনার আরসি ফুড ইকবালের
বরগুনায় অবৈধ পৌর টোল বন্ধের দাবিতে মালিক-শ্রমিকদের মানববন্ধন
আরও
X

আরও পড়ুন

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির হঠকারী  সিদ্ধান্তে  দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ  বাধাগ্রস্ত হবে : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির হঠকারী সিদ্ধান্তে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে : জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

মতলবে ২ পরীক্ষার্থী বহিস্কার

মতলবে ২ পরীক্ষার্থী বহিস্কার

ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

ওয়াকফ আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলো ভারত সরকার

রাজশাহীতে বিশেষ অভিযানে দুইজনসহ আটক ১৭

রাজশাহীতে বিশেষ অভিযানে দুইজনসহ আটক ১৭

তুচ্ছ ঘটনায় ছোট ভাইয়ের নির্মম আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু !

তুচ্ছ ঘটনায় ছোট ভাইয়ের নির্মম আঘাতে বড় ভাইয়ের মৃত্যু !

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

একাত্তরে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলল বাংলাদেশ

উইন্ডিজের কাছে হেরে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের

উইন্ডিজের কাছে হেরে অপেক্ষা বাড়ল বাংলাদেশের

বাগমারার বার শিক্ষককে অব্যাহতি ও পাঁচ শিক্ষার্থী  বহিস্কার

বাগমারার বার শিক্ষককে অব্যাহতি ও পাঁচ শিক্ষার্থী বহিস্কার

সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর

সংস্কার কেন ভোটাধিকার আর গণতন্ত্রের বিকল্প হবে: প্রশ্ন রিজভীর

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে   আপত্তিকর ব্যানার উদ্বেগ-নিন্দা সিইউজে'র

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের নিয়ে  আপত্তিকর ব্যানার উদ্বেগ-নিন্দা সিইউজে'র

রাত পোহালেই কর্মী সম্মেলন: লাকসাম জুড়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ

রাত পোহালেই কর্মী সম্মেলন: লাকসাম জুড়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ

দেশের যেসব অঞ্চলে তীব্র ঝড়ের আভাস দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর

দেশের যেসব অঞ্চলে তীব্র ঝড়ের আভাস দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর

চারুকলায় এবং ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ একইসূত্রে গাঁথা :ইউট্যাব

চারুকলায় এবং ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ একইসূত্রে গাঁথা :ইউট্যাব

সিলেটে জিম্বাবুয়ে দলের অনুশীলনে  বৃষ্টির বাগড়া, বাংলাদেশ দলও ঘাম ঝরালো মাঠে

সিলেটে জিম্বাবুয়ে দলের অনুশীলনে  বৃষ্টির বাগড়া, বাংলাদেশ দলও ঘাম ঝরালো মাঠে

মসজিদে হামলা ও  ভাংচুরের ঘটনায় আশুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

মসজিদে হামলা ও  ভাংচুরের ঘটনায় আশুলিয়ায় সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন

২৭ এ‌প্রিল ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২৭ এ‌প্রিল ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

র‌্যাবের মামলার আসামি পুলিশের শুভাকাঙ্খি হয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে : ফজলু

র‌্যাবের মামলার আসামি পুলিশের শুভাকাঙ্খি হয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে : ফজলু

মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’ আয়োজনের আহ্বান: ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাদেশে

মার্চ ফর ইন্ডিয়ান মুসলিম’ আয়োজনের আহ্বান: ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ বাড়ছে বাংলাদেশে

৬৪ দলের বিশ্বকাপ চান না কনকাকাফ প্রধান

৬৪ দলের বিশ্বকাপ চান না কনকাকাফ প্রধান

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে বর্ণিল আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন

ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে বর্ণিল আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন