ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন
২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২:০২ এএম

শুষ্ক মৌসুম এলেই সাতকানিয়ায় অবাধে কৃষি জমির মাটি কাটা শুরু হয়। রাতের অন্ধকারে যে যেভাবেই পারে স্কেভেটর (মাটি খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে ডাম্পারযোগে (মিনি ট্রাক) ইটভাটায় বিক্রি করছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রেললাইন ঘেঁষে উত্তর ঢেমশা ও তেমুহনী মৌজায় একাধিক চক্র গত কয়েক বছর ধরে শত শত হেক্টর ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে এক সময়ের ফসলি জমি এখন বিশাল লেকে পরিণত হয়েছে। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে রেললাইনটি। এভাবে মাটি কাটা বন্ধ না হলে রেললাইন ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মৌলভীর দোকান থেকে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের আঁধার মানিক দরগাহ লাগোয়া এক সময়ের তিন ফসলি কৃষিজমির মাঠ এখন বিশালাকৃতির জলাশয়। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখাল, পাঠানিপুল ও আঁধার মানিক দরগার পশ্চিমে ঢেমশা এলাকায় মাটি খননের ফলে সৃষ্ট জলাশয় থেকে পুনরায় মাটি কাটার জন্য পাম্প বসিয়ে জলাশয় থেকে পানি তুলে দেয়া হচ্ছে। এলাকার হাজারও গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ না করে মিটারবিহীন পানির পাম্প বসিয়ে বিশাল জলাশয় সেঁচে মাটিখেকোদের পুনরায় মাটি কাটার উপযোগী করে দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, সাতকানিয়ায় ৭৩ ইটভাটার ২৭টি বৈধ ও ৪৬টি অবৈধ। এসব ইটভাটায় বছরে অন্তত এক কোটি টন মাটি লাগে। এ জন্য বছরে ৬০০ হেক্টর জমি থেকে ৩০-৪০ ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেয়া হয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে স্থানীয় দলীয় পদবি ও নামধারী অনেকেই কৃষিজমির টপসয়েল কাটার কাজে জড়িত ছিল। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল অন্য দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থক। সে সময় তারা নিজেদের আড়ালে রাখতেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের আমলে আড়ালে থাকারাই এখন সামনে চলে এসেছেন। আর ওই সময় যারা সামনে ছিলেন তারা আড়ালে চলে গেছেন।
সাতকানিয়ায় কৃষিজমির টপসয়েল কাটায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে এবং কেটে নেয়া মাটি ৩০ দিনের মধ্যে ভরাটের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশের ১০ মাস পার হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মুনাফ সাতকানিয়ায় ইটভাটা মালিকদের জোরপূর্বক মাটিকাটা বন্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছর ১৯ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে ইটভাটার মাটিকাটার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন।
আদেশের পরও সংশ্লিষ্ট কৃষিজমির টপসয়েল কাটা অব্যাহত থাকার বিষয়টি একই বছরের ২২ এপ্রিল বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর আদালতের নজরে আনেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত অবস্থান ব্যাখ্যা করতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাতকানিয়া থানার ওসিকে গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে ভার্চুয়ালি আদালতে যুক্ত হতে তলব করেন।
একই বছরের ২৩ এপ্রিল চার কর্মকর্তা ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। পরে দায়ীদের খুঁজে বের করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া কৃষিজমির উপরিভাগের কাটা মাটি (টপসয়েল) ৩০ দিনের মধ্যে বাইরে থেকে পলিমাটি এনে ভরাট ও ঢাকা-কক্সবাজার রেললাইন থেকে কত দূরে সাতকানিয়ায় মাটিকাটা হচ্ছে এবং এতে করে রেললাইন হুমকির মুখে পড়ে কি না, তা—ও অনুসন্ধান করে রিপোর্টে উল্লেখ করতে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়।
আদালতের নির্দেশের দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত মাটিখেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভরাট করা হয়নি খনন করা কৃষিজমিগুলোও। বরং নতুন করে কিছু এলাকায় মাটি কাটা হচ্ছে।
সাতকানিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘মাটি কাটার বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। গত ৩ মাসে বেশ কয়েকটি খননযন্ত্র জব্দ এবং অনেকজনের কাছ থেকে জরিমানা আদায় ও কারাদÐ দেয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মো. মোজাহিদুর রহমান বলেন, কৃষিজমি থেকে মাটি কাটার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখে থাকে। মাটি কাটার ফলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, রেললাইনের কতদূর থেকে মাটি কাটা হচ্ছে তা পরিদর্শন করে দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

জুলাই গণহত্যার বিচার আইসিসিতে পাঠাতে চাই না: চিফ প্রসিকিউটর

কর্ণফুলীতে পুকুরে ডুবে ভাইয়ের মৃত্যু, বোন হাসপাতালে

সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ২১৪ রোহিঙ্গা আটক

কিশোরগঞ্জে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

ঐক্যবদ্ধ জিহাদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করতে হবে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ অব্যাহত

১৩ বছর পর জমি দখলে নেয় ভুক্তভোগী, ভিন্নখাতে নিতে অপ-প্রচার

দেশের ১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ

দেশে বড় বিনিয়োগ আসতে পারে: বিডা চেয়ারম্যান

প্রতিবাদ মিছিল থেকে যারা লুটপাট করেছে তারা মানবতার কলঙ্ক : দুদু

নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর আনোয়ার হত্যাকান্ডের রায়ে একজনের ফাঁসি

ড. ইউনূসের সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎ

কিশোরগঞ্জে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে বাড়ি-দোকান ভাংচুর, লুটপাট অর্ধশত আহত

জিম্বাবয়ের বিপক্ষে যে কারণে শক্তিশালী দল দিল বিসিবি

দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচেও মেয়েদের বড় জয়

মহেশপুর সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত আহত ৪

লালমোহনে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে সার-বীজ বিতরণ

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রদলের বিক্ষোভ

দেশে বিনিয়োগের এত অনুকূল পরিবেশ আগে ছিল না: ড. ইউনূস

বিশ্বের শক্তিশালী ৫০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

বর্ণিল আয়োজনে হাবিপ্রবিতে ২৪ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন