স্বল্পব্যয়ে মিষ্টিআলুর আবাদ বরিশালে বাড়ছে উৎপাদন
০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম

‘গরীবের খাদ্য’ হিসেবে সমাধিক খ্যাতি লাভকারী ‘মিষ্টিআলু’র আবাদে এবারো বরিশালের কৃষিযোদ্ধাগণ অতীতধারা অব্যাহত রেখেছেন। সারাদেশে আবাদকৃত প্রায় ৩৪ হাজার হেক্টরের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর মিষ্টিআলুর আবাদ হয়েছে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে। ইতোমধ্যে নানা বাহারী মিষ্টিআলু বাজার আসতে শুরু করেছে। ফলে দেশে উৎপাদিত প্রায় সোয়া ৭ লাখ টনের মধ্যে বরিশালের মাঠ থেকেই প্রায় পৌনে ৩ লাখ টন মিষ্টিআলু বাজারে আসছে। এবার বরিশালের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিষ্টিআলু ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা তা বিক্রি করছেন ২০-২৫ টাকার মধ্যে। তবে গোলআলুর চেয়ে কিছুটা ভাল দাম পেয়ে আগামীতে কৃষকরা মিষ্টিআলু আবাদে আরো আগ্রহী হবেন বলে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
অনগ্রসর মানুষের স্বল্পব্যয়ে পুষ্টির ভাল যোগানদাতা মিষ্টিআলু সাধারণ মানুষের কাছে অনাদিকাল থেকেই যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্য একটি কৃষিপণ্য। কৃষি এবং পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙ্গিন শাঁসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টিআলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ‘ভিটামিন-এ’র চাহিদা পুরণে সক্ষম। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, নিয়মিত মিষ্টিআলু খেলে শিশুদের রাতকানা রোগসহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বল্পতার আশঙ্কা থেকেও নিরাপদ রাখতে সহায়ক।
তবে গত এক দশকে দেশে মিষ্টিআলুর আবাদী জমির পরিমান বৃদ্ধির পরিবর্তে হ্রাস পাচ্ছে। এমনকি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বীজসহ মাঠ পর্যায়ে উন্নত আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে পারলে বরিশাল অঞ্চলেও মিষ্টি আলুর উৎপাদন প্রায় দ্বিগুনে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছেন সরেজমিনের কৃষিবীদগণ।
‘কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উচ্চফনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। এমনকি এসব মিষ্টি আলু থেকে জেলী, জ্যাম, মিষ্টি, চিপস, হালুয়া ছাড়াও পুষ্টি সমৃদ্ধ ও উন্নতমানের সস পর্যন্ত তৈরী সম্ভব। যা গ্রামের মেয়েদের ঘরে বসে একটি বিকল্প আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে।
মিষ্টি আলুর দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত উৎপাদন সম্ভব হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টিআলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টিআলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টিআলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টিআলু-৪, বারি মিষ্টিআলু-৫, বারি মিষ্টিআলু-৬, বারি মিষ্টিআলু-৭, বারি মিষ্টিআলু-৮ ও বারি-মিষ্টিআলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ২০-৪০ টন পর্যন্ত। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে এবার হেক্টর প্রতি ২০.২৩ টন মিষ্টি আলুর উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫’এ প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটামিন-এ’র একটি ভাল উৎস তবে ‘বারি’ উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ সহ আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে ডিএই ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ দক্ষিণাঞ্চলে যে পরিমান জমিতে সনাতন জাতের মিষ্টি আলুর আবাদ হচ্ছে, সেখানে উন্নত প্রযুক্তিতে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে, উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়েরে কৃষিবীদগন। এলক্ষ্যে আগামী মৌসুম থেকেই ডিএই’র বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রদর্শনী প্লট করারও তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহাল মহল।
‘বারি’ ১৯৮১ সালে ফিলিপাইন থেকে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্মপ্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষণা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’র জাত উদ্ভাবন করে। কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের অনুমোদনের পরে তা মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করা হয়। এ জাতে মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ‘ভিটামিন এ’ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত।
তাইওয়ানের ‘এশীয় সবজি গবেষনা ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টিআলুর ১শ’ গ্রাম শাঁষে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ‘ভিটামিন-এ’ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টিআলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
নদী-নালা বেষ্টিত বরিশালের চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান এখন প্রায় চতুর্থ। তবে অতীতকালের জনপ্রিয় এ খাদ্য ফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো সম্প্রসারণ ঘটেনি। এমনকি উৎপাদন এলাকার বাইরেও এ ফসলের তেমন প্রচলন নেই।
পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া এবং এমওপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রায় শেষভাগ পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের চরাঞ্চলের বেলে দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। মার্চের মধ্যভাগ থেকেই বাজারে মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করে। গোল আলুর চেয়ে মিষ্টি আলুতে কৃষকরা কিছুটা ভাল দাম পেলেও এখনো লতা-বীজ সংকটই বরিশাল অঞ্চলে অর্থকরি এ ফসল আবাদে প্রধান অন্তরায় হয়ে আছে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

তারেক রহমান ঘোষিত ৩১দফা সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপি'র জনসভা

বড়োদের শরীরে পা লাগলে কি করনীয় প্রসঙ্গে?

গ্রেফতারকৃত ক্রীম আপা কেন এত ভাইরাল?

মাগুরায় ছেলের মোটর সাইকেল থেকে পড়ে মায়ের মৃত্যু

চাঁদাবাজদের আর ক্ষমতায় আনা যাবে না : মুফতি ফয়জুল করীম

কিডনির পাথর অপসারণ বিষয়ে ডা. রফিকের আধুনিক চিকিৎসার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন
জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নিতে নারাজ শান্ত

পাঁচ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে ব্যাংকিং খাতে: গর্ভনর

নোয়াখালীতে "প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট"* এর গণ মিছিল সম্মেলন

ভারতে হনুমান জয়ন্তীতে মসজিদে লাউডস্পিকার নিষিদ্ধ

ময়মনসিংহে ভালুকের শরীলে পচন আওয়ামী লীগ নেতার চিড়িয়াখানা সিলগালা

আলোর পথে যাত্রার আহ্বান থাকবে পয়লা বৈশাখে: ছায়ানট

ইসরাইলির গণহত্যার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে সারাদেশ

লক্ষ্মীপুরে কুপিয়ে জখমের ছয়দিন পর যুবকের মৃত্যু

রাজবাড়ীতে যুবদল নেতার হাতে লাঞ্ছিত নির্বাচন কর্মকর্তা ফোন ভাংচুর

রেল হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন সাধারণ মানুষও : উপদেষ্টা ফাওজুল

কালীগঞ্জে অপরাধীকে সনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

তারাকান্দায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে হকার উচ্ছেদে প্রশাসনের অভিযান

আমার স্ত্রীর অবস্থা ভালো : মির্জা ফখরুল

লবণের মূল্য কমে যাওয়ায় চাষিরা হতাশ, মাঠেই গর্তে ফেলে রাখছে লবণ