কান্না ভুলে গেলাম মরা ছেলেটাকে ব্যাগে ভরে
১৫ মে ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ১৬ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগরের ডাঙিপাড়ার অসীম দেবশর্মা নামে এক দিনমজুর কাজ করেন কেরালায়। স্ত্রী সাগরীর যমজ সন্তান হয় ৫ মাস আগে। দুই ছেলের অসুস্থতার খবর পেয়ে দিন কয়েক আগে বাড়ি ফিরেন তিনি। অসীমের এক ছেলে দুদিন আগে সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারই তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আরেক ছেলে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তার মৃত্যু হয় শনিবার রাতে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছেলে মারা যায়। হাসপাতালে তখন স্বাভাবিকভাবেই ভেঙে পড়েন তিনি। তখনো বুঝেননি কী দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে! ভেবেছিলেন, হাসপাতালই হয়তো সকালে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে। কারণ বৃহস্পতিবার আরেক ছেলেকে অ্যাম্বুলেন্সে করেই বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল সাগরী। বিনাপয়সায়। সেই চিন্তা করে তিনি ১০২ নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু ওখান থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, লাশ নিয়ে তারা যাবেন না। নিয়ে যেতে হলে ৮ হাজার টাকা লাগবে! তখন অসহায় ওই বাবার কাছে সত্যিই টাকা ছিল না। ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। হাজার দু’য়েক টাকা মতো পড়ে ছিল পকেটে। তাদের ১৫০০ টাকার পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন অসীম দেবশর্মা। তারা পরিষ্কার বলে দিল, ‘না, হবে না।’ অসীম দেবশর্মা বলেন, তখন সত্যিই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম আমি। অত দূর কীভাবে নিয়ে যাব ছেলেকে! টাকাও তো নেই। তখন ভাবতে ভাবতে ছেলের লাশ ব্যাগের ভেতর ভরে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাটা মাথায় আসে। সকালে আমার সঙ্গে একজন ছিলেন হাসপাতালে। তিনি ২২০ টাকা দিয়ে একটা ব্যাগ কিনে এনে দেন। ছেলের লাশ যখন ওই ব্যাগে ভরছিলাম, আমার গা-হাত-পা কাঁপছিল রীতিমতো! সঙ্গে কিছু কাপড়-চোপড় ছিল। ওগুলো দিয়েই মুড়িয়ে ঢেকে রেখেছিলাম ছেলের দেহ। ওই কষ্টটা আমার পক্ষে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। তবে ভীষণ ভয় করছিল। ব্যাগে একটা বাচ্চা ছেলের দেহ নিয়ে এতটা রাস্তা যাওয়া! কোনোভাবে যদি রাস্তায় ধরা পড়ে যাই, এই ভয়টা পাচ্ছিলাম। ওখান থেকে প্রথমে রায়গঞ্জের বাসে উঠি। ব্যাগটা আমার কাছে বাঙ্কারে রেখেছিলাম। বাসে এক মুহ‚র্ত স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিলাম না আমি। খালি মনে হচ্ছিল, এই বুঝি কেউ এসে আমার ব্যাগটা খুলে দেখবে। কাঁদব কী, ভয়ে দরদর করে ঘামছিলাম! তখন আমার মাথায় শুধু ঘুরছিল যে, আমাকে আবার বাস পাল্টাতে হবে। আবার একটা অন্য বাসে উঠতে হবে। রায়গঞ্জে নামলাম। বাসের লোকটাই বলে দিয়েছিল, অন্য বাসটা কোথা থেকে ধরতে হবে। রায়গঞ্জে নেমেই বাড়িতে ফোন করি। সবটা জানাই। তার পর বাস ধরে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছাই। বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখি প্রচুর লোকজন। মিডিয়াও এসেছে। অ্যাম্বুলেন্সও ছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর গৌরাঙ্গ দাস খবর পেয়ে একটা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কালিয়াগঞ্জে বিবেকানন্দ মোড় থেকে আমার গ্রাম ৮ কিলোমিটার দূরে। অ্যাম্বুলেন্সে করেই ওই রাস্তাটা ফিরেছিলাম। ছেলের শেষকৃত্য করেছি। আমি গরিব মানুষ। কোনো উপায় না দেখে এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছি। বাবা হয়ে ছেলের লাশ ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে! এ দুঃখটা চিরদিন আমার মনে চাপা পড়ে থাকবে। এবিপি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গোলশূন্য ড্রয়ে থামল চেলসির জয়রথ
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার