খার্তুমে কুকুরের খাদ্য হচ্ছে পড়ে থাকা লাশ
০৯ জুন ২০২৩, ০৮:১৫ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম
সুদানের রাজধানী খার্তুমের দখল নিয়ে সাত সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে লড়াই চলার পর শহরের বাসিন্দারা এমন এক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন যা তারা আগে কল্পনাও করেন নি। শহরের রাস্তায় রাস্তায় যেসব মৃতদেহ পড়ে আছে সেগুলোর ব্যাপারে তারা কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ‘আমি তিনজনকে তাদের নিজেদের বাড়ির ভেতরে কবর দিয়েছি, আর বাকিদের কবর দিয়েছে আমি যে রাস্তায় থাকি তার প্রবেশ মুখে,’ বলেন ওমর (ছদ্মনাম), ‘একটা কুকুর কামড়ে কামড়ে মৃতদেহ খাচ্ছে- ঘরের দরজা খুলে এই দৃশ্য দেখার চেয়ে এটা ভাল ব্যবস্থা।’ যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কতো মানুষ মারা গেছে এই হিসাব কেউ জানে না। কিন্তু ধারণা করা হয় এই সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি যাদের মধ্যে বহু বেসামরিক মানুষও রয়েছে। সুদানে সামরিক বাহিনীর দুটো গ্রুপের মধ্যে এই লড়াই চলছে। নিয়মিত সেনাবাহিনী লড়ছে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস বা আরএসএফ নামের একটি আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে। এই দুটো গ্রুপের মধ্যে কয়েক দফার যুদ্ধবিরতির পরেও রাজধানীর লোকজনের জন্য ঘর থেকে বের হয়ে কবরস্থানে যাওয়া অনেক বেশি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওমর কম করে হলেও ২০ জনকে কবর দিয়েছেন। ‘আমার এক প্রতিবেশী তার বাড়িতে নিহত হয়েছে। আমি কিছু করতে পারিনি। তবে তার বাড়ির মেঝের সিরামিক টাইলস উঠিয়ে সেখানে একটা কবর খুঁড়ে তাকে মাটি চাপা দিয়েছি,’ বিবিসিকে বলেন তিনি, ‘রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো গরমে পচে যাচ্ছে। আমি কী বলতে পারি? খার্তুমের কিছু কিছু এলাকা এখন কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে।’
গত মাসে ওমর খার্তুমের আল-ইমতিদাদ এলাকায় তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরে একটি রাস্তার পাশে চারজনের জন্য কবর খুঁড়েছিল। ওমর বলেন আশেপাশের এলাকার এরকম আরো কয়েকজনকে তিনি চেনেন যাদেরকেও ঠিক একই কাজ করতে হয়েছে। ‘নিহতদের অনেককে খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের কিছু এলাকায় কবর দেয়া হয়েছে। এটা একটা তেলের স্টেশনের পাশে, সবাই এই জায়গাটা চেনে। বাকিদের কবর দেয়া হয়েছে মোহামেদ নাগিব রোডের কাছের কিছু এলাকায়।’ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সুদানে ঠিক কতো সংখ্যক লোককে বাড়ির ভেতরে এবং বিভিন্ন বসতি এলাকায় কবর দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ওমর বলছেন, ‘এই সংখ্যা হবে কয়েক ডজন।’ এরকম আরেকজন হামিদ (ছদ্মনাম)। তারও অভিজ্ঞতাও একই ধরনের। বিবিসিকে হামিদ বলেছেন যে তিনি রাজধানী খার্তুম থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শাম্বাত শহরে সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্যকে কবর দিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে তারা নিহত হন। ভালো উদ্দেশ্যে এসব লাশ কবর দেয়া হলেও, এই উদ্যোগ অনিচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধের তথ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করে দিতে পারে, বলছেন ডক্টরস ইউনিয়নের প্রধান ড. আত্তিয়া আব্দুল্লাহ আত্তিয়া। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে এধরনের ‘অপেশাদার’ উপায়ে কবর দেয়ার কারণে ‘সত্য চাপা পড়ে’ যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, এর ফলে লোকজন কী কারণে নিহত হলো তার তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ড. আত্তিয়া বলছেন মরদেহকে চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোকে যথাসময়ে ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে দাফন করতে হবে। তিনি মনে করেন লোকজনের কবর দেয়ার পরিবর্তে এই প্রক্রিয়া স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, রেড ক্রস এবং সুদানি রেড ক্রসের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত। ‘নিহতদের এভাবে কবর দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। সমাধিস্থ করার এই প্রক্রিয়ায় সরকারি প্রতিনিধি, সরকারি আইনজীবী, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং রেড ক্রসের উপস্থিত থাকা দরকার। তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করাও জরুরি,’ বলেন তিনি। যে দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে, সেখানে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা কিভাবে সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন- এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এবিষয়ে বাইরের দেশের ভূমিকা রাখা উচিত। ওমর এবং হামিদ এই দুজন স্বেচ্ছাসেবীই বলেছেন নিহত ব্যক্তিকে কবর দেয়ার আগে তারা তার মুখ এবং দেহের ছবি তুলে রাখেন। তারা মনে করেন ভবিষ্যতে তাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যাপারে এসব কাজে লাগতে পারে। ড. আত্তিয়ার সমালোচনা স্বত্বেও, লোকেরা বলছেন সরকারি স্বাস্থ্য অবকাঠামো ভেঙে পড়ার কারণে এভাবে কবর দেওয়া ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই। সোশাল মিডিয়াতে ১১ মে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যাতে দেখা যায় দুজন সুদানি নারী চিকিৎসক ম্যাগডলিন এবং মাগদা ইউসেফ ঘালিকে তাদের বাগানে কবর দেয়া হচ্ছে। তাদের ভাই, যার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না, এক ভিডিও কলে বিবিসিকে তিনি বলেছেন তার দুই বোনকে বাড়ির ভেতরে কবর দেয়াই ছিল ‘একমাত্র সমাধান’। ‘তাদের লাশ প্রায় ১২ দিন ধরে পড়ে ছিল,’ কাঁদতে কাঁদতে বলেন তাদের ভাই, ‘প্রতিবেশীরা জানায় যে আমাদের বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ আসছে। তখন লোকজন বাগানে একই কবরে তাদের দুজনকে কবর দিতে এগিয়ে আসে।’ রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ সেখান থেকে তুলে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ রেড ক্রস এবং সুদানি রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে কাজ করছে। তবে যেসব দল এই কাজ করছে যুদ্ধের কারণে তাদের এসে পৌঁছাতে বিলম্ব ঘটছে। লোকজন নিহতদের মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে কবর দেয়ার পাশাপাশি যুদ্ধের মধ্যে তারা নিজেরাও বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। এরকম সহিংস পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সম্ভাবনাও সুদূর পরাহত বলেই মনে হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দনিয়া কলেজ ছাত্রদলের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ
আদমদীঘিতে তালগাছের ডাল কাটতে গিয়ে বিদ্যুতের তারে জরিয়ে ১ ব্যাক্তির মুত্যু হয়েছে
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
সোনারগাঁওয়ে বিএনপির ৩১ দফা বাস্থবায়নে তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা শীর্ষক আলোচন সভা
বাকৃবির বর্ষ পঞ্জিকায় ফুটে উঠেছে জুলাই বিপ্লব
জাতীয় পার্টির রাজনীতি দেশ ও জনগণের কল্যাণে: সাবেক ভিপি আবু আহমেদ
কাউখালীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
ফোফানাকে নিয়ে চিন্তিত চেলসি কোচ
ফরিদপুরে ২৪ ঘন্টা দুটি হত্যা মধুখালি সাংবাদিকের মা- বাবা- ও গৃহপরিচারিকাকে কুপিয়ে গুরতর জখম
স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে ইবির ভবনে তালা
পেকুয়ায় বারবাকিয়া টু রাজাখালী সংযোগ সেতুর নির্মাণ কাজ ফের শুরু
মোরেলগঞ্জে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থীরা সনদ ও ভাতা বঞ্চিত
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার
বাবা-চাচা-মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন, প্রশ্ন সারজিসের
ময়মনসিংহসহ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে ওএসডি
অবশেষে কাজের সমাপ্তি হলো সিকৃবির নান্দনিক অডিটোরিয়ামের
শ্বশুরকে সৌদি প্রবাসীর কাফনের কাপড় উপহার, রাগ করে স্বামীকে স্ত্রীর তালাক
আটঘরিয়ায় জালসায় তুচ্ছ ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বেশি টাকা গুণলেই গোপনে মিলছে সার
ঘোড়াঘাটে পাওয়ার টিলার ট্রলি চালাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু