নিরস্ত্র মানুষের উপর নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরাইল
০৪ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
অবৈধ ইসরাইলি সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রাসনের মুখে জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে গেছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। সোমবার দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে কথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এতে ভারী অস্ত্রসস্ত্রসহ এক থেকে দুই হাজার সেনা অংশ নেন। এ সময় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র যোদ্ধাদের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয় ইসরাইলি বাহিনীর। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলিদের হামলায় শরণার্থী শিবিরে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে শিশুও রয়েছে। অপরদিকে আহত হয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি মানুষ। জেনিনের উপগভর্নর কামাল আবু আল-রব বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩ হাজার মানুষ শরণার্থী শিবির ছেড়েছেন।’ তিনি জানিয়েছেন, পালিয়ে যাওয়াদের জেনিনের স্কুল ও অন্যান্য আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। এ শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্টও ৩ হাজার মানুষ পালিয়ে যাওয়ার খবর জানিয়েছে। সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, পালিয়ে যাওয়াদের সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ ইসরাইলিরা জানিয়েছে, তারা আরও কয়েকদিন তাদের অভিযান চালাতে পারে। অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর এক বড় আকারের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত আহতের সংখ্যা ৫০-এরও বেশি। জেনিনে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানের প্রতিবাদে দখলকৃত পশ্চিমতীরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম তীরের দোকানপাট ও অফিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১৪,০০০ ফিলিস্তিনির বাসস্থান এই জেনিন ক্যাম্পটির ওপর ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী এবং এর পর হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে - যার ফলে এখন রাস্তায় রাস্তায় বন্দুক-যুদ্ধ হচ্ছে। ফিলিস্তিন রেডক্রসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে এখনো পর্যন্ত তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে স্থানীয় হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকই অসুস্থ এবং প্রবীণ। ইসরাইলের ভাষ্য হচ্ছে, এই অভিযানের মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ নিশানা করা হচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের নিরস্ত্র মানুষের উপর আবারো নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরাইল। জাতিসংঘ বলছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অভিযানের কারণে শরণার্থী শিবিরের বড় এলাকাজুড়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য যারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না বলে জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সাথে ব্যাপক ‘গুলি বিনিময়’ হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলছে তারা জেনিন এলাকায় ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোর’ ওপর আঘাত হানছে এবং ২০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ শেতায়েহ বলেছেন, ইসরাইল ক্যাম্পটি ধ্বংস করে এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে। জেনিনের বৃহৎ শরণার্থী শিবিরটির কেন্দ্রস্থলে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপর ড্রোন হামলা হয়েছে। সেখান থেকে বিবিসির ইয়োলান্দে নেল জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় আক্রমণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। তিনি জানান, নিয়মিত বিরতিতে জোরালো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আরো শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ও উড়ন্ত ড্রোনের আওয়াজ। ইসরাইলি বাহিনী এ পর্যন্ত সাত জন ফিলিস্তিনি নিহত হবার কথা বলেছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু সাধারণ ফিলিস্তিনিরা নয় বরং জেনিনে এবং শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত জঙ্গি গ্রুপগুলো যারা তার ভাষায় ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। জেনিনের কিছু রাস্তায় ফিলিস্তিনিরা টায়ার পুড়িয়ে ইসরাইলি অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ইসরাইলি সামরিক জীপের দিকে তরুণ ফিলিস্তিনিরা পাথর ছুঁড়লেই সৈন্যরা পাল্টা গুলি করছে। ইয়োলান্দে নেল জানাচ্ছেন, প্রচ- বন্দুক যুদ্ধের মধ্যে জেনিন ব্রিগেড নামে একটি ফিলিস্তিনি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা তাদের শেষ নিঃশ্বাস ও বুলেট থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। কয়েকটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপ মিলে এই জেনিন ব্রিগেড গঠিত বলে জানা যায়। গত এক বছরের মধ্যে জেনিনের শরণার্থী শিবিরের ওপর একাধিক ইসরাইলি সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, এবং ইসরাইলিদের লক্ষ্য করে বেশ কিছু গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় এই এলাকাটিতে ব্যাপক গোলযোগ হয়। ২০০২ সালের এপ্রিলে ইসরাইলি বাহিনী এখানে এক পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালায় যাতে কমপক্ষে ৫২ জন ফিলিস্তিনি এবং এবং ২৩ জন ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দিল্লিতে দূষণ-কুয়াশার কারণে ভ্রমণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত ,যাত্রীদের ভোগান্তি
বাগেরহাটে লখপুর গ্রুপের কর্মহীন শ্রমিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
নিকলীতে দশ কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
‘গণঅভ্যুত্থানে আহত ১১ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, আরও যাবেন ২৮ জন’
১০ কোটিতে মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা টিউলিপের চাচীর
জামিন বাতিল করে সাদপন্থিদের কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি
পাকিস্তানকে ছেড়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে তালেবান?
টাঙ্গাইলে জিয়া মঞ্চে ৩১ দফা নিয়ে লিফলেট বিতরণ
পলাতক ওসিকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি, অভিযানে সেনাবাহিনী-পুলিশ-র্যাব
কানাডার লিবারেল পার্টি ৯ মার্চ নতুন নেতা নির্বাচন করবে
স্বৈরাচারের সহযোগীদের রাজনৈতিক দলে ঢোকালে প্রতিরোধ করা হবে : ড. রিপন
দশ বছর পর ফের পুরষ্কৃত মালালা, ফিরছেন পাকিস্তান
ভারতে এক মাসে এক গ্রাহক পেলেন ২১০ কোটির বিদ্যুৎ বিলের কপি
সাতক্ষীরায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে কিশোরী নিহত
সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরী জনগণ, রাজনৈতিক দলের কোনো ভূমিকা নেই
চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, মৃদু শৈত্য প্রবাহের কবলে গোট জেলা
খলনায়ক এআই, একধাক্কায় বেকার হতে চলেছেন ২ লাখ কর্মী
মক্কায় বন্যার পানিতে ভেসে গেল গাড়ি, ৪ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানে অস্ত্রের মুখে ১৭ সরকারি কর্মীকে অপহরণ
যুক্তরাষ্ট্রে দাবানল নেভানোর কাজে এবার নামানো হলো কারাবন্দিদের