বৈশ্বিক সরকারি ঋণ সর্বকালের সর্বোচ্চে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৫ জুলাই ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

বৈশ্বিক সরকারি ঋণ নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মহামারীর অভিঘাত মোকাবেলা ও পরবর্তী অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে কাটিয়ে উঠতে ঋণের মুখাপেক্ষী হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো, যার প্রভাব পড়েছে সার্বিক অর্থনীতিতে। কেবল ২০২২ সালেই বৈশ্বিক সরকারি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯২ ট্রিলিয়ন ডলার। এমনটাই উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। দুই দশকে বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ঋণ বেড়েছে পাঁচ গুণ। বিপরীতে ২০০২ সালের পর জিডিপি বেড়েছে মাত্র তিন গুণ। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দাবি করেছেন, বাজার পরিস্থিতি এখনো ধকল কাটিয়ে ওঠেনি। কোনো কোনো দরিদ্র দেশ বাধ্য হয়েছে ঋণ করতে। বৈশ্বিক সরকারি ঋণের ৩০ শতাংশের হিস্যাতেই রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। তার ৭০ শতাংশ আবার ভারত, চীন ও ব্রাজিল। ৫৯টি উন্নয়নশীল দেশেই জিডিপির বিপরীতে ঋণের হার ৬০ শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ দেশগুলো উচ্চমাত্রার ঋণের জালে আবদ্ধ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ঋণকে বাড়তি বোঝা আকারে দেখা হয়। নানা সীমাবদ্ধতা, ঋণ খরচ বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় প্রভাবিত হয়েছে অর্থনীতি। যদিও ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আরকিটেকচার থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় অর্থায়ন করে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল ও সবার জন্য সুযোগ সম্প্রসারিত নয়। ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই অনেক উদীয়মান দেশের ১০ শতাংশ রাজস্ব চলে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আফ্রিকার ক্ষেত্রে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় কোনো কোনো দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের চেয়ে বেশি। ৩৩০ কোটির বেশি মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, যাদের সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের চেয়ে দেশীয় ঋণে সুদহার বহনে ব্যয় করে বেশি।’ দেশগুলোর সামনে নতুন এক সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারা কি এখন ঋণ নিয়ে ভাববে নাকি তাদের জনগণ। সুদহার বৃদ্ধি, খরচ বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়গুলো সরকারকে বাধ্য করে দেশীয় উন্নয়নে মনোযোগ দেয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধে। প্রতিবেদন বলছে, ১৯টি দেশ শিক্ষা খাতে ব্যয়ের চেয়ে ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ বেশি রাখে। অন্যদিকে ৪৫টি দেশ ঋণ পরিশোধে বেশি ব্যয় করে স্বাস্থ্য খাতের চেয়ে। উন্নয়নশীল দেশের বেসরকারি ঋণদাতাদের ৬২ শতাংশই ব্যাংক ও হুন্ডি। ২০১০ সালে আফ্রিকায় ঋণদাতার হার ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২১ সালে তা ৪৪ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে। লাতিন আমেরিকায় ঋণদাতাদের হার সবচেয়ে বেশি। জাতিসংঘ বহুপক্ষীয় দাতা সংস্থাকে তাদের অর্থায়ন নীতিতে ইতিবাচক সংস্কারের কথা বলেছে। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যাপারেও আলোচনা উঠেছে। কমিশন ঋণগ্রহীতা দেশের ওপর অতিরিক্ত খরচ না চাপিয়ে অর্থায়নকে ঋণপীড়িত দেশের জন্য কল্যাণকর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রসঙ্গ উঠেছে। ঋণসংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলা করাও প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে। জি২০ সদস্য দেশগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ ও নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয় জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। যদিও কোনো ধরনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়নি। ২০২০ সালের অক্টোবরে জি২০ভুক্ত দেশগুলো বৈশ্বিক ঋণ মোকাবেলার জন্য বিশ্বের নীতিমালা গ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে চীনের মতো দেশগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জাতিসংঘের মহাসচিব দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় আফ্রিকার দেশগুলোয় ঋণগ্রহণের ক্ষেত্রে গড়ে চার গুণ বেশি ফেরত দিতে। ইউরোপীয় ধনী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে তা প্রায় আট গুণ। ৫২টি দেশের মধ্যে ৪০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশই ভয়াবহ ঋণের ঝুঁকিতে। সুদহারে পার্থক্যই বলে দেয় আন্তর্জাতিক পরিম-লে অর্থায়ন কতটা বৈষম্যপূর্ণ। সে ব্যয় উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাড়তি বোঝা হয়ে ওঠে। বর্তমান দুনিয়ায় উন্নত দেশগুলোর অর্ধেকই দেশের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রফতানি আয় ব্যয় করে ঋণ মেটানোর জন্য। রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

৯ দফা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ কতদূর?

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

মর্গের দুই লাশের দাবিদার দুই পরিবার,

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

আইনজীবীকে হত্যার হত্যাচেষ্টা: শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের মামলা এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

তথ্য থাকলেও সন্দেহজনক লেনদেনে দেরিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বিএফআইইউ!

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

সাবেক এমপি হেনরীর ৫৬ কোটি টাকার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ,

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে উৎকণ্ঠায় নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

দেশে এইচএমপি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান বাহিনীর সদস্যদের অপসারণে আইনি নোটিশ

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

চকরিয়ায় পুলিশ-সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি: বসতবাতিতে আগুন, ওয়ার্ড মেম্বারসহ আহত ২

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

স্বাধীন সামরিক বাহিনী সংস্কার কমিশন গঠনের প্রস্তাব

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক