বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও চীনে কেন কমছে?

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩১ পিএম | আপডেট: ১৩ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম

বিশ্বের অনেক দেশেই যখন মূল্যস্ফীতি একটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেসময় চীনে দেখা যাচ্ছে এক উল্টো অবস্থা। মুদ্রাস্ফীতির হার কমতে কমতে ঋণাত্মক পর্যায়ে চলে গেছে সেখানে। চীনে দুই বছরের মধ্যে প্রথম এমন পরিস্থিতি হয়েছে যখন আগের বছরের তুলনায় কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স বা মূল্য সূচক ০.৩ শতাংশ কমে গেছে। দেশটির আমদানি-রপ্তানির চিত্রও খুব খুব একটা ভালো দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভোক্তার চাহিদা বাড়াতে চীনের সরকার বেশ চাপে পড়বে।

যখন চাহিদার কমতির কারণে পণ্য বা সেবার দাম আগের চেয়ে পড়ে যায় তখন সেটাকে বলা হয় ডিফ্লেশন বা মূল্য-সংকোচন। মূল্যস্ফীতি হলে কোনও কিছু কিনতে বেশি দাম দেয়া লাগে, চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের তুলনায় অর্থের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। আর মূল্যসংকোচন হচ্ছে তার উল্টোটা - এতে দ্রব্য বা সেবার দাম কমে যায়, অর্থের মূল্য বাড়ে, অর্থাৎ একই দামে আগের চেয়ে বেশি জিনিসপত্র কেনা যায়। এর পেছনে অনেক ধরণের কারণ থাকে। যেমন ভোক্তার চাহিদা কমে যাওয়া, কঠোর মুদ্রানীতির ফলে অর্থের যোগান কমে যাওয়া, মানুষের ব্যয় কমিয়ে সঞ্চয়ে আগ্রহী হওয়া, উৎপাদন খরচ কমে উৎপাদনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ে মানুষের আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া বা অর্থনৈতিক মন্দা - এমন অনেক বিষয়।

কোভিড মহামারির সময়ে এমন পরিস্থিতি অনেক দেশেই হয়েছে। কারণ সেসময় মানুষের হাতে টাকা থাকলেও খরচের সুযোগ কমে গিয়েছিলো। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর মানুষ খরচ করতে শুরু করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার প্রেক্ষিতে আরও বেড়ে যায় জীবনযাত্রার ব্যয়। সেখানে চীনের ক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটার পেছনে দেশটির অর্থনীতিতে মানুষের চাহিদার মাত্রা ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকার দিকে নজর দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদ ও অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি চায়না সেন্টারের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জর্জ ম্যাগনাস। সোজা ভাষায় - মানুষ সেখানে বেশি খরচ করতে চাচ্ছে না, তাদের চাহিদা কমে গেছে। ম্যাগনাসের মতে ‘চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় দামের দিকটাও দুর্বল হয়ে গেছে।’

মহামারীর কঠোর বিধিনিষেধ থেকে বের হয়ে আসার পরও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবের দিকটার কথাও উঠে আসছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে বিভিন্ন উন্নত দেশে মহামারীতে সরকার জনগণকে আর্থিক নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছে, কিন্তু চীনে মানুষকে নিজের ভরসাতেই চলতে হয়েছে। দেশটির সরকারের বরাদ্দ সুযোগ-সুবিধা মূলত উৎপাদন খাতের জন্য ছিল। ফলে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পরও অর্থনীতিবিদেরা যেমন আশা করেছিলেন, মানুষ সেভাবে খরচ করেনি। মজুরি বা পেনশনের দিক দিয়ে মানুষ তেমন উন্নতি দেখছে না, চাকরির বাজারে রয়েছে অনিশ্চয়তা, মানুষের খরচের ব্যাপারে আগ্রহ কমে গেছে। ধীরগতিতে বাড়তে থাকা অর্থনীতিতে মানুষের আস্থা কমে গেছে। চীনের মূল্য সূচকের পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল শূকরের মাংসের দাম ৭.২ শতাংশ থেকে একেবারে ২৬ শতাংশ কমে যাওয়া, কারণ একদিকে মানুষ কম খরচ করছিল, সে তুলনায় সরবরাহ অনেক বেশি ছিল। মানুষের কমতে থাকা চাহিদাকে উদ্বেগজনক হিসেবে দেখছেন হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক অ্যালিসিয়া গার্সিয়া-হেরেরো। তার মতে ‘মূল্য-সংকোচন চীনকে সাহায্য করবে না। ঋণের বোঝা আরও ভারী হয়ে উঠবে। এসব কিছুই ভালো খবর নয়।’ হংকং-এর একজন অর্থনীতিবিদ জিয়া চুন রয়টার্সকে বলছেন যে তার ধারণা চীনের এই মূল্য সংকোচন ছয় মাস থেকে এক বছর স্থায়ী হতে পারে। বিশ্বজুড়ে যেসব পণ্য বিক্রি হয় তার একটা বড় অংশ আসে চীন থেকে। যদি চীনে মূল্য-সংকোচন দীর্ঘায়িত হয় - তাহলে সেটা অন্যান্য দেশের জন্য সুফল এবং কুফল দুটাই বয়ে আনতে পারে। ভালো সংবাদ হচ্ছে, তখন অন্যান্য দেশ তুলনামূলক কম দামে চীনের পণ্য কিনতে পারবে, যেটা সেসব দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। আর খারাপ দিক হতে পারে, সেসব দেশের উৎপাদকদের এটা হুমকিতে ফেলবে। বাজারে কম দামে চীনা পণ্য বিক্রি হলে স্থানীয় পণ্য বা ব্যবসায়ে এটা আঘাত করতে পারে, তাতে ব্যবসায় বিনিয়োগ কমবে এবং কর্মসংস্থানের জায়গাও কমে যাবে। সূত্র : বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

পণ্যবাহী দুটি কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি
পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার
রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর
রুপির দাম তলানিতে, নিয়ন্ত্রণে যে সিদ্ধান্ত নিলো ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএফডির সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চান না
আরও

আরও পড়ুন

৩৯ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ উৎপাদন হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন চাউল

৩৯ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ উৎপাদন হবে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪ মেট্রিক টন চাউল

৪ আগস্টের পর মাজার-দরগাহে হামলা ভাঙচুর: গ্রেপ্তার ২৩

৪ আগস্টের পর মাজার-দরগাহে হামলা ভাঙচুর: গ্রেপ্তার ২৩

৭ ম্যাচে ৭৫২ রান, গড় ৭৫২- অবিশ্বাস্য করুনে মুগ্ধ টেন্ডুলকারও

৭ ম্যাচে ৭৫২ রান, গড় ৭৫২- অবিশ্বাস্য করুনে মুগ্ধ টেন্ডুলকারও

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

হবিগঞ্জে সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে বিজিবি

পণ্যবাহী দুটি কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি

পণ্যবাহী দুটি কার্গো আটক করেছে আরাকান আর্মি

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

আশুলিয়ায় কৃষক দলের কম্বল বিতরণ

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই ইরান-রাশিয়ার

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

আ.লীগের আমলে উন্নয়নের গালগপ্প শোনালেও ভেতরে ছিল ফাঁপা : উমামা ফাতেমা

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

লঞ্চ ব্যবসায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মায়ের সংবাদ সম্মেলন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

কিশোরগঞ্জে ‘তারুণ্যের মেলা’র উদ্বোধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

সুন্দরগঞ্জে গণমাধ্যম কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন স্থায়ী সংস্কার: এইচআরডব্লিউ'র প্রতিবেদন

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

কক্সবাজারে ছাগলনাইয়া সিএনজি শো-রুম মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সংবর্ধনা

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

ওপারে ভালো থাকবেন ডেভিড লিঞ্চ

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

হাজারীবাগে ছাত্রী হোস্টেল থেকে শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

গুপ্ত হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার ছিলো শেখ হাসিনার অত্যন্ত প্রিয়: রিজভী

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

জনতার বাজার মনোপলি সিন্ডিকেটের ঊর্ধ্বে থাকবে: ঢাকা জেলা প্রশাসক

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

ভ্যাট না বাড়িয়ে সরকারকে খরচ কমানোর পরামর্শ বিএনপির

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন এখন ইরি-বোরোয়

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের ২০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর