মিয়ানমারে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ : এক বিধবার কষ্টের গল্প
১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম
২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে,সামরিক জান্তা বাধ্যতামূলকভাবে সেনা নিয়োগের ঘোষণা দেয়,যার ফলে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ পুরুষ ও নারীকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।এর মধ্যে চাও সু নামে এক বিধবা তার স্বামীকে হারিয়েছেন।তার স্বামী সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। তার হৃদয়বিদারক গল্পটি মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে। চাও সু, ২৫ বছর বয়সী এক বিধবা,মার্চ মাসে তার স্বামীকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার পর শেষবারের মতো তাদের দেখা হয়েছিল।তিনি জানান তার স্বামীকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, এবং পরে তিনি কেরেন রাজ্যে যুদ্ধের সম্মুখভাগে গিয়ে নিহত হন।চাও সু আরও বলেন, আমরা সবসময় দরিদ্র ছিলাম এবং সংগ্রাম করতাম, কিন্তু তিনি ছিলেন আমার জীবনের শক্তি। তার স্বামীকে হারানোর পর,এখন তিনটি ছোট শিশুকে নিয়ে একা অসহায় অবস্থান দিন যাপন করছেন। তার স্বামীর যুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর তার জীবন পুরোপুরি বদলে যায়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করে,যেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বলা হয়।সামরিক জান্তা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং দেশজুড়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে একদিকে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং অন্যদিকে সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করেছে।এপ্রিল মাসে প্রথম প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়, এবং এরপর থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা নাগরিকদের যুদ্ধের অগ্রভাগে পাঠানো হয়। চাও সু জানিয়েছেন, তার স্বামী যখন সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান,তখন তারা প্রথমে কিছু টাকা পান,তবে পরে কোনো সাহায্য কিংবা বেতন আর পাননি। জান্তা কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে, নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও,বাস্তবে প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে আছেন আরো অনেক পরিবার,যারা তাদের প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পান না।সোসো আয়ে নামক এক বিধবা বলেন,তিনি তার ছেলে সম্পর্কে ৬ মাস ধরে কোনো খবর পাননি,যে কিনা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিল। এদিকে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা বেড়ে গেছে।ক্যান হতো লুইন নামে এক তরুণ সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে পালিয়ে যান।তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত কঠিন, এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে, কেউ যদি পালিয়ে যায়, তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু‘ তিনি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যান এবং পরে প্রতিবিপ্লবী গ্রুপে যোগ দেন। তার মতে,অনেক তরুণ বিক্ষোভের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন,কারণ তারা জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। মিয়ানমারের মহিলারাও এই পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হচ্ছেন। যুউযুউ নামক এক তরুণী, যিনি চীনা ভাষায় অনুবাদক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন,সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।তিনি বলেন, ্রআমার লক্ষ্য এখন একটাই, সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো,।” একদিকে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা সেখানে অল্প মজুরিতে শ্রমের কাজ করছেন।মিন মিন নামক এক প্রকৌশলী, যিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন,তিনি জানান, আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমি অবৈধভাবে থাকতে হবে,আর তখন আমি কোথাও কাজ পাবো কিনা জানি না। চাও সু বর্তমানে গ্রামে নানা কাজ করে কোনোরকমে তিনটি শিশুকে লালন-পালন করছেন, তবে তার আয় তা-ও পর্যাপ্ত নয়। বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রিয়েলিটি শো’র প্রধান বিচারক নাজনীন হাসান খান
অনেক দিন পর সায়ানের একক কনসার্ট
ছাত্র আন্দোলনে ফারুকী ভাইকে মাঠে দেখিনি-হিরো আলম
ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তিন চোর আটক
আসিফের গানের মডেল গণবিপ্লবের ভাইরাল কন্যা সিঁথি
গাজায় যুদ্ধ শেষ করার সময় এসেছে : অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন
বন্য হাতির সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ উপদেষ্টা
সরকারি কৌঁসুলির নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে পটুয়াখালীতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল
সরকারি অফিসে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকদের দিয়ে কাজ করানোর পর বখশিশ দেওয়া প্রসঙ্গে?
শিক্ষা প্রশিক্ষণের সর্বস্তরে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক
আল্লামা আলহাজ¦ আবুবকর সিদ্দিকি ফুরফুরাভীর জীবন ও কর্ম
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আবারও সিন্ডিকেটের আশঙ্কা রামরুর আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ
আখেরাতের বাসিন্দা মানুষ মুসাফির দুনিয়ায়
হযরত রাসূল (সা) ঃ আধার রাতে,আলোর প্রদীপ
প্রশ্ন: মসজিদে পানাহারের শরয়ী বিধান কি?
নোয়াখালীতে বিএনপির তিন নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি
পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে জুলাই বিপ্লবে আহতদের অবরোধ
ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলমান শতভাগ অনলাইনে এলডি ট্যাক্স পরিশোধ কার্যক্রমকে ফলপ্রসূ করতে ভূমি মালিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর তাগিদ ভূমি উপদেষ্টা
জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে এলডিসি’র বৈঠকে যা বললেন ড. ইউনূস
মাহফুজের সাহসী উচ্চারণ: নেটিজেনদের দৃষ্টিভঙ্গের প্রতিফলন