চীনে তরুণরা কেন ‘পূর্ণকালীন সন্তান’ হতে চাকরি ছাড়ছে?
১৮ জুলাই ২০২৩, ০১:০০ পিএম | আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৩, ০১:০০ পিএম
কাজের চাপে নাজেহাল, অতিরিক্ত খাটুনিতে ক্লান্ত জুলি এপ্রিল মাসে তার চাকরিবাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন বাবামায়ের কাছে ‘পূর্ণকালীন সন্তান’ হিসাবে ঘরে থাকতে। বেইজিংয়ে তিনি কম্প্যুটার গেম তৈরির কাজ করতেন।
এখন ২৯ বছর বয়সী জুলির সারাটা দিন কাটে বাসন ধুয়ে, বাবামায়ের জন্য রান্না এবং সংসারের আরও নানা কাজ করে। জুলির বাবামা তাকে প্রতি দিনের হাতখরচাটা জোগান। তারা জুলিকে মাসে দু’হাজার ইউয়ান (২৮০ ডলার) বেতন দিতে চেয়েছিলেন। জুলি নেননি। জুলি এই মুহূর্তে চাইছেন প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রমের হাত থেকে মুক্তি। ‘আমি ছিলাম আদতে একটা লাশ, যেটা শুধু হেঁটেচলে বেড়াত,’ তিনি বললেন।
চীনে একদিকে কর্মস্থলে অমানুষিক শ্রম, অন্যদিকে চাকরির বাজারের নিদারুণ হাল- এই দুই কারণে দেশটির তরুণ সমাজ অভিনব জীবন বেছে নিচ্ছে। জুলির মত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা চীনে ক্রমশ বাড়ছে যারা নিজেদের নাম দিয়েছে 'পূর্ণকালীন সন্তান’। এরা বাবা-মায়ের আরামের সংসারে ফিরে যেতে চাইছে- হয় অমানুষিক পরিশ্রমের পর কিছুদিন আরামআয়েষ করে দিন কাটাতে, নয়ত বাজারে চাকরি খুঁজে হন্যে হয়ে কিছুই না জোটাতে পেরে।
চীনে তরুণ প্রজন্মকে সবসময় বলা হয়েছে যে সাফল্য পেতে হলে, জীবনে জিততে হলে লেখাপড়ার জন্য অনেক খাটতে হবে, কঠিন পরিশ্রম করে ভাল ডিগ্রি পেতে হবে। এখন সেই প্রজন্ম মনে করছে জীবনযুদ্ধে তারা পরাজিত- তারা একটা যাঁতাকলে আটকা পড়েছে। মে মাসে প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশটিতে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের বেশি কর্মহীন। ২০১৮ সালে কর্তৃপক্ষ এই তথ্য প্রকাশ শুরু করার পর থেকে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেকারত্বের হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় চাকরির বাজারের চিত্র এই পরিসংখ্যানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
তথাকথিত এই ‘পূর্ণকালীন সন্তানদের’ অনেকেই বলেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদে ঘরে বসে থাকতে চান না – এটা নিতান্তই সাময়িক – তাদের জন্য এটা শুধুই আরাম করার জন্য কিছুটা সময় বেছে নেয়া, সেই সময় সামনের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে ভাবা এবং ভাল চাকরি খোঁজা। কিন্তু এটা বলা যত সহজ, কাজটা তত সহজ নয়। জুলি গত দু সপ্তাহে এপর্যন্ত চাকরির সন্ধানে ৪০টির বেশি আবেদনপত্র পাঠিয়েছেন। ইন্টারভিউতে ডাক পেয়েছেন মাত্র দু জায়গা থেকে। ‘চাকরি ছাড়ার আগে কাজ পাওয়া ছিল কঠিন, এখন চাকরি ছাড়ার পর তা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে,’ তিনি বলছিলেন।
চীনে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখার ব্যাপারটা এতটাই কঠিন যে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা শ্রম দিয়ে দম ফুরিয়ে যাওয়া প্রাপ্তবয়স্করাই যে দেশটির “পূর্ণকালীন সন্তান” হয়ে উঠছেন, তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। চীনে কর্মসংস্কৃতিকে প্রায়ই ব্যাখ্যা করা হয় প্রচলিত “৯৯৬” নামে – অর্থাৎ সেখানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় সপ্তাহে ৬ দিন।
চেন ডুডু-ও একজন “পূর্ণকালীন কন্যাসন্তান” হয়েছেন। এবছরের গোড়ার দিকে আবাসন শিল্প খাতে তার চাকরি থেকে তিনি ইস্তফা দেন। খাটতে খাটতে ক্রমশ তার দম ফুরিয়ে আসছিল এবং কাজে তার যথেষ্ট মূল্যায়নও করা হচ্ছিল না। ২৭ বছর বয়সী চেন ডুডু বলছিলেন, বাসভাড়া দেবার পর তার হাতে “খরচের অর্থ আর প্রায় কিছুই থাকত না”। যখন তিনি দক্ষিণ চীনে তার বাবামায়ের বাড়িতে ফিরে যান, চেন বলেন, তিনি একজন “অবসরপ্রাপ্তের মত জীবন কাটাচ্ছিলেন”। কিন্তু ধীরে ধীরে উদ্বেগ তাকে গ্রাস করতে শুরু করে। তিনি বলেন মাথার ভেতর তিনি স্পষ্ট দুটো কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছিলেন: “একটা কণ্ঠ বলছিল এধরনের বিশ্রাম একটা বিরল বিলাসিতা, কাজেই এটা উপভোগ করে নাও। অন্য কণ্ঠটা বলছিল এরপর কী করবে সেটা ভাবতে শুরু করো।” চেন এরপর তার নিজের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি বলেন: “আমার ওই বিশ্রামের দিনগুলো যদি আরও লম্বা হতো, আমি কিন্তু সত্যিই পরজীবী হয়ে যেতাম।”
জ্যাক ঝেং সম্প্রতি চীনের বিশাল প্রযুক্তি কোম্পানি টেনসেন্ট থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি বলছিলেন তাকে প্রতিদিন কাজের সময়ের বাইরে কাজ সংক্রান্ত প্রায় ৭০০০ টেক্সট মেসেজের উত্তর দিতে হতো। ৩২ বছর বয়সী এই প্রযুক্তি কর্মী বলছেন এটা “অদৃশ্য একটা ওভারটাইম” – কারণ আপনার কাছে কাজ চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু তার বিনিময়ে কোন অর্থ দেয়া হচ্ছে না। অবশেষে তিনি কাজ ছাড়তে বাধ্য হন কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে তিনি ফলিকিউলাইটিস রোগের শিকার হন। এটা একধরনের চর্মরোগ – মানসিক চাপ থেকে এই রোগে চুলের গোড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয়।
তবে ঝেং এরপর একটা ভাল চাকরি পেয়েছেন, যদিও তিনি বলছেন তার আশেপাশে অন্যরা তার মত ভাগ্যবান হননি। অনেকেই মনে করেন তারা তথাকথিত “৩৫-এর অভিশাপ”এর শিকার। চীনের মানুষ ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করে যে দেশটির চাকুরিদাতারা ৩৫এর বেশি বয়সীদের কাজ দিতে চায় না- তারা বরং চায় তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কারণ তাদের ওপর “খরচ কম” তাদের বেতন দিতে হয় কম। তিরিশের মধ্য কোঠায় যাদের বয়স তাদের জন্য এটা বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ - একদিকে বেশি বয়সের কারণে বৈষম্য অন্যদিকে চাকরির বাজারে মন্দা – যা তাদের জন্য শাঁখের করাত। তাদের মাথার ওপর হয় রয়েছে বাড়ি কেনার জন্য নেয়া বন্ধকের বোঝা, নয়ত এই বয়সে কেউ কেউ বিয়ে করে সংসার পাতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন
বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে
সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে
এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন
বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়
আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি
মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ
বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার হিসাবে পুরস্কার পেলেন, আলোকচিত্রী ও সাংবাদিক মুগনিউর রহমান মনি
রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
বেড়া কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের অফিসিয়াল ও উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা
না ফেরার দেশে নির্মাতা রায়হান রাফির বাবা
এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা, গ্রেপ্তার ২
ছাগলনাইয়ায় খালে ভাসছিল নারীর অর্ধগলিত লাশ
ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় ৫ দিনে গাজায় নিহত ৭০ শিশু
ঘরে বসে মাত্র ১০ দিনেই মিলবে থাইল্যান্ডের ভিসা
মিয়ানমারের কাচিনে জান্তার বিমান হামলা, শিশুসহ নিহত ১৫
আজ বায়ুদূষণে শীর্ষে ঢাকা