ইমরান খানের গ্রেপ্তারে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যে প্রভাব পড়বে
০৬ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৫ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
তোশাখানা মামলায় ইসলামাবাদের দায়রা আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের চেয়ারম্যান ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পর পরই লাহোরে জামান পার্কে তার বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের এ সিদ্ধান্ত আকস্মিক বা অভূতপূর্ব ছিল না, কারণ চলতি বছরের ৯ মের পর আবারো তাকে যে কোনও সময় গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। ইমরান খান নিজেও বারবার বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তিনি সেজন্য প্রস্তুতও। তবে দায়রা জজ আদালতের সিদ্ধান্তের পর ইমরান খানের তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিতভাবেই অনেককে অবাক করেছে। আদালতের সিদ্ধান্ত এবং গ্রেপ্তার একই সঙ্গে হয়েছে মনে হলেও তাকে গ্রেপ্তারের পর দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তার তার রাজনীতি ও দলের ভবিষ্যতে কী প্রভাব ফেলবে? এই গ্রেপ্তারে পিডিএম পার্টি অর্থাৎ পাকিস্তানের গণতন্ত্রপন্থী ৩২টি দলের জোটের কী লাভ হবে? জোটভূক্ত দলগুলো কি পিটিআইয়ের ভোটার এবং সমর্থকদের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হবে? সেই সঙ্গে ইমরান খানের গ্রেপ্তারে কি রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে আঙুল ওঠার সম্ভাবনা আছে?
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের মেয়াদ শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি, ফলে এর মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আদালতের রায়ের পর ইমরান খানের আকস্মিক ও তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক রাসূল বখশ রাইস। "মনে হচ্ছে গ্রেপ্তার আগে হয়েছে, রায় পরে এসেছে। অর্থাৎ খুবই তাড়াহুড়ো করা হয়েছে।' ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে রাসূল বখশ রইস 'তামাশা' বলে অভিহিত করেছেন। সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক সালমান ঘানি পাকিস্তানের ভেতরে ঘটা ঘটনাগুলোকে একটি বৃত্তের সঙ্গে তুলনা করেন, যা 'যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখানেই শেষ হচ্ছে।' তিনি মনে করেন, ইমরান খানের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, সেটা হচ্ছে তিনি এই রাজনৈতিক আচরণ এবং পরিণতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের ফল দেশটির রাজনীতিবিদদের ভোগ করতে হবে বলে মনে করেন মি. ঘানি।
এই গ্রেপ্তার ইমরান খানের ব্যক্তিত্ব ও রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে? এ প্রশ্নের জবাবে রাসূল বখশ রাইস বলেন, আজকের গ্রেপ্তারে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে। ‘তারা (পিটিআই) আরও শক্তিশালী হবে এবং ভোটাররা তাদের সাথে আরও সম্পৃক্ত হবে।’ তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন মত সালমান ঘানির। তিনি বলছেন, মাত্র দুদিন আগে ইমরান খান এক সাক্ষাৎকারে তার বিরোধী রাজনীতিকদের 'চোর-ডাকাত' বলে বর্ণনা করেছিলেন। এখন আদালতের রায়ের পর তিনি নিজে একই কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন। বিচারিকভাবে তাকে 'অযোগ্য' ঘোষণা করা হয়েছে।' তিনি বলছেন, এখন আর ইমরান খান দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না।
যদিও পাকিস্তানে এর আগেও প্রধানমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আগামীতে এর ফলে ইমরান খানের রাজনীতির পরিধি আরও সঙ্কুচিত হবে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাইঘাম খান। তিনি বলেছেন, ইমরান খান এবং পিটিআই অতীতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো একই আইনি জটিলতায় পড়েছে। "ইমরান খান নিজেও এর আগে অন্য রাজনৈতিক দলকে আইনের ফাঁদে ফেলেছেন। এখন সেই একই বিষয় ঘুরে ফিরে আবার তাদের কাছে ফিরে এসেছে।" তিনি মনে করেন, দেশটিতে যখন নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তখন রাজনীতিতে পিটিআইয়ের জন্য পরিস্থিতি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে।
ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর এবার তার দলের কর্মীদের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এর আগে নয়ই মেতে যখন ইসলামাবাদের হাইকোর্ট চত্বর থেকে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন, পিটিআই কর্মী ও সমর্থকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। তার দুইদিন পর সুপ্রিমকোর্টে খানের গ্রেপ্তার 'বেআইনি' ঘোষণার আগ পর্যন্ত ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা লাহোর ক্যান্টনমেন্টসহ বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা এবং বেসামরিক বহু স্থাপনায় ভাঙচুর চালায় এবং সড়কে টানা বিক্ষোভ করে। ওই ঘটনার প্রায় তিনমাস পর. খান যখন দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হলেন, তার গ্রেপ্তার কিংবা গ্রেপ্তার পরবর্তী কর্মী-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দুটোর কোনটাই আগেরবারের মত হয়নি।
যদিও এবারেও তিনি গ্রেপ্তারের আগে রেকর্ড করা এক বক্তব্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন যে, 'কেউ ঘরে বসে থাকবেন না', কিন্তু পিটিআই নেতৃবৃন্দ সবাইকে 'শান্ত থাকার' এবং আইন 'নিজের হাতে তুলে না নেয়ার' আহ্বান জানিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যতদিন ইমরান খান জেলে থাকবেন শাহ মাহমুদ কুরেশী কি দলের নেতৃত্ব দেবেন? আর ইমরানের অনুপস্থিতিতে তার দল কি জনগণ ও পিটিআই সমর্থকদের সমর্থন পাবে? হয়ত সামনের দিনে এই দুইটি প্রশ্নই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্লেষক আমির জিয়া মনে করেন যে, দেখতে হবে সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান সিদ্ধান্তের পর খানের ওপর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি কমে আসে কি না। তবে যদি না কমে তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলে তার আশংকা। তবে, পাকিস্তানের মানুষ এখন আর রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে না বলে আমির জিয়া মনে করেন। তিনি বলেন, "ইমরান খানের গ্রেপ্তারে জনগণ ক্ষুব্ধ হবে ও কষ্ট পাবে, তবে তারা প্রতিবাদ করতে রাজপথে নামবে না। এর একটি বড় কারণ পিটিআই-এর সাংগঠনিক কাঠামোর ভাঙন।"
সরকারের দেয়া বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট যে মেয়াদের আগেই অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেয়া হবে। পরের ৯০ দিনের মধ্যে যদি নির্বাচন হয় এবং ইমরান খানও গ্রেপ্তার থাকেন, তাহলে নির্বাচনে পিটিআইয়ের ভূমিকা কী হবে? আর তাতে গণতন্ত্রপন্থী দলগুলোর জোট পিডিএমের রাজনীতি কীভাবে লাভবান হতে পারে? বিশ্লেষক রাসূল বখশ রাইস এ ধরনের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, তা কোন নির্বাচন না। এর মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দল ভাঙা হচ্ছে, এবং প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে, আরেক বিশ্লেষক জাইঘাম খান বলছেন, "পাকিস্তানে কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান ও তার পরিবারের সবসময় গুরুত্ব পায়। যদি দলের প্রধান না থাকে তবে তার দল সমস্যায় পড়ে সব সময়।" দেশটিতে অতীতে এমন ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তান মুসলিম লীগ বা পিএমএল-এন এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতৃত্ব যখন দেশটির বাইরে ছিল, তখন তাদের পরিবারের সদস্যদের দিয়ে একটি বিকল্প নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যার প্রতি দলের কর্মীরা আস্থা প্রকাশ করেছিল এবং তাকে তাদের নেতার বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেছিল।
অন্যদিকে, আমার কাছে মনে হয় পিটিআইয়ের জন্য অতিরিক্ত অসুবিধা হল যে দলের মধ্যে এমন কোনো নেতা নেই যাকে ইমরান খানের বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে বা যার ওপর কর্মীরা আস্থা রাখতে পারেন। বিশ্লেষক আমির জিয়া মনে করেন, নির্বাচনে ভোটারদের সাড়া দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন হলে ভোটাররা কি পিটিআইয়ের পক্ষে যাবে? যদি পক্ষে না যায় তাহলে কী দাঁড়াবে বিষয়টি? তিনি মনে করেন, নির্বাচনে ভোটার কম আসবে এবং ভোটের হারও কম থাকবে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের ভূমিকা কি প্রশ্নবিদ্ধ হবে?
তোশাখানা মামলায় ইমরান খান গ্রেপ্তার হলেও নয়ই মে-এর ঘটনার প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে এই গ্রেপ্তারের অর্থ কী? এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক রাসূল বখশ রাইস বলেন, ১৩ দলের জোট ও রাষ্ট্রযন্ত্র এই মুহূর্তে একই অবস্থানে আছে। ইমরান খানের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা তাদের কারণেই হচ্ছে বলে সবাই মনে করছে। মাওলানা ফজলুর রহমানকেও এতে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। এ বিষয়ে জাইঘাম খান বলেন, নয়ই মের ঘটনার পর রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত শক্ত হয়েছে, রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা আরও অনেক গভীর হয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বলে আখ্যা দিলেন ইলন মাস্ক
এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেওয়ার আইন বাতিল করতে প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠকে অংশ নেবে না এলডিপি
ফুডি অ্যাপে ডোমিনোজের পিৎজা অর্ডার করলেই ৪০% ছাড়!
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার নিয়ে যা জানালেন দুই উপদেষ্টা
ভোরে মিলল রাস্তার পাশে শিশু সাফওয়ানের লাশ
রেস্তোরাঁ, ওষুধ ও আইএসপিতে ভ্যাট আরোপ থেকে পিছিয়ে আসতে পারে সরকার
লস অ্যাঞ্জেলেসে এবার ‘আগুন টর্নেডোর’ আশঙ্কা
দেশে এইচএমপিভিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু
মোংলায় ভটভটি উল্টে ২ জন নিহত, আহত ২
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ প্রকাশ
নাম ভাঙিয়ে তদবির-টেন্ডারবাজি: সতর্ক করলেন সারজিস
গুলশান থেকে ওবায়দুল কাদেরের ‘পালিত ছেলে’ গ্রেফতার
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
বায়ুদূষণে আজ সবার শীর্ষে ঢাকা
শৈলকুপায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত
বাবরের মুক্তির অপেক্ষায় কারাগারের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড়
ব্যাংক খাত নিপুন কারিগরের মতো যেভাবে ধ্বংস করেন এসকে সুর
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠক বর্জন করবে লেবার পার্টি
দেশে ফিরতে চান মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় খালাস পাওয়া অভি