মিয়ানমারে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ: এক বিধবার কষ্টের গল্প
১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ এএম | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ এএম
২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে,সামরিক জান্তা বাধ্যতামূলকভাবে সেনা নিয়োগের ঘোষণা দেয়,যার ফলে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ পুরুষ ও নারীকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।এর মধ্যে চাও সু নামে এক বিধবা তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন।তার স্বামী সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। তাঁর হৃদয়বিদারক গল্পটি মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে।
চাও সু, ২৫ বছর বয়সী এক বিধবা,মার্চ মাসে তাঁর স্বামীকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার পর শেষবারের মতো তাদের দেখা হয়েছিল।তিনি জানান তার স্বামীকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, এবং পরে তিনি কেরেন রাজ্যে যুদ্ধের সম্মুখভাগে গিয়ে নিহত হন।চাও সু আরও বলেন, "আমরা সবসময় দরিদ্র ছিলাম এবং সংগ্রাম করতাম, কিন্তু তিনি ছিলেন আমার জীবনের শক্তি,।” তাঁর স্বামীকে হারানোর পর,এখন তিনটি ছোট শিশুকে নিয়ে একা অসহায় অবস্থান দিন যাপন করছেন। তাঁর স্বামীর যুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর তাঁর জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করে,যেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বলা হয়।সামরিক জান্তা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং দেশজুড়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে একদিকে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং অন্যদিকে সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করেছে।এপ্রিল মাসে প্রথম প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়, এবং এরপর থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা নাগরিকদের যুদ্ধের অগ্রভাগে পাঠানো হয়।
চাও সু জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী যখন সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান,তখন তাঁরা প্রথমে কিছু টাকা পান,তবে পরে কোনো সাহায্য কিংবা বেতন আর পাননি।জান্তা কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে, নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও,বাস্তবে প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে আছেন আরো অনেক পরিবার,যারা তাদের প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পান না।সোসো আয়ে নামক এক বিধবা বলেন,তিনি তাঁর ছেলে সম্পর্কে ৬ মাস ধরে কোনো খবর পাননি,যে কিনা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিল।
এদিকে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা বেড়ে গেছে।ক্যান হতো লুইন নামে এক তরুণ সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে পালিয়ে যান।তিনি বলেন, "প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত কঠিন, এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে, কেউ যদি পালিয়ে যায়, তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।" কিন্তু তিনি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যান এবং পরে প্রতিবিপ্লবী গ্রুপে যোগ দেন। তার মতে,অনেক তরুণ বিক্ষোভের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন,কারণ তারা জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
মিয়ানমারের মহিলারাও এই পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হচ্ছেন। যুউযুউ নামক এক তরুণী, যিনি চীনা ভাষায় অনুবাদক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন,সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।তিনি বলেন, "আমার লক্ষ্য এখন একটাই, সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো,।”
একদিকে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা সেখানে অল্প মজুরিতে শ্রমের কাজ করছেন।মিন মিন নামক এক প্রকৌশলী, যিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন,তিনি জানান, "আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমি অবৈধভাবে থাকতে হবে,আর তখন আমি কোথাও কাজ পাবো কিনা জানি না।"
চাও সু বর্তমানে গ্রামে নানা কাজ করে কোনোরকমে তিনটি শিশুকে লালন-পালন করছেন,তবে তাঁর আয় তা-ও পর্যাপ্ত নয়।তিনি বলেন,"যতটা কষ্ট আমি অনুভব করছি, সেটা অন্যদের বোঝানো কঠিন,।”
মিয়ানমারের এই দুঃখজনক পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি পরিবারের কষ্ট নয়, এটি মিয়ানমারের পুরো দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের সংগ্রামের স্পষ্ট প্রতিফলন। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ওয়ানডের শীর্ষ বোলার আফ্রিদি, ক্যারিয়ার সেরা অবস্থানে শান্ত
অনলাইনে আয়কর পরিশোধের চার্জ নির্ধারণ করলো বাংলাদেশ ব্যাংক
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে: ফখরুল
ব্যাংকখাতে স্বল্পমেয়াদে সংস্কার চলছে, দীর্ঘমেয়াদে করবে নির্বাচিত সরকার: উপদেষ্টা
দলের নেতাকর্মীদের ফেলে স্বার্থপরের মতো পালিয়ে গেছেন হাসিনা: রিজভী
দিল্লির বায়ু দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক সীমা ছাড়িয়ে গেছে
পুলিশের কাছ থেকে মাদক কারবারি ছিনতাইয়ের মামলায় আসামিরা অধরা।
উত্তপ্ত কালীগঞ্জে আবারো সংঘর্ষ, ভাঙচুর : সেনাবাহিনী সহ প্রসাশনের টহল জোরদার
আলো ঝলমলে শোবিজের অন্তরালে অমাবস্যার অন্ধকারঃ রাশমি দেশাই"
সংবিধানে গণভোটের বিধান বহাল চাইলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস কমিটি গঠন, প্রেসিডেন্ট হলেন তারেক রহমান
চীনের ঝুহাইয়ে প্রাণঘাতী গাড়ি হামলা, সমাজে প্রতিশোধের প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপর উঠে পড়লেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহতরা
শেরপুরে পিকআপ সিএনজি মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩ জন নিহত, আহত ৩
কানাইঘাটে শ্বশুর বাড়ির গাছের ডালে ঝুলছিল জামাইয়ের লাশ
শাহজাদপুরে সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না করেই বিল তুলে ঠিকাদার উধাও : জনদুর্ভোগ চরমে!
আইভীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
‘সংবিধান থেকে ‘জাতির পিতা’ ও ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বাতিলের পক্ষে যুক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের
চীন ঝুহাইতে তার সর্বশেষ সামরিক শক্তির প্রদর্শনী করলো
জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষায় ‘জিরো কার্বন’-ভিত্তিক জীবনধারার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার