ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জিলক্বদ একটি মহিমান্বিত মাস

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

২৩ মে ২০২৩, ১১:৩৪ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তায়ালা বলেন : প্রকৃতপক্ষে যেদিন আল্লাহ আকাশম-লি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন সেইদিন থেকেই আল্লাহর কিতাবে (অর্থাৎ লাওহে মাহ্ফুজে) মাসের সংখ্যা ১২টি। এটাই সহজ-সরল দ্বীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি জুলুম কর না এবং তোমরা সকলে মিলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর, যেমন তারা সকলে মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে। একিন রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা : ৩৬)।

আয়াতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকেই বছরের মাস হলো ১২টি। এর মধ্য থেকে ৪টি মাস সম্মানিত। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এই সম্মানিত ৪ মাসের প্রথমটি হল জিলক্বদ। বাকি ৩টি হলো, জিলহজ্ব, মুহাররম ও রজব।

হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : জামানা ফিরে এসেছে তার আপন অবস্থায়, যেমন ছিল ওই দিন, যেদিন আল্লাহ তায়ালা আকাশম-লি ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন। (আরবরা যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে বছরের বিভিন্ন মাসকে তার প্রকৃত স্থান থেকে রদবদল করে ফেলেছিল।) ১২ মাসে বছর। এর মধ্যে চার মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক-জিলক্বদ, জিলহজ্ব ও মুহাররম। আর চতুর্থটি হলো রজব, যা জুমাদা ও শাবানের মাঝখানে। (সহিহ বুখারি : ৩১৯৭)।

বনি ইসরাঈলকে তাদের নাফরমানীর কারণে তীহ উপত্যকায় ৪০ বছর পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছিল। এ সময় তারা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের কাছে দাবি করেছিল, আপনি নিজ ওয়াদা অনুযায়ী আমাদেরকে কোনো আসমানী কিতাব এনে দিন, যে কিতাবে আমাদের জীবনযাপনের নীতিমালা লিপিবদ্ধ থাকবে। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তায়ালা হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে তূর পাহাড়ে এসে ৩০ দিন অবস্থান করতে বললেন। পরে বিশেষ কোনো কারণে এ মেয়াদ বৃদ্ধি করে চল্লিশ দিন করে দেওয়া হলো।

আল্লাহ তায়ালা বলেন : আমি মুসার জন্য ত্রিশ রাতের মেয়াদ স্থির করেছিলাম ( যে, এ রাতসমূহে তূর পাহাড়ে এসে অবস্থান করবে)। তারপর আরো ১০ দ্বারা তা পূর্ণ করি। এভাবে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত মেয়াদ ৪০ রাত হয়ে গেল। (সূরা আরাফ : ১৪২)। প্রথম ৩০ দিন ও পরের ১০ দিনের মধ্যে, অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে ৩০ দিন জিলক্বদ মাস। আর ১০ দিন হলো এর পরের মাস জিলহজ্বের প্রথম ১০ দিন।

আবু বকর ইবনুল আরাবী (রাহ.) ৫৪৩ হি. বলেন : অনেক মুফাসসির একমত হয়েছেন, এই ৪০ দিনের উদ্দেশ্য হলো, জিলক্বদের ৩০ দিন ও জিলহজ্বের ১০ দিন। (আহকামুল কুরআন ২/২৭৪)। ইবনে কাসীর (রাহ.) বলেন : অধিকাংশ তাফসীরবিদের মত হলো, ৩০ দিন হলো জিলক্বদ মাস আর ১০ দিন হলো জিলহজ্বের ১০ দিন। এ’টি মুজাহিদ (রাহ.), মাসরূক (রাহ.) ও ইবনে জুরাইজ (রাহ.)-এর মত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ও অন্যান্যদের থেকেও অনুরূপ তাফসিরে বর্ণিত হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৩/৪২১)।

যে মাসে নবী (সা.) উমরা আদায় করেছেন : জিলক্বদ মাসের বিশেষ একটি ফজিলত হলো, রাসূলুল্লাহ (সা.) যত উমরা আদায় করেছেন, সবগুলোই ছিল জিলক্বদ মাসে, একটা উমরা ব্যতীত, যা তিনি হজের সাথে আদায় করেছিলেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) জিলক্বদ ব্যতীত অন্য মাসে কোনো উমরা করেননি। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৯৯৭)।

হাদিসটির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে : রাসূলুল্লাহ (সা.) জিলক্বদ ব্যতীত অন্য কোনো মাসে উমরা করেননি। তিনি তিনবার উমরা করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ : ২৫৯১০)। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) চারটি উমরা করেছেন। সবগুলো হয়েছে জিলক্বদ মাসে, একটি ব্যতীত, যা হজের সাথে করেছেন।

১. হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর জিলক্বদ মাসে উমরা করেছেন। ২. এর পরের বছর জিলক্বদ মাসে উমরা করেছেন। ৩. জিইরানা, যেখানে হুনায়ন যুদ্ধের গনিমত বণ্টন করেছিলেন, সেখান থেকে একটি উমরা করেছিলেন জিলক্বদ মাসে। ৪. আরেকটি উরমা করেছিলেন হজব্রত পালন করার সময় (জিলহজ্ব মাসে)। (সহিহ মুসলিম : ১২৫৩)।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ইসলামের শিক্ষা গুরুজন মান্যতার
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-২
বড়কে মান্য করুন, বৃদ্ধকে সম্মান করুন-১
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-২
সন্তানদের কিসের উপর রেখে যাচ্ছি-১
আরও

আরও পড়ুন

ফুলপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু

ফুলপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেজর এম.এ জলিলকে বীর উত্তম খেতাব ফিরিয়ে দিতে হবে : মেজর হাফিজ

মেজর এম.এ জলিলকে বীর উত্তম খেতাব ফিরিয়ে দিতে হবে : মেজর হাফিজ

সজাগ-সতর্ক না থাকলে হায়নারা আবারও পরিবেশকে বিনষ্ট করবে : এ্যানি

সজাগ-সতর্ক না থাকলে হায়নারা আবারও পরিবেশকে বিনষ্ট করবে : এ্যানি

ইসলামী শক্তিগুলোর উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় কেউ কেউ : ড. আহমদ আবদুল কাদের

ইসলামী শক্তিগুলোর উত্থান ঠেকাতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় কেউ কেউ : ড. আহমদ আবদুল কাদের

ইসরায়েলি হামলায় গাজার এক নারী বন্দী নিহত, দাবি হামাসের

ইসরায়েলি হামলায় গাজার এক নারী বন্দী নিহত, দাবি হামাসের

সোনারগাঁয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলে ১০ শ্রমিক দগ্ধ

সোনারগাঁয়ে বসুন্ধরা পেপার মিলে ১০ শ্রমিক দগ্ধ

গাজীপুরের আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

গাজীপুরের আরও এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান

পাঁচ ঘন্টা পর প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ তুলে নিল জাবি শিক্ষার্থীরা

পাঁচ ঘন্টা পর প্রশাসনিক ভবনের অবরোধ তুলে নিল জাবি শিক্ষার্থীরা

সোহরাওয়ার্দী-নজরুল কলেজে বহিরাগতদের হামলা ভাঙচুর,পরীক্ষা দিতে পারেননি শিক্ষার্থীরা

সোহরাওয়ার্দী-নজরুল কলেজে বহিরাগতদের হামলা ভাঙচুর,পরীক্ষা দিতে পারেননি শিক্ষার্থীরা

সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় জামায়াত সেক্রেটারির উদ্বেগ

সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানির ঘটনায় জামায়াত সেক্রেটারির উদ্বেগ

বিএনপি ক্ষমতায় এলে চাকরিপ্রত্যাশীদের ১ বছর রাষ্ট্র থেকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে: আমীর খসরু

বিএনপি ক্ষমতায় এলে চাকরিপ্রত্যাশীদের ১ বছর রাষ্ট্র থেকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে: আমীর খসরু

মহারাষ্ট্রে ঐতিহাসিক জয়,মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির নতুন উত্থান

মহারাষ্ট্রে ঐতিহাসিক জয়,মোদীর নেতৃত্বে বিজেপির নতুন উত্থান

‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি’ জোটের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ

‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর হাঙ্গার অ্যান্ড পোভার্টি’ জোটের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ

ইসলামাবাদের দিকে যাচ্ছে ইমরান খানের সমর্থকদের বিশাল বহর

ইসলামাবাদের দিকে যাচ্ছে ইমরান খানের সমর্থকদের বিশাল বহর

আদালতের নির্দেশনায় ব্যাটারি চালিত রিকশা সমস্যার সমাধান হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আদালতের নির্দেশনায় ব্যাটারি চালিত রিকশা সমস্যার সমাধান হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঢাকা-ভাঙ্গা-নড়াইল-খুলনা রেল পথে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন

ঢাকা-ভাঙ্গা-নড়াইল-খুলনা রেল পথে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন

"অবশেষে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে আসলো সায়রা বানুর বার্তা"

"অবশেষে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ নিয়ে প্রকাশ্যে আসলো সায়রা বানুর বার্তা"

এস আলমের মালিকানাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ

এস আলমের মালিকানাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মহাসড়ক অবরোধ বিক্ষোভ

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তিন দিনের সংঘাতে নিহত ৮২ জন

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তিন দিনের সংঘাতে নিহত ৮২ জন